টপিকঃ বাটলারকে খোলা চিঠি
প্রিয় বাটলার বাবু,
খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে। তোমার ক্যাপ্টেন মরগ্যান এখন কোথায় কেমন আছে? আমি জানিনা। এক মুঠো কেক পায়না হুসেইন, দুঃখ ঘোঁচে না। বাটলার বাবু। এ চিঠি পাবে কিনা জানিনা আমি। এ চিঠি পাবে কিনা জানিনা।
বাটলার সাহেব, প্রথম লাইনগুলো একটা বিখ্যাত গানের প্যারোডি। দয়া করে ইগনোর করো। আসলে কি লিখতে কি লিখে ফেলি, নিজেও বুঝি না। আমি বাংলাদেশের অত্যন্ত কম ক্রিকেট জ্ঞান সম্পন্ন একজন নাগরিক। এতোটাই কম যে, একসময় খেলা দেখলে সবসময় ব্যাটসম্যানকে সাপোর্ট করতাম। কোন দলকে সেভাবে সাপোর্ট করতাম না। প্রিয় ব্যাটসম্যান ছিলো ভারতের রাহুল দ্রাবিড়। তবে এই দৃশ্যপটে পরিবর্তন আসলো, যখন বাংলাদেশ নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে শুরু করলো। আমি খেলা দেখি। ব্যাটিং-বোলিং যাই হোক না কেন দেশকে সাপোর্ট করি। খারাপ খেললে গালি দেই। ভালো খেললে আনন্দ পাই। হেরে গেলে কাঁদি। মাঝে মাঝে উত্তেজনার টেনশনে ঘামতে থাকি। টেনশনে এতো ঘামতাম যে, মাঝে আমার মা আমার খেলা দেখার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
২০০৩ সালে আমি সবে ইউনিভার্সিটিতে ঢুকি ঢুকবো করছি। সে সময় মনেহয় তোমার দাড়িগোঁফও ঠিকমতন গজায়নি। তো সেই সালের বিশ্বকাপ হয় সাউথ আফ্রিকাতে। আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে কেনিয়ানরা সেমিফাইনাল খেলে। তাদের খেলার সবচেয়ে চোখে পড়ার মতন দিক ছিলো তাদের উদযাপন। প্রতিটি উইকেট, প্রতিটি চার/ছয়, প্রতিটি জয়, প্রতিটি ম্যাচ তারা উদযাপনের মাধ্যমে তাড়িয়ে উপভোগ করতো। একেবারে বাঁধন হারা উল্লাস যাকে বলে। সেই উল্লাস-উদযাপনকে কিন্তু তখন তোমার মতন সাহেবরা বলেছিলো এক্সেলেন্ট। দে আর ইনজয়িং দেমসেলভস। আমরাও সেগুলো দেখে খুব মজা পেয়েছিলাম। ওদের বিরুদ্ধে হারার পরে বড় দলগুলোর কেউই কিন্তু বলে নাই যে, ওরা পসা। ওরা অভদ্র। ওদের উদযাপন করা আমার ভালো লাগে নাই
বেশ কিছুদিন আগে, পাকিস্তান নামক নরকের কীটের দলটা বাংলাদেশ সফর করতে আসে। তারা ওয়ানডে সিরিজে গু-হারা হারলেও টেস্টে বেশ ভালো করে। সেই ভালোর মধ্যেও ভেজাল তৈরী করেছিলো তাদের ওহাব রিয়াজ নামক একজন ফাস্ট বোলার। খুব সম্ভবত ঐদিন সে আলবেন ডি-এস না খেয়ে আসার কারণে চুলকাচ্ছিলো, তাই হুদাই বাংলাদেশের ব্যাটিং এর সময় গায়ে পড়ে সাকিবের সাথে একটা ভ্যাজাল তৈরী করার চেষ্টা করে। মাথামোটা হইলে যা হয় আরকি। ততোদিনে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব জেনে গিয়েছে যে, বাংলাদেশ দলে দুইটা প্লেয়ার মারাত্বক ধরনের ঘাড় ত্যাড়া। একটা সাকিব। আরেকটা তামিম। এদের স্লেজ করলে, এরা ছেড়ে কথা বলেনা। কিন্তু ভোদাই ওহাব সেই কাজটিই করেছিলো। ফলাফল হিসেবে সে মাঠের মাঝখানে, ভরা মজলিসে সাকিবের এপিক ধাতানি খেয়েছিলো। সেই ধাতানি দেয়া দেখে, পাকিস্তানের এক জোকার টিভি অ্যাঙ্কর পারলেতো দুঃখে-রাগে, "দেখিয়ে কাহা আ গায়া হামারা ক্রিকেট কি এক বাংলাদেশি ক্রিকেটার হামে আঁখে দিখা রাহা হ্যায় " জাতীয় কথাবার্তা বলতে বলতে মূর্ছা যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে, খুলনা টেস্টে এতো কিছু হবার পরেও আমাদের ক্যাপ্টেন মুশফিকুর রহিম কিন্তু বলে নাই যে, "পাকিস্তান ওহাব রিয়াজের মতন ভোদাই প্লেয়ারদের দল। আমি হ্যান্ডশেক কলবো না ওদেল তাতে! "
আবার ভারতের কথাই ধরো। কতো কিছু যে করলো। ওয়ার্ল্ড কাপে নো-বল ডাকলো। আবার টি-টুয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপে হুদাহুদি তাসকিনকে ব্যান করলো। আমাদের নরম-সরম মুস্তাফিজের কাটার খেলতে পারছিলো না জন্যে বাংলাদেশ সফরে এসে মেজাজ হারিয়ে ভারতের ক্যাপ্টেন ধোনি (দি আনটোল্ড স্টোরি) গাবরের মতন গুতা দিয়ে পিচের মাঝখানে ফেলে দিয়ে বেহায়ার মতন হাসতে থাকে। প্রতিটা ঘটনাই কিন্তু আমাদের ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক মাশরাফির জন্যে হজম করা মারাত্বক কষ্টকর ছিলো। কিন্তু প্রতিবারই আমাদের ক্যাপ্টেন ঘটনাগুলো নিয়ে পানি ঘোলা করার কোন চেষ্টা না করে ক্রিকেটীয় সৌহার্দ্য বজিয়ে রেখেছে। জিতি আর হারি প্রতিবারই মাশরাফি তার ক্যাপের কোনা উঁচিয়ে ধরে প্রতিপক্ষ দলের প্লেয়ারদের সন্মান জানিয়েছে। হাত মিলিয়েছে। তোমাকে অবশ্য এসব কথা বলে লাভ হবে কিনা জানিনা। তোমরা ক্রিকেট খেলার আবিষ্কারক হতে পারো। তোমরা ক্রিকেট ইতিহাসে ইয়ান বোথামের মতন হয়তো দুই-একজন গ্রেট প্লেয়ারের জন্ম দিতে পারো। ভবিষ্যতেও হয়তো পারবে। তারা তোমার মতন মেকি ভদ্রতার মুখোশ পরে খেলাধুলাও হয়তো করবে। কিন্তু মাশরাফির মতন প্লেয়ার জন্ম দেবার মতন ক্ষমতা তোমাদের নাই। তোমরা বা তোমাদের তথাকথিত গ্রেটরা ক্রিকেট খেলে বা খেলেছে শরীর দিয়ে। মাশরাফি ক্রিকেট খেলে কলিজা দিয়ে, যেইটা তোমাদের দ্বারা সম্ভব না।
টি-টুয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপের ফাইনালের কথা মনে আছে বাটলার সাহেব? ফাইনালে তোমাদের বোলার উইলি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছয় নাম্বার ব্যাটসম্যানকে আউট করার পরে ব্রাভোকে ভ্যাঙ্গিয়ে সামনের দিকে হাত ছুঁড়ে চ্যাম্পিয়ন ডান্সের ভঙ্গিমা যখন করে, তখন কি সেটা ভদ্রতার সীমানার ভিতরে ছিলো? তোমাদের আরেক ক্রিকেটার ফ্লিনটফতো স্লেজিংকে নিয়ে গিয়েছিলো শিল্পের পর্যায়ে। কিভাবে বাজে কথা সুন্দরভাবে হাসতে হাসতে বলতে হয়, সেটা উইন্ডিজের বিরুদ্ধে এক টেস্টে সে ভালোমতন দেখিয়ে গিয়েছে। তারপরেও তোমাদের কিছু হয়না। ম্যাচ রেফারি দেখে না। তোমাদের দিকে না তাকিয়ে নিজেরা নিজেরা সেলিব্রেট করলেও সেটা হয়ে যায় অভদ্রতা! বেয়াদবী! আর তোমরা মেজাজ হারিয়ে "মাদার**র" বলে গালি দিলেও, "ইংলিশ জেন্টেলম্যানরা এমন করতেই পারেনা" বলে ম্যাচ রেফারি এড়িয়ে যায়! অবশ্য এ আর নতুন কি? কোন এক অ্যাশেজে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পিচের উপর মুতে দেয়ার পরেও যারা ভদ্র ক্যাটাগরিতে পরে, তাদের নিয়ে কিছু বলার নেই।
একটা অঘটনের মাধ্যমে প্রথম ওয়ানডে জিততে পেরেছো তার জন্যে শুকরিয়া করো। হারকে সহজভাবে নিতে শিখো। কারণ সামনে এভাবে আরও ম্যাচ তোমরা হারবে। মেকি ভদ্রতার মুখোশটা ধরে রাখার অভ্যাস করো। নতুবা তোমাদের কমেন্টেটোররা খুব একটা বেশিদিন "নরমালি হি ইজ ভেরি জেন্টেল। সামথিং মাস্ট হ্যাভ বিন সেইড টু হিম" জাতীয় ব্যাকাপ কথাবার্তা বলে পশ্চাৎদেশের ছালচামড়া বাঁচাতে পারবেনা। তোমাদের সাত পুরুষের ভাগ্য যে, মাশরাফির মতন অসাধারণ বিনয়ী একজন মানুষকে প্রতিপক্ষের ক্যাপ্টেন হিসেবে পেয়েছো। আমরা আবার মাশরাফির মতন এতো বেশি বিনয়ী না। আমাদের বেশি ভদ্রতা শিখাতে আসার দরকার নেই। বেশি শিখাইতে আসলে পাবলিক তোমাদের জায়গামতন ভদ্রতা ** দিবে।
ভালো থেকো। শুভেচ্ছা নিও।
ইতি
একজন অভদ্র ক্রিকেটদর্শক।