টপিকঃ আঙুল কাটা জগলু – হুমায়ূন আহমেদ (কাহিনী সংক্ষেপ)
বইয়ের নাম : আঙুল কাটা জগলু
লেখক : হুমায়ূন আহমেদ
লেখার ধরন : হিমু আলি বিষয়ক উপন্যাস
সতর্কীকরণ : কাহিনী সংক্ষেপটি স্পয়লার দোষে দুষ্ট
কাহিনী সংক্ষেপ :
মতি নামের একজন লোক হিমুকে বললো আঙুল কাটা জগলু তাকে ডেকেছে। জগলু শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় আছে। জগলুর সামনে গিয়ে হিমু দেখলো জগলুর সবগুলি আঙুলই আছে, আসলে অন্যের আঙুল কাটে বলে তার নাম হয়ে গেছে আঙুল কাটা জগলু। জগলু গত কয়েক দিনে তার আশেপাশে হিমুকে ৫ বার দেখেছে। তাই তার ধারনা হয়েছে হিমু হয় পুলিশের লোক না হয় বোমা মিজানের লোক। হিমুর কাছ থেকে সত্যি কথা আদায়ের জন্য জল চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হল। একটা চৌবাচ্চার মধ্যে পানি ভরে এক মিনিট সেই পানিতে মাথা চুবিয়ে রাখা হবে। যতক্ষণ সত্যিকথা না বলবে ততক্ষণ এই জল চিকিৎসা চলতে থাকবে।
একটা ঘরে হিমুকে আটকে রেখে চৌবাচ্চায় পানি ভরা হচ্ছে। ঘরে হিমুর সাথে আর একজন লোককেও আটকে রেখেছে। তিনি মনসুর গ্রুপের মালিক মনসুর খান। খান সাহেবের কাছে ২০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল। তিনে সেই টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন বলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছিল, কিন্তু দেখা গেলো খান সাহেবের মেয়ে মিতু সেই টাকাটা দেয়নি। তাই খান সাহেবকে ছাড়া হলো না। তাই জগলু ভাইয়ের হিসাব হচ্ছে এবার টাকা আদায় করে খান সাহেবকে শেষ করে দিবে। জগলু ভাইয়ের দলের লোকেরা কিছুতেই খান সাহেবের মেয়েকে ফোনে ধরতে পারছিলোনা। হিমু একবারের চেষ্টাতেই তাকে ফোনে ধরতে পারলো। হিমু তাকে পরিস্থিতির কথা জানিয়ে বললো প্রথমবার টাকা না দেয়ার কারণে এবার ২০ এর পরিবর্তে ২৫ লাখ দিতে হবে।
পরিস্থিতির কারণে হিমু জগলু ভাইকে রাজি করাতে পারলো টাকাটা হিমু সংগ্রহ করে আনবে আর একই সাথে খান সাহেবকে ফেরত দিয়ে আসবে। হিমু বৃষ্টির মধ্যে রিকসা করে খান সাহেবকে নিয়ে তার বাড়ির দিকে রওনা হল। সেখানে পৌছে ২৫ লাখ টাকার ব্রিফকেস নিয়ে বেরিয়ে এলো। জগলু ভাইকে ফোন করতেই জগলু ভাই বললেন এখন তিনি একটা ঝামেলায় আছে। টাকাটা যেন হিমু তার কাছেই রেখে দেয়। পরে সময় বুঝে তিনি নিয়ে নিবে। এত টাকা নিয়ে হিমু কোথায় যাবে? শেষ পযর্ন্ত হিমু তার খালাত ভাই বাদলদের বাড়িতে গেল। বাদলের মাথা কিছুটা আউলা হয়ে আছে, তার মাথায় একটা অদ্ভুত গান সব সময় বাজতে থাকে। গানটা হচ্ছে - নে দি লদ বা রয়াওহালা গপা। এই গান নিয়ে বাদল খুব অস্বস্তিতে আছে। হিমু সহজেই এই সমস্যার সমাধান করে ফেললো। “পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে” গানটি উলট করে বাজছে।
এদিকে জগলু ভাই ফোন করে জানান যে তিনি রাতে বা পরদিন এসে টাকাটা নিয়ে যাবেন। কিন্তু পরদিন জগলু ভাই এলেন না। দেখতে দেখতে ৬ দিন কেটে গেলো জগলু ভাইয়ের কোন খবর নেই, তার মোবাইল বন্ধ। জগলু ভাইয়ের ছেলের নাম বাবু, মোবাইলে তার নাম্বার সেভ করা আছে। হিমু বাবুর সাথে আলাপ করে গজলু ভাইয়ের কোন হদিস পেল না, তবে জানতে পারলো কদিন পরে সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখ বাবুর জন্ম দিন। জন্ম দিনে সে তার বাবার কাছে একটা ভূতের বাচ্চা উপহার চাইবে।
হিমু মিতুর সাথে ফোনে আলাপ করে জানতে পারে মিতু আর তার বাবা কদিনের মধ্যেই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। হিমু তাদের সাথে দেখা করে তাদের বাড়িতে টাকা ভর্তী সুটকেস কয়েক দিনের জন্য রেখে আসে। এরপরই জগলু ভাই হিমুর সাথে যোগাযোগ করে সুটকেস চায়। হিমু সুটকেস মিতুদের বাড়িতেই রেখে এসেছে শুনে জগলু ভাই হতভম্ব হয়ে যান। তিনি হিমুকে নিয়ে সুটকেস আনতে রওনা হন, পথে হিমু তার ১০-১১ বছর বয়সী বন্ধু শুভ্রর সাথে দেখা করতে যায়। বৃষ্টির কারণে জগলু ভাইও ভেতরে ঢুকেন। নির্মাণাধীন একটি দালানে শুভ্র একা বসে আছে, তার বাবা এখানকার কেয়ারটেকার। গতকাল তার বাবা বড় সাহেবের সাথে চট্টগ্রাম গেছে বলে তাকে এখন একা থাকতে হচ্ছে। কথায় কথায় জগলু ভাই শুভ্রর সাথে গল্পে মেতে উঠেন, হিমুকে চলে যেতে বলেন, সুটকেস পরে আনবেন।
হিমু একটা কাঁচের বোতলে মারবেল ভরে তার সিপি আটকিয়ে জগলুর ছেলে বাবুকে দিয়ে বললো এর ভেতরে একটা মেয়ে ভূতের বাচ্চা আছে। সেখানে হিমু জানতে পারে জগলুর ডানহাত মতি মিয়া ক্রসফায়ারে মারা গেছে তার ডেডবডি আছে মর্গে। হিমু মতির ডেডবডি রিলিজ করিয়ে নিয়ে চলে যায় মিতুদের বাড়িতে সুটকেস নিতে। এদিকে জগলু ভাই ফোন দিয়ে বলেন মতির ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে তার গ্রামের বাড়ী নেত্রকোনাতে দাফন করতে। হিমু বাদলকে নিয়ে একটি মাইক্রবাসে মতির ডেডবডি নিয়ে রওনা হয়, আরেকটি গাড়িতে মিতু আর তার বাবাও তাদের সাথে চলে। মতির গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সেখানকার গ্রামবাসী তাদের গ্রামে মতিকে দাফন করতে দিতে রাজি নয়, তাই হিমু মতির মামার বাড়িতে যায়, সেখানেও একই অবস্থা। তারা বাধ্য হয়ে সেই রাতের বেলাতেই আবার ঢাকার দিকে রওনা হয় মতির ডেডবডি নিয়ে। হঠাৎ করেই ওদের মনে হলো মতি মিয়ার ডেডবডি কাশি দিচ্ছে। ভয় পেয়ে ওরা মতি মিয়ার ডেডবডি রাস্তার ধারে ফেলে দ্রুত ঢাকার দিকে পালিয়ে এলো।
গভির রাতে জগলু ভাই হিমুর মেসে এলো সুটকেস নিতে, ঠিক তখনই তার ছেলে হিমুর কাছে ফোন করলো। এদিকে হিমু জগলু ভাইকে বললো, তিনি ছেলের জন্ম দিনে পুলিসের হাতে ধরা পরবেন এবং তার ফাঁসি হবে। অনেক রাত হয়ে গেছে বলে জগলু ভাই এতো রাতে টাকা নিয়ে যাবেন না বলে হিমুর কাছ থেকে বিদায় নিলো। এবার হিমু বলল তাহলে সুটকেস মিতুদের বাড়িতেই রেখে আসবে।
এদিকে মিতু আর তার বাবা চিরদিনের মত কানাডাতে চলে যাচ্ছা বলে তাদের সাথে দেখা করার জন্য গেলো হিমু। হিমুর উদ্ভট কান্ডকাখানায় মুগ্ধ হয়ে মিতু হিমুকে ভালোবেসে ফেলে। মিতু সরাসরি হিমুকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলো, কিন্তু হিমু তার স্বভাব মত কিছুক্ষণ ফাজলামি করে সেখান থেকে বেরিয়ে এলো।
দুই বছর পরের কথা, বাদলের বিয়ে ঠিক হয়েছে, মেয়ের নাম আফরোজা। মতির ডেডবডি যেখানে ফেলেছে সেই যায়গা আফরোজাকে দেখানোর জন্য হিমু আর বাদল নিয়ে গেলো। সেখানে গিয়ে দেখে সেখানে অচিন বাবার নামে মাজার হয়ে গেছে। মিতুরা কানাডায় চলে গেছে, সেখান থেকে প্রতি মাসেই সে হিমুকে চিঠি লেখে। জগলু ভাই ছেলের জন্মদিনে দেখা করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পরে, আদালত তাকে ফাসীর হুকুম দিয়েছে। আর হিমু আগের মতই আছে।
----- সমাপ্ত -----