Re: রবিবাবুর চন্দ্রকণা
২১।
আয়! আয় বালা! তোরে সাথে লয়ে
পৃথিবী ছাড়িয়া যাই লো চলে!
চাঁদের কিরণে আকাশে আকাশে
খেলায়ে বেড়াব মেঘের কোলে!
আপনি প্রবেশ করেন নি। দয়া করে নিবন্ধন অথবা প্রবেশ করুন
প্রজন্ম ফোরাম » সাহিত্য-সংস্কৃতি » ছড়া-কবিতা » রবিবাবুর চন্দ্রকণা
২১।
আয়! আয় বালা! তোরে সাথে লয়ে
পৃথিবী ছাড়িয়া যাই লো চলে!
চাঁদের কিরণে আকাশে আকাশে
খেলায়ে বেড়াব মেঘের কোলে!
২২।
সে যখন বিদায় নিয়ে গেল,
তখন নবমীর চাঁদ অস্তাচলে যায়।
গভীর রাতি নিঝুম চারি দিক,
আকাশেতে তারা অনিমিখ,
ধরণী নীরবে ঘুমায়।
২৩।
অধরে প্রাণের মলিন ছায়া,
চোখের জলে মলিন চাঁদের আলো,
যাবার বেলা দুটি কথা বলে
বনপথ দিয়ে সে চলে গেল।
২৪।
ঘন গাছের পাতার মাঝে আঁধার পাখি গুটিয়ে পাখা,
তারি উপর চাঁদের আলো শুয়েছে,
ছায়াগুলি এলিয়ে দেহ আঁচলখানি পেতে যেন
গাছের তলায় ঘুমিয়ে রয়েছে।
২৫।
চুপ ক'রে হেলে সে বকুল গাছে,
রমণী একেলা দাঁড়ায়ে আছে।
এলোথেলো চুলের মাঝে বিষাদমাখা সে মুখখানি,
চাঁদের আলো পড়েছে তার পরে।
২৬।
পশ্চিমের আকাশসীমায়
চাঁদখানি অস্তে যায় যায়।
ছোটো ছোটো মেঘগুলি সাদা সাদা পাখা তুলি
চলে যায় চাঁদের চুমো নিয়ে,
আঁধার গাছের ছায় ডুবু ডুবু জোছনায়
ম্লানমুখী রমণী দাঁড়িয়ে।
২৭।
একাদশী রজনী
পোহায় ধীরে ধীরে--
রাঙা মেঘ দাঁড়ায়
উষারে ঘিরে ঘিরে।
ক্ষীণ চাঁদ নভের
আড়ালে যেতে চায়,
মাঝখানে দাঁড়ায়ে
কিনারা নাহি পায়।
বড়ো ম্লান হয়েছে
চাঁদের মুখখানি,
আপনাতে আপনি
মিশাবে অনুমানি।
হেরো দেখো কে ওই
এসেছে তার কাছে,
শুকতারা চাঁদের
মুখেতে চেয়ে আছে।
মরি মরি কে তুমি
একটুখানি প্রাণ,
কী না জানি এনেছ
করিতে ওরে দান।
চেয়ে দেখো আকাশে
আর তো কেহ নাই,
তারা যত গিয়েছে
যে যার নিজ ঠাঁই।
সাথীহারা চন্দ্রমা
হেরিছে চারি ধার,
শূন্য আহা নিশির
বাসর-ঘর তার!
২৮।
কত দিন উঠেছ
নিশির শেষাশেষি,
দেখিয়াছ চাঁদেতে
তারাতে মেশামেশি!
দুই দণ্ড চাহিয়া
আবার চলে যেতে,
মুখখানি লুকাতে
উষার আঁচলেতে।
পুরবের একান্তে
একটু দিয়ে দেখা,
কী ভাবিয়া তখনি
ফিরিতে একা একা।
আজ তুমি দেখেছ
চাঁদের কেহ নাই,
স্নেহময়, আপনি
এসেছ তুমি তাই!
দেহখানি মিলায়
মিলায় বুঝি তার!
হাসিটুকু রহে না
রহে না বুঝি আর!
দুই দণ্ড পরে তো
রবে না কিছু হায়!
কোথা তুমি, কোথায়
চাঁদের ক্ষীণকায়!
কোলাহল তুলিয়া
গরবে আসে দিন,
দুটি ছোটো প্রাণের
লিখন হবে লীন।
সুখশ্রমে মলিন
চাঁদের একসনে
নবপ্রেম মিলাবে
কাহার রবে মনে!
২৯।
কোন বনেতে জানি নে ফুল গন্ধে এমন করে আকুল,
কোন গগনে ওঠে রে চাঁদ এমন হাসি হেসে।
৩০।
ও চাঁদ, চোখের জলের লাগল জোয়ার দুখের পারাবারে,
হল কানায় কানায় কানাকানি এই পারে ওই পারে॥
৩১।
চেয়ে আছে আকাশের পানে
জোছনায় আঁচলটি পেতে,
যত আলো ছিল সে চাঁদের
সব যেন পড়েছে মুখেতে।
মুখে যেন গলে পড়ে চাঁদ,
চোখে যেন পড়িছে ঘুমিয়ে,
সুকোমল শিথিল আঁচলে
পড়ে আছে আরামে চুমিয়ে।
চুমোটিরে বাঁধি ফুলহারে
অধরেতে হাসির মাঝারে,
চুমোতে চাঁদের চুমো দিয়ে
রেখেছে রে যতনে সোহাগে।
৩২।
চাঁদেরে করিতে বন্দী
মেঘ করে অভিসন্ধি,
চাঁদ বাজাইল মায়াশঙ্খ।
মন্ত্রে কালি হল গত,
জ্যোৎস্নার ফেনার মতো
মেঘ ভেসে চলে অকলঙ্ক।
৩৩।
কুসুমের মালা গাঁথা হল না, ধূলিতে পড়ে শুকায় রে।
নিশি হয় ভোর, রজনীর চাঁদ মলিন মুখ লুকায় রে।
৩৪।
যেন কোন ভুলের ঘোরে চাঁদ চলে যায় সরে সরে।
পাড়ি দেয় কালো নদী, আয় রজনী, দেখবি যদি--
কেমনে তুই রাখবি ধরে, দূরের বাঁশি ডাকল ওরে।
৩৫।
তপন-উদয়ে হবে মহিমার ক্ষয়
তবু প্রভাতের চাঁদ শান্তমুখে কয়,
অপেক্ষা করিয়া আছি অস্তসিন্ধুতীরে
প্রণাম করিয়া যাব উদিত রবিরে।
৩৬।
ধৈর্য থাকে না তালের পাতায়, বাঁশের ডালে।
একটু পরেই পালা হল শেষ--
আকাশ নিকিয়ে গেল কে।
কৃষ্ণপক্ষের কৃশ চাঁদ যেন রোগশয্যা ছেড়ে
ক্লান্ত হাসি নিয়ে অঙ্গনে বাহির হয়ে এল।
৩৭।
এই দেখো চেয়ে দেখো-- একবার চেয়ে দেখো--
চাঁদের অধর দুটি হাসিতে ভাসিয়া যায়!
নিশীথের প্রাণে গিয়া সে হাসি মিশিয়া যায়।
৩৮।
ঘোমটাটি খোলো খোলো
মুখখানি তোলো তোলো
চাঁদের মুখের পানে চাও একবার!
বলো দেখি কারে হেরি এত হাসি তার!
৩৯।
তারে হেরি হয় না সে এমন হরষে ভোর;
কী চোখে দেখেছে চাঁদ ওই মুখখানি তোর!
তুই তবু কেন কেন
দারুণ বিরাগে যেন
চাস নে চাঁদের হাসি চাঁদের আদর!
নাই তোর ফুলবাস,
নাইক প্রেমের হাস,
পাপিয়া আড়ালে বসি শুনায় না প্রেমগান!
৪০।
কৃষ্ণপক্ষ প্রতিপদ। প্রথম সন্ধ্যায়
ম্লান চাঁদ দেখা দিল গগনের কোণে।
ক্ষুদ্র নৌকা থরথরে চলিয়াছে পালভরে
কালস্রোতে যথা ভেসে যায়
অলস ভাবনাখানি আধোজাগা মনে।
প্রজন্ম ফোরাম » সাহিত্য-সংস্কৃতি » ছড়া-কবিতা » রবিবাবুর চন্দ্রকণা
০.০৫৭০৬৯০৬৩১৮৬৬৪৬ সেকেন্ডে তৈরী হয়েছে, ৫৯.৮২০৬১২৫৭০৭৬ টি কোয়েরী চলেছে