টপিকঃ ভালবাসা চির অমলিন পার্ট ১

দোলন আর অনুরাগের ব্রেকাপ টা আর ঠেকাতে পারল না অনুরাগ।।

আর না অনুরাগ দেখছি দেখছি বলে এই সাত বছর কেটে গেলো, এখন ও তুমি একটা চাকরি জোগাড় করতে পারলে না।। ভুলে যেও না আমি আর কচি খুকি টি নেই 28 বছর পরব সামনের ফাল্গুনে, বাবার শরীরের অবস্থা ভালো না, মা ও আমাকে নিয়ে চিন্তা করে করে শেষ হয়ে গেলো, মনামী র পড়াশুনা সব কিছু আমাকে একা হাতে সামলাতে হচ্ছে, বাবা চায় বড় মেয়েটির বিয়ে টা দেখে যেতে, আর তুমি নিজের আনন্দে মেতে আছ,  এই খামখেয়ালি পনা আমি আর সহ্য করতে পারব না।।
দোলন এক গতিতে কথা গুলো বলে গেলো, ।।
অনুরাগ মাথা নিচু করে বসে , পার্কের বেঞ্চে পেন দিয়ে আকি বুকি কাটছে ।। দোলন ব্যাগ থেকে একটা চাকরির ফর্ম বের করে, অনুরাগের সামনে রাখল , আর বেশ ঝাঁঝাল মেজাজে বললো দয়া করে এই ফর্ম টি ফিলাপ করে ডাকবাক্সে ফেলে আমাকে উদ্ধার করুন, আর ইন্টারভিউ টা দিয়ে আসুন , ।।
ফর্ম টা হাতে নিয়ে অনুরাগ সেটা পড়তে লাগল,দোলন কড়া করে জানিয়ে দিয়ে গেলো এই চাকরি টা যদি না পাও তবে আমাকে আর ভুলেও ফোন করবে না , বলে গটগট করে চলে গেলো।।
অনুরাগ আর দোনল সেই কলেজ থেকে একসাথে, একই ক্লাসের স্টুডেন্ট ছিল দুইজন, দোনল পড়াশুনার ব্যাপারে আগাগোড়া সিরিয়াস, তবে অনুরাগ ছিল ঠিক তার উল্ট, ।। কলেজে গিয়েই যোগ দিল ছাত্র রাজনীতিতে, মিটিং মিছিল, অন্দোলন সব কিছুতেই এগিয়ে অনুরাগ, কলেজে র 2য় বছরের সে কলেজ ইলেকশনের জন্য নমিনেটেড হল, দোলন সেটা কোনো ভাবেই সমর্থন করল না, ছাত্র রাজনীতি পর্যন্ত ঠিক ছিল কিন্তু এই ভোটে দাঁড়ানো সেটা ঠিক দোলন মেনে নিতে পারল না।। দোলন নিজের ভবিষ্যৎ এর স্বপ্ন দেখছে অনুরাগের সাথে, কিন্তু এই ভাবে চলতে থাকলে সেটা কোনো ভাবেই সম্ভব না।।
দোলন রায়, বাবা দেবাশীষ রায় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক,  মা আর এক বোন এই ছিল তার জীবন ।।
অনুরাগ ব্যানার্জি , বাবা ধীরেন ব্যানার্জি, মা অনুপমা ব্যানার্জি ।।ধীরেন বাবু একটা প্রাইভেট কোম্পানির কেরানি , খুব স্বচ্ছল পারিবারিক অবস্থা না,  বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান অনুরাগ । তাকে নিয়ে ধীরেন বাবু আর অনুপমা দেবীর কতো স্বপ্ন , তবে সব স্বপ্নে জল ঢেলে ছেলে যখন ছাত্র রাজনীতি তে যোগ দিলে তখন ধীরেন বাবু সব আসা ছেড়ে দিয়ে হতাশ হয়ে পড়লেন ।।
কলেজ শেষ হবার পর থেকে দোলন প্রচুর প্রাইভেট টিউশন করত, তবে তার বাবা রিটার হবার পর, তার ওই টিউশনের টাকাতে চলত না ।।বাবার পেনশন খুব সামান্য, তারপর বাবার হার্টের পেশেন্ট তার ঔষুধ, বোন মনামির পড়াশুনা সব ভার এসে পড়ল দোলনের ঘাড়ে।। এই 2 বছর হল সে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজে ঢুকেছে, সকাল থেকে সন্ধ্যে হার ভাঙা খাটুনি করে মাসের শেষে হাতে আসে 10500 টাকা ।। তার মধ্যে মা বলে বলে দোলনের মাথা খেয়ে নিল, অনুরাগ এর সাথে বিয়ের কথা।। কিন্তু দোলন কাকে বলবে, যে ছেলে জীবনে রাজনীতি ছাড়া কিছু বোঝে না।। সমাজ সংস্কার, নারী মুক্তি, যুব সমাজের চেতনা এই নিয়ে হলে অনুরাগ এক থেকে দুঘন্টা টানা স্পিচ দিতে পারবে , তবে চাকরি বাকরীর কথা শুনলে যেন ওর গায়ে জ্বর আসে।। এই দিকে অনুরাগের বাবাও চাকরি থেকে অবসর নিয়েছে , গত 3 বছর হলো অনুরাগের মা মারা গেছেন ।। তাতে অনুরাগের জীবনে কোনো তফাৎ আসে নি ।।

তবে দোলন এবার আর ফিরবে না যদি অনুরাগ এবার চাকরি র প্রতি ঔদাসীন্য দেখিয়েছে, সেটা অনুরাগ টের পেয়েছে।।
ইন্টারভিউ থেকে অবার ও নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে অনুরাগ কে, কোন মুখে সে দোলন কে ফোন করবে বুঝে উঠতে পারছে না।। দোলনের অফিস থেকে ফেরার সময় হয়ে গেছে, এখনই ফোন আসবে, ভাবতে ভাবতে ই দোলনের ফোন টা আসল, একটু হেজিটেট করে অনুরাগ ফোন টা রিসিভ করল,। দোলন, খুব উত্তেজনার সাথে জিজ্ঞেস করল, কিগো কবে থেকে জয়নিং ।। অনুরাগ চুপ করে থাকল, 3-4 সেকেন্ড এর নিস্তব্দতা দোলন কে বুঝিয়ে দিল এই চাকরি টাও অনুরাগ পায় নি ।।
দোলন এবার রাগে , দুঃখে চিৎকার করে বলে উঠল, অকর্মন্য পুরুষ মানুষ তোমার মত ছেলে কে ভালোবেসে আমি জীবনের সব থেকে বড় ভুল করেছি, চাকরি তো দূর কোনো রাস্তার ঝাড়ুদার হবার যোগ্যতা ও তোমার নেই, জীবনে কোনো দিন আমাকে তোমার মুখ দেখাবে না, অনুরাগ কিছু একটা বলতে যাবে, তার আগে তাকে চুপ করিয়ে দোলন বলে গেলো, সত্যি বলো তো কোনো দিন আমাকে ভালোবেসেছিলে তুমি, নাকি ভেবেছিলে বিয়ের পর বৌ কামাই করবে আর তুমি ঘরের খেয়ে বোনের মোষ তাড়াবে, এই কথা টা অনুরাগের পৌরষে আঘাত করল, অনুরাগ এবার রেগে গিয়ে বললো দোলন লিমিট ছাড়িয়ে যাচ্ছ না কি,? দোলন এবার আর উচ্চ কণ্ঠে বলে উঠল, যে পুরুষ মানুষের টাকা রোজগারের ক্ষমতা নেই তার মুখে বড় বড় কথা মানায় না।। পেটে ভাত না থাকলে নীতি কথা গুলো সেলের মত কানে বেঁধে ।। তাই তোমার মুখ থেকে আর কোনো কথা শুনতে চাই না, লজ্জা করে না তোমার মুখ ফুটে কথা বলতে।। অনুরাগ চুপ করে গেল, দোলন বলে চলল, বাড়িতে বৃদ্ধ বাবাকে ফেলে দেশ জয় করতে চলেছ, মনে পড়ে তোমার মা টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়, তোমার মত কুলাঙ্গার ছেলে কে জন্ম দিয়ে উনি পাপ করেছেন তাই ওনার অমন ভাবে শাস্তি পেয়ে মৃত্যু হয়েছে ।। অনুরাগ আর সহ্য করতে পারল না,  ফোন টা কেটে ফোন টাকে আছার মেরে ভেঙে ফেলে দিলো ।।

অপমানে , দুঃখে অনুরাগের গলায় ব্যথা করে উঠল, কান্না ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইল।। মনে হচ্ছিল গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পরে , তবে না এই অপমানের জবাব তাকে দিতেই হবে।। দোলনের এত সহস হল কি করে এমন নোংরা ভাবে সে তাকে অপমান করে, ।। আজ অনুরাগ পন করল , যতদিন না সে একটা চাকরি পাচ্ছে না সে দোলনের সাথে কথা বলবে না দেখা করবে না।।
সংগঠনের কিছু দায়িত্ব ছিল তার মাথায়।। সেই কাজ গুলো সেরে উঠতে একটু সময় চলে গেলো, তারপর সে উঠে পড়ে চাকরির চেষ্টা করতে লাগল, ।। দোলনের সাথে তার কথা হয় না আজ প্রায় 22 দিন , ভাঙা ফোন টা সরিয়েছে এই  ৩দিন হল কিন্তু দোলন একবার ও ফোন করে নি।। অনুরাগ ও তাকে ফোন করে নি ।।অনেক চেষ্টা চরিত্র করে, অনুরাগ শেষে একটা লেদার কারখানায় সুপারভাইজারের চাকরি পায় 12000 মাইনে, সাথে দুপুরের খাওয়া দাওয়া টাও ফ্রি।। মাসের শেষে উপরি ইনকাম ও আছে ।। যাক আজ সে দোলন কে ফোন করে জানিয়ে দেবে চাকরি টা সে পেয়েছে ,সে অকর্মন্য নয়, ।। আজ প্রায় 37 দিনের মাথায় অনুরাগ দোলন কে ফোন করছে , বুকের মাঝে একটু ধুক পুক করছে ঠিকই কি জানি ফোন ধরে কিনা আবার ফোন ধরে কি বলে ।।
This no is switch off plz try after some time  যান্ত্রিক শব্দ টা ভেসে এল অনুরাগের কানে, সারা রাত ধরে প্রায় 60-70 বার ট্রাই করেছে কিন্তু কোনো ফল হয় নি, দোলনের মায়ের নাম্বারে এ ফোন করে সে নিরাশ হয়েছে।।
কাল  একবার দোলনের অফিসে গিয়ে খোঁজ নিতে হবে।।
পরদিন দুপুর বেলা লাঞ্চ টাইমে অনুরাগ দোলনের অফিসে গেলো, সেখানে গিয়ে মৌমিতার সাথে দেখা হল, দোলনের কলিগ মৌমিতার সাথে অনুরাগের আলাপ আছে ।। ওকে দেখে অনুরাগ দোলনের কথা জানতে চাইল, কিন্তু মৌমিতার কাছে যা শুনল তাতে অনুরাগ বেশ অবাক হল।। প্রায় একমাস আগে দোলন চাকরি ছেড়ে দিয়েছে , আর তার পুরোনো নাম্বারে ফোন করেও মৌমিতা তার সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি, আর দোলনের বাড়ি টাও তার চেনা নেই যে গিয়ে দেখা করবে ।।

সব শুনে অনুরাগের এবার একটু চিন্তা হতে লাগল, দোলন দের বাড়ি টা অনুরাগ চিনত যদিও কোনো দিন বাড়ির ভেতরে যায় নি ।।
সোজা বাইক নিয়ে অনুরাগ রওনা দিল দোলন দের বাড়িতে।।
অনুরাগের জন্য বুঝি আরও কিছু  বিস্ময় অপেক্ষা করছিল, দোলন দের বাড়ির গেটে তালা ঝুলছে, পাশের বাড়ির একজন কে জিজ্ঞেস করে জানতে পড়ল ওর বাবা মারা যাওয়ার 15 দিনের মাথায় ওরা বাড়ি বিক্রি করে চলে যায়।। কোথায় গেছে তার ঠিকানা কেউ জানে না ।। অনুরাগের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল,  দোলনের বাবা মারা গেছে কিন্তু দোলন তা একবার অনুরাগ কে জানানোর প্রয়োজন বোধ করে নি ।। তারপর অনুরাগের মনে পড়ল, ফোন ভেঙে যাওয়ার পর 15-20 দিন ফোন অফ ছিল, হয়ত দোলন ফোন করে পাইনি, ছিঃ ছিঃ অনুরাগের নিজের প্রতি ঘেন্না হতে লাগল, একটা মেয়ের জীবনে এত বড় ঝড় বয়ে গেলো আর ও কিনা নিজের ইগো নিয়ে বসেছিল, ।।
দোলনের যে যে  আত্মীয় স্বজনের বা বন্ধু বান্ধবের ঠিকানা অনুরাগ জানত সবার কাছে খোঁজ নিয়েও অনুরাগ দোলনের খোঁজ কোথাও পেল না,।।
এই ভাবে দিন বয়ে গেলো, অনুরাগ চাকরি জয়েন করেছে ।। দোলন চাইত অনুরাগ জীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক, চাকরি করুক, তাই চাকরি ছেড়ে দিতে মন চাইলেও অনুরাগ চাকরি ছাড়ে নি ।।
9 মাস কেটে গেলো, কলকাতার কোনায় কোনায়, দোলনের ছবি দিয়ে পোস্টারিং অবধি অনুরাগ করেছে, পেপারে দিয়েছে কিন্তু না , কোথাও মেলে নি দোলনের কোনো খোঁজ ।।
প্রায় 2 বছর কেটে গেলো, আজও রাস্তা ঘাটে যদি কোনো মেয়ে দেখে মনে হয় দোলন যাচ্ছে ছুটে গিয়ে একবার তার মুখ দেখে ।।

সংগঠনের কাজ করে অফিসের কাজের ফাঁকে ফাঁকে , এখন অনুরাগ কোম্পানির ম্যানেজার , খুব অল্প সময়ে অনেক টা উন্নতি করেছে ।। বাড়ি টা ও ভেঙ্গে চুড়ে একটু মেরামত করেছে গাড়ি কিনেছে ।। অনুরাগের বাবার বয়েস হয়েছে , তিনি ছেলে কে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে ।। কিন্তু অনুরাগ আজ ও দোলনের অপেক্ষায়, হয়ত কোনো একদিন দোলনের ফোন আসবে, হয়ত তার সাথে দেখা হবে ।। সময় বয়ে চলে দোলনের কোনো বার্তা অনুরাগের কাছে এসে পৌঁছায় না।।
আজ কাল দোলন ও কেমন একটা ঝাপসা অধ্যায় হয়ে উঠেছে অনুরাগের কাছে, ।।

রিয়া আসিস্টেন ম্যানেজার নতুন জয়েন করছে 25 -26 বছরের প্রাণবন্ত একটি মেয়ে, মার্কেটিং লাইনে খুব অভিজ্ঞতা , এই অল্প বয়সে 3 টে কোম্পানিতে কাজ করা হয়ে গেছে,  ব্যাঙ্গালোর থেকে mba করে ফেরা মেয়ে, দারুন স্মার্ট ।।
প্রথম দিনেই সে অনুরাগের গুড উইলে চলে আসে ।। অফিস শেষে অনুরাগ গাড়ি টা নিয়ে বেরোতে যাবে গেটের কাছেই দেখল রিয়া দাঁড়িয়ে আছে মনে হয় ট্যাক্সির জন্য ওয়েট করছে, অনুরাগ তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাবে, রিয়া বলল সামনেই নিউমার্কেটের কাছেই নামবে ওখানেই ওর ফ্ল্যাট, অনুরাগ ঐদিকেই যাবে তাই রিয়া কে লিফট অফার করল ।। রাস্তায় যেতে যেতে কথা বার্তা য় জানা গেলো, রিয়া বেসিক্যালি শিলিগুড়ির মেয়ে, পড়াশুনার সূত্রে তাকে ব্যাঙ্গালোরে থাকতে হয়েছে 4 বছর, তারপর সেখানে জব করে, সেখানে জব পোষাচ্ছিল না, তাই কলকাতায় আসে, আর ব্যাঙ্গালোরে থাকার প্রবেলম হচ্ছিল, কলকাতায় ওর মেজো পিসিমার বাড়ি, এখানে থেকে জব করতে তার সুবিধা আর এই খানে পোস্ট টা ভালো সালারিও মন্দ না ।। অনুরাগ ও তার সমস্ত সাক্ষাৎ দিল, ।।
রিয়া খুব ফ্রেন্ডলি মানসিকতার মেয়ে, যেমন টা হওয়া উচিৎ ওদের প্রফেশন টাই  ঠিক তেমন।।
একদিন সন্ধ্যায় রিয়া অনুরাগ কে ডিনারের জন্য অফার দিল, অনুরাগ ও না করতে পারল না, ডিনার শেষে অনুরাগ রিয়াকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে চাইল।। রাস্তায় যেতে যেতে আজ রিয়া অনুরাগ কে বেশ পার্সোনাল কথা জিজ্ঞেস করতে লাগল, যেমন কাউকে পছন্দ কিনা?প্রেম করেছে কটা, ছেঁকা খেয়েছে কটা ইত্যাদি।। অনুরাগ যত এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে রিয়া তত চেপে ধরে, অগত্যা দোলনের সাথে অনুরাগের সম্পর্কের সব কথা অনুরাগ রিয়াকে বলে ।। রিয়া ও তার জীবনের অনেক কথা অনুরাগ কে বলে , আসলে রিয়া একটু বেশি মাত্রায় ড্রাঙ্ক ছিল, নিজের পুরোনো প্রেমের কথা বলতে বলতে তার দুইচোখে গঙ্গা যমুনা বয়ে চলে ।।
এই ভাবে চলতে চলতে রিয়া আর অনুরাগের মধ্যে বেশ একটা বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, রিয়ার পিসি বাড়িতে ও অনুরাগের যাতায়াত শুরু হয়, এবং রিয়াও মাঝে মধ্যে ধীরেন বাবু মানে অনুরাগের বাবার সাথে দেখা করতে চলে আসে ।। ধীরেন বাবু বেশ খোশ মেজাজের মানুষ , ছেলের বান্ধবির সাথে বেশ আলাপ জমিয়ে নিয়েছেন ।। এক রবিবার রিয়া জোর করে রান্না করে অনুরাগ আর তার বাবা কে  খাওয়ালো।। রান্নার তারিফ করে, ধীরেন বাবু তো বলেই বসল, তবে রিয়া তোমাকে আমার বৌমা করব ভাবছি ।। কথায় টা অনুরাগ ইয়ার্কি মেরে উড়িয়ে দিলেও, রিয়ার  র ফর্সা গাল দুটো যে লাল হয়ে উঠেছিল সেটা অনুরাগের চোখ এড়াল না।। অনুরাগ রিয়ার থেকে বয়েসে অনেক টা বড়, তো তার বুঝতে অসুবিধা হল না, মেয়েটি তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে , সত্যি বলতে অনুরাগ ও যে রিয়া কে পছন্দ করে না ঠিক তা নয় ।।  এখনো ও অনুরাগ রিয়া কে প্রপস করেনি তবে, বয়ফ্রেন্ডের থেকে কম দায়িত্ব অনুরাগ কে পালন করতে হয় না ।। মাঝে মাঝে ডিনার, নাইট ক্লাব, মুভি এই সব জায়গায় রিয়া কে নিয়ে যেতে হয়, তারপর, সপ্তাহ শেষে শপিং , জ্বর হলে পাশে বসে সময় কাটানো এই সব তো আছেই , আর রিয়া তো অনুরাগের কাছেই যেন এখন সব আবদার।।
এমন ভাবেই কেটে চলেছে অনুরাগের দিন, মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে সামনের মাসেই একটা প্রমশনের ব্যাপার আছে , সেই দিন রিয়া কে বিয়ের প্রস্তাব টা দিয়ে দেবে, অনুরাগের বাবা ও রিয়া কে পছন্দ করে, আর রিয়া যে অনুরাগের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই ।। 
নভেম্বর এর 15 তারিখে , অনুরাগের 32 তম জন্মদিন , রিয়া মনে মনে প্ল্যান করেছে ওই দিন ই অনুরাগ কে সারপ্রাইজ টা দেবে, তবে  অনুরাগ কে কিছু জানানো যাবে না।। ধীরেন বাবুর সাথে বসে রিয়া অনুরাগের জন্ম দিনের প্ল্যান টা করে নিয়েছে, ।।
11 নভেম্বর  একটা দরকারি মিটিং এর জন্য অনুরাগ কে মুম্বাই যেতে হবে ফিরবে 14 তারিখে সন্ধ্যের ফ্লাইটে , যাক জন্মদিনের আগের দিন ফিরবে এটাই অনেক , ।। 10 নভেম্বর রাত 9 তার ফ্লাইটে অনুরাগ মুম্বাই যাচ্ছে,।। দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর , আমেদা বাদ এই সব জায়গায় মিটিং এ রিয়া অনুরাগের সাথে যায়, তবে এই বার কোম্পানি অনুরাগ কে একা পাঠাচ্ছে এতে রিয়ার ভীষণ রাগ, তবে কি আর করা যাবে, রিয়া সাথে এসেছে  অনুরাগ কে সি অফ করতে ।।
11.20 তে অনুরাগ মুম্বাইতে ল্যান্ড করল, কোম্পানির গাড়ি পাঠানো ছিল, গাড়ি তে উঠে রিয়া আর বাবা কে একটা ফোন করে দিল, তারপর সোজা হোটেলে,  পাঁচ তারা হোটেলে অনুরাগের থাকার ব্যবস্থা, ।।  কাল সকাল 11 টায় কোম্পানির মিটিং, ।।
রাতে হাল্কা ডিনার করে শুয়ে পড়ল।।
সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে, ব্রেকফাস্ট করে, কিছুক্ষন মিটিং এর কিছু গুরুত্ব পূর্ণ কাজ সেরে , বেরিয়ে পড়ল , মিটিং এর উদ্দেশ্যে, অফিস থেকে গাড়ি দেওয়া ছিল যে কদিন অনুরাগ মুম্বাই তে থাকবে 24 আওয়ার গাড়ি আর ড্রাইভার থাকবে , ।। টানা 4 ঘন্টা মিটিং চলার পর লাঞ্চ ব্রেক, লাঞ্চ এর পর আবার টানা মিটিং যাকে বলে মেরাথন মিটিং ।।
মিটিং শেষ হতে হতে রাত 9 টা বাজল, ডিনার করে সে  হোটেল উদ্দেশ্যে রওনা দিল, ।। খুব ক্লান্ত আজ অনুরাগ, আগামী কাল এই একই রকম মিটিং এর চাপ থাকবে ।। হোটেল রুমে ঢুকে সে ফ্রেস হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল, নিয়ম মত বাবা আর রিয়া কে ফোন করে কিছুক্ষন বার্তা লাভ করে ফোন কেটে, সিগারেট হাতে ব্যালকনি তে দাঁড়াল, অনুরাগের রুম টা 16থ ফ্লোরে,  এত উচু থেকে শহর টাকে কি সুন্দর লাগছে, অন্ধকারে মাঝে শত শত আলো, সামনে সমুদ্র, ।। আলো গুলো ছুটে চলেছে এপাশ থেকে ওপাশ, এক মায়াবী শহর এই মুম্বাই।।
রাত 2 নাগাদ অনুরাগ শুতে গেলো।।
পর দিন সকালেও সেই একই সময় তার মিটিং তবে আজ মিটিং টা 7 তার মধ্যে শেষ হয়ে গেছে ,।। আজ ডিনার সে হোটেলেই করবে,  পরদিন সকালে হেড অফিসে কিছু ফাইল জমাদিয়ে সন্ধ্যে 7 টার ফ্লাইটে সে কোলকাতা ফিরবে ।।
10 টার মধ্যে ডিনার সেরে , রুমে এসে রিয়াকে ফোন করে কিছুক্ষন কথা বলে সে ফোন রেখে ব্যালকনির সামনে গিয়ে দাঁড়াল, ।। মনে হল একটু সমুদ্রের পাশ থেকে ঘুরে আসে, কাল তো ফিরেই যাবে, মুম্বাইয়ে এই প্রথম আসল , যদিও মুম্বাইয়ে ঘোড়ার জায়গা অনেক আছে, তবে হাতে তার টাইম নেই এই সাগরের তির থেকেই একটু ঘুরে আসা যাক, এই ভেবে , গায়ে একটা জ্যাকেট জড়িয়ে বেড়িয়ে পড়ল, নভেম্বরের শুরু তেমন ঠান্ডা নেই, বিশেষ করে এই দূষণ এ ভরা শহরে ঠান্ডা আর কোথায়, গ্লোবাল ওরামিং এর জন্য এই মুম্বাই 50% দায়ী বলে মনে হল অনুরাগের।। তবুও সমুদ্রের পারে হওয়া লাগতে পারে, এই ভেবে মাথায় হুড টা টেনে নিল।।

রাস্তা শুনশান না তবে পথচারী নেই বললেই চলে , গাড়ি হামেশাই চলছে, ফুটপাথে কয়েক জন বসে আছে ।। হাঁটতে হাঁটতে অনেক টা এসে গেছে, সমুদ্রের পাশে বাঁধানো বসবার জায়গা, বেশ ফাঁকাই, দুই একটা ভিখারি আর মাতাল ছাড়া তেমন কেউ নেই ।। সমুদ্রের পার থেকে কিছুক্ষন হাঁটাহাঁটি করে, বসে কিছু টা সময় কাটিয়ে অনুরাগ হাত ঘড়ি টা দেখল,  12.56 বাবা!! অনেক রাত হয়েছে, এবার হোটেলে ফেরা যাক, এই বলে অনুরাগ হোটেলের দিকে হাঁটা ধরল,।। হাত দশেক দূরে খেয়াল করল 2-3 মেয়ে দাঁড়িয়ে , অনুরাগের বুঝতে বাকি রইল না এরা কারা, নিজেই একটু অস্বস্তি তে পড়ল, এই রাস্তা দিয়েই তাকে ফিরতে হবে ।। ধুর বলে মাথা র হুড টা টেনে নিয়ে হাঁটার গতি বাড়ালো, ওদের কাছাকাছি আসতেই মেয়ে গুলোর কথা কানে আসল, আরে দেখ তো সাহি চিকন ইধার হি আ রাহা হে , কিউ কন জায়গা, সাববো ইয়া জেসমিন,।। বলেই ওরা খিল খিলয়ে হেসে উঠল,।। ওদের ক্রস করে অনুরাগ কিছু টা এগিয়ে এসেছে, ওর কানে আসল, সেই আগের মেয়েটি ই বলছে জেসমিন তু যা, লাগত হে, শর্মিলা হ্যাঁ , তেরি তারহা, বলে আবার ওরা হাসিতে ফেটে পড়ল।।  অনুরাগের গা টা গিন গিন করে উঠল অনুরাগ আরো জোরে হাঁটা শুরু করল, কিন্তু মনে হল কেউ যেন ওর পিছনে আসছে, এবার তার গলা পাওয়া গেলো, আরে সাব ইতনি জলদি ক্যা হে, হামারি গলি মে আয়ে অর হামসে দিল লাগি কিয়ে বিনা যা রেহে হো, ?? গলা টা শুনে অনুরাগ থমকে দাঁড়িয়ে গেলো, এ কার গলা শুনছে, এবার সেই মেয়েটি এগিয়ে এসে প্রায় হাপাতে হাপাতে বলল ক্যা বাবুজি কিৎনা দৌড়াও গে, সারি স্ট্যামিনা ইধার খতম কর দোগে তো , বিস্তার মে তো সিরফ শুখা ফুল হি মিলেগা।। অনুরাগ দাঁড়িয়ে গেছে দেখে মেয়েটি বুঝল তার এই রাতের কাস্টমার পাকা, তখন মেয়েটি  বললো দেখো শাব এক ঘন্টা কা 5000 হাজার , অব বলো কাহা জানা হে? বলতে বলতে মেয়েটা একটা সিগারেট ধরিয়ে নিল।।।অনুরাগের হৃদপিন্ড যেন ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছিল, মাথার হুড টা নামিয়ে সে মেয়েটির দিকে ফিরে তাকাল, রাস্তার আলোতে মেয়েটির মুখ স্পষ্ঠ বোঝা যাচ্ছে , মাথার চুল ছাড়া, ঠোটে গাঢ় লাল লিপস্টিক, মুখে উগ্র মেকআপ, কানে ঝোলা দুল, স্লিভলেস ড্রেস পড়া, যে ড্রেস মেয়েটির শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রদর্শন করছে , বুকের খাঁজ দেখা যাচ্ছে, হাঁটুর উপর পর্যন্ত ড্রেসটির পরিসীমা, পায়ে হাই হিল ।।  একহাতে চকমকে একটা পার্স ঝোলানো ,সেই হাতেই একটা বিয়ারের বোতল, অন্য হাতে সিগারেট , ,।। সিগারেটে সুখ টান দিয়ে মেয়ে টিও অনুরাগের দিকে তাকাল,, ।।
সমস্ত পৃথিবী যেন থমকে গিয়েছিল, দোলন!!! হ্যাঁ দোলন আর অনুরাগ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, রাস্তার ঝিমিয়ে পড়া আলোতে , দোলন অনুরাগের চোখের আগুন টা লক্ষ্য করলে।। দোলনের হাত থেকে  বিয়ারে বোতল টা পড়ে গেলো, মুখের কাছে ধরে রাখা সিগারেট সহ হাত টা নেমে আসল।। অনুরাগ পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইল, দোলনের হাত পা কাঁপছে ও দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না, হঠাৎ করে দোলন ফুট পাথের উপর বসে পড়ল, মাথা নিচু করে ।। অনুরাগ ওর দিকে একদৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে , কিছুক্ষন চুপচাপ থাকার পর, দোলনের মুখ থেকে প্রথম কথা বের হল, অনুরাগ তুমি চলে যাও,, ।। অনুরাগ এবার উত্তর দিল, 10000 হাজার দেবো , দু ঘন্টা পাওয়া যাবে, জেসমিন?? দোলন এবার অনুরাগের দিকে মুখ তুলে তাকাল, ওর চোখ জলে ভেজা, ।। অনুরাগ বলল এইটাই তো তোমার নাম এখন , ভুল বললাম নাতো জেসমিন??  দোলন এবার অনুরাগের দিকে করুন দৃষ্টি তে তাকিয়ে বললো, প্লিজ অনুরাগ তুমি চলে যাও।। এবার অনুরাগ বললো আচ্ছা চলো 20000 হাজার দেবো.. দোলনের দু চোখ দিয়ে জলের ধারা বয়ে চলেছে,।। আচ্ছা তাতেও হবে না?? 30000 ?? অনুরাগ কঠিন ব্যাঙ্গাত্মক সুরে জিজ্ঞেস করল।। দোলন নিরুত্তর তাকিয়ে রইল অনুরাগের দিকে, ।। অনুরাগ আরে বাবা এতেও হবে না , আচ্ছা চলো 50000 , ।। দোলন এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। আরে বাবা সোনাগাছি তে তো তোমার মত মেয়ে 500 টাকাতেই পাওয়া যায়, তুমি মুম্বাই থাকো আর একটু ইংরিজি বলতে পারো  বলে দর টা একটু বেশি তা বলে, জিনিস তো সেই একই বেশ্যা।। অনুরাগের গলায় যেন আগুন ঝরে পড়ল ।।