টপিকঃ পুরুষ ও কাপুরুষ

ফোন টা বাজতেই ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে শ্রেয়া দেখলো অভিষেকের ফোন । ঘেন্না লাগছে রিসিভ করতে , ফোন টা রেখে দিল । বেশ খানিকক্ষন রিং হয়ে হয়ে থেমে গেল ফোন টা ।চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো , নাঃ ঘুম আসছেনা ।একটা মানুষ এমন জানোয়ার কিভাবে হতে পারে ?নাঃ মানুষ চেনা সত্যি কঠিন । অথচ এই মানুষ টার সাথেই তার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে প্রায় একরকম ।এতবড় অপমান সহ্য করা কঠিন , একটা নারীর প্রায় সবকিছু নষ্ট হতে বসেছিল । যদি জানোয়ার গুলো তাকে রেপ করেই দিত তাহলে সে এখন কি করতো ?সে কি বাঁচতে পারতো ?তারপর হার্টের পেশেন্ট মা বাবার কি হতো শ্রেয়া আত্মহত্যা করলে ?বাবার এতদিনের অধ্যাপনা করা সন্মান-খ্যাতি সব মাটিতে মিশে যেত। নির্ঘাত যদি সন্দীপএসেছিল সেই সময়ে , যদি  না আসতো তাহলে ! হয়তো সে এতক্ষনে খবরের কাগজের হেডলাইন হয়ে যেত ।

প্রতি রবিবারের মতো আজকেও সিটি সেন্টারে গেছিল , কারন এই দিন অভিষেকের অফিস ছুটি থাকে । বেশ কিছুক্ষন আড্ডা বন্ধুদের সাথে শেষে ডিনার করে বাড়ি আসছিল । দমদম মেট্রো থেকে দশ মিনিট হাঁটলেই শ্রেয়ার বাড়ি । এমনি তে শ্রেয়া বেশি রাত পর্যন্ত থাকতে চায়না , কারন জানে সন্ধ্যা হলেই গলির মোড়ে ক্লাবের ছেলে গুলো আড্ডা মারে গলা পর্যন্ত মদ গিলে , সারাদিনই সেখানে কিছু কাজকর্ম হীন বাজে ছেলের আড্ডা , রাস্তা দিয়ে যাওয়া মেয়েদের অজস্র কু ইঙ্গিত , আর সেটা সন্ধ্যা হলেই বাড়তে থাকে । পাড়ার কয়েকজন কাকু জেঠু রা পাশের পুলিশ ফাঁড়িতে জানিয়েছেন । কোন সমাধান হয়নি উল্টে উনাদের বিভিন্ন সময় নাজেহাল হতে হয়েছে । সম্ভবত লোকাল কাউন্সিলরের আশীর্বাদ আছে তাই পুলিশ সব জেনেও নিস্ক্রিয় কারন শ্রেয়া ভোটের সময় এদের কয়েকজন কে বুথে দাপাদাপি করতে দেখেছে ।

প্রতি রবিবার রাত আটটা সাড়ে আটটার মধ্যে শ্রেয়া অভিষেক ফিরে আসে । অভিষেকের বাড়ি এই দিকে তবে অনেকটা রাস্তা । বেশিরভাগ দিন শ্রেয়া কে মেট্রো স্টেশনে নামিয়ে অটো ধরে চলে যায় , হেঁটে গেলে আধ ঘন্টা তিরিশ মিনিট লাগবে । কিন্তু অভিষেকের এক বন্ধু সিঙ্গাপুর চলে যাচ্ছে তাই একটু লেট হয়েছিল । বেশিরভাগ দিন অফিস নিয়েই ব্যাস্ত থাকে , স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার একজন এমপ্লয়ী । তাই রবিবার দিন টা শ্রেয়ার খুব আনন্দের । তাদের প্রায় দেড় বছরের সম্পর্ক , বলতে গেলে অভিষেকের বাবা বিজন কাকু শ্রেয়ার বাবার পুরনো বন্ধু , তাই বিয়েতে কোন পক্ষেরই আপত্তি হয়নি , শ্রেয়ার বাবা তো এমন হ্যান্ডসাম সার্ভিস করা ছেলে পেয়ে তো হাতে স্বর্গ পেয়ে ছিলেন । বিয়েটা শুধু সময়ের অপেক্ষা ।
শ্রেয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ছিল , দেওয়াল ঘড়িটায় টিক টিক করে রাত বার টা বাজলো । আচ্ছা , সন্দীপ কি ঘুমিয়ে পড়েছে ?না এখনো জেগে আছে ।
ইশ ! কত অপমান করেছে সন্দীপ কে । খুব লজ্জা করতে লাগলো । আসলে তার ও কিছু করার ছিলনা । সে জানতো অনেকদিন থেকে সন্দীপ তাকে ফলো করে , সে সরস্বতী পূজার প্যান্ডেল হোক বা পাড়ার কোন অনুষ্ঠানে । প্রায় প্রতিদিন তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একবার শ্রেয়ার বাড়ির ব্যালকনির দিকে তাকাতো । অনেকবার শ্রেয়ার চোখে পড়েছে । পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছিল মা বাবা বোন কে নিয়ে তাদের ভাড়া বাড়ি কালি মন্দিরের পিছনের দিকে । একটা কাপড় দোকানে সেলস ম্যানের কাজ করে সন্দীপ ।কিন্তু কোনদিন কথা বলার চেষ্টা করেনি , শ্রেয়া বুঝতে পারতো ওই  চাহনির মধ্যেই এক সমুদ্র কথা লুকিয়ে আছে । কিন্তু ততদিনে অভিষেকের জীবনে।  একদিন সকাল বেলা শ্রেয়া টিউশন যাচ্ছিল , সকাল বেলা রাস্তায় লোকজন একটু কম থাকে ।এম এর প্রথম বর্ষের পরীক্ষার ঠিক আগে আগে , হঠাৎ খেয়াল করলো শ্রেয়া পিছনে একটা বাইক আসছে ধীর গতিতে । আঢ় চোখে চেয়েই বুঝেছিল ফাঁকা রাস্তায় একা শ্রেয়া কে দেখতে পেয়ে বাইকের গতি স্লো করেছে ।
এটাই সুযোগ । সে পিছু ফিরে দাঁড়ালো সন্দীপ একটু কাছে আসতেই সরাসরি জিগ্গেস করেছিল , "তুমি আমাকে ফলো করো কেন ?"
সন্দীপ আকস্মিক প্রশ্নে হতচকিত হয়ে গেছিল , কারন আজ এতগুলো দিন যাকে লুকিয়ে দেখে এসেছে , সামনে যাওয়ার সাহস হয়নি , হঠাৎ সেই মেয়েটির রূঢ় প্রশ্নে হতবাক হওয়া স্বাভাবিক ।সন্দীপকে চুপ থাকতে দেখে শ্রেয়া কেটে কেটে বলেছিল , "তুমি ভাবলে কিকরে তোমার মতো পে ডিগ্রি লেস ছেলে কে আমি লাইক করবো ?আর তাছাড়া আমি এনগেজড । আশাকরি তুমি আর আমাকে ফলো করবে না । "
সন্দীপের বিষাদ গ্রস্ত মুখ টা না দেখেই শ্রেয়া চলে গেছিল । পূজার পরেই অভিষেকের সাথে বিয়ে তাই এই কয়েক মাসে যত ঝুট ঝামেলা কমে ততই মঙ্গল। তার পরে আর শ্রেয়া সেভাবে খুঁজে পায়নি  সন্দীপ কে ।

নাঃ ! ঘুম আসছে না । লজ্জা ! অসম্ভব লজ্জা । জানোয়ার গুলো তাকে প্রায় উলঙ্গ করে ফেলেছিল । রাজা নামের ছেলে টা এক টানে পরনের কুর্তি টা ছিঁড়ে ফেলেছিল টুকরো টুকরো করে আর জিন্স  টা টেনে খুলে দিয়েছিল  , পরনে শুধুই ব্রা আর প্যান্টি । এক বুক লজ্জায় চেষ্টা করছিল শ্রেয়া কোনোরকম নিজেকে আড়াল করতে ।একটা মেয়ের সারাজীবনের সন্মান এই ভাবে ক্ষনিকের ধংস হয়ে যেতে পারে সেটা আজই শ্রেয়া অনুভব করেছে । মেট্রো থেকে নেমেই শ্রেয়া বলেছিল অভিষেক কে একটু এগিয়ে দিয়ে আসতে গলির মোড়ে যে ক্লাব টা আছে ওটা পার করে দিয়ে আসতে । দুজনে পাশাপাশি হেঁটে আসছিল । ক্লাব ঘর টার কাছে আসতেই
শানু আর  রাজা  এগিয়ে এসেছিল । এদের চেনে শ্রেয়া , দেশি মদের গন্ধে ভরপুর । শ্রেয়া অভিষেক এর হাত ধরে তাড়াতাড়ি পেরিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু শানুর ডাকে পিছু ফিরে দেখতেই , রাজা অভিষেক কে হাতের ভোজালী দেখিয়ে বলেছিল , "চুপচাপ চলে যা , আর বেশি মাস্তানি করে পুলিশে জানাতে গেলে তোর বাড়ি তে গিয়ে তোকে খুন করে আসবো ।"
তারপর একটু থেমে শ্রেয়ার দিকে চেয়ে বললো , "ও আমার পাড়ার মেয়ে , -বোনের মতো , ওকে আমরাই পৌঁছে দিচ্ছি , তোকে আর কষ্ট করে যেতে হবেনা"।
শ্রেয়া সবিস্ময়ে দেখলো তাকে একা ফেলে রেখে অভিষেক সুড়সুড় করে পিছু ফিরে চলে গেল ।
কি কাপুরুষ ! নিজের ভাবী স্ত্রী কে ফেলে নিজের  প্রান বাঁচাতে কয়েকটা গুন্ডা বদমাশের ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে । সামান্য প্রতিবাদ করার ক্ষমতাও নেই ! অথচ এই মানুষটার কোলে মাথা রেখে অজস্রবার শুয়েছে শ্রেয়া । ছিঃ ! কিছু ভেবে ওঠার আগেই একদম পাঁজাকোলা করে শানু তুলে নিয়ে ক্লাব ঘরের দুয়ারে পাতানো জীর্ন কার্পেটটার ওপর ফেললো , শ্রেয়া প্রানপনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলো , একবার চিৎকার করে উঠলো কিন্তু নির্জন রাস্তায় কেউ ছিলনা । রাজা এক টানেই খুলে ছিঁড়ে দিয়েছিল কুর্তি,খুলে দিয়েছিল টাইট জিন্স টা ,  শানু দু হাত দিয়ে চেপে রেখেছে শ্রেয়ার দু হাত ,
ধস্তাধস্তির চোটে শ্রেয়ার পিঠে পেটে  নখের আঁচড় , ঠিক তখনই যমদূতের মতো হাজির হয়েছিল সন্দীপ । হাতে ধরা একটা কাঠের পাটাতনের টুকরো দিয়ে সজোরে আঘাত করেছিল পিছন দিক থেকে এসে রাজার মাথায়,  বাবা গো বলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল রাজা । প্রাথমিক  হতভম্ব কাটিয়ে উঠে শানু পাশে রাখা ভোজালী টা ছুঁড়ে মেরেছিল , দুর্ভাগ্যক্রমে মুখে বা বুকে না  লেগে সন্দীপের বাম হাতের কনুইয়ে আলতো ভাবে লেগে নিচে পড়ে গিয়েছিল । ওই অবস্থা তেই সন্দীপ না দমে প্রবল বিক্রমে হাতের কাঠের টুকরো দিয়ে উপর্যুপরি বেধড়ক প্রহার  করে গেছে ।কোন রকমে  উঠে দৌড়ে পালিয়ে গেছিল শানু । তারপর জিন্স টা কুড়িয়ে শ্রেয়ার দিকে ছুড়ে দিয়েছিল । জীবনে প্রথম বার কোন পুরুষের সামনে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল । কিন্তু সন্দীপ সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে কুর্তি টা তুলে দেখলো প্রায় টুকরো টুকরো অবস্থা দেখে নিজের পরনের ফুলহাতা জামাটা খুলে শ্রেয়ার হাতে দিয়ে বলেছিল , "আপাতত এটা পরে নাও , একটু ঘামের গন্ধ লাগতে পারে দুদিন কাচা হয়নি । "
একমিনিট আগের অসহায় অবস্থা থেকে ক্রমে স্বাভাবিক হতে থাকা শ্রেয়ার তখন সামনে দাঁড়ানো সন্দীপ কে দেবদূত মনে হয়েছিল । জামা টা পরার পর শ্রেয়ার দিকে চেয়ে সন্দীপ বলেছিল , "নির্ঘাত দোকান থেকে ফিরতে আজ লেট হলো , তাই চোখে পড়লো , তোমার আপত্তি না থাকলে বাইকে বসে পড় তোমার বাড়ির সামনে নামিয়ে দেব । "
কোন কথা না বলে শ্রেয়া বসে পড়েছিল সন্দীপের বাইকে, মিনিট তিনেক আসতেই শ্রেয়ার বাড়ি , নামতে গিয়ে হঠাৎ লক্ষ করলো অল্প একটু রক্ত বেরোচ্ছে কনুই থেকে -বেশ লাল লাগছে , তার ইচ্ছে করছিল হাতের রক্ত টা মুছে দিতে কিন্তু কোন সুযোগ না দিয়েই সন্দীপ অ্যাক্সিলেটরে চাপ দিয়ে হুস করে বাইক নিয়ে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেছিল । তারপর কোনরকমে ঘরে ঢুকে নিজের রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে বাথরুমে ঘন্টা খানেক ধরে কেঁদেছিল বারবার ধুয়েছিল শরীর শাওয়ারের নিচে । সম্ভবত সে সময় মা বাবা পাশের ঘরে টিভিতে নিমগ্ন ছিল তাই দেখতে পায়নি শ্রেয়ার এই আলুথালু চেহারা ।

শ্রেয়া বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো ফোনের দিকে চেয়ে দেখলো অভিষেকের অজস্রবার ফোন সাথে অনেকগুলো হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ । থাক , এখন আর এগুলো দেখতে ইচ্ছে নেই , উঠে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়ালো খানিকক্ষন , হঠাৎ নজরে পড়লো সন্দীপের শার্ট টা , আস্তে আস্তে এগিয়ে হাতে তুলে নাড়াচাড়া করলো , বেশ একটা ঘামের গন্ধ বেরোচ্ছে , নাকের কাছে ধরে শুষে নেওয়ার চেষ্টা করলো পুরুষালি গন্ধ টা কে , তারপর বুকে চেপে ধরলো ঘামে প্রায় ভেজা মলিন শার্ট টা ।

সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙতে দেওয়াল ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলো পুরো ন টা বাজে কাঁটায় কাঁটায় । ইশ ! জিভে কামড় দিল শ্রেয়া অনেক বেলা হয়ে গেছে । সকাল সাত টার সময় কাজে যায় সন্দীপ । কাল রাতে ভেবে রেখেছিল আজ সকালে দেখা করে ক্ষমা চাইবে , কিন্তু ঘুম টাই বেইমানী করেছে । হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই মা বললেন , "কি ব্যাপার সকাল থেকে দু বার ফোন করেছে অভিষেক আমাকে , বারবার তোর খোঁজ করছে , তুই তার সাথে কথা বলছিস না কেন ?"
শ্রেয়া গত রাতের বিধ্বস্ত অবস্থা কাটিয়ে মোটামুটি স্বাভাবিক হয়েছে , চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো , "ওকে বলে দাও আর কোনদিন যেন ফোন না করে । "
সরমা দেবীর মাথায় যেন বাজ ভেঙ্গে পড়লো , অবাক হয়ে বললেন "কি সব বলছিস !  দু মাস পরে তার সাথে তোর বিয়ে হবে , "
শ্রেয়া দৃঢ় কন্ঠে বললো , "অভিষেক কে আমি বিয়ে করবো না মা । "
"কিন্তু কেন ?অভিষেক ভালো ছেলে , ভালো চাকরি করে দেখতে শুনতে ভালো , তার বাবার সাথে তোর বাবার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব , তাছাড়া তুইও তো নিজেই বলেছিলি অভিষেক কেই বিয়ে করতে চাস । " কথা গুলো বলেই সরমা হাঁফাতে শুরু করলেন , চিরদিন হার্টের পেশেন্ট । একটু জোরে কথা বললেই হাঁফিয়ে ওঠেন।
শ্রেয়া কয়েক সেকেন্ড থামলো , তারপর ধীরে ধীরে বললো , "আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছিলাম । আমার টাকা -গয়না -স্মার্ট ছেলে জীবন সঙ্গী হিসেবে চাইনা , এমন একজন কে চাই যে তার হবু স্ত্রীর সন্মান রক্ষা করবে পথেঘাটে । "
গত সন্ধ্যার ঘটনা টা যতবার ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছে ততবারই চোখের সামনে ভেসে উঠেছে একটা মেয়ের সারাজীবনের সম্ভ্রম সন্মান নষ্ট হবার কাহিনী , চোখ দুটি ছলছল করে উঠেছিল  ওড়না দিয়ে চোখ দুটো মুছে শ্রেয়া বললো , "কাল যখন দুটো গুন্ডা বদমাশ আমার সন্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছিল তখন অভিষেক প্রতিবাদ না করে কাপুরুষের মতো নিজেকে বাঁচাতে পালিয়ে গেছিল । আমি আরো তাকে স্বামী হিসেবে মেনে নেব ?রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কেউ যদি তোমার শাড়ির আঁচল ধরে টানে আর বাবা যদি চোরের মতো মুখ লুকিয়ে পালিয়ে যায় , তাহলে তুমি কি পারবে বাবাকে ক্ষমা করতে ?"
সরমা প্রস্তুত ছিলেন না এই ঘটনা শোনার জন্য , ভাঙ্গা ঘরের মতো ধপাস করে সোফায় বসে পড়লেন ।
শ্রেয়া আস্তে আস্তে বললো , "বিয়ে আমি তাকেই করবো যে নিজের জীবন বিপন্ন করে আমার সন্মান বাঁচিয়েছে । একটা মেয়ে কে ধর্ষিতা হবার রাস্তা থেকে বাঁচিয়েছে । আমার বাবার আজন্ম সন্মান কে সমাজের হাত থেকে রক্ষা করেছে । "
শ্রেয়া ফুঁপিয়ে উঠছিল , কিকরে ভুলবে এতবড় লজ্জা মাখা এক রাতের কাহিনী । হঠাৎ পিঠে হাতের স্পর্শ পেয়ে ফিরে দেখল বাবা এসে দাঁড়িয়েছে পাশের ঘর থেকে । সে নিজেকে সামলাতে পারলো না , ঝাঁপিয়ে পড়লো বাবার বুকে । মনোজ  বাবু মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন , "তুই ঠিক করেছিস মা । আমি আজই অভিষেকের বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দেব আমার মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিনা । "

বাইরে ঠা ঠা রোদ , দুপুর দেড়টা বাজে , এখনো কেন আসছেনা । সাধারনত দুপুর একটার দিকে বাড়ি আসতে দেখেছে সন্দীপকে । এই সময় টা বাড়ি আসে স্নান খাওয়া করতে তারপর ঘন্টা খানেক রেস্ট নিয়ে দোকানে চলে যায় । ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তাকালে অনেকটা দূর পর্যন্ত দেখা যায় রাস্তা টার , শ্রেয়া তাকিয়ে দেখলো শুনশান  কেউ নেই , কয়েকটা কুকুর শুয়ে আছে রাস্তায় । আচ্ছা , সন্দীপ কি ক্ষমা করবে ?যদি না করে তাহলে শ্রেয়া আর কোনদিন বিয়েই করবেনা । আবার নতুন করে পড়াশোনা শুরু করবে একাই বাঁচবে । হঠাৎ একটা ভুটভুট আওয়াজে চমকে উঠে হাতে ধরা প্যাকেট টা নিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে নিচে নেমে গেট পেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো । বাইক টা কাছাকাছি আসতেই শ্রেয়া এগিয়ে গেল , বাইক টা একটু স্লো হয়ে দাঁড়ালো , শ্রেয়া সরাসরি জিজ্ঞেস করলো , "তুমি কি আমায় ক্ষমা করতে পারবে ?"
সন্দীপ হালকা হেসে বললো , "ক্ষমার কি আছে ?আমার তো সত্যিই পে ডিগ্রি নেই , এইচ এস পাস আমি । "
আগস্টের কড়া রোদে বেশ ঘাম দিচ্ছে , রাস্তা পুরো নির্জন , শ্রেয়া দুদিকে তাকালো রাস্তার , নাহ কেউ নেই ,একটা পুরুষালী গন্ধে সারা শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে যেন , নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে  শ্রেয়া সন্দীপের গা ঘেঁষে দাঁড়ালো তারপর বললো ," আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছিলাম , পারলে ক্ষমা করে দিও । " হাতে ধরা শার্টের প্যাকেট টা দিয়ে
ফিসফিস করে সন্দীপের কানের কাছে বললো , "পে ডিগ্রি চাইনা । সত্যিকারের মানুষ চাই " বলেই  সন্দীপের  গালে একটা  আলতো  চুমু দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে এলো গেটের দিকে , তারপর পিছন ফিরে মুচকি হেসে বললো "নাইন -এইট-সেভেন-ফাইভ-ট্রিপল জিরো-থ্রি-ফোর-এইট"--
হতভম্ব হয়ে রোদে ঝলসে যেতে যেতে সন্দীপ দেখলো মেয়েটা দৌড়ে ঘরের ভিতর ঢুকে গেল ।

Re: পুরুষ ও কাপুরুষ

শ্যামল মজুমদার! roll