টপিকঃ জঙ্গি তৎপরতা বন্ধে অর্থায়নের ভূমিকা
জঙ্গিদের বিস্তার নিঃসন্দেহে একটা বৈশ্বিক বিষয় এবং বিশ্বের যে প্রান্তেই আজ জঙ্গি তৎপরতা চলছে তার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে বৈশ্বিক জঙ্গিবাদের একটা সংযোগ রয়েছে, বিশেষ করে জঙ্গি অর্থায়নে বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠেছে বিশাল নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের বড় অবলম্বন অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানের ব্যবসা। জঙ্গিবাদের বিস্তার ও জঙ্গি তৎপরতা চালানোর জন্য বিশাল অর্থের প্রয়োজন হয়। জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধকরণে প্রচার-প্রোপাগান্ডা, জঙ্গি রিক্রুটমেন্ট, প্রশিক্ষণ, মোটিভেশনসহ আশ্রয়-প্রশ্রয়, বাড়ি-গাড়ি এবং অস্ত্র সরঞ্জামাদি, সব কিছুর পিছনেই বিপুল পরিমাণ অর্থের দরকার হয়। তা ছাড়া মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত সদস্যদের মাসোয়ারাও দেওয়া লাগে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জঙ্গিদের পিছনে অর্থের জোগান যেমন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হচ্ছে, তেমনি আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির খেলায় পাকিস্তান সরাসরি বাংলাদেশের জঙ্গিদের অর্থায়নে জড়িত। তবে বাংলাদেশ জঙ্গিদের অর্থায়নের সবচাইতে বড় উৎস রয়েছে বাংলাদেশের ভেতরে। বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের জঙ্গিরা সহজেই পাকিস্তান থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচ্ছে। ঢাকাস্থ পাকিস্তান দূতাবাসের দুইজন কর্মকর্তা বাংলাদেশের জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত ও অর্থ প্রদানের সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে এবং ঢাকা থেকে পাকিস্তানে ফেরত যেতে বাধ্য হয়। তাছাড়া পাকিস্তানের কয়েক হাজার লোক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে। যেহেতু পাকিস্তান রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত, তাই এখানে কর্মরত পাকিস্তানি নাগরিকদের মাধ্যমে জঙ্গিদের কাছে অর্থ যাওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। দ্বিতীয়ত বলতে হবে বাংলাদেশি জঙ্গিদের অর্থের প্রধান সোর্স বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এটা এখন অকাট্যভাবে প্রতিষ্ঠিত যে জেএমবি এবং তার থেকে সৃষ্ট অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের শেকড় ও তার রক্ষক জামায়াত পাঁচ শতেরও অধিক ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে জামায়াতের। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে শুধু লাভই হয় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। সুতরাং এটা এখন সকলেই জানেন দেশ-বিদেশের বহুবিধ সোর্স থেকে জঙ্গিরা অনেক আগে থেকেই অর্থ পেয়ে আসছে, যা এখনো অব্যাহত আছে। রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্তগণ যদি নৈতিকতা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করেন তাহলে বহুলাংশে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। জঙ্গি দমন ও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে অর্থের উৎস বন্ধ করা একান্ত দরকার। অর্থের আগমন যতদিন অব্যাহত থাকবে ততদিন জঙ্গি তৎপরতায় বাংলাদেশে থাকবে।