টপিকঃ ঘুরে এলাম দার্জিলিং!
হঠাৎ অনেক কিছু হয়ে গেল। গত অক্টোবরের ১৫ তারিখে weDevs এ জয়েন করি। আর নভেম্বরের ২ তারিখ এ হঠাৎ সুযোগ হয়ে গেল উইডেভস এর বার্ষিক এনুয়াল রিট্রিট ট্যুর এ যোগ দেওয়ার। যখন জানতে পারলাম এবার এনুয়াল ট্যুর দেশের বাইরে, দার্জিলিং হচ্ছে, শুনেই ভাল লাগার শুরু। যদিও ভিসা ছিল না, তাই ইন্ডিয়ান ভিসা সেন্টার চ্যংড়াবান্ধা পোর্টে আবেদন করে ভিসা করিয়ে নিলাম ২৭ তারিখের মধ্যে। পোস্টটাতে চেষ্টা করব একই সাথে ভ্রমণ বর্ণনা আর সাথে কিভাবে আপনারা যেতে পারেন এই দুটোর মিশেল করতে।
ভিসা
প্রথমেই আপনাকে ভারতীয় দূতাবাস হতে ‘By Road Category’-তে চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ভিসা নিতে হবে।
বাস সিলেকশন
ঢাকার গাবতলী থেকে প্রতিদিন বেশ কিছু নন এসি (হানিফ, এস আর) এবং এসি ( মানিক এক্সপ্রেস, শ্যামলী, এস আর পরিবহন) বাস ছেড়ে যায়। তবে শ্যামলীর ভাড়া বেশি, কেননা তারা শিলিগুড়ি পর্যন্ত টিকেট করে থাকে। শুধু সীমান্ত পর্যন্ত তাদের কোনো সার্ভিস নেই, বর্ডার পর্যন্ত শ্যামলী ঠিকই আপনাকে এসিতে করে নিয়ে যাবে, তবে বাংলাদেশ সীমান্তের অপর প্রান্ত (ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা) থেকে ওরা আপনাকে কোন গাড়িতে করে নিয়ে যাবে তার কোনো হদিস নেই।
শিলিগুড়ি এবং শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং
আমরা ২ তারিখ অফিস করে রাতের মধ্যে সবাই কল্যাণপুর শ্যামলীর কাউন্টারে চলে আসি। আগেই আমাদের ৪০ জনের টিমের জন্য গাড়ি বুক করা ছিল। শ্যামলী থেকে বাস ছেড়ে যায় রাত ৯টায়। পরের দিন ৩ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে আমরা চ্যাংড়াবান্ধা পোর্টে চলে আসি। চ্যাংড়াবান্ধা রংপুর হয়ে লালমনিরহাটের একটা পোর্ট যেটা দিয়ে ইন্ডিয়া প্রবেশ করা যায়। ৮টার দিকে এসেও তেমন সুবিধা হয় নি। কারণ পোর্ট খুলে সকাল ৯:৩০টায়। তো অপেক্ষা করতে শুরু করলাম আমরা। আর এর মধ্যে শ্যামলী কাউন্টারে পাসপোর্ট জমা দিলে ওরা সবার ট্রাভেল ট্যাক্স নেওয়া শুরু করে এবং ট্রাভেল ট্যাক্স এর কাগজ দিয়ে দেয়।
৯:৩০ টায় আমরা জানতে পারলাম বিদ্যুৎ না থাকায় বাংলাদেশ প্রান্তের বর্ডার ওপেন হয় নি। এবং জেনারেটর চালানোর জন্য তেলও নাকি নেই।
তো আমরা অপেক্ষা করতেই থাকলাম। মাঝে সকালের নাস্তা করে নিলাম পাশের "বুড়ির রেস্টুরেন্ট" নামক একটা দোকানে। আর সেলফি তোলা হল
উইডেভস টিমের সাথে আমি। আমার বামে উইডেভস সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রাজন্মিক তারেক হাসান ভাই
বিদ্যুৎ চলে আসল ১১ টায়। আমাদের ইমিগ্রেশন শুরু ১১:৩০ টায়। প্রায় ৪০ জনের ইমিগ্রেশন শেষ করে বর্ডার পার হয়ে ওপারে যেতে যেতে প্রায় ২টা বেজে গেল। আমাদের অপর পার থেকে বাসে করে যাওয়ার কথা থাকলেও শ্যামলী কোম্পানী বাস না ম্যানেজ করতে পারায় সুমোজেট নামক জিপে করে আমরা শিলিগুড়ি রওনা হই।
এই জিপগুলো হল সুমোজেট।
একেক জিপে ৮ জন করে আমরা শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিই। বেলা ৪টার দিকে আমরা শিলিগুড়িতে শ্যামলি কাউন্টার পৌঁছাই। শিলিগুড়ি পৌঁছাতে আপনার আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লেগে যাবে।
সেখানে ১২০ রুপির মধ্যে পেটপুরে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন (দেরি হয়ে গেলে দুপুরের খাবার খাওয়ার দরকার নেই) এবং দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার্থে একটি ভারতীয় মোবাইল সিম কিনে নিন। পাওয়ার রিচার্জের মাধ্যমে বাংলাদেশে দুই রুপি/মিনিটে কথা বলা যায়। সেই সঙ্গে ডাটা প্যাকও সহজেই অ্যাকটিভ করে নিতে পারেন) তারপর সরাসরি দার্জিলিংয়ের উদ্দেশে জিপে চেপে বসুন জনপ্রতি ২০০ রুপির মধ্যেই অথবা ১২০০/১৫০০ টাকার মধ্যেই জিপ রিজার্ভ করে নিতে পারেন। সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টার মধ্যেই আপনাকে পাহাড়ঘেরা রাজ্য দার্জিলিংয়ে পৌঁছে দেবে।
আমি ওখান থেকে সিম কিনে নিয়ে ইন্টারনেট এক্টিভেট করে বাসার সবাইকে জানিয়ে দিই ইন্ডিয়া পৌঁছানোর কথা। আমাদের এমিনেতেই যথেষ্ট দেরী হয়ে গিয়েছিল তাই আমাদের তাড়াতাড়ি দার্জিলিং যাওয়ার তাড়া ছিল। কারণ দার্জিলিংয়ে রাত ৮টার পর সব বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং হোটেল বুকিং এবং রাতের খাওয়া ৮টার মধ্যেই শেষ করতে হবে।
অসাধারণ দার্জিলিং পথ
আমরা আবার সুমোজেটে চেপে বসি এবং পাহাড়ি সৌন্দর্যে দেখতে দেখতে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ক্রমে উপরের দিকে উঠতে থাকে।
১ ঘণ্টা জার্নির পর হঠাৎ আস্তে আস্তে শীত লাগা শুরু করে। জিনিসটা যারা এক্সপেরিয়েন্স করেন নি তাদের জন্য একটা চমৎকার নতুন এক্সপেরিয়েন্স। ১ ঘন্টা আগেও যেখানে আপনি গরমে ঘামছিলেন সেখানে মোটামুটি শীত লাগা শুরু করেছে। বাইরে বেশ সুন্দর বাতাস। আর যেখানেই চোখ যাবে, পাহাড়ের অসাধারণ সৌন্দর্য। জিনিসটা ভাষাতে প্রকাশের চাইতে আমি কিছু ছবি দিয়ে দিই, তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে।
২ ঘণ্টা জার্নির পর শীতের প্রকোপ আরও বাড়বে। ১৫ ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রায় বাংলাদেশের শীতের মত লাগা শুরু করবে এবং এ অবস্থায় আমরা গাড়ির জানালা বন্ধ করে দিই। জ্যাকেটের চেইন গলা পর্যন্ত উঠিয়ে দিই। এরপর আরও ১ ঘণ্টা সাপের মত আঁকাবাঁকা উঁচুনীচু রাস্তাা এরকমভাবে পার হয়ে দার্জিলিং এ আমাদের হোটেলে যেয়ে পৌঁছায় সন্ধ্যা ৬:৩০ টা নাগাদ। তত্ক্ষণে কনকনে শীত টের পাচ্ছি। হোটেলে ফ্রেশ হয়ে আমি তখনই আশপাশ ঘুরে দেখার জন্য বের হয়ে গেলাম।
পাশেই একটা বাজার মত ছিল। কিন্তু রাস্তা ওখানে পুরোটাই পাহাড় কেটে তৈরী করা। ফলে এক জায়গা থেকে আরেকজায়গা যেতেও একবার উঁচুতে উঠতে হবে আরেকবার নীচুতে। সমতল রাস্তা নেই। দেশে থাকি বলে আসলে বুঝি না আমরা যে কতটা আরামে আছি। ওখানে ১০ মিনিট রাস্তা পার হতে আমার বেশ কষ্টই হয়েছিল ঐদিন কারণ ৬৭০০ ফিট উঁচুতে অক্সিজেনের মাত্রাও কম। ফলে যতই শ্বাস নিচ্ছি, অস্বস্তি যাচ্ছিল না।
যাই হোক, বাজারে যেয়ে দেখি স্ট্রিট ফুডের আখড়া।
দার্জিলিং এর সবচেয়ে ফেমাস ফুড বোধহয় মমো। যেখানে তাকাবেন কেউ না কেউ মমো বানাচ্ছে। ১ প্লেট ৫০ রুপি। ৮ পিস।
ওখান থেকে এসে ঘুমিয়ে যাই।
দ্বিতীয় দিন
দ্বিতীয় দিন সকালে আমারে কালিম্পং এর উদ্দেশ্যে রওনা দিই। এটা ওখানের একটা জনপ্রিয় সাইটসিইং প্লেস। আমরা সুমোজিপে করে ওখানে যাই।
কালিম্পং এ যাওয়ার আগে মাঝে একটা বোটানিকাল গার্ডেন ঘুরে যাই আমরা। এখানে নানান ধরনের ক্যাকটাস আছে।
কালিম্পং
কালিম্পং বেশ সুন্দর তবে অসাধারণ না। এখানে খুব অল্প ডিসটেন্সের মধ্যে তাপমাত্রার বেশ বড় একটা ডিফারেন্স আছে। এই জিনিসটা এক্সপেরিয়েন্স করে ভাল লেগেছে। ভিউটাও সুন্দর। তবে এখানে মূলত যারা প্যারাগ্লাইডিং করতে চায়, তাদের জন্য সেরা। আমাদের টিমের অনেকেই প্যারাগ্লাইডিং করেছে ঐদিন। সবার অভিজ্ঞতা এক "না করলে মিস!"! কালিম্পং থেকে এসে আমরা ডিনার করে যে যার মত শহর ঘুরে দেখেছিলাম।
প্যারাগ্লাইডিং
কালিম্পং এ আমি আর তারেক ভাই।
তৃতীয় দিন
তৃতীয় দিন সবাই চলে যায় সকালে টাইগার হিল। টাইগার হিল দার্জিলিং এর সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত। প্রায় ৮৪৮২ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই টাইগার হিল। রাত ৩:৩০ টায় রওনা দিয়ে টাইগার হিল দেখে আসি। পরে আবার হোটেলে এসে দার্জিলিং টি স্টেট, চিড়িয়াখানা, তেনজিন রক দেখে আমাদের এদিনের যাত্রা শেষ হয়। পরের দিন সকালে আমরা বাসে করে দেশে চলে আসি। কয়েকটা ছবি দিয়ে দিচ্ছি। (আসল কথা আর লিখতে ভাল লাগতেছে না )