টপিকঃ এক প্রবীন ব্যক্তির ডায়রী থেকে ...
১০ই মার্চ, ২০০৭
একটা কম্পিউটার কিনতে হবে। সেদিন শুনলাম কম্পিউটার দিয়ে নাকি অনেক কিছু করা যায়। জীবনের সাধ পুরণ করা দরকার। অনেক কিছু করা দরকার।
১২ই মার্চ, ২০০৭
আজ কিনেই ফেললাম একটা কম্পিউটার। বেশ দাম। কিন্তু তাতে কি? উপকারী বস্তু, দামতো নেবেই। শুনেছি কম্পিউটারের সবই নাকি ইংরেজী। কি মুশকিল। নীলক্ষেত থেকে কিনে ফেললাম ইয়া মস্ত একটা ডিকশনারী।
১৩ই মার্চ,২০০৭
কম্পিউটারের বাক্স দেখে মনে হলো বিশাল জিনিষ। হবেই তো । এত টাকার জিনিষ, তা বড়তো কিছুটা হবেই। খুলেই ফেললাম বাক্সটা। কিন্তু একি! বাক্সের মধ্যে টিভি... হয়তো কম্পিউটারের সাথে ফ্রী... আজকালতো এটার সাথে ওটা ফ্রী পাওয়া যায়। তেমনই কিছু একটা হবে হয়তো। দোকানদারটা ভাল।
১৪ই মার্চ, ২০০৭
নাহ.. দোকানদারটা আমাকে ঠকিয়েছে। টিনের বাক্সটা কম্পিউটার বলে চালিয়ে দিয়েছে। তাও পেছনে কত ফুটাফাটা। ব্যাটাকে ধরে আচ্ছাসে মাইর দেয়া দরকার। ইতর একটা।
১৫ই মার্চ, ২০০৭
খলিল সাহেবকে বললাম আমার কম্পিউটারের কথা। জ্ঞানী লোক। বললেন, কম্পিউটারের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো ধুলাবালি আর গরম। আসলেই তো । কম্পিউটারের নিশ্চই ঘিলু আছে। এই গরমে আমাদের দফারফা । বেচারার নিশ্চই চান্দি গরম হয়ে গেছে। ইশ, আগেই বোঝা উচিৎ ছিল।
১৬ই মার্চ, ২০০৭
আজ একটা এসি কিনে নিয়ে এলাম। বড় দেরী হয়ে গেলো বোধহয়। কম্পিউটার বাবাজী জানে বাচবে কিনা কে জানে?
১৮ই মার্চ, ২০০৭
দুদিন ধরে কম্পিউটারের শীত-চিকিৎসা চলছে। হাসনার মাকে বললাম, একটা ভেজা নেকড়া নিয়ে কম্পিউটারের গা মুছে দিতে। এসির ঠান্ডায় আমার সর্দি লেগে গেছে।
২৫শে মার্চ, ২০০৭
পাশের বাড়ীর সুমন ছেলেটা ভাল। বয়স ১২ বছর হলে কি হবে, রিতিমত বিদ্বান ছেলে। আমার কম্পিউটারটা কি সুন্দর ঠিক করে দিল। কিন্তু বাচ্চা ছেলে তো, কতটুকুই বা বোঝে ? বলল, আংকেল, এটাতে উইন্ডোজ দিলাম। আমি বলি, বাবা জানালা তো ছোট, আমাকে ডোরস বানিয়ে দিতে পার কিনা দেখ। বলল আংকেল, পার্টিশান করা দরকার। ভাড়ার বাড়ী..তার উপর পার্টিশান ... কি জানি বাপু.. কি বিপদেই না পড়ি। বলল, আংকেল উবুন্তু দিয়ে দিই, ভাল জিনিষ..। ব্যাটা ইচড়ে পাকা.. উবু হয়ে কাজ করলে লোকে কি বলবে?
২৭ই মার্চ, ২০০৭
কম্পিউটারে নাকি চিঠি লেখা যায়। জামান সাহেব সেদিন বললেন, এটাকে ইমেইল বলে। আর সেটা নাকি মুহুর্তেই প্রাপকের কাছে পৌছে যায়। ব্যাপারটা দেখা দরকার। তার কাছ থেকেই শুনেছি, ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে নাকি আছে একটা। সেটা নাকি আমার কম্পিউটারের সাথে জোড়া লাগানো যায়। কত বড় হাইওয়ে কে জানে । ভয় হয়, আজকাল হাইওয়ে গুলিতে যেভাবে এক্সিডেন্ট হচ্ছে..
২৮ই মার্চ, ২০০৭
আজ আবার গেলাম দোকানদারের কাছে। বললাম ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ের সাথে আমার কম্পিউটারের সংযোগ সড়ক না হোক অন্ততঃ একটা বাইপাস লেন বানিয়ে দেন। । সে বলল, মডেম নামক একটা যন্ত্র কিনতে হবে। সেটাই নাকি আসল প্রবেশদ্বার। সেটি দিয়ে আমি চাহিবা মাত্র হাইওয়েতে ঘোরাঘুরি করতে পারব। কিনেই নিলাম অবশেষে একটা মডেম।
২৯শে মার্চ, ২০০৭
দোকানদারটা বেজায় পাজি। মডেমটা কিভাবে লাগাতে হবে বলল না। পাশের বাড়ীর সুমন ছেলেটা লাগিয়ে দিল মডেম। আমি বললাম কই আমাকে দেখাও কোথায় সেই সুপার হাইওয়ে.. মডেম চালু করতেই হাইওয়ের হর্নের শব্দ পেলাম কিন্তু তারপরই সব চুপচাপ। আমার আর দেরী সহ্য হচ্ছেনা। দেশের বাড়ীতে মাকে চিঠি লেখা দরকার। ইমেইলে পাঠালে তাড়াতাড়ি পৌছে যাবে। আচ্ছা, এটাতে কি খাম দেওয়া থাকে, নাকি আলাদা কিনতে হয়? কেজানে সুমনকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে হবে।
৩০শে মার্চ, ২০০৭
পাশের বাড়ীর সুমন ছেলেটা বলল, দেখুন আংকেল, এইযে ছোট্ট ছবিটা দেখছেন, সেটার উপর এই যে ডানপাশে আন্ডার মত যন্ত্র আছে সেটির দুইটি টোকা দিলেই আপনি যে কোন কিছু সার্চ করতে পারবেন। ক’দিন আগে দামী একটা কলম হারিয়েছিলাম.. সেটি সার্চ করা দরকার। দিলাম দুটো টোকা। একটুজোরেই বোধহয়। ভালই শব্দ হলো কিন্তু সামান্য আচঁড় ছাড়া টিভিতে কিছুই দেখা গেলনা।
৩১শে মার্চ, ২০০৭
সুমন ছেলেটা মহা ফাজিল। বলে গুগুলে নাকি সার্চ ইন্জিন আছে। ব্যাটা ফাজিল। গু গুলে দিলে কম্পিউটারটা নোংরা হয়ে যাবেনা? আজকালকার ছেলেপেলে বড়ই দুষ্ট প্রকৃতির।
১লা এপ্রিল, ২০০৭
সালাম ভাই এসেছিলেন বেড়াতে। তিনি বললেন, কি ভাই, আমার সাথে চ্যাটিং করতে পারেনতো... কত সাদা চামড়ার মেয়েমানুষের সাথে গল্প করলাম। তাড়াতাড়ি একটা ইয়াহু একাউন্ট ওপেন করেন.. তারপর দেখেন কি মজা।
২রা এপ্রিল, ২০০৭
সালাম ভাই আর যাইহোক গুল মারেনা। তাহলে তো ব্যাপারটা দেখতেই হয়। কিছু টাকা নিয়ে বেরিয়ে গেলাম মতিঝিল। সারা দিন খুজেও ইয়াহু ব্যাংক পেলাম না। এখন উপায়? ইয়াহু একাউন্ট ওপেন করি কিভাবে? সালাম ভাই তো ফাজিল টাইপের ছিলনা। গুলশান এলাকায় হবে হয়তো.. ইয়াহু.. বিদেশী নাম মনে হচ্ছে। কিম্বা হয়তো নেহায়েত এপ্রিল ফুল জাতীয় রসিকতা। কে জানে..