টপিকঃ আমার বিবাহ
আজকে আমার বিবাহ। জীবিতদের দল থেকে নাম কাটাবো আজকে। ব্যাপক টেনশন হচ্ছে। একাডেমিক ভাইভা দেয়ার মত ভয়ঙ্কর কোন কিছু আজ হবে না। এরপরও ভয়ে কইলজা শুকিয়ে যাচ্ছে। একটু আগে রেডি হয়েছি। গোসল করার সময় ভাবীর থেকে চুরী করে আনা ফেসিয়ালটা মুখে দিয়ে আমার কাউয়াবদনকে কিছুটা ফর্সা করার একটা ব্যর্থ চেষ্টাও ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছি। এখন টাই পরে বসে আছি বিবাহস্থলে যাবার অপেক্ষায়। এই কথা শুনে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। অনেক বেশি টেনশন হলেও, টাইয়ের সাথে শার্ট এবং প্যান্ট পরিধান করতে ভুলিনি।
নিচে নেমে দেখি আমাদের জন্য ঠিক করা মাইক্রোবাসটি দাঁড়িয়ে আছে। আমার সহযাত্রীদের মধ্যে একমাত্র আমার বড় ভাই এবং এক ধর্ম-ভাই ছাড়া বাকিরা সবাই হলো নারী এবং শিশু। লেডিস ফার্স্ট ফর্মুলা অনুসরণ করে, সবাইকে একে একে গাড়িতে লোড করলাম। আজকে আমার এই সকল কাজ করার কথা না। কিন্তু বড় দুইভাইয়ের বিয়ের সময় থেকেই যেহেতু এই সকল আয়োজন আমি করতাম, তাই সবাই ধরেই নিয়েছে যে গাড়ি ম্যানেজ থেকে শুরু করে কাজী ম্যানেজ সংক্রান্ত সকল দায়িত্ব বাই-ডিফল্ট আমিই পালন করবো। এমনকি সেটা আমার নিজের বিয়ের দিন হলেও মাফ নাই। কাজেই নিজে আগে আগে গাড়িতে না উঠে সবাইকে একে একে লোড করলাম গাড়িতে। সবাই গাড়িতে উঠে বসার পর দেখা গেলো যে, শুধুমাত্র আমার ধর্ম-ভাই এবং এই অধমের জায়গা হয়নি গাড়িতে। আমি করুণ মুখ করে চেয়ে আছি গাড়ির পানে। আমার এই জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে আমার বড় ভাই গাড়ির ভেতর থেকে হুঙ্কার ছাড়লো,
- আহাম্মকের মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন? একটা রিক্সাতে ভাইয়াকে নিয়ে চলে আয়। আমরা গেলাম।
জো হুকুম মেরে আকা। আমি আমার ধর্ম ভাইকে নিয়ে একটা রিক্সায় চেপে বসলাম। দুনিয়ায় আমিই মনেহয় প্রথম এবং একমাত্র বর যে, গাড়ি থাকা সত্বেও রিক্সায় চেপে বিবাহ করতে যাচ্ছে। দেশের বিদ্যুত বিভাগ ইলেকট্রিসিটি দিতে কার্পন্য করলেও, আমাদের সূর্য মামাতো আর তাদের মত কৃপণ না। উনি নিরলসভাবে আমাদের মাথার উপর আলো বর্ষন করে চললেন। আমার ধর্মভাই আবার রিক্সার হুড তুলতে দিবেন না। ওনার নাকি দম বন্ধ হয়ে আসে হুড তুললে। কি আর করা, গরমে শওকত-কাবাব এর মত কাবাব হতে হতে বিবাহস্থলের দিকে চললাম। এর মধ্যে রিক্সাওয়ালা একটু পর পর পিছনে তাকিয়ে সেইরকম পিত্তি জ্বলানো হাসি দিচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
- সমস্যা কি?
- হে হে। ভাইজান কি বিবাহ করতে যাইতেছেন?
- জ্বী। তো?
- ভয় পাইয়েন না ভাইজান। উপরে আল্লাহ আছে, আর নিচে মাটি।
- তুমি কথা বেশি বলো। ক্যালানো বন্ধ করে রিক্সা চালাও।
- হে হে হে। রাগ করেন ক্যান ভাইজান? আপনে উনার (ভাইয়াকে দেখিয়ে) থিকা বেশি ঘামতাছেন দেইখা কইলাম, আপনেরে সাহস দেয়ার লাইগা।
- আমারে সাহস দেয়া লাগবো না। তোমার নিজের বিয়ার কথা মনে করো। তখনতো মনেহয় ঘাইমা নদী বানায় ফেলাইছিলা।
- জ্বী ভাইজান। প্রথম বিয়ার সময় ঘামছিলাম। এহন আর ঘামি না। আপনাদের দোয়ায় গত মাসে অষ্টমবার বিয়া করলাম। এখন আর কুনো ভয়-ডর লাগে না।
- (মেজাজ চরম খারাপ হয়ে গেলো কথা শুনে) কথা বন কর ব্যাটা। তোগো মত পাবলিকের লাইগা দেশের আবাদি এত বাড়ছে যে, ভীড়ের চোটে রাস্তা দিয়া হাটা যায় না। আরেকবার তোর আট বিয়ার কাহিনী কবি তো রিক্সা থেইকা নাইমা যামু। ব্যাটা ফাজিল!!
আমার কথা শুনে রিক্সাওয়ালা ক্ষান্ত দিলো। মুখ বন্ধ করে রিক্সা চালাতে থাকলো। তবে মুখের ক্যালানো হাসিটা লেগেই থাকলো। অসহ্য।
শেষ পর্যন্ত বিবাহের জন্য ঠিক করা রেস্টুরেন্টে এসে পৌছাতে পারলাম। এসে দেখি ওরা আমাদের জন্য অপেক্ষা না করে উপরে উঠে গিয়েছে (কি কপাল আমার )। রেস্টুরেন্ট ঠিকঠাক করেছে আমার বড়ভাই। আমিও জানিনা আমার অনুষ্ঠান রেস্টুরেন্টের কয় তলায়। আমার ধর্মভাইও জানে না। ভাইয়ার মোবাইলে কল দিলাম। উনি কল ধরছেন না। নিচে দাঁড়িয়ে আমরা দুইজন রীতিমত খাবি খেতে লাগলাম। আমাদের খাবি খাওয়া দেখে রেস্টুরেন্টের এক কর্মচারী সেখানে রীতিমত এক ফেরেশতা হিসেবে আবির্ভুত হলো।
- কার পার্টিতে যাবেন স্যার? হাসান সাহেবের পার্টিতে? রবিউল সাহেবের পার্টিতে? নাকি আসাদুজ্জামান সাহেবের পার্টিতে?
- জ্বী। আমি আসাদুজ্জামান সাহেবের পার্টিতে যেতে চাচ্ছিলাম। (ইউরেকা ইউরেকা!!)
- ওনার পার্টি তৃতীয় তলায়।
- থ্যাঙ্কু।
ভাগ্য ভালো যে বিবাহস্থল পাওয়া গেলো। তা না হলে যে কি হতো আল্লাহ জানে।