টপিকঃ তিস্তা এক প্রবাহিণী পর্ব ৪-৬

পর্ব ৪

কাল থেকেই একটা অপরাধবোধ দানা বাঁধছে সৌগতর বুকে। একি করল সে! এমন অভিলাষ তো তার ছিল না। এখন কিভাবে এই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করবে সে? সামনে এত বড় কেরিয়ার গড়ার হাতছানি.... সব কি তবে ধূলায় মিশল? এখন তিস্তা হয়ত তাকে বিয়ের কথা বলবে; অস্বীকার করারও পথ বন্ধ করল সে।ক্ষণিকের আবেগে একি করে বসল। আসলে কাল পর্যন্ত যা ছিল শুধুই কৌতুহল আজ তার অবসান হয়েছে। অসাধারণ ছিল যে নারী সে এখন নিতান্তই সাধারনতম। সেই কলেজের নবীনবরনের দিন থেকে শুরু হয়েছিল এক যুদ্ধ জয়ের প্রস্তুতি,যখন বিজয় পতাকা উড়ল,তখন হঠাৎ সৌগতর মনে হল এ জয় বড়ই সাধারণ। এতে কোন গৌরব নেই,আছে শুধু বন্ধন। মন পাখি তার এত জীর্ণ খাঁচায় ধরা দিতে চায় না। দীঘির স্থির জলে সে ঝাঁপ দিয়েছিল মণি-মাণিক্যের সন্ধানে। রত্ন প্রাপ্তি তো দুর অস্ত,সামান্য শামুক, ঝিনুকেও ঝুলি ভরল কৈ? এখন সে দিঘীর পঙ্কিলতার দায়ভারে দুষ্ট।

দুদিন পরে আজ সৌগত কলেজে এসেছে। তিস্তা যদি বোঝাতে পারত এই দুদিনের প্রতিক্ষা কত দীর্ঘতর ছিল। সৌগতর প্রথম দেওয়া উপহারটাও যে গাড়িতে ফেলে এসেছে সে। নিজেকে দুদিন ধরে কত শতবার ধিক্কার জানিয়েছে এই ভুলের জন্য।
একি! সৌগত আজ ওকে চিনতে পারল না কি? দুর থেকে হয়ত বুঝতে পারেনি। থাক এখন;আর একটু পরে ও নিজে ই আসবে অনেক অভিযোগ নিয়ে-কেন সে মোবাইলটা ফেলে এসেছিল, কেন কাল পড়াতে যায়নি..... ভাবতেই এক অদ্ভুত তৃপ্তি পুরো শরীর মনকে আবৃষ্ট করল তার। তবে তাকে নিয়েও কেউ ভাবে! তার অনুপস্থিতিও কাউকে ব্যাথিত করে!কিন্তু অপেক্ষাই সার হল,সৌগত আজ আর দেখা করল না। বিকালে একটা টোটো ভাড়া করে সে সৌগতর বাড়ি গেল তাতানকে পড়াতে। আজও দরজা খুলল সৌগত,কিন্তু আজ কোন উষ্ণ অভ্যর্থনা ছিল না। তিস্তা অনুভব করল সে শুধু মাত্র তাতানের দিদিমণি ছাড়া আর কিছু নয় ll

পর্ব ৫

একঘেয়ে জীবন থেকে আর প্রতিদিনের ব্যস্ততার থেকে কয়েকদিনের জন্য পালিয়ে বাঁচতে চায় সৌগত।তিরিশে পড়ল বলে, মা তো ছেলের বিয়ের জন্য আহার, নিদ্রা ত্যাগ করে বসে আছেন।আর এ বিষয়ে মাকে এড়িয়ে চলা বেশ মুশকিল সৌগতর পক্ষে। বিয়ে সে করবে না এমন নয়,শুধু এই নি:সঙ্গ জীবন আরও কিছু দিন বহন করতে চায়।

কাঞ্চনকন্যায় চেপে প্রথমে জলপাইগুড়ি তারপর এক প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রাম। পাহাড় আর জঙ্গলের মাঝে অবিবাহিত জীবনের শেষ কটা দিন কাটাতে চায় সৌগত। ফিরে গিয়ে মাকে কথা দিয়েছে বিয়ের পিঁড়িতে বসবেই এবার। পাত্রী পছন্দের দায়িত্ব মায়ের।অনেক নেট ঘেটে সে খোঁজ পেয়েছে জঙ্গলেঘেরা এই পাহাড়ি গ্রামের। পর্যটকের সংখ্যা এখানে খুবই কম। দুচার জন বাল্য বন্ধুর সাথে রওনা দিল সে। তিস্তাকে পাশে রেখে পাহাড়ের বাঁক ধরে ছুটে চলেছে তাদের গাড়ি। হালকা শীতের আমেজ আর কিশোর কুমারের পুরানো হিন্দি গান। মনের অলি গলির মতই বড়ই দুর্বোধ্য,জটিল এই পাহাড়ি পথ। না জানি দুরের ঐ বাঁকটা পেরোলে কি অপেক্ষা করছে? একদিকে গভীর গিরিখাত তো আর এক দিকে সুউচ্চ পাহাড়ের ঔদ্ধত্য প্রকাশ। পেছনের সিট বন্ধুদের হাসি তামাশায় ভরে উঠছে। ড্রাইভারের পাশে বসে আনমনে বাইরের দিকে চেয়ে রয়েছে সৌগত। সোনার খাঁচা প্রস্তুত হচ্ছে,ধরা দিতেই হবে এবার। তিস্তা তাকে দিয়েছিল এক মুক্ত আকাশে বিচরণের অধিকার,আর সে ভেবেছিল এ বুঝি কোন জীর্ণ খাঁচা। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল সান্ত্বনার ছলে।আজও যখন বৃষ্টি নামে,মনের গভীরে বয়ে যায় তিস্তা,সেই যে ছিল এক বোকা মেয়ে-কেমন আছে সে? এতদিনে হয়ত সে সংসারী হয়েছে। কারো সহধর্মিণী ;হয়ত বা কারো সন্তানের মা।কার হৃদয় জুড়ে সে প্রবাহিত হয়!আদি অনন্তকাল জুড়ে ঐ পথেই হয়ত বয়ে যাবে সে বারবার।আর কখনো মিলবে না সৌগতর সাথে তার পথ।তবুও খুব জানতে ইচ্ছা করে সৌগতকে সে ক্ষমা করতে পেরেছে কি?যে নির্ভরতায় একদিন সে আছড়ে পড়েছিল তার বেলাভূমিতে সে ভাবে কি আর কখনো কাউকে বিশ্বাস করতে পেরেছে? বিশ্বাস ভঙ্গের ব্যাথা না জানি কত দিন ধরে সয়েছে সে।তারপর হয়ত সত্যিই কেউ তার জীবনে এসেছে;যে তাকে পরম মমতায় আঁকড়ে ধরতে পেরেছে।মাঝের বছর গুলোতে বহু নারীর সাথে পরিচয় হয়েছে সৌগতর।কিন্তু আর প্রেম আসেনি।তিস্তা বুঝি সব টুকু অনুভূতি তার ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।এই যে মায়ের দেখা পরমা সুন্দরী পাত্রীটির সাথে তার গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে,সত্যিই কি সে তিস্তার মত সৌগতকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারবে অজানার পথে।তিস্তার মত স্থির,তার মত গভীর হবে কি আর কারো ভালবাসা?তবুও জীবন এগিয়ে যাবে।সৌগতও সংসারী হবে,স্বামী হবে,পিতাও হবে।কিন্তু প্রেমিক হতে পারবে কি আর?একবার......,অন্তত জীবনে একবার তিস্তার সামনে দাঁড়াতে চায় সে।একবার অন্তত নিজের চোখে তাকে সুখী দেখতে চায় সে।তাতে হয়ত আজ আর তিস্তার কিছু এসে যাবে না কিন্তু সৌগত পাবে নিজের অপরাধবোধ থেকে মুক্তি।আশ্বস্ত হবে সে- তার দ্বারা তিস্তার কোন ক্ষতি হয় নি,বরং তারই ভীরুতার কারনে তিস্তা তার উপযুক্ত সাথী খুঁজে পেয়েছে ।কিন্তু কেউ কি দিতে পারে তার খবর? সে যে আড়ালে থাকতে পছন্দ করত। কার দায় পড়েছে তাকে প্রকাশ্যে আনার? কি নিদারুণ অভিমান তার-প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পূর্বেই সে নিরবে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে সৌগতর জীবন থেকে।এক একবার খুব ইচ্ছা করে তার বাড়ির দরজায় গিয়ে দাঁড়ায়। পর মুহুর্তেই সৌগত ভাবে -"বড় দেরী করে ফেলেছি ।থাক এখন সে আড়ালে,আর তার জীবনে ঝড় তুলব না। নিজের দোষে যা হারিয়েছি,তা পাওয়ার কল্পনাও আজ অসম্ভব।"

যার একটা শব্দ শোনার জন্য সৌগত অস্থির হত,সে একদিন মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ল তার ওপর। এই অযাচিত দান তার ক্ষুদ্র হৃদয় ধারণ করত কিভাবে? মুর্খ সে,দানের মূল্য না বুঝেই একদিন দাতাকে করেছিল অপমান।আজ তার প্রাপ্তি শুধু শূন্য পাত্র।

সন্ধ্যে হয়নি তখনও,সূর্য গুটি গুটি পায়ে পাহাড়ের কোলে ঢলে পড়ার উদ্দ্যোগ নিচ্ছে। পাহাড়ের চড়াই উৎরাই রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছিল সৌগত। দুইধারে পাইন গাছ মাথা তুলে সারি সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে। দুরে দেখা যাচ্ছে একটা চা বাগান। নাম না জানা পাহাড় গুলো কৌতুহলে তাকিয়ে দেখছে সৌগতকে। এখানকার মানুষের মত প্রকৃতিও যেন বুঝে গেছে সৌগত তাদের কেউ নয়। আজ তিন দিন হল সে এখানে এসেছে। বন্ধুরা আসে পাশে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে এসেছে,কিন্তু সে এই গ্রাম ছেড়ে কোথাও যায়নি। একটা ভালোলাগা যেন আঁকড়ে ধরেছে তাকে। এই গ্রাম,এখানকার জনজাতি,পাশের জঙ্গল আর দুরের পাহাড়টা । উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকে সৌগত ঐ পাহাড়টার দিকে,কঠিন বুকে তার লেপ্টে রয়েছে নরম মেঘ।কত সাবধানে সে আগলে রেখেছে মেঘটাকে। ও জানে ভালোবাসতে,প্রেয়সী যে বড় অভিমানী হয়। সেদিন যদি সৌগত বুঝতো একথা। অসীম প্রত্যাশা বুকে নিয়ে তিস্তা বারবার তাকিয়ে থাকত তার দিকে। শুধু সৌগত আর কথা বলার ভাষা খুঁজে পায় নি। ভয় পেয়েছিল সে -পাছে তিস্তা কোন বড় মূল্য চেয়ে বসে তার কাছে। শেষ যেদিন কলেজে গিয়েছিল সে,তিস্তা সেদিন লাইব্রেরির সামনে দাঁড়িয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে ছিল তার দিকে, না ভালোবাসার কোন মূল্য চায়নি সে; শুধু দূর থেকে দেখে গেছে। আর সৌগত নিজের অপরাধ ঢাকতে ব্যস্ততার ভান করেছে। ধীরে ধীরে তার বাড়িতে পড়াতে আসাও বন্ধ করেছিল মেয়েটা।কেরিয়ার গড়ার নেশায় বুঁদ তখন সৌগত।তিস্তার চোখের ভাষা পড়ার সময় কোই।আর আজ সামনে বিস্তৃত এক উজ্বল কর্মজীবন,সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে উপরে উঠে চলেছে সৌগত।জীবন জুড়ে চুড়ান্ত ব্যস্ততা।জীবন এখন মধ্য গগনে,সূর্যের প্রখর তাপে মনের জমি এখন রূক্ষ,শুষ্ক।চাই একটু নরম আদ্রতা,অকৃত্রিম ভালবাসার শীতল ছায়া।ছোট খাটো গুল্ম নয়,চাই বট বৃক্ষের ন্যায় বিশাল ছায়া।যার তলে ক্লান্তি ধুঁয়ে মুছে নতূন করে বাঁচার ইচ্ছা জাগে।


পর্ব ৬

গ্রাম ছেড়ে আজ হাঁটতে হাঁটতে একটু দূরে চলে এসেছে সৌগত। কাল তাকে ফিরতে হবে আবার চেনা ছন্দে। মন তাই ভারাক্রান্ত। একটা ছোট্ট পাহাড়ি নদী বয়ে যাচ্ছ এপাশ দিয়ে। জঙ্গলটাও এখানে একটু ঘন। দূরে দেখা যাচ্ছে একটা বন বাংলো।বেশ কিছু নাম না জানা পাহাড়ি ফুল ফুটে রয়েছে বাংলোটার আশেপাশে। সম্ভবত ফরেস্ট অফিসার দের বাংলো এটা।একটু এগিয়ে গেল সৌগত সেই দিকে। একজন মহিলা ফুল গাছগুলোয় জল দিচ্ছিল, পেছন থেকে সৌগত মুখ দেখতে না পেলেও বুঝতে পারল মহিলা বাঙালী। পরনে হলুদ আর কচি সবুজ প্রিন্টের বাংলার হ্যান্ডলুম।ঈষৎ মেদ বহুল শরীর আর সাধারন বাঙালির মতই মধ্যম উচ্চতা। শাড়ির ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে মেদ বহুল কোমরের হালকা ভাঁজ।এই ভাঁজ জানান দিচ্ছে মহিলার বয়স অন্তত পঁচিশের ঊর্ধে।হয়ত কোন ফরেস্ট অফিসারের গৃহিণী হবেন।চুল এলো খোঁপার মত গুটিয়ে রাখা।কিছুটা ঝুলে পড়ে পুরু কোমল পিঠ ছুঁয়ে ফেলার বৃথা প্রচেষ্টা করছে।

-এই যে শুনছেন.....,
বাগানটা কি একটু ঘুরে দেখতে পারি?

মহিলা গাছে জল দিতে দিতেই বলল- অবশ্যই পারেন।তবে গাছে হাত দেওয়া যাবে না।তারপর একবার আগন্তুককে দেখে নেওয়ার জন্য ঘুরল।

চমকে উঠল সৌগত।সত্যি নাকি স্বপ্ন!

-একি তিস্তা না! তুমি এখানে.....?
-সৌগত দা.....! তিস্তাও চমকে উঠল।

কিছুক্ষন দুজনেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। নিরবতা ভেঙে সৌগতই প্রথম কথা বলল। তুমি এখানে কি করে?

-এখন এটাই আমার ঘর। তুমি এখানে কি করছ?

-কয়েকদিন ধরেই এখানে আছি। ঘুরতে এসেছি।একটু থেমে সৌগত বলল-অনেক পথ হেঁটেছি,একটু বসলে ভাল হত।

ও হ্যাঁ...,চল আমার রুমে।
না তিস্তা,বাগানটা বড় সুন্দর ;এখানেই বসি চল কোথাও।
বসার জন্য কতগুলো পাথরের চাই পাতা ছিল ওখানেই বসল তারা।
তিস্তা বলল চা খাবে?এখানকার চা কিন্তু খুব ভালো খেতে হয়।
-না থাক, তারপর কতদিন হল এখানে?
-কলেজ শেষ হওয়ার এক-দেড় বছর পরেই এখানে চলে এসেছি।
-তুমি এখন কি করছ?
-সেই শহুরে জীবন। এম. এন. সি তে চাকরী।
- আর ফ্যামিলি ?
-আমার ফ্যামেলি মেম্বার এখনও বাড়ে নি তিস্তা। তবে এখান থেকে ফিরলেই সোজা বিয়ের মন্ডপে প্রবেশ করব।
-ও তাই।পাত্রী তাহলে ঠিক হয়ে আছে?
-মা ঠিক করেছে। আমিও দেখে এসেছি। মেয়েটাকে শুধু সুন্দরী বললে কম বলা হয়।

-অনেক শুভেচ্ছা রইল।তাতান এখন কিসে পড়ছে? অনেক বড় হয়েছে না?

-হুম,এ বছর মাধ্যমিক দেবে। তোমার কথা বল তিস্তা।
তোমার পরিবার,মা-বাবা সবাই ভালো তো?

তিস্তা একটু উদাস হয়ে দুরের পাহাড়টার দিকে তাকিয়ে রইল খানিকক্ষণ।তারপর বলল ভালোই থাকবে হয়ত।

সৌগত অবাক হয়ে বলল মানে বাড়ির সাথে যোগাযোগ নেই তোমার?

-আমার বাড়ি কোনদিন ছিল না হয়ত।তাই এখন আর যোগাযোগ নেই।
-মানে?
-সে অনেক বড় কাহিনী,
-বল না,আমার কোন তাড়া নেই আজ।

-তুমি তো জান সৌগতদা আমি কম কথা বলি।এত বড় কাহিনী তোমায় বলার মত ধৈর্য হবে না আমার।

-সৌগত নাছোড়বান্দা।তবে ছোট করেই বল আমি বুঝে নেব।

কিছুটা অনিচ্ছার সাথেই বলতে শুরু করল তিস্তা।

-"কলেজ শেষ হওয়ার পর দিদির দেওরের সাথে বিয়ে ঠিক হল। চাষ বাস করে গ্রামের ছেলে। আমারও পছন্দ না হওয়ার মত কোন কারন ছিল না। একদিন তাকে গিয়ে আমার সব অতিত বললাম। সেই বৃষ্টির সন্ধ্যা, লুকানোর মত বা সবাইকে জানানোর মত কিছু ছিল না। আমি কোন অন্যায়ও করিনি। কিন্তু আমাকে যে বিয়ে করবে তার জানা দরকার ছিল। আমি মিথ্যার দ্বারা সম্পর্ক গড়তে চাইনি।সব শোনার পর সে কোন কিছু না বলেই চলে গেল। তার পরের দিন দিদিকে দাদাবাবু আমাদের বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে গেল। বাড়ির সবাই আমাকেই দোষ দিল দিদির ঘর ভাঙার জন্য।
একটু থেমে তিস্তা আবার বলতে শুরু করল।আবেগে গলা ধরে গিয়েছিল তার।
"বুঝতে পারি না সৌগতদা কিভাবে সবার ক্ষতি করে ফেলি। আমার এক যমজ ভাই নাকি আমার দোষে মারা যায়। আবার দিদির ঘরও ভাঙলাম আমি। মা বলল এত বড় পাপ লুকাতে পারলি না? সারা পৃথিবীকে জানিয়ে বেড়ালি! নষ্ট মেয়েছেলে,এই অশুচি শরীর নিয়ে ড্যাং ড্যাং করে ঘুরে বেড়াস।গলায় দড়িও জুটছে না তোর?"

মানুষ কিভাবে নষ্ট হয় সৌগত দা......? শরীর কিভাবে অশুচি হয়....?
কান্নায় গলা বুজে এল তিস্তার।
সৌগতরও চোখে জল এল। আজ তিস্তা অনেক বড় প্রশ্নের সামনে তাকে দাঁড় করিয়েছে।সত্যিই তো বহমান জলের ধারা থেকে আঁজলা ভরে জল পান করলে পথ শ্রমে ক্লান্ত পথিকের তৃষ্ণা নিবারন হয় মাত্র।কিন্তু জলের প্রবাহমানতা তাতে থেমে যায় না।তিস্তা তো নদী স্বরূপ।যার গভীরতা মাপতে গিয়ে দুষ্টু ছেলেরা ঢিল ছোঁড়ে, সাঁতরে তাকে জয় করতে চায়। সেও তো সেদিন তাই করেছে। আজ যৌবনে এসে শুধুই কৌতুহল নয়,মনে হয় যেন এই শীতল জলে অবগাহন করে শরীর ও মনের সকল গ্লানি ধুয়ে মুছে যাক। আর বার্ধক্যেও যদি কেটে যেত তিস্তার তীরে বসে মনোমুগ্ধকর শোভা দেখে; তবে বেশ হত।

তিস্তা আবার বলতে শুরু করল-মা বাবা সবাই বলল বাড়ি ছেড়ে দিতে। আমি তাও বাড়িতেই পড়ে রইলাম। কোথায় যাব জানা ছিল না। কিছু কম্পিটিটিভ পরীক্ষায় বসেছিলাম। হঠাৎ একদিন ইন্টারভিউ এর কল লেটার এল। ফরেস্টের চাকরিটা আমি পেয়ে গেলাম। যেদিন বাড়ি ছেড়ে আসি মা বলল যেন আর কখনো ও বাড়িতে না ফিরি। আমি আসার পর শুনেছি দিদি শ্বশুর বাড়ি ফিরে গেছে। পাঁচ বছর হতে গেল এই পাহাড় এখন আমার বাড়ি।

কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ করে বসে রইল পাশাপাশি।বিকালের উদাসীনতা ভেদ করে কিছু পাখির ঝাঁক কিচির মিচির শব্দে উড়ে চলেছে আপন গৃহের উদ্দেশ্যে।কমলা রঙের বিকাল গুলো ঘর ছাড়াদের এক অমোঘ আকর্ষণে ঘরের দিকে টেনে নিয়ে যায়।এই যে পাশাপাশি বসে সম্পূর্ণ ভিন্ন জগতের দুই মানুষ একজন অনিচ্ছাকৃত গৃহহীন আর একজন ইচ্ছাকৃত বেছে নিয়েছে কয়েকদিনের নির্বাসন,এদের কিন্তু ঘরে ফেরার কোন তাড়া নেই।

স্তব্দতা ভেঙে সৌগত প্রথম কথা বলল-আমাকে ক্ষমা করতে পারো তিস্তা? অনুতাপের ভারে ঝুলে পড়েছে সৌগতর মাথা নিচের দিকে।

তিস্তা অবাক হয়ে বলল ক্ষমা কেন সৌগতদা.....!আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। তুমি আমাকে ভালোবাসার প্রথম স্বাদ দিয়েছো।বিয়ে,ঘর,সংসার এসব ভাবনা নিয়ে আমি ভালোবাসিনি তোমায়।

-তবুও তো আমার কারনে তোমাকে সমাজের কটাক্ষ সহ্য করতে হয়েছে।তোমার পরিবারের কাছেই তুমি আজ ব্রাত্য।

পরিবার তো আমার কোনদিন ছিলই না সৌগত দা।আর তোমাদের সমাজের অস্তিত্ব আমি কখনো উপলব্ধি করি নি।সেদিন আমার শুধু তুমি ছিলে।তুমি ছেড়ে যাওয়ার পরও যার রেশ রয়ে গেছে।

একটা গভীর শ্বাস নিয়ে তিস্তা বলতে লাগল -কোন অপরাধ করিনি আমি। কারো ক্ষতিও করিনি।তবে আমি কেন নষ্ট হব,আমিই কেন বারবার অপরাধী হব?তিন মাস বয়সে আমি কিভাবে ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী হতে পারি বলতে পার? সত্যি কথা বলার জন্য যদি দিদির সংসার ভাঙে তবে তার জন্য আমি কেন দায়ী হব ?

সৌগত বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিল তিস্তার দিকে।এতখানি প্রতিবাদী চরিত্রের সাথে তো সে পরিচিত ছিল না!এতদিন সে যে তিস্তাকে বুকের ভিতর বয়ে বেড়িয়েছে সে তো বড়ই নির্মল।নরম আর নিষ্পাপ,ঠিক যেন ভোরের প্রথম আলো।যা ছুঁয়ে গেলে নতুন দিন শুরু হয়।তবে কি সময়ের সাথে তিস্তা তার কোমলতা হারিয়ে ফেলেছে?নাকি এই প্রতিবাদী নারী তিস্তার মধ্যেই সুপ্ত ছিল চিরদিন।

হঠাৎ তিস্তার ক্ষোভ এসে আছড়ে পড়ল সৌগতর ওপর।তিস্তা তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সৌগতকে বিদ্ধ করতে করতে বলল-

তুমিও আমায় ভুল বুঝেছিলে সৌগতদা। আমি শুধু ভালোবেসে ছিলাম তোমায়। তোমার পথের কাঁটা হতে চাইনি।তোমার ভালোবাসা যদি এক বর্ষণ সিক্ত সন্ধ্যার সংগমেই তার প্রাণ হারিয়ে ফেলেছিল তবে সেই সত্যিই চোখে চোখ রেখে বলার সাহস থাকা উচিত ছিল তোমার।কাপুরুষের মত পালিয়ে না বেড়ালেই হয়ত ভালো হত।আসলে তুমিও আমার ভালোবাসার যোগ্য ছিলে না।

সৌগত মাথা নিচু করে বসে ছিল।এতদিনের দাগী আসামী সে।আজ প্রথম তিস্তার আদালতে তার বিচার শুরু হল।না,আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন ইচ্ছা নেই তার।শুধু প্রায়শ্চিত্তের পথ টুকুর সন্ধান দিক তাকে তিস্তা।

নিজের সমস্ত অপরাধ স্বীকার করে নিয়ে সৌগত বলল -ঠিকই বলেছ।সত্যিই তোমার যোগ্য হতে পারিনি।আর তার ফল আমি এত বছর ধরে ভুগছি।

কিছুক্ষণ আবার দুজনের চুপ করে রইল।অনেকক্ষণ সৌগতর মধ্যে প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল।একটা সম্ভাবনা- হয়ত.....

শেষ পর্যন্ত প্রশ্নটা করেই ফেলল সে-এত বছর হয়ে গেল বিয়ে করনি কেন তিস্তা?

-ইচ্ছে হয়নি।আবার জীবনে এক বঞ্চনার অধ্যায় শুরু হোক চাই না।

-একটা কথা জিজ্ঞাসা করব তিস্তা? যদি আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই তুমি কি রাজি হবে?

তিস্তা খুব কঠিন গলায় বলল না।
-কেন? আর একবার কি আমাকে সুযোগ দিতে পার না?সেদিন যে ভুল করেছিলাম তার প্রায়শ্চিত্ত আমি এত বছর ধরে করেছি তিস্তা।তোমার যতনা প্রতারিত করেছি তার বেশী নিজে প্রতারিত হয়েছি।একুশ বছরের সদ্য যুবক তখন আমি।আবেগে ভেসেছি শুধু,গভীরতা খুঁজি নি।তোমার মত হতেও পারিনি।তার শাস্তি কি জীবন ভর আমায় দেবে?আজ যদি তুমি ফিরিয়ে দাও তবে জীবন আমার নির্বাসনের সমান হবে।এর চেয়ে যদি তুমি মৃত্যুদন্ডই দাও তাও ভালো।

তিস্তা বলল-তা নয় সৌগতদা।যাকে ভালোবেসেছি তাকে অসুখী দেখতে চাই না।তাই তো আর তোমার সাথে জীবন জড়াব না।আসলে তোমার জীবনে আমি একটা ভুল,একটা অপরাধবোধ। কিন্তু আমার জীবনে তোমার অবদান তুমি জান না। আমার জীবনের একমাত্র মানুষ তুমি যে আমাকে ভালোবেসেছে। হোক না সেই ভালোবাসার আয়ু কয়েকদিন। তোমার চোখের ভাষা আমাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে। যন্ত্রের মত দিন কাটতো আমার,তোমার স্পর্শে আমি নারী হলাম। তুমি যখন আমায় চিনলে না তখন খুব কষ্ট হয়েছিল। তোমাকে হারিয়ে অনেক কেঁদেছি। শুধু ভালোবাসতে নয়, তুমি আমাকে কষ্ট পেতেও শিখিয়েছ।কিন্তু সে সব এখন অতীত।সময়ের সাথে অনেক কিছু বদলে গেছে সৌগতদা।আমিও আর সেই আগের মেয়ে নেই।তুমি যে তিস্তাকে খুঁজছ তাকে ফিরে পাবে না আর।

সৌগত বলল আমিও বদলেছি।এই পরিবর্তন তো জীবনের নিয়ম।সেদিনের তিস্তাকে যেমন ভালোবাসি,সময়ের সাথে বদলে যাওয়া আজকের তিস্তাও আমার ততখানি আপন।আমি জানি সেই সারল্যে ভরা তিস্তাকে হয়ত পাব না আর।তবুও আজকের প্রতিবাদী,দাম্ভিক আর পরিণত তিস্তাকেও তো দেখে একবারও মনে হল না সে আমার আপন নয়!

-তুমি হয়ত মানবে সৌগতদা ভালোবাসা ভরসা ছাড়া,একান্ত নির্ভরতা ছাড়া আসে না।তোমাকে কি আমি সেদিনের মতই একান্ত নির্ভরতায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরতে পারি?নিজের থেকে বেশী বিশ্বাস আর কি কখনো তোমার প্রতি আসবে বলে তোমার মনে হয়?

তিস্তা ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কোন কসরত করতে হয় না।এ আপনি আসে। সাথে নিয়ে আসে একে অপরের প্রতি নির্ভরতা।জানি তোমার মন ভেঙেছে।কিন্তু তিস্তা হৃদয় তো কাঁচের টুকরো নয় যে একবার ভাঙলে জুড়বে না।আজ যে হৃদয় ভাঙে কাল সেই তো আবার আমাদের হৃদয়কে ভালোবাসায় আপ্লুত করে।এভাবেই তো ভাঙতে গড়তে জীবন এগিয়ে চলে।মাকে দেখেছি বাবার সাথে ঝগড়া হলে সারাদিন নাওয়া খাওয়া ভুলে আকুল হয়ে কাঁদতে।আবার সেই মা আমার পরের দিনই বাবার সামনে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।জীবন তো সহজ সাবলীল ভাবেই এগিয়ে চলবে আপন মানুষের হাত ধরে।একে এত জটিল কেন করছ?

জটিল করতে চাই না বলেই তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি সৌগতদা।আমি এখানে ভালো আছি। এই পাহাড়,এই জঙ্গল এখানকার প্রকৃতি আমাকে আপন করে নিয়েছে।আমি আবার প্রেমে পড়েছি।এখানকার প্রকৃতি,এই নিরবতা,রহস্যময় জঙ্গলে একা রাত্রিযাপন,এখানকার গাছপালা,পশু-পাখি ,জনজীবন সব আমার।কিভাবে এসব ছেড়ে তোমার কংক্রিটের জগতে ফিরে যাই বলতে পার?

-কিন্তু আমি ভালো নেই তিস্তা।এত বছরের প্রেম হীন জীবন আমার।তুমিই তো আমার প্রকৃতি, তুমিই আমার পাহাড়ি নদী।তোমাকে ছাড়া প্রকৃতিও যে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।তুমি আমার জগতে না আসতে চাও তো আমি তোমার জগতে আসব। তিস্তা তোমাকে আমি তোমার পাহাড় থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাব না। ভালোবাসা নি:শর্ত হোক-এতো তোমার কাছেই শিখেছি। তুমি আমার কাছে নয়,আমি তোমার কাছে ছুটে আসব।তুমি তোমার পাহাড়,জঙ্গল আর এখানকার প্রকৃতির মাঝে থেকেই আমাকে আপন করে নাও।

তিস্তা অভিমানী গলায় বলল এমন কথা বলে তুমি সেদিনও আমাকে প্লাবিত করছিলে,আজও তাই করতে চাইছো। আমি আর তোমার কথায় ভুলবো না সৌগতদা।

-তুমি জান তিস্তা,আমি কিন্তু তোমার সম্মতি না পাওয়া পর্যন্ত এখানেই বসে থাকব।আমি তোমার মত অভিমানী নয়, বড়ই নির্লজ্জ।

-এই নির্লজ্জতা আর তোমায় মানায় না সৌগতদা। তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। কেউ তোমার অপেক্ষায় আছে।

-কিন্তু আমি যে এতদিন তোমার অপেক্ষায় ছিলাম তিস্তা...
-সৌগতদা তুমি আবার কাউকে প্রতারিত করতে চাইছো।আবার একটা নিষ্পাপ মেয়ের মন ভাঙছ।

-ওখানে তো মনের কারবার নেই।সুখ সুবিধা আর প্রয়োজন বুঝে একে অপরকে বেছে নেওয়ার চলছে মাত্র।আমি নয় তো অন্য কেউ তার জুটেই যাবে।তার ভাবনা তুমি কোরো না তিস্তা।তার পাত্রের অভাব হবে না।

-তিস্তা আহত হয়ে বলল তুমি কি মনে করো আমার পাত্রের অভাব তুমি পূরণ করছ? অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পেতে আমাকে উদ্ধার করতে এসেছ?

- সৌগত এবার হেসে ফেলল।তিস্তা তোমায় পাত্রস্থ করতে নয়, আমি পাত্রীস্থ হতে চাই। তোমার অনুগ্রহ প্রার্থী।তুমি যদি দয়া কর তবেই আমি এজন্মে অন্তত বিয়ের স্বাদটা পাই।একটু থেমে সৌগত আবার বলল আজও তুমি নিজেকে চিনলে না তিস্তা।আট বছর ধরে আমাকে এমন আষ্টেপৃষ্টে বেঁধেছ যে চেয়েও আমি আর কারো হতে পারলাম না।আর আজ তুমি বলছ আমি তোমাকে উদ্ধার করতে এসেছি! কেন বোঝ না তুমি -আরে আমি নিজেই উদ্ধার হতে চাই।

তিস্তা হাসতে হাসতে বলল বেশ তবে সামনের পাহাড়টায় উঠে এক পায়ে দাঁড়িয়ে তপস্যা কর।

সৌগত রেগে গিয়ে বলল পাহাড়ে থেকে থেকে তুমি পাথর হয়ে গেছ তিস্তা।

-বেশ তাই হয়েছি।তবে তুমি এই পাথরের বুকে বৃথা দাগ কাটার চেষ্টা করছ কেন?

-সৌগত দৃঢ় গলায় বলল বেশ আমিও দেখব তুমি কত কঠিন।দাগ কাটাতে নয়,আমি এই পাথর গলিয়ে আমার তিস্তাকে উদ্ধার করে আনবই দেখ।

তিস্তা এবার হেসে ফেলল।তাই বুঝি।বেশ তবে আমিও তার অপেক্ষাতে থাকলাম।

-একটা অনুরোধ করব তিস্তা?

-কর।

তুমি আমাকে সৌগতদা বলে ডাকবে না।

তিস্তা হাসি চেপে বলল কেন তুমি কি নামও বদলে ফেলবে?
-তোমার মুখে সৌগতদা শুনলে খুব গিলটি ফিল হয়। শুধু সৌগত বলো।

-ঠিক আছে,আগে তুমি তপস্যায় সিদ্ধিলাভ কর,তারপর না হয় চেষ্টা করে দেখব' দা 'টা বাদ দেওয়া যায় কিনা।
সৌগত আবদারের সুরে বলল একটু চা খাওয়াবে তিস্তা?এতক্ষণ ধরে তোমাকে কনভিন্স করতে করতে গলা যে শুকিয়ে গেল।তারপর এই ঠান্ডা।
তিস্তা বিচলিত হয়ে বলল ওহো,সন্ধ্যা হয়ে গেছে আমি তো খেয়ালই করিনি।এই সময় হঠাৎ করে ঠান্ডাটা জাঁকিয়ে ধরে।এখানকার এই ঠান্ডার সাথে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।কিন্তু তুমি তো নতুন।তোমার তো কষ্ট হবে।আমার খেয়াল করা উচিত ছিল। দাঁড়াও,এক্ষুনি আসছি।বলেই তিস্তা দ্রুত পদে ঘরের দিকে ছুটে গেল।

সৌগত আবছা আঁধারে মুগ্ধ হয়ে পেছন থেকে তার গতিপথের দিকে চেয়ে ছিল।মনে মনে বলল হৃদয় থেকে উৎসারিত স্নেহের পথে অভিমান জমতে থাকলে অনুভূতিগুলো অবদমিত হয়ে যায়।কিন্তু ভালোবাসা মরে না তিস্তা।এ যে হাজার ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যেও বেঁচে থাকার রসদ ঠিক খুঁজে নেয়।আমাকে সামান্য ঠান্ডা লাগছে বুঝতে পেরে তুমি অস্থির হয়ে উঠলে।তোমার এই যত্নের মধ্যেই সুপ্ত রয়েছে তোমার ভালোবাসা।একে অস্বীকার করার ক্ষমতা তোমার নেই।এবার আমি অপেক্ষা করব কবে তুমি নিজে স্বীকার করো যে তুমিও আমায় ভালোবাসো।আমাকে ছাড়া এই জীবন একা কাটিয়ে দেওয়া তোমার কাছেও সুদীর্ঘ নির্বাসন সম।একথা খুব তাড়াতাড়ি তুমিও অনুভব করবে তিস্তা।

সমাপ্ত