টপিকঃ ভালবাসা চির অমলিন পার্ট ২

শক্ত করে দোলনের হাতের কব্জি টা ধরে ওকে হেচকা টান দিয়ে অনুরাগ হাঁটা শুরু করল,।। দোলন এবার বলতে লাগল , প্লিজ অনুরাগ , আমাকে ছেড়ে দাও, তুমি চলে যাও ।। অনুরাগ কোনো কথার উত্তর না দিয়ে দোলন কে প্রায় টানতে টানতে হোটেলে নিয়ে আসল, ।। হোটেলের লবি থেকে যখন ওরা হেঁটে যাচ্ছিল, সবাই ওদের দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিল, কিন্তু অনুরাগ হোটেলের vvip  গেস্ট তাই তাকে কিছু বলার কোনো রকম দৌরাত্ম কেউ দেখল না, অন্য কেউ হলে হয়ত এমন একজন মেয়ে নিয়ে এই হোটেলে আসার পারমিশন দিত না, ।। যদিও এই সব পাঁচ তারা হোটেলেও এই সব সার্ভিস হয়, তবে সেটা খুব প্রাইভেটলি,।। এমন প্রকাশ্যে কোনো প্রস্টিটিউট আসে না,।। আর দোলনের মুখ টা খুব বিস্মিত লাগছিল, চোখের জলে সারা মেকআপ ঘেটে গেছে, চোখের গার করে দেওয়া কাজল, গেলে পড়েছে ।।।
রুমের দরজা খুলে একপ্রকার ছিটকে ফেলে  দিল দোলন কে অনুরাগ মেঝের মধ্যে,।। দরজা বন্ধ করে দিয়ে সে এসে সোফায় বসল ।।। দোলন মেঝের উপর বসে মাথা নিচু করে তখন ও কেঁদে চলেছে ।।
কিছুক্ষন চুপ থাকার পর, অনুরাগ বলল, এই ন্যাকা কান্না টা যদি শেষ হয়ে গিয়ে থাকে তো সার্ভিস দেওয়া শুরু করো, দোলন একবার চোখ তুলে তাকাল, ।। এবার অনুরাগ সোফা থেকে উঠে , রুমের ল্যান্ড ফোন টা হাতে নিয়ে একটা হুইস্কি অর্ডার করল, ।। দোলন এবার চাপা কণ্ঠে বলে উঠল, যে ছাই পাস কোনো দিন মুখে দাও নি আজ কেনো খাচ্ছ?? অনুরাগ এবার ব্যাঙ্গাত্মক হাসি দিয়ে বলল, আরে আজ তো আমার মহা খুশির দিন সেলিব্রেশন করব না, মিনিট ১০ পর কথা বলতে বলতে দরজায় টোকা , অনুরাগের অর্ডার টা চলে এসেছে, ।। অনুরাগ নিজেই  বোতল আর গ্লাস হাতে নিয়ে টেবিলে রাখল, দরজা বন্ধ করে আবার সোফায় এসে বসল, দোলন কে লক্ষ করে বলল , নাও সার্ভ করো, দোলন আবার ভেজা চোখে অনুরাগের দিকে তাকাল, অনুরাগ বললো ওই ভাবে কি তাকাচ্ছ ?? কোনো কাস্টমার কে মদ সার্ভ করে দাও নি কোনো দিন??  ওহ আচ্ছা টাকা টা, অনুরাগ উঠে গিয়ে ব্যাগ থেকে চেক বুক টা বের করে তাতে 50000 এর একটা চেক কাটল, তারপর জিজ্ঞেস করল আচ্ছা কি নামে হবে, জেসমিন না দোলন?? দোলন নূরুত্তর বসে রইল, হ্যা টাকা র ব্যাপার তো দোলন হবে।।
দোলন করুন চোখে তাকিয়ে আছে, দেখে অনুরাগ বললো আরে বিশ্বাস হচ্ছে না চেক বাউন্স হবে না গো, আচ্ছা এই নাও আমার কার্ড আমি পিন নাম্বার বলে দিচ্ছে , এই বলে পার্স থেকে3 টে atm  কার্ড বের করে দোলনের মুখে ছুড়ে মারল, একটা গিয়ে দোলনের চোখে লাগল, দোলন চোখ টা চেপে ধরল, তাতে অনুরাগের মনে কোনো মায়া উদয় হল না।।
এবার বেশ ধমকের সুরে বললো চলো নিজের কাজ কর, ।। দোলন এগিয়ে এসে একটা প্যাক বানিয়ে অনুরাগের সামনে গ্লাস টা এগিয়ে দিল,  অনুরাগ হাত বাড়িয়ে সেটা নিয়ে, অর্ডার দিল আমার পায়ের জুতো টা খুলে দাও।। দোলন দুঃখে কষ্ঠ বেদনায় ভরা চোখ দুটো নিয়ে একবার অনুরাগের মুখের দিকে তাকাল, অনুরাগ চোখের ইশারায় পায়ের জুতো খোলার কথা বলল মদের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে, দোলন জুতো খুলতে যাবে এর মধ্যে দোলন কে বাধা দিয়ে , অনুরাগ বললো আচ্ছা জুতো খোলার জন্য কি আলাদা চার্জ আছে নাকি??, দোলন মাথা নিচু করে অনুরাগের জুতো খুলে দিতে লাগল , অনুরাগ রাগে ঘৃনায়  দাঁত চেপে বলে উঠল আমি যত দূর জানি তোমরা কাস্টমারের জমা আর প্যান্ট খোলার জন্য টাকা নাও।। দোলনের বুকের ভেতর টা যেন ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেলো, ।। হাতের গ্লাস টা ফাঁকা অনুরাগ আবার হুকুম দিল আরো ও এক প্যাক বানিয়ে দিতে , দোলন এবার অনুরাগের পা ধরে অনুরোধ করল, প্লিজ অনুরাগ আর খেও না ।। অনুরাগ জেন তপ্ত সেলের মত তেঁতে ছিল, নিচু হয়ে, দোলনের গাল টা চেপে ধরে বললো কোনো বেশ্যার মুখে আমি আমার নাম শুনতে চাই না, বাবু, বা সাহেব বলো।। বলে দোলনের মুখ টা ছিটকে সরিয়ে দিল।। দোলন এবার ভেজা কন্ঠে বলে উঠল, প্লিজ আর যাই বলো আমাকে বেশ্যা বলে গালি দিও না, ও কথা তোমার মুখে শুনলে হৃদয় টা ফেটে যায় আমার।।
অনুরাগ হেসে বললো তোমাদের আবার হৃদয় থাকে নাকি , তোমাদের তো শুধু শরীর থাকে জানি, সেটা দিয়েই তো সব চলে ।।
দোলন এবার নিরুত্তর দাঁড়িয়ে রইল।।
খানিক বাদে অনুরাগ বলে উঠল, যাক ছার এই সব কথা , আজ রাতে তোমার বাবু তো আমি আমাকে খুশি কর, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল এক কোণে দোলন, অনুরাগ  একটা সিগারেট ধরিয়ে , দোলনের কাছে গিয়ে দাঁড়াল ওর মুখের উপর ধোয়া ছড়িয়ে বলল , জামা কাপড় খোলো,  এবার দোলন ঘৃণার চোখে একবার অনুরাগের দিকে তাকালে, অনুরাগ বলে উঠল কি হল খোলো, তোমরা তো টাকার জন্য নগ্ন হও, আর আমি তোমাকে টাকা দিয়েছি ।। ও আচ্ছা আমি খুলে দেবো, তোমরা বাবু রা বোধ হয় তোমার জমা কাপড় নিজে হাতেই খুলে দেয় , বলেই অনুরাগ এক হেচকা টানে দোলনের বাপাশে জামার কিছু টা অংশ ছিড়ে দিলো, দোলন এবার নিজেকে সামলে রাখতে না পেরে সপাটে অনুরাগের গালে একটা চড় বসিয়ে দিল, অনুরাগের মাথায় যেন রক্ত চড়ে গেলো, সে দোলন এর সাথে জোর করতে লাগল , ধস্তাধস্তি তে দোলনের গলার কাছে কিছু টা জায়গা অনুরাগের হাতের আংঠির আঁচড়ে কেটে গেলো, দোলন যন্ত্রণায় কেঁদে উঠল, এবার অনুরাগের ঘোর কাটল, সে তাড়াতাড়ি রক্ত মুছিয়ে তাতে বরফ চাপা দিল, এবার অনুরাগের চোখে রাগ, ঘৃণা কোনো টাই আর দোলন দেখতে পেল না।। পরম যত্নে সে দোলনের ক্ষত স্থান এর শুশ্রসা করছে ,  দোলন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল অনুরাগের দিকে , এবার অনুরাগের চোখ পড়ল তার দিকে, চোখা চুখি হতেই অনুরাগ দোলন কে একটু ধাক্কা দিয়ে সরে গেলো, উঠে গিয়ে জানলার সামনে দাঁড়াল, আর বললো বেড়িয়ে যাও আমার চোখের সামনে থেকে, তোমাকে দেখলে আমার শরীর ঘেন্নায় গিন গিন করছে ।। আর যাওয়ার সময় মনে করে চেক টা নিয়ে যেও, আজ রাতের তোমার উপার্জনের ক্ষতি আমি করেছি ।।
দোলন এবার আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ল,  ঘর ময় ছড়িয়ে থাকা  atm. কার্ড গুলো আর চেক তা তুলে নিয়ে টেবিলের উপর রাখল, তারপর দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল , এমন সময় অনুরাগ বলে উঠল , সত্যি কি তুমি আমাকে কোনো দিন ভালোবেসে ছিল দোলন,??  এতক্ষণ পর অনুরাগ দোলন নাম টা এত ভালোবাসার সাথে নিল, দোলনের বুক টা ভরে গেলো,।। দোলন চুপ চাপ দাঁড়িয়ে রইল, ।। অনুরাগ। বলে চলল কি এত পয়সার দরকার ছিল যার জন্য তুমি নিজেকে এই ভাবে বিকিয়ে দিচ্ছ রোজ রোজ, আজ দেখ আমার কত টাকা , তুমি তো চেয়েছিলে আমি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হই, তাই তো হয়েছি, তবে সে জীবনে তুমি কোথায়, আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি, কোথায় কোথায় তোমাকে খুঁজেছি জানো তুমি?? রাত দিন শুধু তুমি ছিল আমার মনে, আমি তোমাকে মনের সব টুকু দিয়ে ভালোবেসেছি আর তুমি রোজ রাতে আমার ভালোবাসা কারো না কারো বিছানায় নষ্ট করেছো, বলতে বলতে অনুরাগের গলা ভেঙে এলো, সে বিছানার এক প্রান্তে বসে পড়ল মুখের উপর দুই হাত চাপা দিয়ে।।
দোলন দরজার সামনে একটা টেবিলের উপর হাত রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল ।।
অনুরাগ মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে বলে উঠল আছে কোনো জবাব তোমার কাছে ??

দোলন এবার কথা বলে উঠল, তোমার সাথে যেদিন লাস্ট ফোনে কথা হয়, তার 2 দিন পর বাবা আত্মহত্যা করেন , আমি দিশে হারা হয়ে গিয়েছিলাম তোমাকে অনেক বার ফোন করি তবে তোমার ফোন বন্ধ ছিল, অনুরাগ খুব অবাক হয়ে বলে আত্মহত্যা করেন তোমার বাবা??  দোলন এবার দরজায় হেলান দিয়ে মেঝে তে বসে পড়ে, তারপর বলতে থাকে।। আমার পড়াশুনা আর মনামির পড়াশুনা তে বাবার প্রপিডেন্ডফান্ড এর অর্ধেক টাকা শেষ হয়ে যায়, আর বাকি টা বাবার বুকে প্রেসমেকার বসাতে, ।। বাবার পেনশন টাও তেমন ছিল না, সব মিলিয়ে এত খরচ বাড়িটা বন্দক দিতে হয়, সেটা সর্বসাকুল্যে 2 লক্ষ টাকা দাঁড়ায়,  দেনাদার চাপ দিতে থাকে বাড়ি ছাড়াবার জন্য না হলে বাড়ি দখল করবে, মায়ের গয়না গাটি বেঁচে আরো বাকি কিছু জিনিস বিক্রি করে, 70 হাজার মত হয়, তখন ও 1লাখ 30 কম , কারো কাছে ধার পাওয়ার আশা ছিল না, তোমাকে বলব তোমার ও সেই একই অবস্থা, ভেবে ছিলাম তুমি যদি জব টা পাও হয়ত আমাকে কিছু হেল্প করতে পারবে কারো কাছে ধার নিয়ে।। এর মধ্যে অফিসের বস ও প্রায় 1 বছর ধরে আমার পেছনে পরে, মা বলত যে মেয়ে হয় রুববতী যৌবনের তার অনেক জ্বালা, কুকুর বিড়াল ছিঁড়ে খায়।। অনেক সামলে থাকতে হয় রে মা।।
কু প্রস্তাব দিত দিনের পর দিন, তোমাকে বলতে সাহস পায় নি কারণ তোমাকে বললে তুমি অফিসে গিয়ে ঝামেলা করতে, আমার চাকরি টা চলে যেত, আর ওটাই ছিল আমার সম্বল, তাই সেই ভয়ে আমি তোমাকেও কিছু বলতে পারিনি, ।।সেদিন তুমি চাকরি টা পাবে এই আসতেই সারাদিন অস্থির ভাবে আমি অফিসে কাটাই, তার মধ্যে সেদিন ও আমার বস মি.সিংহানিয়া আমাকে পার্ক হোটেলে যাওয়ার জন্য অফার করল, প্রতিদিন এর এই অপমান টা আমার গায়ে সয়ে গিয়েছিল, তবে সেদিন তিনি আমাকে ফাঁকা অফিসে মলেস্ট করার চেষ্টা করেন , ।। মাথা টা গরম হয়েছিল, রাগে ঘৃনায় মাথা টা জ্বলছিল আর বাড়ি ফিরে যখন তোমাকে ফোন করলাম , তোমার কাছ থেকে ও যখন জানলাম এই চাকরি টাও তুমি পাও নি আমি নিজের রাগ সংবরন করতে পারিনি, তোমাকে বিশ্রী ভাবে অপমান করি।। অনুরাগ অবাক করা চোখে এক দৃষ্টে তে দোলনের দিকে তাকিয়ে আছে, দোলন বলে চলল , ।। পরদিন সকালে উঠে বাড়িতে পাওয়না দার এসে বাবা কে খুব বাজে ভাবে অপমান করছে, এমনিতেই বাবার হার্টের অবস্থা ভালো না , ।।
সেদিন অফিস গিয়ে মনে হচ্ছিল আজ যদি বস আমাকে একবার এসে প্রস্তাব দেয় আমি রাজি হয়ে যাব, ঠিক অফিস শেষে প্রস্তাব টা আমি পাই, তবে আমি বস কে বলি , আমি খুব বিপদে পরে রাজি হচ্ছি, আমার 1 লাখ 30 হাজার টাকা লাগবে, বস আমাকে কথা দেয় উনি ওই টাকা আমাকে দেবে, ।। সেদিন রাতে পার্ক হোটেলের বন্ধ রুমে আমি আমার সর্বস্ব ওই লম্পট এর হাতে তুলে দিই , 2 ঘন্টা কাটানোর পর যখন আমি জিজ্ঞেস করি, আমার টাকা টা কবে পাবো, জানোয়ার টা হেসে বললো দোলন তোমার প্রমোশন পাক্কা চিন্তা নেই, আমি বললাম স্যার আমার প্রমোশন চাই না, আপনি আমাকে বলেছিলেন 1 লাখ 30 হাজার টাকা দেবেন..  জানোয়ার টা বিশ্রী ভাবে হেসে বলে, তোমার মত মেয়ে ছেলে 200 টাকা তে কালি ঘাটের গলিতে পাওয়া যায়, আর তোমাকে আমি 10000 হাজার সালারি থেকে প্রমোশন দিয়ে 25000 করেদিচ্ছি এটাই অনেক বেশি, 1 লাখ 30 হাজার সাধ তো কম না??, কোনো দিন চোখে দেখেছো,?? লজ্জায় ঘৃনায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিল, ।। চোখ মুছতে মুছতে বাড়ি ফিরেছিলাম সে রাতে।। মা বুঝতে পেরেছিল কিছু একটা ঘটেছে, জোর করে জিজ্ঞেস করতে সব বললাম , বুঝতে পারিনি দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে বাবা সব কথা শুনেছিল, সেই রাতেই গলায় দড়ি দিয়ে নিজেকে শেষ করে দিল মানুষ টা , সেই রাতেও আমি দিশে হারা হয়ে যাই, আমি তোমাকে ফোন করেছিলাম কিন্তু তোমাকে পাই নি।। অপঘাতে মৃত্যু বাবার কাজ তিনদিনে উঠে যায়, এবার দেনাদার আরো চাপ দেয় বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য , নিরুপায় হয়ে আবার বসের দারস্ত হই, হাত জোর করে টাকা টা চাই , আর তার প্রতিদান আমাকে চাকরি থেকে স্যাক করে দেওয়া হয়।। তোমাকে ফোনে না পেয়ে সেদিন আমি তোমাদের বাড়ি যাই খুব নিরুপায় হয়ে, কারণ ঘরে খাবার মত চাল পর্যন্ত ছিল না, বাবা মারা যাওয়ার পর দেনাদার রা মাছির মত ছেকে ধরে, যা ছিল হাতে সব টাই দিয়ে দি।। তোমাদের বাড়ি গিয়ে দেখি গেটে তালা, আর কোথাও খোঁজ নেওয়ার মত জায়গা আমার জানা ছিল না।। আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকেও খালি হাতে ফিরিতে হয়,।। সারাদিন ক্লান্ত পেটে একটা দানা পর্যন্ত পরে নি, হাওড়া স্টেশনে বসে বসে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, হঠাৎ মাথায় কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে ঘুম ভেঙে , দেখি এক মাঝ বয়েসী মহিলা পাশে বসে, আমাকে জিজ্ঞেস করল , কিরে কি ব্যাপার এইভাবে এখানে ঘুমাচ্ছিস, দেখে তো ভদ্র ঘরের মেয়ে মনে হচ্ছে ।। বললাম বড় ক্লান্ত হয়ে, সারাদিন তো পেটে কিছু পরে নি দেখে মনে হচ্ছে, মহিলা টা জিজ্ঞেস করল ।।মাথা নিচু করে বসে রইলাম, দোকান থেকে চা আর পাউরুটি কিনে দিল, সেই সময় পেটের ক্ষীদের জ্বালায় , কিছু মাথায় আসল না যে লোক টি আমায় খেতে দিচ্ছে সে ভালো না খারাপ , ।। তারপর সেই অন্ন দাতাকে আমার সব দুঃখের কথা বললাম, ।। সে আমাকে প্রস্তব দিল চাকরি করতে যেখানে যাবি ওই তোর বসের মত ঠকবাজ লোকের খপ্পরে পরিবি, তার থেকে ভালো ধান্দা কর, কথা টা শুনে বুকের ভেতর তা ফাঁকা হয়ে গেলো যে খাবার টা কিছু আগে খেয়েছিলাম সেটা গলা দিয়ে উঠে আসতে চাইল, ঘেন্নায় মুখ টা ফিরিয়ে নিয়ে বললাম, বেশ্যা বৃত্তি করার চেয়ে আমার মরণ ভালো।। তখন ওই মহিলা মুখ বেকিয়ে বলল হারে মাগী যখন খালি পেটে পড়েছিলি এই বেশ্যা এসে তোর পেটে খাবার দিয়েছে, কোনো ভদ্র লোকের বেটা আসে নি।।
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম, আমার হাতে একটা ফোন নাম্বার গুজে দিয়ে বলল শোন এই নাম্বারে ফোন করিস , আর না হলে এই পরের ট্রেনে লাইনে গলা দিস।। আমি করুন ভাবে তার দিকে তাকালাম , এরপর সে স্নেহের হাত মাথায় রেখে বললো ও মেয়ে এই পৃথিবীতে আমরা কেউ নিজের জন্য বাচি না, এই দেখ আমাকে নিজের জন্য হলে তো এতো দিনে রেল লাইন মাথা দিতাম, পেটে র দুটো বাচ্চা আছে স্বামী মোর ছেড়ে পালাল সে অনেক বছর আগে, ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে এই লাইনে এসেছি।। জানি বড় হয়ে যখন মানুষ হবে এই মাকেই বেশ্যা মাগী বলে লাথি মারবে, তবে আমি তো তাদের ফেলতে পারি না।। তোর জীবনের মা আর বোনের দায়িত্ব আছে , দেখ তুই কি করবি বলে ওই মহিলা চলে যায়।।
বেশ অনেক রাতে বাড়ি ফিরে দেখি মা আর মনামী বসে আছে আমার পথ চেয়ে, সারাদিন না খাওয়া, মা কে বললাম মুদিখানা থেকে বাকি তে কিছু আনতে পড়তে, মা বললো বাকি দেওয়া ওরা বন্ধ করেছে আগের 1600 টাকা না মেটালে আর দেবে না।। খুব কান্না পেল মনামী টাকে দেখে  মুখ শুকিয়ে গেছিল বেচারীর ।ওই রাতে তোমাকে আবার ফোন করলাম জানি আজও ফোন বন্ধ পাবো, বুঝেছিলাম তুমি নাম্বার বদলে ফেলেছো, এত অপমানের পর আর আমার মুখ দেখতে চাও না।। পাশের বাড়ির থেকে দুমুঠো চাল এনে ফুটিয়ে খাই, বিশ্বাস করবে না অনুরাগ ভাত মেখে খাবার জন্য ঘরে লবণ টুকু ছিল না, সেদিন বুঝেছিলাম জীবনে টাকা কত টা প্রয়জনীয়।।
বলতে বলতে দোলনের গলা ভারী হয়ে গেলো, অনুরাগের চোখ লাল হয়ে জল ঝরে পড়ছে, দোলন এর তা চোখে পড়ল না, মাথা নিচু করে দোলন বলে চলল , সারারাত ভাবলাম , কি করব ।।
সকালে উঠে ওই মহিলা কে ফোন করলাম, উনি আমাকে আবার সেই হাওড়া স্টেশনে দেখা করতে বললো, আমার হাতে একটা ঠিকানা আর নাম দিল, ঠিকানা ছিল সোনাগাছির, মহিলার হাত ধরে বললাম, কাকিমা এই কলকাতার মেয়ে আমি ছোটো থেকে স্কুল কলেজ এই খানে এই চেনা শহরে আমি যে এই কাজ করতে পারব না।। বুঝি আমার উপর ওনার দয়া হল,কি একটা ভেবে আমাকে বললো মুম্বাই যাবি? আমি এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম ।। তারপর উনি ফোনে কার সাথে কথা বলল, সেদিন আমার হাতে 500 টাকা গুজে দিল, বললো বাড়িতে গিয়ে মা বোন কে কিছু খেতে দে নিজেও কিছু খা।।
6 দিন পর আমাদের মুম্বাই যাওয়ার দিন স্থির হল, বাড়ি টা দেনাদার হাতে ছেড়ে ঘরের কিছু জিনিস সাথে নিলাম আর বাকি সব বিক্রি করে হাতে কিছু টাকা নিয়ে, মা বোন কে নিয়ে মুম্বাই পারি দিলাম,।।
আগের থেকে বলা ছিল একটা ভালো কলোনিতে একটা বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলাম 9 হাজার টাকা ভাড়া হাতে ছিল 22000 টাকা ঘরের সব সম্বল বিক্রি করে এইটুকু ছিল, দু মাসের ভাড়া এডভান্স দিয়ে দিলাম।।
প্রথম দিন এজেন্টের সাথে দেখা করলাম, ফুলি কাকিমা বলে দিয়েছিল, কাস্টমার যা দেবে তার হাপ আমার আর হাপ এজেন্ট এর।। প্রথম দিন যখন ওদের সাথে দেখা করতে গেলাম ওরা তো হেসেই খুন, আবে এ ক্যা হে রে বেহেন জী ধান্দা করনে আই, এ সালবার কামিজ মে কাস্টমার দূর ভাগে গা।। আমাকে একটা মর্ডার ড্রেস দিল, ভালো করে সাজিয়ে পাঠাল হোটেল রুমে, আর নাম দিল জেসমিন, এই আমার নতুন জন্ম নতুন নাম, মা কে বলেছিলাম একটা কোম্পানিতে জব করি, নাইট শিফট, মা বলেছিল রাতে কাজ করবি কোনো বিপদ আপদ হয় যদি, মাকে বলেছিলাম এটা মুম্বাই মা এখানে অনেক মেয়েরাই রাতে কাজ করে , অনিচ্ছা সত্বেও মা রাজি হয়, আর তো কোনো উপায় ছিল না।। মনে মনে বলে উঠলাম, যে ভয় তুমি পাচ্ছ মা, তোমার মেয়ে সেই ভয়ের সাথেই রোজ রাতে এক বিছানায় শোবে।।
প্রথম রাত একজন আমার ঘরে আসে, বাবার বয়েসী একজন লোক, গলায় মোটা সোনার চেন, সুট বুটে ভদ্র লোক, মদ্যপ অবস্থায় আমার কাছে আসে, মদের গন্ধে আমার গা গুলিয়ে ওঠে, তারমধ্যে ভয়ে লজ্জায় আমি কুঁকড়ে যাই।। বিছানায় নিয়ে আমাকে ছিড়ে কুরে খেতে থাকে আমি বাধা দেওয়ায় , বুকের মাঝের মাংস পিন্ড খামচে ধরে বলে শালী 14000 সে তুজে খারিদা, আজ রাত কে লিয়ে তু মেরি হে জেয়াদ নখরা কিয়া না ইধারী মার দুঙ্গা।। আমি  যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠি, তবে আমার বেদনা যেন ওই পশু টি পরম কামনা র সুখ দিল, সে ইচ্ছা কৃত আমার সারা শরীর জুড়ে আঘাত করতে লাগল আমি যন্ত্রণায় কেঁদে কেঁদে উঠছিলাম আর ঐ নরখাদক সুখ নিচ্ছিল , ।। সকাল বেলা ক্লান্ত শরীর হঠাৎ খুব জোর একটা আঘাত অনুভব করলাম মেঝে তে পরে গেলাম, ওই রাতের বাবু টি সারারাত আমাকে বিছানায় নিয়ে ফূর্তি করে সকাল বেলা লাথি মেরে খাট থেকে নামিয়ে দিলো, বললো চল অব নিকাল।।
সকাল বেলা এজেন্টের কাছে টাকা নিতে গিয়ে হাতে পেলাম দু হাজার, জিজ্ঞেস করলাম, আমার তো আধা এমাউন্ট পাওয়ার কথা, তারা আমাকে বুঝিয়ে দিল এইসব কোনো ব্যাপার নেই, প্রতি কাস্টমার পিছু 2000 এটাই কন্ট্রাক 2 বছরের।। মানতে হলে মান না হলে ফোট।।  বুঝলাম এই দুনিয়া সকলে ই  মানুষ ঠকিয়ে মানুষ বড় হয় ।।
এই ভাবে কেটে গেল মাস ছয়েক। প্রতি রাতে শরীরে না না আঘাত পেতাম, কখন ও ইচ্ছা কৃত নখের আঁচর, কখনও সিগারেট এর ছেঁকা , বুঝেছিলাম এই যন্ত্রনা গুলো আমাকে মেনে নিতে হবে ।।প্রতি রাতে পাশবিক যন্ত্রণার জন্য আমাকে তৈরী থাকতে হবে ।।মাসে 15- 16 দিন কাজ হত, আবার কোনো মাসে 4-5 দিন, ঘর ভাড়া মনামির কলেজ পড়াশুনা, মায়ের ঔষুধ , সংসার খরচ সব মিলিয়ে এই মুম্বাই শহরে খুব কষ্ট করেই চলছিল।। এই লাইনে কাজ করতে করতে সাববো আর প্রীতির সাথে আলাপ হয়, ওই আজ যারা ছিল আমার সাথে,  ওরা আমার সব কথা শুনে বলে ওই এজেন্ট গুলো হার *** হয়, সব টাকা নিজের হজম করে ।। তখন আমি উপায় জানতে চাই, ওরা বলে যেদিন কোনো ক্লাইন্ট থাকবে না সেদিন রাস্তায় নেমে পরবি, যা পাবি সব তোর,  ।। তবে থেকে এজেন্টের সাথে কাজ করি আর ফাঁকা দিনে রাস্তায় দাড়াই, ।। জানো অনুরাগ এই জীবন টা কেউ সুখে বেঁছে নেয় না, এইখানে সব কটা মেয়ের জীবন এক একটা দুঃখে ভরা উপন্যাস, উপর তলার মানুষ রা আমাদের বেশ্যা বলে কিন্তু আমরা যে কেন বেশ্যা হই সেখবর কেউ রাখে না।। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ল দোলন, অনুরাগ কখন ওর কাছে এসে বসেছে দোলন টের পায় নি।। দোলনের হাত তা ধরে নিজের বুকে টেনে নিতে চাইল, কিন্তু দোলন নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো না অনুরাগ আমাকে এই ভাবে আর কাছে টেনো না, আমি তোমার নষ্ট প্রেমিকা , এই শরীর আর ভালোবাসা বোঝে না ।।
অনুরাগ বললো মা আর মনামী কেমন আছে, দোলন চোখ মুছে বললো মা মারা গেছে, অনুরাগের বুকের ভেতর যেন আবার একটা আঘাত নেমে আসল।। মনে মনে নিজেকে তিরস্কা করে উঠল, এই মেয়েটির জীবনে একটার পর একটা ঝড় বয়ে গেছে , এত কিছু সহ্য করছে আর এই আমি কিনা ওকে এত যন্ত্রনা দিচ্ছিলাম ।। অনুরাগের চোখ ভিজে গেলো।।
দোলন বলে উঠল, মায়ের কাছে ধরা পড়ে গেলাম একদিন আমার ব্যাগে , গর্ভ নিরোধক পিল খুঁজে পেলে, জবাব চাইল, আমি বলতে বাধ্য হলাম সব টা, দুঃখে লজ্জায় আমাকে বলে উঠল এই বেশ্যা বৃত্তির উপার্জন করা টাকায় আমার বেঁচে থাকার চেয়ে মরণ ভালো।। পা ধরে ক্ষমা চাইলাম, মা তো ক্ষমা করে দিল, বুঝেছিল কেনো তার মেয়ে এই পথে গেছে, তবে সেও আর বেশি দিন থাকল না।। এখন মনামির মুখ চেয়ে বেঁচে আছি, ও কিছু জানে না, জানলে হয়ত আমাকে ঘৃণা করবে, তবে ও জীবনে সুখী হোক এই আমি চাই।।
অনুরাগ আর কোনো বাধা মানল না দোলন কে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে , ক্ষমা চাইতে লাগল, ।। আচ্ছা দোলন তোমার খুব কষ্ঠ হত না যখন ওই জানোয়ার গুলো তোমাকে আঘাত করত? দোলন মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো, ।। বুকের উপর থেকে জামাটা টেনে নামিয়ে নখের আঁচর গুলো দেখালো অনুরাগ কে, অনুরাগের হৃদয়টা বেদনায় ভরে উঠল, অনুরাগ হাত দিয়ে স্পর্শ করে বলল খুব ব্যাথা হয়, ?? পিঠে , তল পেতে সিগারেটের ছ্যাঁকা র দাগ, সারা শরীর ভরে ছিল শুধু ক্ষত চিহ্ন, অনুরাগ পরম যত্নে ক্ষত স্থান গুলো তে আদর করতে থাকে।। দোলন কাঁদতে কাঁদতে অনুরাগের বুকে মাথা রেখে , অনুরাগ বলে উঠল আজ আমিও তোমার শরীরে আর একটা ক্ষত বানিয়ে দিলাম, কত যন্ত্রনা তুমি সহ্য করছো দোলন, ।। দোলন চোখ মুছে বললো ওটা তোমার দেওয়া ক্ষত না গো ভালোবাসা, আর কোনো যন্ত্রনা নেই গো আমার এই যে তুমি ছুঁয়ে দিলে সব ব্যাথা বেদনা কোথায় চলে গেলো।। অনুরাগ আবার দোলন কে নিজের বুকের কাছে চেপে ধরল ।।
তুমি আর মনামী আমার সাথে কলকাতায় ফিরবে, আমি ব্যাবস্থা করছি,  অনুরাগ বলল , না অনুরাগ তা আর হয় না দোলন উত্তর দিল, কি হয় আর না হয় সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও অনুরাগের গলায় প্রতিবাদী সুর ।।
অনুরাগ দোলন কে বিয়ে করবে , এটা দোলন জানত , কোনো বারন সে শুনবে না।।
প্রায় ভোর হয় হয়, অনুরাগ ঘুমোচ্ছে,  ব্যালকনির সামনে দাঁড়িয়ে দোলন ভাবছে আর কিছু পরে হয়ত সূর্যদয় হবে ।। তার জীবনেও আজ নতুন সূর্যদয়।। অনুরাগের মাথার কাছে বসে ওর কপালে নিজের আলতো ঠোঁটের ছোঁয়া বুলিয়ে দিল দোলন।।

সকাল 10 টা,
ঘুম ভাঙতে বড্ড দেরি হয়ে গেছে, ঘরে রোদ ঢুকে আলো ঝলমল করছে, কিন্তু দোলন কোথায়, অনুরাগ উঠে এদিক সেদিক দেখতে লাগল, না বাথরুমেও নেই।। পাগলের মত ছোট ছুটি করতে লাগল, রিসেপসনে ফোন করে জানতে চাইল সকালে কাউকে ওর রুম থেকে বেরোতে দেখেছে কিনা।। এর মধ্যে অনুরাগের নজরে পড়ল একটা চিঠি টেবিলের মাঝে রাখা, হাতের থেকে ফোন টা নামিয়ে চিঠি টা নিলো।।
"জানি অনুরাগ তুমি আমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসো কলকাতায় ফিরে আমাকে বিয়ে করবে, তবে আমি যদি তোমাকে বিয়ে করি নিজের চোখেই ছোট হয়ে যাব, এই শরীর যে নষ্ট হয়ে গেছে, তবে মনের প্রবিত্র তা এখন ও ঠিক আগের মতই আছে, সেখানে আজও তুমিই আছো ।। তবে তোমাকে বিয়ে করলে আমি নিজেকে কোনো দিন ক্ষমা করতে পারব না, তাই আমাকে বিদায় দাও।। একটা দায়িত্বে দিয়ে যাচ্ছি তোমার কাঁধে জানি সেটা তুমি নেবে সে বিশ্বাস আমার আছে, ।। আমার পরে মনামির আর কেউ রইল না, ও বড্ড একা হয়ে গেলো, এত দিন অনেক কষ্টে ওকে আগলে রেখেছি, ।। আমি যত তা নষ্ঠ, অপবিত্র, আমার বোন ঠিক তত তাই স্বচ্ছ পবিত্র,  আমার অতীত জেনে হয়ত, কেউ ওকে আপন করবে না, তবে আজ তোমার কাছে ওকে রেখে যাচ্ছি ওকে প্লিজ দেখো, বাড়ির ঠিকানা টা দিয়ে দিলাম।।
পারলে আমাকে ক্ষমা করো...
ইতি তোমার
নষ্ট প্রেমিকা ..
বেলা 1 নাগাদ সাগরের তীরে ভেসে আসে দোলনের বডি টা, ময়না তদন্ত করে রিপোর্ট আসে অত্যাধিক নেশা করার দরুন সমুদ্রে পরে, এক্সিডেন্টাল মৃত্যু, ।। পরদিন সকালে বডি ছাড়ে, সকাল সকাল দোলনের শেষ কাজ সেরে, মনামী কে নিয়ে , মুম্বাই এয়ারপোর্টে আসে অনুরাগ।। মনামী দিদির মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে।। সন্ধ্যে 8 টায় কলকাতায় ল্যান্ড করে ।।
অনুরাগ 15 তারিখে ফিরছে সেটা ফোনে জানিয়ে দিয়েছিল বাড়িতে। রিয়া আর ধীরেন বাবু ঘর সাজিয়ে নানা রকম খাবার দাবার রেডি করে , অনুরাগের পথ চেয়ে বসে আছে ।।
নিচে গাড়ি থামার আওয়াজ, রিয়া ঘর অন্ধকার করে অপেক্ষা করছে, অনুরাগ ঘরে ঢুকতেই আলো জ্বালিয়ে ওকে বার্থডে উইশ করল।। কিন্তু আলো জ্বালাবার সাথে সাথেই ধীরেন বাবু আর রিয়া একটু চমকে যায়, অনুরাগ একা ঘরে আসে নি, সাথে আছে 25-26 বছরের একটি মেয়ে, ধীরেন বাবু চিনতে পারল, দোলন , সেই একবার কলেজে পড়ার সময় অনুরাগের সাথে এসেছিল ওদের বাড়িতে , ধীরেন বাবু বলে উঠল দোলন কে কোথায় পেলে??, রিয়া অবাক ভাবে তাকিয়ে ছিল মেয়েটির দিকে, এবার ধীরেন বাবুর দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল , এ কি সেই দোলন,?? ধীরেন বাবু মাথা নাড়ল।। হ্যাঁ।। অনুরাগ শিউলি মাসি কে ডেকে পাঠাল, শিউলি অনুরাগের বাড়ির কাজের লোক এদের বাড়িতেই থাকে ওনার কেউ নেই, আর মনামী কে বলল তুমি ওনার সাথে ঘরে যাও।।
মনামী শান্ত ভাবে শিউলি মাসির সাথে ঘরে চলে গেলো।।
তারপর বিস্তারিত সব ঘটনা রিয়া আর ধীরেন বাবু কে বললেন, তবে রিয়া বুঝতে পারল না ধীরেন বাবু  মনামী কে দোলন বলল কেনো?  অনুরাগ বললো কলেজে পড়ার সময় দোলন কে ঠিক মনামির মতই দেখতে ছিল, দখলে জমজ বোন মনে হয়, প্রথম বার মনামী কে দেখে অনুরাগ ও একটু অবাক হয়ে গিয়েছিল ।।

রাত হয়েছে, রিয়া বাড়ি ফিরবে।। অনুরাগ ড্রাইভার কে বলে দিয়েছে রিয়া কে পৌঁছে দিয়ে আসতে।। গেটের কাছে এসে অনুরাগ রিয়ার হাত ধরে বললো, রিয়া পারলে আমাকে ক্ষমা করো, আমি দোলন কে একবার হারিয়েছি আর পারব না, দোলন নিজেই ওর বোনের দায়িত্ব আমাকে দিয়ে গেছে, মেয়েটির আর কেউ নেই এই ভুবনে, আমি ওকে নিজের করে না নিলে ও যে বড্ড এক হয়ে যাবে, রিয়ার চোখ ছলছল করে উঠল।। অনুরাগ বলে চলল মনামির রূপে দোলন আমার কাছে সারাজীবন থাকবে , তাই আমি ওকেই বিয়ে করব।। রিয়া অনুরাগ কে জড়িয়ে ধরে বললো, আমিও চাই তুমি তোমার দোলন কে নিয়ে সুখী থাক।।
দোতলার জানলার কাছে দাঁড়িয়ে মনামী দেখছিল সমস্ত টা, মনামির চোখের কোন দিয়ে  একফোটা জল গড়িয়ে পড়ল, আর সে মনে কেঁদে উঠে বলল দিদি তুই সত্যি নষ্ট প্রেমিকা ছিলি, তাই বুঝি অনুরাগ এর মত এত সৌভাগ্য আমার কপালে দিয়ে গেলি ।।