টপিকঃ অগ্নিকন্যা - ভালবাসার হাত ধরে একটি নারীর হার না মানার কাহিনী পার্ট ১
University থেকে ফিরে বেশ ক্লান্ত লাগছিল অনুর। দিল্লীর JNU তে philosophy তে মাস্টার্স করছে অনামিকা, final year. এসেই ব্যাগ টা বিছানায় রেখে শুয়ে পড়ল। বাড়ি খিদিরপুরে। হঠাৎ ফোন টা বেজে উঠল, ফোন টা কানে নিয়ে ক্লান্ত গলায় বলে উঠলো, হুমম মা বলো। ওদিকে মায়ের কান্না ভরা আওয়াজ ভেসে এলো, মায়ের গলা কাঁপছে। অনু উঠে পড়লো বিছানা থেকে। - - কি হয়েছে মা, কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর এলো সর্বনাশ হয়ে গ্যাছে। কি হয়েছে কি? আতঙ্কে অনুর বুক কাঁপতে লাগলো।
মা ওপাশ থেকে বলে যাচ্ছে রূপের মুখে কেউ অ্যাসিড ছুড়েছে, মুখ টা পুরো ঝলসে গ্যাছে। ওর জীবন টা নষ্ট হয়ে গ্যালো,মেয়েটার কি হবে এবার? কালো ফ্রেমের মোটা চশমা টা ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছে।বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। ওপারে মা কেঁদে যাচ্ছে। দাঁড়িয়ে পড়লো অনু, কিছু ক্ষণ চুপ করে থাকার পর কাঁপা গলায় বললো মা আমি আসছি।
--চলে আয় মা তাড়াতাড়ি আয়, বোনের condition ভালো না। ফোন টা কেটে দিলো অনু, কান্নায় ভেঙে পড়লো। তার পরেই ফোনে এ ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য app খুলল তারপর কেটে দিয়ে ফ্লাইট এর টিকিটের খোঁজ করতে লাগলো। কাল সকালে দমদমের জন্য টিকিট পেয়ে গ্যালো। এক এক টা ঘন্টা এক এক টা বছরের মতো লাগতে লাগলো। এর মাঝে বাড়িতে দু বার ফোন করেছে, রূপের এখনো জ্ঞান ফেরেনি।
রুমমেট শান্তনা দেবার চেষ্টা করলো কিন্তু অনুর মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এক এক করে স্মৃতিরা ভিড় জমাতে থাকে। চার বছর আগে কালী পুজোর সময় নাটকে রূপ হয়েছিল পার্বতী আর অনু কালী। কি মিষ্টি লাগছিল রূপ কে। ফোনে ছবি দেখতে দেখতে দু চার ফোটা জলে ভিজে গেলো ফোনের স্ক্রিন, রূপ খুব ছবি তুলতে ভালোবাসে অনুর ফোনে ওর অজস্র ছবি, শেষ ছবি স্টেশনের, অনুর দিল্লি আসার সময় ছাড়তে এসেছিলো স্টেশন। জিভ বার করা ছবি টা দেখে হেসে ফেলল অনু। সেই হাসি মুখ টা কি কখনো দেখতে পাবে? অপরূপ দেখতে হয়ে ছিল রূপ, তাই মামা নাম রেখেছিলো অপরূপা।সত্যিই রূপ তার নামের মতই অপরূপা, লম্বা ছিপছিপে চেহারা, দুধে আলতা গায়ের রঙ, টিকালো নাক, মোহময়ী দুটি চোখ।
অনুর গায়ের রঙ কালো, মাঝারি আকার, মুখে দেহে চাকচিক্য লক্ষ্য করা যায় না কিন্তু চোখ গুলো খুব উজ্জ্বল, একটা শান্ত বুদ্ধি দীপ্ত চেহারা। মা বাবা ছাড়া বাকি প্রতিবেশী আর আত্মীয়রা বোনের সাথে তুলনা করে অনুর।কিন্তু তাতে দুই বোনের কখনো কিছু যায় আসেনি। হয়তো কখনো খারাপ লেগেছে কিন্তু কখনো হিংসে হয়নি অনুর। বড্ড ভালোবাসে সে তার বোন কে।
একবার দিদার শরীর খারাপ হয়েছিল খুব, মা বাবাকে হাসপাতাল ছুটতে হয়েছিল। রূপের ও ভীষণ জ্বর, সারা রাত অনু ওর মাথার পাশে বসে, ওকে জল পট্টি দিয়েছিল, গায়ে ব্যথা, হাত পা টিপে, ওষুধ খাইয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিল।
রূপ ও খুব ভালোবাসে দিদি কে। ছোটো বেলায় কে একবার স্কুলে অনুকে কাক, কাক বলে খুব ব্যঙ্গ করেছিলো, ছোট্ট রূপ কি ঝগড়া করেছিলো তার সাথে। কে জানত ভীতু নরম স্বভাবের মেয়ে টা এ ভাবে ঝগড়া করতে পারে..! মনে করে আবার চোখ ভিজে গেলো অনুর।
এ কি হয়ে গেলো এ যে কল্পনার অতীত। খবরের কাগজে দু একটা লেখা মাঝে মাঝে চোখে পড়ে, কিন্তু তাদের সাথে এরকম হতে পারে কখনো স্বপ্নে ও ভাবেনি। তার সেই নিষ্পাপ মুখ টা ঝলসে গ্যাছে!?
আচ্ছা কখনো কি আমার ই নজর লেগে গ্যাছে এরম মনে হতে লাগলো অনুর, পরক্ষণেই মনে হলো আমি এসবে কখন থেকে বিশ্বাস করতে শুরু করলাম!? আমি আমার রূপের কখনো খারাপ চাইত পারি এও কি সম্ভব?
অল্প বয়েস থেকেই রূপের প্রপোসাল আসতো, সব বলত সে দিদি কে। সেই কবে থেকে অনু তাকে আগলে রেখেছে।
কয়দিন University আর social work নিয়ে ব্যস্ত ছিল অনু। রূপের সাথে ভালো করে কথা হয়নি।তাছাড়া ছ সাত মাস আগে দু দিনের ছুটি তে বাড়ি গিয়েছিলো।তখন রূপের একটা বন্ধু কে কেন্দ্র করে ওদের মধ্যে সামান্য কথা কাটাকাটি হয়। কলেজের function এ রূপ ওর সাথে perform করছিলো। rehearsal দেখতে গিয়ে ওদের কলেজে ই দেখেছিল অনু ওকে । বারবার রূপের দিকে অদ্ভূত ভাবে তাকাচছিল। বারবার ওর সাথে কথা বলার অজুহাত খুঁজছিল। ছেলে টা কে নিয়ে ওর সাথে কথা বলতে গেলে রূপ রেগে গিয়েছিল। কথায় বুঝিয়ে দিয়েছিল আমার life আমি সব সামলে নিতে পারবো। পরে অবশ্য দু জন দুজনকে sorry বলেছিলো, মা বাবা ও জানতো না ওটা নিয়ে।সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল। আজ হঠাৎ মনে পড়ে গেলো ঘটনাটা। রূপ কি সেদিন বুঝতে পারেনি ওর দিদি র ভালবাসা টা কতটা খাঁটি। ওর দিদি তো বরাবরই ওকে নিয়ে possessive। তারপর অনু লক্ষ্য করেছিলো আর খোলাখুলি সব কথা বলে না রূপ। দু এক বার জিজ্ঞেস ও করেছে কি রে কিছু বলবি?কিন্তু কিছু বলত না , শুধু এক টা চাপা কথার আভাস পেতো অনু। কিন্তু গুরুত্ব দেয়নি, ভেবেছিল মনের ভুল।কিন্তু কি বলতে চাইত রূপ?
আর কে এমন করতে পারে? কে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে!? কিসের জন্য শত্রুতা? হ্যাঁ ও অনেক ছেলে কে reject করেছে, তাদের মধ্যে কেউ.... কিন্তু তা বলে কেউ এরকম করতে পারে? পাশে ফেলে দেওয়া ফোন টা হাতে নিয়ে উর্মী কে call করলো অনু, উর্মী রূপের সাথে কলেজে পড়ে। এক সাথে যাওয়া আসা করে।
হ্যাঁ অনু দি আমি ও এই মাত্র hospital থেকেই ফিরলাম, বলো। কোনো formality ছাড়াই অনু বললো কি করে হলো? কে করতে পারে? কিছু জানিস? দ্যাখ তুই ওর ভালো বন্ধু তুই কিছু তো জানবি? কাউকে সন্দেহ হয় তোর আমায় বল please. শান্ত হও অনু দি। আমি যা জানি সব বলছি।তোমাকে সব বলতাম ও। uncle aunty র যা অবস্থা ওনাদের সাথে তো ভাল করে কথায় বলা গেলো না। অনু চোখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গ্যালো, আর দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
উর্মী:- আমরা কলেজ থেকে ফিরছিলাম। চারটে বাজে হয়তো তখন। বুধবার আমরা ওরম সময় ই ফিরি।রাস্তা টা ওই সময় ফাঁকা থাকে, মন্দিরের কাছে রাস্তা যেখানে ভাগ হয়ে গেছে সেখানে আমি নিজের মেশের দিকে চলে গেলাম আর ও বাড়ির দিকে ।মেশে ফিরে শুনছি মন্দিরের পর গলির দিকে বিকেল চারটে নাগাদ কোনো একটা মেয়ের ওপর অ্যাসিড attack হয়েছে। শুনেই অপরূপাকে call করলাম, প্রথম বার তুললো না, পরের বার এক অচেনা ব্যাক্তি ফোন তুললেন। বললেন হঠাৎ একটা বাইক এসে মেয়েটার সামনে এসে দাঁড়ায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক চিৎকার শোনা যায়। বাইক টা নিমেষের মধ্যে উধাও হয়ে যায়। কাছে গিয়ে দ্যাখেন অপরূপা মাটি তে পরে ছটপট করছে। উনি দূরে ওনার দোকানে ছিলেন। লোক জড়ো হয়। সবাই মিলে ওকে তখন হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে । ফোনে lock ছিল তাই খুলতে পারেনি। আমি প্রথম খবর টা পায়, আমি ই uncle aunty কে খবর দিয়েছিলাম। দু জন খানিকক্ষণ চুপ করে থাকার পর অনু বললো তোর কাউকে সন্দেহ হয়?
উর্মী বললো আসলে তুমি কতটা জানো জানি না কয়েক মাস আগে ও এক টা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। এটা কলেজে অনেকেই জেনে গেছে, তুমি তো জান ওর admirer এর অভাব নেই, অনেক কেই reject করেছে আজ পর্যন্ত। তাদের মধ্যে একজন আমাদের এক senior নীলাদৃ দা। ওর classmate সপ্তক দার সাথে ও relationships এ ছিল। নীলাদৃ দা ওকে আগে প্রোপোশ করেছিলো কিন্তু ও ওকে reject করে দিয়েছিলো। তোমায় সরাসরি বলছি আমার নীলাদৃ দা ভীষণ সন্দেহ হচ্ছে।
অনু :- কেন?
উর্মী :- নীলাদৃ দা আর সপ্তক দার মধ্যে একটা ভীষণ রেষারেষি চলে। সবাই জানে। ওরা দুজন ই chemistry র student.
অনু :- আচ্ছা সপ্তক মানে যে ওর সাথে কলেজ function এ perform করেছিলো?
উর্মী :- হুমম, তারপর ই সপ্তক দা ওকে প্রোপোশ করেছিলো আমাদের সবার সামনে অনুষ্ঠানের পরের দিন। আর ও সেটা except করেছিল। সেখানে নীলাদৃ দাও ছিল। আসলে সপ্তক দা ওকে নিয়ে একটু show off ও করতে শুরু করে, হয়তো নীলাদৃ দাকে জালানোর জন্যই।যতো দূর জানি নীলাদৃ দা এমনি শান্ত কিন্তু হঠাৎ মাথা গরম করে ফেলে। চার পাঁচ দিন আগে ওদের মানে নীলাদৃ দা আর সপ্তক দার বেশ ঝগড়া হয়েছে, এমনকি হাতাহাতি ও... তবে শোনা কথা কারন টা ঠিক জানি না তবে বোধহয় অপরূপার জন্যই।আর অপরূপাই আমায় একবার বলেছিল যে নীলাদৃ দা নাকি একবার ওকে একা দেখে জিজ্ঞেস করেছিলো যে সপ্তক দার মধ্যে এমন কি ও দেখেছে? রূপ সেদিন বলেছিলো কাকে ও ভালোবাসবে, কাকে বন্ধু করবে সেটা সম্পূর্ন তার নিজের ব্যাপার। হতে পারে
নীলাদৃ দার কথা টা ভালো লাগেনি। আসলে ও খুব গুণী, ভালো ছবি আকঁতে পারে, ভালো গান লেখে, দেখতেও বেশ ভালো আর খুব বড়লোক বাড়ির এক মাত্র ছেলে। ও ভাবতেও পারেনি ওকে কেউ reject করতে পারে। ও এটাও বলেছিলো "তোর কি মনে হয় সপ্তক তোকে ভালোবাসে? না, ও তোর রূপ টাকে ভালোবাসে। তোর মুখটা, চেহারাটা সুন্দর না হলে ও তোর দিকে তাকাতোও না। সময় হলে প্রমান হয়ে যাবে।"
আমি পুলিশ কে ওর নাম বলেছি কিন্তু এত কিছু বলা হয় নি।
অনু:- আচ্ছা এখন রাখলাম। কাল 9:30 টায় ফ্লাইট। 12:00 - 12.30 টা নাগাদ বাড়ি পৌঁছোব, পৌঁছে কথা বলব তোর সাথে। বলে ফোন টা রেখে দিলো।
এত কিছু ঘটে গেছে আর রূপ ওকে জানায়নি। তবে কি নীলাদৃ বলে ছেলেটায় revange নিয়েছে। এতটা নিষ্ঠুর কি ভাবে হতে পারল!? যাকে ভালবাসে বলে দাবি করেছিল তার সাথে এটা করতে পারলো? রাতে না খেয়ে শুয়ে পড়লো। মাথায় হাজার টা চিন্তা। ভোরের দিকে ঘুম এলো কিন্তু 7:00 টার দিকে ভেঙে গেলো। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে রওনা দিল। বাড়ি পৌঁছুতে পৌঁছুতে প্রায় 12.30।মুখ হাত ধুয়ে হসপিটাল গ্যালো। বেড এ শুয়ে আছে রূপ। ঘুমিয়ে আছে। সারা মুখে ব্যান্ডেজ বাঁধা। মা জানালো জ্ঞান ফিরে ছিল এখন ওষুধের ঘোরে ঘুমচছে। মাথায় হাত রাখলো অনু। হঠাৎ বাঁধ ভাঙ্গা কান্না নেমে এলো। ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো, ও একটু মুখে আওয়াজ করতে ওকে ছেড়ে উঠে পড়লো।মাথায় ঠোঁট টা ঠেকিয়ে বেরিয়ে এলো। doctor এর সাথে কথা বলে জানতে পারলো মুখের এক পাশ টা জ্বলে গেছে, চোখ দুটো বাঁচানো গেছে, আর অনেক গুলো অপারেশন এর পর মুখের অবস্থা কিছু টা উন্নতি হতে পারে, তবে এখন কোনো কিছু করা সম্ভব নয়।
বাবা কাল থেকে ছোটাছুটি করছে, মায়ের জোরাজুরি তে ও আর বাবা খেতে গ্যালো। একটু পরে উর্মী কে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ স্টেশন গ্যালো, সমস্ত ঘটনা পুলিশ কে জানানো হলো বিস্তারে, পুলিশ জানাল নীলাদৃ কে ডেকে পাঠানো হয়েছে কিন্তু ও শহরের বাইরে। আর যতো দূর জানা গ্যাছে ঘটনার এক দিন আগেই ও দার্জিলিং এর জন্য বেরিয়ে
গে
ছে।
অনু :- আচ্ছা এমনও তো হতে পারে যে ও কাউকে দিয়ে করিয়েছে।
অফিসার বললেন হ্যাঁ হতে পারে তবে সেরকম যদি হয়ে থাকে ও ছাড় পাবে না। ওর প্রভাব প্রতিপত্তি কিছু কাজে আসবে না।
আশ্বস্ত হয়ে ওরা ফিরে যায়। 2 দিন পর যখন রূপ প্রথম ওর মুখটা দেখলো ওর সেকি চিৎকার। সব ছুড়ে ফেলে দিলো। মুখের এক পাশে মাংশ টা অনেক খানি নেই, জায়গায় জায়গায় ফুলে গ্যাছে। পুজ জমে আছে একটু খানি। বীভৎস লাগছে। ওর মা ওকে জড়িয়ে ধরলো, রূপ মায়ের বুকে ছটপট করছে। অনু ওদের কান্না দেখতে পারছে না, বেরিয়ে এলো। ওর গোটা শরীরে কাটা দিচ্ছে, বমি আসছে, এটাই ওর ছটপটে, ফুটফুটে বোনটা!?
এরপর পরের দিন রূপ কে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। সেদিন রাতে খাওয়ার পর রূপ অনু এক সাথে শুল, কথা বলতে রূপের কষ্ট হচ্ছে ভেবে অনু চুপ ছিল। ভীষণ ক্লান্তি তে রাতের দিকে ঘুম এলো অনুর, খানিকক্ষণ পরে হাতের কাছে রূপ কে না পেয়ে জেগে উঠে বসে পড়লো, দেখলো রূপ নেই, মাথার উপর যেনো বাজ পড়ল রূপ বলে ডাকতে যাবে তখন ই দেখলো বেলকনির দরজা টা খোলা। দরজার কাছে যেতেই রূপের সুন্দর মুখ টা দেখতে পেলো,চাঁদের আলো পড়ছে মুখে। মুখের বাঁ পাশ এখনও কি মায়াবী। রূপের এক হাতে ব্লেড, ওই হাত টা দিয়ে আরেকটা হাতের শিরার ওপর ধরে রেখেছে। চোখ পড়তেই রূপ বলে চিৎকার করলো অনু।
রূপ :- ডাকিস না ও নামে...দিদির দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলো।
হাত থেকে ব্লেড টা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল অনু। আমাদের কথা একবার ও ভাববি না!?
রূপ:- তোদের কথা ভেবেই এখন ও ব্লেড টা চালাতে পারিনি। বাবা সন্ধ্যে বেলায় বলছিল চাঁদের ও তো কলঙ্ক থাকে, আমার এই চাঁদের মানিক মা টাও নাহয় কলঙ্ক নিয়েই বাঁচবে। কিন্তু তোকে ছাড়া আমরা কেউ বাঁচব না মা। আমাদের জন্য তোকে ভাল থাকতেই হবে। বাবার মুখ টা মনে পরে গেল, তোর কথা, মা এর চোখের জল মনে পরে গেল তাই পারলাম না।
রূপের মাথা টা বুকের মধ্যে নিলো অনু।
রূপ :- চাঁদ কলঙ্ক নিয়ে ও সুন্দর কিন্তু আমি এ কলঙ্ক বইবো কি করে,এটা তো আমার নাম টাই কেড়ে নিয়েছে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছেরে দিদি।
অনু বোনকে আরও শক্ত করে চেপে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বললো, বাবা ভুল বলেছে। তুই আর চাঁদ নেই।মুখটা টেনে তুলে ওর মুখ টা দু হাতের মধ্যে রেখে চোখে চোখ রেখে বলল চাঁদের কলঙ্ক থাকে। কিন্তু সূর্যের নয়। সূর্যের ও তো কালো দাগ আছে। কিন্তু দেখা যায় না, যারা সূর্যের মধ্যে কলঙ্ক খুঁজতে যায়, তাদের চোখ ঝলসে যায়, আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। চাঁদ সুন্দর কিন্তু সূর্যের কাছে আলো ধার নিতে হয় তাকে, সূর্য নিজের আলোয় আলোকিত, সে তেজময়ী। চাঁদ পৃথিবী কে শীতলতা দেয়, আকাশ কে সাজিয়ে রাখে, কিন্ত সূর্য কে নিজেকে জ্বালতে হয় সৃষ্টি কে বাঁচিয়ে রাখতে। চাঁদ অমাবস্যার অজুহাতে ছুটি নেয়, সূর্য চির স্থির কারণ তাকে পৃথিবীকে আলো দিতে হবে । চাঁদ সৌন্দর্যের মত একটু একটু করে ক্ষয় হতে হতে একদিন সঙ্গ ছেড়ে দেয়। সূর্য কর্মের প্রতীক, স্থির, নিশ্চল চিরকাল মানুষের মধ্যে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।মুখ এক দিন সবাই ভুলে যায়, নাম বেঁচে থাকে।
কিন্তু নাম অর্জন করার কথা তোকে বলব না, আজ নিজের কথা ভাবতে বলব না, বলব না ভালো থাকতে। শুধু বলব দায়িত্বের কথা, ভালো রাখার কথা। দায়িত্ব সমাজের প্রতি। ভালো রাখতে হবে অনেক মানুষ কে, পাশে দাঁড়াতে হবে অনেক মানুষের। ভালো করে দেখলে বুঝতে পারবি চারিদিকে কত কষ্ট, কত অন্যায়, অনেকে এমন আছে যাদের কষ্ট দেখলে তোর কষ্ট তোর কাছে কম মনে হবে। আমরা তাদের চেয়ে ভালো জায়গায় আছি, আমাদের দায়িত্ব তাদের হাত ধরে ওপরে তোলা। ওদের জন্য বাঁচতে বলব আজ তোকে । দেখবি আবার বাঁচতে ইচ্ছে করবে। মানুষ তোর সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হবে না তোকে ভালবেসে জড়িয়ে ধরবে, দু হাত ভরে আশীর্বাদ করবে।
সূর্য কে ভিতর থেকে জ্বলতে হয়। বলা হয় যোঞোর আগুন সব শুদ্ধ করে দেয়। সূর্য তো রোজ যোঞো করে। তার ভেতরের আগুন দিয়ে পৃথিবী কে শুদ্ধ করে ।
দিদির বুকে মুখ রেখে অনেক ক্ষণ কাঁদল। মনের সমস্ত কথা, লুকানো, না বলা কথা বেরিয়ে এলো চোখের জল বেয়ে।দুজনের ই নিজেদের খুব হালকা লাগছে। চুপচাপ বসে থাকা দুটো মেয়ের আকাশে ধীরে ধীরে ভোর হয়ে আসছে চাঁদ লুকিয়ে পড়ছে সূর্যের আলোয়।
অপরূপা:-খুব ভালো লাগজে আকাশ টা কে তাই নারে দিদি?
-হুম, বোনের মাথায় হাত রেখে অনু বললো, চাঁদের মোহ ছেড়ে সূর্যের মতো হয়ে ওঠ।