Re: নজরুলের চন্দ্রপ্রীতি
৬০।
মধুর নূপুর রুমুঝুমু বাজে।
কে এলে মনোহর নটবর-সাজে।।
নিশীথের ফুল ঝরে রাঙা পায়ে
মাধবী রাতের চাঁদ এলে কি লুকায়ে,
'পিয়া পিয়া' ব'লে পাখি ডাকে বন-মাঝে।।
আপনি প্রবেশ করেন নি। দয়া করে নিবন্ধন অথবা প্রবেশ করুন
প্রজন্ম ফোরাম » সাহিত্য-সংস্কৃতি » ছড়া-কবিতা » নজরুলের চন্দ্রপ্রীতি
৬০।
মধুর নূপুর রুমুঝুমু বাজে।
কে এলে মনোহর নটবর-সাজে।।
নিশীথের ফুল ঝরে রাঙা পায়ে
মাধবী রাতের চাঁদ এলে কি লুকায়ে,
'পিয়া পিয়া' ব'লে পাখি ডাকে বন-মাঝে।।
৬১।
গুনগুনিয়ে ভ্রমর এলো ফুলের পরাগ মেখে
তোমার বনে ফুল ফুটেছে যায় ক'য়ে তাই ডেকে।।
তোমার ভ্রমর দূতের কাছে
যে বারতা লুকিয়ে আছে —
দখিন হাওয়ায় তারি আভাস শুনি থেকে থেকে।।
দল মেলেছে তোমার মনের মুকুল এতদিনে —
সেই কথাটি পাখিরা গায় বিজন বিপিনে।
তোমার ঘাটের ঢেউগুলি হায়
আমার ঘাটে দোল দিয়ে যায় —
লতায় পাতায় জোছনা দিয়ে সেই কথা চাঁদ লেখে।।
৬২।
মাধবী চাঁদ ওঠে কৈলাস-চূড়ে,
খেলা ভুলিয়া যায়, অনিমেষ চোখে চায়
পাষাণ প্রতিমা প্রায় সেই সুদূরে।
৬৩।
নিত্য শুদ্ধ কল্যাণ রূপে আছ তুমি মোর সাথে।
সান্দ্র নিবিড় সন্ধ্যায় যেই পথ ভুলি’, ধর হাতে।।
প্রদোষে স্বরগ-পাশে
তোমার করুণা ভাসে,
স্নিগ্ধ শান্ত চাঁদ হ’য়ে, প্রভু, আঁধারে পথ দেখাতে।।
৬৪।
আজি ঘুম নহে, নিশি জাগরণ।
চাঁদেরে ঘিরি’ নাচে ধীরি ধীরি তারা অগণন।।
প্রখর-দাহন দিবস-আলো,
নলিনী-দলে ঘুম তখনি ভালো।
চাঁদ চন্দন চোখে বুলালো
খোলো গো নিঁদ-মহল-আবরণ।।
৬৫।
এলো এলো শবেরাত তোরা জ্বাল্ রে বাতি।
হোক রওশন মুসলিম-জাহানের অন্ধকার রাতি।।
আজ ফিরদৌসের হুর-পরীরা আলোতে রাঙে
চাঁদ সেতারার প্রদীপ ভাসায় আস্মানি গাঙে,
ফেরেশ্তা সব হয়েছে আজ মোদের সাথি।।
৬৬।
এসেছি তব দ্বারে ভক্তি-শূন্য প্রাণে।
করুণাময় প্রভু! কর হে পূর্ণ দানে।।
শক্তি বিহীন করে ধরেছি নিশান তব
বহিতে পারি যেন দিও সে-গৌরব,
দিবাকর কর সম ছড়ায়ে অভিনব
অস্তে যাই যেন জীবন-বিহানে।।
সাঁঝের আকাশে পূর্ণিমা চাঁদ সম
রাঙায়ো আঁধার হৃদি-প্রেমের জোছনা বানে।।
৬৭।
এসো বসন্তের রাজা হে আমার
এসো এ যৌবন-বাসর-সভাতে।।
ফুলের দরবারে পাখির জলসাতে
বুকের অঞ্চল-সিংহাসনে মম
বসো আমার চাঁদ চাঁদনি রাতে।।
৬৮।
ওর বাঁকা ভঙ্গিমা দেখে
তৃতীয়ার চাঁদ ডেকে,
হতে চাহে ওর হাঁসুলি-হার।
৬৯।
লুকায়ে রাখিব ফণিনী যেমন মানিক লুকায়ে রাখে,
ঘিরিয়া থাকিব দামিনী যেমন শ্যাম মেঘ ঘিরে থাকে।
মেঘ হয়ে আমি হে চাঁদ তোমায়
আবরি’ রাখিব আঁখির পাতায়,
নিশীথে জাগিয়া কাঁদিব দু’জন প্রিয় হে, চির জনম।।
৭০।
বঁধু আমি ছিনু বুঝি বৃন্দাবনের রাধিকার আঁখি-জলে।
বাদল সাঁঝের যুঁই ফুল হয়ে আসিয়াছি ধরাতলে।।
তাই যেমনি মিলন সাধ ওঠে জেগে
তুমি লুকাও হে চাঁদ বিরহের মেঘে,
আমি পূবালী পবনে ঝরে যাই বনে দলগুলি যেই খোলে।।
৭১।
সেদিন নিশীথে মোর কানে কানে যে কথাটি গেছ বলে
প্রথম মুকুল হয়ে সেই বাণী মালতী লতায় দোলে।।
সে-কথাটি আবার শুনিবে বলিয়া
আড়ি পাতে চাঁদ মেঘে লুকাইয়া
চাহে চুপি চুপি পিয়াসি পাপিয়া ঘন পল্লব তলে।।
৭২।
বসে আছি সেই মালতী বিতানে আজ তুমি নাই কাছে —
ম্লান মুখে পথ চাহে ফুলগুলি আঁধার বকুল গাছে।
দখিনা বাতাস করে হায় হায়
ঝরিছে কুসুম শুকনো পাতায়
নিবু নিবু হল তোমার আশায় চাঁদের প্রদীপ জ্বলে।।
৭৩।
কখন তুমি চাইবে, প্রিয়া, সলাজ অনুরাগে।
তিমির-তীরে অরুণ ঊষা তারি আশায় জাগে।
কেমন ক'রে চাঁদ যে টানে — সিন্ধু জানে, জোয়ার জানে —
দেখিতে আসি, আসিনিকো দিতে তোমায় দেখা।।
৭৪।
নয়ন মুদিল কুমুদিনী হায়!
তাহার ধ্যানের চাঁদ ডুবে যায়।।
ভরিল সরসী তা’রি আঁখি-জলে
ঢলিয়া পড়িল পল্লব-তলে,
অকরুণ নিষাদের তীর সম অরুণ-কিরণ বেঁধে এসে গায়।।
কপোলের শিশির অভিমানে শুকালো,
পাপড়ির আড়ালে পরাগ লুকাল।
সরসীর জলে পড়ে আকাশের ছায়া
নাই সেথা তারা-দল, চাঁদের মায়া,
জলে ডুবে মেটে না প্রাণের তৃষা হৃদয়ের মধু তার হৃদয়ে শুকায়।।
৭৫।
পুরুষ : মন নিয়ে আমি লুকোচুরি খেলা খেলি প্রিয়ে।
স্ত্রী : ধরিতে পারি না পেতে তাই প্রেম ফাঁদ —
তুমি মেঘ আমি চাঁদ, ফের গো কাঁদিয়ে।।
৭৬।
সখি, সেই ত পুষ্প-শোভিতা হ’ল আবার মাধবীলতা।
মাধবী চাঁদ উঠেছে আকাশে, আমার মাধব কোথা।
রাধা আজ নিরাধারা সখি রাধামাধব কোথা।
৭৭।
প্রদীপ কি জ্বলিল আবার।
দিন কি গো শেষ হল মোর নিরাশার।।
বিরহ দাহন কি গো ফুরালো
বৈকালি বায়ে তনু জুড়ালো,
উঠিবে কি চাঁদ আর রবে না আঁধার।।
৭৮।
শ্যাম-সুন্দর-গিরিধারী।
মানস মধু-বনে মধুমাধবী সুরে মুরলী বাজাও বনচারী।।
মধুরাতে হে হৃদয়েশ মাধবী চাঁদ হয়ে এসো,
হৃদয়ে তুলিও ভাবেরই উজান রস-যমুনা-বিহারী।।
৭৯।
আমরা পানের নেশার পাগল, লাল শারাবে ভর গেলাস
পান-বেহুশে আয় রেখে ঐ সাকির বিলোল্ আঁখির পাশ।।
চাঁদ পিয়ালায় রবির কিরণ ঢালার মতো শারাব ঢাল,
ছায় না যেন দিনের আনন কস্তূরী-কেশ খোঁপার ফাঁস।।
প্রজন্ম ফোরাম » সাহিত্য-সংস্কৃতি » ছড়া-কবিতা » নজরুলের চন্দ্রপ্রীতি
০.০৫৮৬২৪৯৮২৮৩৩৮৬২ সেকেন্ডে তৈরী হয়েছে, ৮৫.৩৮১৬৫৮৮৩২৫৭২ টি কোয়েরী চলেছে