টপিকঃ প্রফেসর জর্জ পলিয়া/ পোলিয়ার ও প্রাথমিক স্তরে গানিতিক সমস্যা সমাধান

প্রফেসর জর্জ পলিয়া/ পোলিয়ার  ও  প্রাথমিক স্তরে গানিতিক সমস্যা সমাধান

প্রাথমিক স্তরে গানিতিক সমস্যা সমাধানে আমাদের গণিত শিক্ষকদের জর্জ পোলিয়ার এর চার স্তর নীতি মেনে চলা উচিত।
দৈনন্দিন জীবনে ভাষার মতোই গাণিতিক ধারণাকে আমরা নানা কাজে ব্যবহার করে থাকি। সচেতন বা অসচেতনভাবে গাণিতিক জ্ঞান অর্জন করি এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা ব্যবহার করি। গণনা, পরিমাপ থেকে শুরু করে গাণিতিক যুক্তির প্রয়োগ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ ঘটনা। শিশুকাল থেকেই আমরা নানা ধরণের গাণিতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি এবং তার সমাধানের চেষ্টা করেছি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল হয়েছি। গাণিতিক সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর যৌক্তিক চিন্তা শক্তির বিকাশ সাধন হয় । তবে গাণিতিক সমস্যার সমাধানের বিষয়টি অনেকের নিকট কঠিন মনে হয় বলে অনেক সময় সমাধান প্রক্রিয়া মুখস্থ করার জন্য উৎসাহিত করা হয়।
গাণিতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আমরা এ বিষয়বস্তুগুলো ব্যবহার করে থাকি। সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন মানসিক কৌশল কাজে লাগায়।
হাঙ্গেরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন গণিতবিদ প্রফেসর জর্জ পলিয়া/ পোলিয়ার ছোট বেলায় গণিতের নিয়ম মুখস্ত করতে করতে খুব বিরক্ত হয়েছিলেন ।  পরবর্তীতে তিনি একজন দক্ষ সমস্যা সমাধানকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন । পলিয়ার মতে দক্ষ গাণিতিক সমস্যার সমাধানকারী হয়ে কেউ জন্ম গ্রহণ করেনা বরং সমস্যা সমাধানের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে একজন শিক্ষক শিশুদেরকে দক্ষ গাণিতিক সমস্যা সমাধানকারী হিসেবে তৈরি করতে পারেন ।শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনেসমস্যা যেমন,  গাণিতিক সমস্যা,কোন শর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ, কোন স্থানের দূরত্ব বা সময় নির্ধারণ, বেতন নির্ধারণ ইত্যাদি অনুরূপ বিষয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য জর্জ পোলিয়ার এক বিশেষ ধরনের কৌশল অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন।

**তিনি সমস্যা সমাধানে নিচের চার ধাপ প্রয়োগ করে সমাধানের পথ নির্দেশ দিয়েছেন---

সমস্যা বুঝতে পারা(Understand the Problem)
পরিকল্পনা প্ৰণয়ন(Devise a Plan)
পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা(Carry out the Plan)
সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়াটি পর্যালোচনা/ফিরে দেখা বা প্রতিফলনঃ (Look back on your work)


**সমস্যা সমাধান : পোলিয়ার  এর চার স্তর নীতির বাস্তব প্রয়োগঃ 

নিম্নের উদাহরণটি লক্ষ করুন— — **রামিজউদ্দিনের ছেলে জসীমউদ্দিন। তাদের দুজনের বয়স সমষ্টি ৪০ বছর। রামিজ উদ্দিনের বয়স জসীমউদ্দিনের বয়সের ৪ গুণ। তাদের কার বয়স কত?
উল্লিখিত সমস্যাটি সমাধানের জন্য সাধারণভাবে যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় তা নিম্নরূপ:
দু'জনের মোট বয়স ৪০ বছর এবংরমিজউদ্দিনের বয়স জসীমউদ্দিনের বয়সের ৪ গুণ। জসীমউদ্দিনের ১ গুণ হলে রমিজউদ্দিনের ৪ গুণ মোট ৫ গুণ। মোট বয়সের ৫ গুণ হলো ৪০ বছর অতএব প্রতি গুণ বা ১ গুণ হবে ৪০ বছর — এর ৫ ভাগের ১ ভাগ। যা জসীমউদিনের বয়স।
জসীমউদিনের বয়সঃ- ৪০ ÷ ৫ = ৮ বছর
রামিজউদিনের বয়সঃ- ৮ × 8 = ৩২ বছর।
*উত্তরঃ জসীমউদিনের বয়স ৮ বছর এবং রমিজউদিনের ৩২ বছর।
উত্তর সঠিক কিনা তা যাচাই করা যেতে পারে; অর্থাৎ জসীমউদিনের বয়স ৮ + রমিজউদিনের বয়স ৩২ = ৪০ বছর।
এরূপ গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য চিন্তা ও যুক্তির প্রয়োগ করা একান্ত প্রয়োজন। এ সমস্যা সমাধানের জন্য যেভাবে জর্জ পোলিয়ার এর নীতি অনুসরণ করে কার্যক্ৰম গ্ৰহণ করা হয়েছে তা  নিন্মরুপঃ-- -----------------     

*প্রথম স্তর: সমস্যা বুঝতে পারা(Understand the Problem)। প্রথমত সমস্যাটি বুঝতে হবে। এতে কী চাওয়া হয়েছে তা বুঝে দেখতে হবে। বিভিন্ন শর্তের আলোকে সমস্যার ওপর মনের মধ্যে একটি ছবি আঁকতে হবে।

*দ্বিতীয় স্তর: সমস্যা সমাধানের জন্য একটি পরিকল্পনা প্ৰণয়ন(Devise a Plan) করতে হবে। প্রদত্ত তথ্য বা উপাত্ত ও অজানা রাশির সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।

*তৃতীয় স্তর: পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা(Carry out the Plan)। প্রতি ধাপের মান নির্ধারণের জন্য চিন্তা করতে হবে ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন
করতে হবে।

*চতুর্থ স্তর: সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়াটি পর্যালোচনা(Look back on your work) করা, সাদামাটা কথায় পেছন ফিরে দেখা। অর্থাৎ ফল পরীক্ষা করে দেখা ।

**এ স্তরগুলো ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করে আমরা যে কোন গাণিতিক সমস্যাকে ব্যাখ্যা ও সমাধান করতে পারি।

১।প্রথম স্তর:  এখানে কী কী তথ্য দেয়া আছে এবং কী বের করতে হবে তা বুঝতে চেষ্টা করা। রমিজউদ্দিন ও জসীমউদ্দিনের বয়সের সমষ্টি ৪০ বছরদেয়া আছে। আবার, রমিজউদ্দিনের বয়স জসীমউদ্দিনের বয়সের চারগুণ।
এখন কার বয়স কত - তা বের করতে হবে।

দ্বিতীয় স্তর:  সমস্যা সমাধানকল্পে আমরা ধরে নিতে পারি যে, জসীমউদ্দিনের বয়স ১ হলে রমিজউদ্দিনের বয়স হবে ৪। সেক্ষেত্রে উভয়ের বয়সের সমষ্টি হবে ৫।
৩।তৃতীয় স্তর:  উভয়ের বয়সের সমষ্টি দেয়া আছে ৪০ বছর। অর্থাৎ, জসীমউদ্দিনের বয়স ৪০+৫ = ৮ বছর। তাহলে জসীমউদ্দীনের বয়স ৮ বছর হলে, রমিজউদ্দিনের বয়স তার ৪ গুন অর্থাৎ = ৮ × 8 = ৩২ বছর।

৪।চতুর্থ স্তর:  প্রাপ্ত ফলাফল জসীমউদ্দীনের বয়স ৮ বছর ও রমিজউদ্দিনের বয়স ৩২ বছর যোগ করলে পাওয়া যায় ৪০ বছর। সুতরাং সমস্যাটির সমাধান সঠিক কিনা তা যাচাই করে দেখা হলো।

** আরেকটি উধাহরনঃ
*সমস্যাঃ একটি কলমের দাম ৫ টাকা হলে ১০ টি কলমের দাম কত ?
ক) সমস্যা অনুধাবন করাঃ প্রথমত সমস্যাতে কী কী তথ্য দেওয়াআছে এবং কী বের করতে হবে তা
বুঝতে হবে ।
এখানে একটি কলমের দাম দেওয়া আছে এবং দশটি কলমের দাম বের করতে হবে ।
খ) পরিকল্পনা কৌশল প্রণয়ন করাঃ সমস্যা সমাধানে আমরা কী কী পদক্ষেপ নিতে পারি বা কোন প্রক্রিয়ায়
সমাধান করতে পারি সে সম্পর্কে পরিকল্পনা কৌশল প্রণয়ন করা।
যেমনঃ  একটি কলমের দাম ৫ টাকাকে ১০দিয়ে গুণ করে অথবা পর পর দশ বার যোগ করে দশটি কলমের দাম বের করা যাবে । এভাবে সমস্যাটি সমাধানের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
গ) পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাঃ পরিকল্পনা অনুসারে সমস্যা সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়া ।
যেমনঃ ১টি কলমের দাম ৫ টাকা সুতরাং ১০টি কলমের দাম (৫ × ১০)টাকা= ৫০ টাকা
অথবা ১ টি কলমের দাম ৫ টাকা
সুতরাং ১০ টি কলমের দাম ( ৫+৫+৫+৫+৫+৫+৫+৫+৫+৫)টাকা =৫০ টাকা ।
ঘ) ফিরে দেখা বা প্রতিফলনঃ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পরিকল্পিত কাজটি যথাযথভাবে করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করা বা শুদ্ধি পরীক্ষা ।
যেমনঃ ৫০ থেকে ৫, দশ বার বিয়োগ করে কিংবা ৫০কে ১০ দ্বারা ভাগ করে ১টি কলমের
দাম পাওয়া যায় কিনা তা যাচাই করা ।
সূত্রঃ গণিত—ডিপিএড, নেট।

গোলাম মাওলা , ভাবুক, সাপাহার, নওগাঁ