তড়িৎ ক্ষেত্র: কোন চার্জিত বস্তু তার চারপাশে যে অঞ্চলব্যাপী প্রভাব বিস্তার করে অর্থাৎ যে অঞ্চল পর্যন্ত অন্য সমধর্মী চার্জিত বস্তুকে বিকর্ষণ বা বিপরীতধর্মী চার্জিত বস্তুকে আকর্ষণ করে, তাকে ঐ চার্জিত বস্তুর তড়িৎ ক্ষেত্র বলে। চার্জ যত বেশী হবে তড়িৎ ক্ষেত্রের বিস্তৃতি ও প্রাবল্য ( আকর্ষণ বা বিকর্ষণের তীব্রতা) তত বেশী হবে।
চার্জের একক কুলম্ব। আগেই বলেছিলাম যে চার্জের প্রবাহ হল কারেন্ট। আরও নির্দিষ্ট করে বললে একক সময়ে কোন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চার্জকে অর্থাৎ চার্জ প্রবাহের হারকে কারেন্ট বলে। t সময়ে Q চার্জ প্রবাহতি হলে, কারেন্ট I = Q/t।
ধারক (Capacitor): পরা-বৈদ্যুতিক (Di-electric) পদার্থ (অন্তরক জাতীয় পদার্থ) দ্বারা বিচ্ছিন্ন দুইটি সমান্তরাল পরিবাহী পাত (প্লেট) নিয়ে গঠিত ইলেক্ট্রনিক কম্পোনেন্টকে ধারক বা ক্যাপাসিটর বলে। মূলত সাময়িকভাবে তড়িৎ শক্তি জমা করে রাখার জন্য ধারক ব্যবহৃত হয়। ধারক দুই প্রান্ত বিশিষ্ট
Through Hole বা
Surface Mount আকারে পাওয়া যায়। সার্কিটে সাধারণ ধারক
এই চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

উপরের সার্কিটের চিত্রের মাধ্যমে ধারক কিভাবে কাজ করে এবং তড়িৎ শক্তি সঞ্চয় করে তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি।
ব্যাটারী বা ডি.সি কারেন্টের উৎস দুইটি প্রান্ত বিশিষ্ট: ধনাত্মক (উচ্চ বিভব) ও ঋনাত্মক (নিম্ন বিভব)। স্বাভাবিক ভাবে পরিবাহক দ্বারা এই দুইটি প্রান্ত যুক্ত করলে বিদ্যুত প্রবাহিত হবে যতক্ষণ না দুই প্রান্তের বিভব সমান হবে। ব্যাটারি ও অন্যান্য তড়িৎ উৎস সম্পর্কে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।
রোধক বা লোড (বৈদ্যুতিক বাল্ব বা মোটর; সকল লোডের কিছুনা কিছু রোধ আছে) দ্বারা কারেন্ট নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এখন ব্যাটারীর ধনাত্মক প্রান্ত হতে ধনাত্মক চার্জ প্রবাহিত হয়ে ধারকের একটি প্রান্তে পৌছায়। ঐ প্রান্তের পরিবাহী পাত তখন সে ধনাত্মক চার্জ গ্রহন করে এবং নিজে ধনাত্মক আধান বিশিষ্ট পাতে পরিণত হয়। এই চার্জিত পাত এর বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের মধ্যে অবস্থিত অন্যান্য চার্জিত বস্তুকে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করতে পারে চার্জের ধরণের উপর নির্ভর করে।
আধান নিরপেক্ষ অবস্থায় বস্তুতে সমান পরিমাণ ধনাত্মক ও ঋনাত্মক চার্জ থাকে। এখন ধারকের ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট পাতটি তার তড়িৎক্ষেত্রে অবস্থিত অপর পাতের ধনাত্মক চার্জকে বিকর্ষণ করবে। ফলে অপর পাতটি ধনাত্মক চার্জ হারিয়ে ঋনাত্মক আধান বিশিষ্ট হবে। ধারকের পাত দুইটি পরাবৈদ্যুতিক (অন্তরক জাতীয়) পদার্থ দ্বারা বিচ্ছিন্ন তাই ধনাত্মক পাত হতে ধনাত্মক আধান সরাসরি ঋনাত্মক পাতে যেতে পারবে না। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যাটরী কারেন্ট সরাবাহ করে যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত দুই পাতে বিপরীতধর্মী আধান বজায় থাকবে। আর যে ধনাত্মক আধান দ্বিতীয় পাত হতে বের হয়ে গিয়েছিল তা ব্যাটারীর ঋনাত্মক প্রান্তে গিয়ে সার্কিট পূর্ণ করবে।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, বিপরীত চার্জবিশিষ্ট ধারকের পাতদ্বয় ব্যাটারীর বিপরীতধর্মী দুই প্রান্তের অনুরূপ। পুরো চার্জ অবস্থায় ধারকের পাতদ্বয়ের বিভব পার্থক্য ব্যাটারীর দুইপ্রান্তের বিভব পার্থক্যের সমান হয়।
লক্ষ্যনীয়, প্রাথমিক অবস্থায় চার্জহীন পাতদ্বয়ের মোট ইলেক্ট্রনের সংখ্যা, পূর্ণ চার্জ অবস্থায়ও অপরিবর্তীত থাকে। অর্থাৎ ধারক কোন অতিরিক্ত ইলেক্ট্রন বা চার্জ জমা করে না। যতগুলো চার্জ একটি পাত গ্রহণ করে ঠিক ততগুলো পাত অপর পাত ত্যাগ করে। ধারকে দুই পাতে ভিন্নধর্মী চার্জ সৃষ্টির কারণে বিভব পার্থক্য সৃষ্টি হয়। এই বিভবের আকারে তড়িৎ শক্তি ধারকে সঞ্চিত হয়।
উপরের সার্কিটে লোড হিসেবে কোন বৈদ্যুতিক বাল্ব যুক্ত করলে দেখা যাবে প্রথমে উজ্জল ভাবে জ্বলছে। সময়ের সাথে ঔজ্জল্য হ্রাস পাবে, একপর্যায়ে নিভে যাবে। এর কারণ ধারকে চার্জ বৃদ্ধির সাথে সাথে সার্কিটে কারেন্ট প্রবাহ হ্রাস পায়। ধারকের ধনাত্মক পাত যখন পুরো চার্জিত হয়, তখন সেটি আর কোন ধনাত্মক চার্জ নিতে পারে না ফলে অপর পাত থেকেও আর কোন ধনাত্মক চার্জ বেরিয়ে ব্যাটারির ঋনাত্মক প্রান্তে যায় না। তাই সার্কিট পূর্ণ হয় না, ফলে কারেন্ট প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।
এখন ব্যাটারী যদি কোন পরিবাহী দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয় তবে দেখা যাবে বাল্ব আবার জ্বলে উঠেছে। আর সময়ের সাথে সাথে ঔজ্জল্য হ্রাস পেয়ে একপর্যায়ে নিভে যাবে। সার্কিটে ব্যাটারী বা অন্য কোন তড়িৎ উৎস না থাকা সত্ত্বেও সার্কিটে তড়িৎ প্রবাহিত হল ধারকের কারণে। ধারকের ধনাত্মক প্রান্তের চার্জ লোড বা বাল্ব হয়ে ধারকের ঋনাত্মক প্রান্তে পৌছায়, এভাবে সার্কিট পূর্ণ হয়। অনেকটাই ব্যাটারীর মত ধারকের দুই পাতের বিভব পার্থক্য শূণ্য না হওয়া পর্যন্ত এই তড়িৎ প্রবাহ চলে। এভাবে ধারক অস্থায়ী তড়িৎ উৎস হিসেবে কাজ করে।
ধারক সম্পর্কিত বাকি আলোচনা পরের পোস্টে দিব। অনেক দিন পর লিখলাম। জানি না গুছিয়ে লিখতে পেরেছি কিনা 
। কোন বিষয় অস্পষ্ট থাকলে জানাবেন। ধন্যবাদ। 
ছবি সূত্র: উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য।