টপিকঃ প্রসাধনীর আসল নকল
নকল প্রসাধনীতে বাজার সয়লাভ। এটি এখনকার স্বাভাবিক খবর । বিখ্যাত ব্র্যান্ডের নকল প্রসাধনী নামীদামী দোকান বা শপিংমলে স্থান করে নিচ্ছে অবাদে। আর এ ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করে নানা চর্মরোগ এমন কি ক্যন্সারে আক্রান্ত হবার ঝুকি দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন সময় সরকারী সংস্থাগুলোর অভিযানে জেল জরিমানা করেও এটি কমছে না। এখন সাধারন জনগনেরই কি বা করার আছে । হয় ব্যবহার বন্ধ করা বা ঝুকি জেনেও এটি ব্যবহার চালিয়ে যাওয়া।
মুক্ত বানিজ্য আর মুক্ত আকাশ দুটোই এখন কাল হয়ে দাড়িয়েছে।বিভিন্ন বিদেশী চ্যানেলে নতুন নতুন বিখ্যাত ব্র্যান্ডের প্রসাধনী বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অামরা সহজেই নতুন পন্যের খবর জেনে থাকি। স্বাভাবিকভাবেই তা ব্যবহারের আকাংখা সবারই থাকে। পরিচিত বা বিখ্যাত এ সকল প্রসাধনীর বিজ্ঞাপন প্রচারের পর অনেকেই এটির খোজ করতে থাকেন বিভিন্ন দোকানে। এভাবেই তৈরী হয় এ ধরনের প্রসাধনীর চাহিদা।
ধরা যাক VASELINE একটি নতুন প্রডাক্ট বাজারে এনেছে। দোকানে খোজ করলেন অার তা পেয়েও গেলেন দ্রুত এবং আপনি তা কিনেও নিলেন।
এখানে কিছু বিষয় লক্ষণীয়-
১. VASELINE হলো Unilever এরে একটি পন্য (বৈধ উৎপাদনকারী বা বাজারজাত-কারী)। বাংলাদেশে Unilever এর উৎপাদন এবং বাজারজাত করনের নিজস্ব ব্যবস্থা আছে।
২. যদি VASELINE এর নতুন পন্যটি Unilever বাংলাদেশ কর্তৃক উৎপাদিত না হয় বা Unilever বাংলাদেশ এর মাধ্যমে আমদানী করা হয় নি কিন্তু বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে তবে তা কি করে বাংলাদেশে আসল?
৩. এর উত্তর হলো Unilever এর বাইরেও অনেক জানা, অজানা বা নাম সর্বস্ব অনেক দেশী আমদানীকারক আছেন যারা বিভিন্ন দেশ হতে VASELINE এর নতুন পন্যটি নিয়ে আসছেন।সাধারনত এ সকল আমাদানীকারকের নাম; ঠিকানা পন্যের গায়ে লিখা থাকে (আলাদা কাগজে প্রিন্ট করে ষ্টিকার হিসাবে।)
আার বিপত্তির শুরু এখান হতেই। এ সকল আমদানীকারক যদি সৎ ব্যবসা করেন তবে তো বেশ ভালো; ভোক্তাগন আসল পন্য পাবার আশা করতে পারেন। আর না হলে মিলবে পুরানো ঢাকায় নানা ধরনের ক্যামিকেল দিয়ে তৈরী করা নামী সব প্রসাধনী।
তাহলে বিএসটিআই কি ধনের দায়ীত্ব পালন করে? বাস্তবতা হলো অনেক পণ্যই বিএসটিআইয়ের বাধ্যতামূলক মান পরীক্ষার আওতায় নেই বা তাদের সক্ষমতার অভাব আছে।বাংলাদেশে গার্নিয়ার, ট্রেসমি, লরিয়েল, ফার্মাসি, হারবাল এসেন্স, প্যান্টিন, ওলে, নিভিয়া, ডাভ, ল্যাকমেসহ বিভিন্ন নামকরা বিদেশি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী বিক্রি হচ্ছে মোড়কে বিএসটিআইয়ের মান চিহ্ন ছাড়াই্। আমরাও তাই ক্রয় করছি।
এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখলে হয়তো আসল প্রসাধনী হতে আমরা বঞ্চিত নাও হতে পারি-
১. বিখ্যাত কোম্পানীর কোন প্রসাধনী কিনার আগে ইন্টারনেটে খোজ করা যে; উক্ত কোম্পানীর কোন নিজস্ব বা মনোনিত বিক্রয় অফিস বাংলাদেশে আছে কি না।
২. যদি না থাকে তবে যার মাধ্যমে আমদানী করা হয়েছে তাদের সম্মন্ধে ইন্টারনেট হতে তথ্য নেয়া।অনেক সময় বাংলাদেশী নামকরা কোম্পানী/ আমদানীকারকও বিভিন্ন ভাল ব্র্যান্ডের প্রসাধনী আমদানী করে থাকে যার উপর ভরসা রাখা যায়।
৩. আমাদানীকারকের ষ্টিকার ছাড়া পন্য না ক্রয় করা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিএসটিআই এর ছিল ও নম্বর দেখে নেয়া যেতে পারে।
৪. অনেক সময় মেয়াদ এবং উৎপাদন তারিখ আলাদা করে ষ্টিকার দিয়ে প্রসাধনীর গায়ে লাগানো থাকে। এ ধরনের প্রডাক্ট ক্রয় না করা। ভাল ব্র্যান্ডেড কোম্পানী তাদের মেয়াদ এবং উৎপাদন তারিখ প্রিন্ট করা অবস্থায় বাজারজাত করে।
৫. আমাদের অনেকের কাছেই স্মার্ট ফোন থাকে। আমরা বার কোড রিডার এপস ডাওনলোড করে পণ্যের গায়ে প্রিন্ট করা বারকোড স্কেন করে তা ইন্টারনেটে সার্চ করতে পারি।যদি দেথা যায় এই বারকোডে কোন পন্যই পৃথিবীতে নাই তবে তা না ক্রয় না করা। আর যদিও স্কেন করে পন্যটি পাওয়া যায় তবে তার ফটো বা ইমেজ এবং আপনার হাতের পন্যের ইমেজ নাম, উৎপাদনকারী দেশ, পরিমান, আকার/ আকৃতি ও পন্যের গায়ের লগো , ডিজাইন একই হয় তবে মোটামুটি বলা যায় যে এটি আসল।
শেষ কথা আমাদের দেশের যদি কোন নামকরা ব্র্যান্ড হয় তবে তা ক্রয় করলে প্রতারিত হবার শংকা কম বইকি!
(লেখক কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত)