টপিকঃ ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে পার্ট ২

রবিবার শালা সকাল সকাল ট্রেন টা লেট করছে কখন থাকে আউটের দিয়া রেখাছে সপ্তর্ষি কোন সন্ধে ও নাই আজ কপালে দুঃখ আছে মহারানী ওর মাথা টা কাটে কুটে আয়াশ করে"খাবে | আরে কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখান সন্ধে হয় আর কি মহারানী দেকে ফেলেছেন |
ঠিক সময়ে আসা মানে যে এগারোটার বদলে সাড়ে এগারোটা নয় এটা কবে বুঝবি তুই?" টিকিট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে বেশ রেগেই কথাগুলো বলল জয়ীতা। "আরে কি করব? ট্রেন হাওড়া ঢুকতেই পনেরো মিনিট ঝুলিয়ে দিল....." "থাক ডান-বাম ছেড়ে অজুহাত আর নাইবা দেখালি।" সপ্তর্ষির কথা শেষ করার আগেই তাকে থামিয়ে দিল জয়ীতা। "দাঁড়া, টিকিট কেটে আসছি।" পকেট থেকে মানিব্যাগটা বার করতে করতে বলল সপ্তর্ষি। "থাক, অত উপকার করতে হবে না, কেটেছি আমি, এবার দয়া করে ভিতরে চলুন" -একরাশ বিরক্তি মাখানো কথাগুলো বলে হঠাৎই সপ্তর্ষির হাতটা নিজের মুঠোয় ধরে গেটের দিকে এগিয়ে চলল জয়ীতা। মন্ত্রমুগ্ধের মত এগিয়ে যেতে যেতে একটা ব্যাপার পরিষ্কার বুঝতে পারল সপ্তর্ষি, রোজকার জিন্স-কূর্তিতে অফিস যাওয়া মেয়েটার সাথে আজকের শিফনের সাদা চুড়িদার পরা মেয়েটার বিশেষ কোনও মিল নেই।

গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকেই বাঁ দিকে লেকের ধারে একটা বেঞ্চে বসল দুজনে। এ যায়গাটা বেশ নিরিবিলি। যদিও রবিবার হওয়ায় আশেপাশের ভিড়টাও নেহাৎ কম নয়। তবু এই ভিড় মাঝেই প্রিয়জনের সাথে একটু একলা হতে এসেছে অনেকে। সপ্তর্ষির মনে পড়ে গেল ওর ছোটবেলার কথা, সেবার বাবা-মায়ের সাথে কলকাতা ঘুরতে এসে প্রথম ভিক্টোরিয়া এসেছিল সে। "কষ্ট হচ্ছেনা?" জয়ীতার প্রশ্নে হুঁশ ফিরল সপ্তর্ষির। "কিসের জন্য?" নির্লিপ্ত ভাবে উত্তর দিল ও। দুরে গাছের ফাঁকে তখন একটা অচেনা পাখি ডেকে যাচ্ছে বহুক্ষণ ধরে। লেকের স্থির জলটা শান্ত। শীত শেষের নতুন রোদ এসে পড়েছে তাতে। ইতিউতি গাছ থেকে হাওয়ায় ঝরে পড়ছে লালচে হয়ে যাওয়া শুকনো পাতা। "কাল রাতে হঠাৎ অফ হয়ে গেলি কেন?" বেশ কিছুক্ষণের মৌনতা ভেঙ্গে প্রশ্ন করল সপ্তর্ষি। "ঝামেলা হয়েছিল বাড়িতে মায়ের সাথে, কেঁদেছিলাম। মাথা ব্যাথা করছিল।" মাথা নিচু করে উত্তর দিল জয়ীতা। ~"কেন? আবার কি হল? তুই তো বললি সবাই খুশি আছে..." -"আমি বিয়েটা করবনা বলে দিয়েছি"। ~"মানে? কি সব বলছিস? এই তো কাল বললি করবি.." কিছুটা অবাক হয়েই বলল সপ্তর্ষি। "হুমম, আই নো দ্যাট, লোকটা হাই এডুকেটেড। ভাল পয়সা আছে। বিয়ের পর আমি স্টেটসে সেটেলড হতে পারতাম। এত কষ্ট করে কলসেন্টারের চাকরিটাও করতে হত না আমাকে। বাপি-মাও খুশি হতেন খুব। কিন্তু আফটার অল আমি সপ্তর্ষি স্যান্যালকে ছাড়া সারা জীবন থাকতে পারব না। তাই বিয়েটায় না করে দিয়েছি। বল বিয়ে করবি আমায়? " একনাগাড়া সপ্তর্ষির চোখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে থামল জয়ীতা। এখন কার্যত হাঁপাচ্ছে সে। কথাগুলো শুনে নিজের কানকেই প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিল না সপ্তর্ষি। সব যেন স্বপ্ন মনে হচ্ছে তার। মাথাটা বোধহয় অল্প একটু ঘুরছে। পায়ের তলার মাটি কি একটু হলেও কেঁপে উঠল? ঘোরটা কাটল জয়ীতারই কথায়। "কি হল? উত্তর দিলি না কেন।?" নাহ, আর পারল না সে। গত দুদিন ধরে বাঁধ দেওয়া চোখের জল এবার উপচে উঠল তার দু-চোখে। ফুঁপিয়ে বাচ্চাদের মত কেঁদে উঠল সপ্তর্ষি। যে কিনা সবসময় জয়ীতার কাছে নিজেকে বেশি ম্যাচিওর বলে দাবি করে। "কি রে বোকা? কেঁদে ফেললি কেন? উফ্ পারা যায়না তোকে নিয়ে আর।" সপ্তর্ষিকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথাটা রাখতে রাখতে কথাগুলো বলল জয়ীতা। "এতটা ভালবাসিস আমায়?" কোনওরকমে ফোঁপানি বন্ধ করে বলল সপ্তর্ষি। "হুম রে, এতটাই ভালোবাসি" সপ্তর্ষির গলাটা জড়িয়ে চোখ বুঝে বলল জয়ীতা। স্বরটা তখন বেশ গাঢ় তার। ইতিমধ্যে ঘন হয়েছে দুজনেরই নিশ্বাস। বুকের ভিতর কি যেন চলছে একটা। সময়টাও থমকে গেছে যেন কিছুক্ষণ। চোখ বুঝল জয়ীতা। ক্রমশ আপনা-আপনিই একসাথে ঠোঁটজোড়া মিলে গেল দুজনের। দুরে তখন গাছের আড়ালে একটা কোকিল ডেকে যাচ্ছে একনাগাড়ে। বাগানের ফুলগুলো একটু বেশিই রঙিন লাগছে যেন। শেষমেশ বসন্ত এসে গেছে।