টপিকঃ একটা মাত্র বউ (ইমরান ভাইয়ের পরিচিতিমূলক পোস্ট দেখে মনে পড়ল)
সদ্য নিবন্ধনকৃত ফোরামিস্ট ইমরান ভাই নিজেকে -দুই কন্যার বাবা, একটা মাত্র বউ --- এরকম ভাবে পরিচয় দিয়েছেন। এইটা দেখে হঠাৎ করে একটা গল্প মনে পড়ে গেল ...
(কারো কমন পড়ে গেলে নিজগুনে ক্ষমা করে দেবেন)
-------------------------------------------------------------------------
পর্ব-১ (পূর্ব কথা)
এক কাঠুরিয়া বনে নিয়মিত কাঠ কাটতে যেত। ওনার উপার্জনের জন্য ব্যবহৃত কুড়ালটি একবার ছিটকে পাশের হ্রদের পানিতে পড়ে গিয়েছিল। অত্যন্ত মন খারাপ করে পানির ধারে কান্নাকাটি করাতে ওখান থেকে এক দেবী উঠে এসে তাঁর দূঃখের কথা জিজ্ঞেস করল। কাঠুরিয়া ইনিয়ে বিনিয়ে তাঁর কুঠার হারানোর গল্প বললেন।
দেবী আশ্বাস দিলেন, যে তুমি দূঃখ করো না, আমি এই পানির ভেতরেই থাকি। দেখি তোমার কুড়াল খুঁজে দিতে পারি কি না। এই কথা বলে তিনি ভুস করে পানির তলে ডুব দিলেন। একটু পরে হাতে করে একটা সোনার কুঠার নিয়ে এসে বললেন,
ঃ দেখোতো বাছা, এটা তোমার কি না ...
কাঠুরিয়া মাথা নাড়েন। না হে মহান দেবী .... এই সোনার কুঠার আমার নয়। --- এ কথা শুনে দেবী আবার ডুব দিলেন, আর একটু পরে আরেকটা রূপার কুঠার নিয়ে এসে আগের মত জিজ্ঞেস করলেন
ঃ দেখোতো বাছা, এটা তোমার কি না ...
কাঠুরিয়া আবার মাথা নাড়েন। না হে মহান দেবী .... এই রূপার কুঠার আমার নয়। --- দেবী এবার ডুব দিয়ে কাঠুরিয়ার লোহার কুঠার তুলে এনে কাঠুরিয়াকে জিজ্ঞেস করাতে, কাঠুরিয়া খুব খুশি হয়ে দেবীকে কৃতজ্ঞতা জানালেন তার কুঠার খুঁজে দেয়ার জন্য।
দেবী কাঠুরিয়ার সততায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে সবগুলো কুঠার উপহার দিলেন।
পর্ব-২ (আসল কাহিনী)
অবাক এবং কৃতজ্ঞ কাঠুরিয়া বাসায় ফিরে বউকে পুরা ঘটনা খুলে বললেন। বউ তো সোনা রূপার কুঠার দেখে আহ্লাদে আটখানা। বউয়ের পরামর্শে সেগুলো বিক্রি করে কাঠুরিয়ার ভালো লাভ হলো। ঘর-বাড়ি ঠিক করালেন। কিছু জমি কিনে চাষাবাদের কাজে লাগালেন। তাঁর দিন ফিরে গেলো ... ... অন্ততপক্ষে আগের মত এক বেলা না খেয়ে থাকতে হয় না।
বউ কাঠুরিয়াকে খালি গুতায়..... অ্যাই, তুমি আবার বনে যাও, ঐ পানিতে একটা বড় কিছু ..... ধর এই কাঠের আলমারীটা ফেলে কান্নাকাটি কর। তোমার ইনায় বিনায় কান্না দেখলে আবার দেবী আসবে, আবার তুমি সোনা রূপার আলমারি পাবে। চিন্তা কর, ওগুলো বিক্রি করলে কত টাকা হবে, আর আমার নিজেরও কিছু গয়না বানাবো ... ...
এহেন প্রতারণার পরামর্শে কাঠুরিয়া বউয়ের উপর বড়ই নাখোশ হল। বলল, এসব কাজ আমি করতে পারব না। এক কথা দুই কথায় ভীষন ঝগড়া লেগে গেল, কিন্তু কাঠুরিয়া কিছুতেই বনের হ্রদে যেতে রাজি হল না।
এদিকে বউও খুব সেন্টিমেন্টাল হয়ে গেল। আমার জন্য তোমার কোন মায়া নাই..... ইত্যাদি ইত্যাদি। ঠিক আছে, তুমি না যাও আমিই ওখানে যাব। বলে হন হন করে ভারী একটা বাক্স নিয়ে সে বের হয়ে বনের দিকে গেল।
এদিকে কিছুক্ষণ পরে কাঠুরিয়ার গোস্বা কমে এলে সে বউয়ের খোঁজে বের হল এবং বনের ঐ হ্রদের কাছে গিয়ে দেখল যে বাক্স পানিতে ভাসছে, বউয়ের কোন খোঁজ নাই। অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও বউকে না পেয়ে আর বিভিন্ন আলামত দেকে সে নিশ্চিত হল যে বউ পানি পড়ে ডুবে গেছে। বউয়ের জন্য তাঁর খুব খারাপ লাগতে লাগল। বিষন্ন ভাবে সে আবার হ্রদের পাশে বসে কাঁদতে থাকল।
এবারও যথারীতি দেবী উঠে এসে কাঠুরিয়াকে মধুর স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, আবার কি হল বাছা?
কাঠুরিয়া বিষন্ন ভাবে বলল যে তাঁর বউ পানিতে পড়ে গেছে ... হাউ মাউ কান্না....
দেবী এবারও বললেন যে, দূঃখ কোরোনা বাছা, দেখি তোমার বউকে খুঁজে পাই কি না ... বলে ডুব দিলেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি অসম্ভব সুন্দরী ঐশ্বরিয়াকে নিয়ে উঠে এলেন... বললেন
ঃ দেখোতো বাছা, এটা কি তোমার বউ?
কাঠুরিয়া সাথে সাথে বলে উঠলেন -
ঃ হ্যা মা, এটাই আমার বউ .......
কাঠুরিয়ার এহেন চরিত্রস্খলন দেখে দেবী খুব রেগে গেলেন, তাঁর চোখ জ্বলতে থাকল .... ... বললেন, কী বললি?
তখন কাঠুরিয়া কাঁচুমাচু করে বললেন,
ঃ অপরাধ নেবেন না মা, আমি জানি আপনি অত্যন্ত দয়াবতী। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে যা জানি, আমি এই সুন্দরী কন্যাকে দেখে না বলব, আর আপনি তারপর তুলে আনবেন মাধুরীকে। আমি না বললে তারপর আনবেন আমার বউকে। যখন আমি হ্যা বলব, তখন আপনি আমার সততায় মুগ্ধ হয়ে আগের মত ৩ জনকেই আমাকে দিয়ে দেবেন।
মা, একটা বউকেই সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি প্রতিনিয়ত। তাই, এবার হ্যা বলেছি, যেন এরকম ৩টা গছিয়ে দেয়ার কোন ক্ষেত্র সৃষ্টি না হয়। দয়া করো মা, আমাকে শুধু আমার যেমন তেমন একমাত্র বউটাকে এনে দিন ... তাহলেই আমি বেঁচে যাই।
............................. (শেষ)