টপিকঃ বিকল্পহীন ও অপ্রতিরোধ্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব
একাত্তরে লাখো প্রাণের আত্মদান, হাজার নারীর সম্ভ্রমহানি আর বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার স্বাধীন দেশের গণমানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সংগ্রামে আত্মোৎসর্গ করলেন শেখ হাসিনা। চার পাশের সব কিছু হয়তো আগের মতোই ছিল, ছিল না শুধু পরিবারের কারো ছায়া, বাবার রাজনৈতিক বন্ধু, সহযোদ্ধাদের স্নেহময় মুখ। কিন্তু ছিল সাধারণ মানুষের হৃদয়ভরা ভালোবাসা। পিতার উপলব্ধি দিয়েই তিনি সেই ভালোবাসাকে গ্রহণ করলেন, জনগণের ভালোবাসা তাকে আবেগ উদ্বেলিত করে তোলে। ব্যথিত হৃদয়ে কিন্তু শক্ত মনোবলে সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘সব ভেদাভেদ ভুলে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। জয় আমাদের অনিবার্য। আমি নেতা নই, সাধারণ মেয়ে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার একজন কর্মী। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাই আমার রাজনীতি। বাংলার দুঃখী মানুষের জন্য প্রয়োজন হলে এই সংগ্রামে পিতার মতো আমিও জীবনদান করতে প্রস্তুত। ১৯৮১ সালের ১৭ মে। রাজধানীতে প্রচণ্ড খরতাপের পর মুষলধারে বৃষ্টি। স্বস্তির জলধারা। দীর্ঘ তাপদাহের পর জনমনে প্রশান্তি। এ যেন নেত্রীর আগমনে প্রকৃতির স্বাগত আয়োজন। দীর্ঘ ছয় বছর প্রবাস জীবনের অবসানের পর দেশের মাটিতে পা রাখেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ তনয়া শেখ হাসিনা। কয়েক লাখ মানুষ তাকে সাদরে বরণ করে নেয়। বৃষ্টিস্নাত নগরীতে কয়েক বছর পর বুক ভরে নিঃশ্বাস নেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনক অন্যায়ভাবে নিহত হওয়ার পর- সম্পূর্ণ অনাত্মীয় পরিবেশে শোকবিহ্বল চিত্তে মাতৃভূমিতে তার আগমন। নতুন রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি তিনি। বাঙালি জাতির প্রতি যে পিতার ছিল অগাধ বিশ্বাস তিনি তাদের দ্বারাই হয়েছেন সপরিবারে নিহত। বিশ্বাসের ভিত কোথায়, কার চেতনায় শক্ত জানা নেই। শেখ হাসিনার নতুন জন্ম হলো সেই বৃষ্টিস্নাত বর্ষার বিকেলে। বাংলাদেশের, সেই সঙ্গে তার জীবনেরও নতুন একটি আরম্ভ ওই মুহূর্তেই। ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া দুই বোনের অন্যতম তিনি। ছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম বাঙালির বিশাল ছায়ায়, এবার শুরু হলো একলা চলার পালা। বঙ্গবন্ধুর রক্তের ধারা যার ধমনীতে প্রবাহিত অথচ রাজনীতিক নন, আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতোই জীবনযাপন করা গৃহস্থ নারী। ছাত্রাবস্থায় রাজনীতির হাতেখড়ি হলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বামীর সঙ্গে সাধারণ গৃহবধূর মতোই দিনযাপন করছিলেন তিনি। কিন্তু পিতার মৃত্যুর পর পাল্টে যায় রাজনীতির ছক। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের উন্নয়নে পরিবর্তিত হয় প্রধানমন্ত্রীর কর্মপরিকল্পনারও। অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজস্ব জনবল ও সম্পদ দ্বারা স্বনির্ভর হওয়ার জন্য জাতিকে সাহসী, পারদর্শী ও যোগ্য করে তোলেন তিনি। কর্মপদ্ধতিতে একুশ শতকের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সর্বত্র বিভিন্ন কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে পরিকল্পনা ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার সব কর্মসূচি দেশব্যাপী বৃহৎ আকারে ছড়িয়ে দেন। ক্রমেই দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশের অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। নিম্নমধ্যম থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে চলেছে লাল-সবুজের এ দেশটি। অনাহার, অর্ধাহার, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, অনুন্নত যোগাযোগ খাতসহ অভাব আর অপ্রতুলতার মতো পীড়াদায়ক শব্দগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে ৫৫ হাজার বর্গমাইলের মানচিত্র থেকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে শিগগিরই বাংলাদেশ প্রকৃত মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হবে, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। নেতৃত্বের এই বলিষ্ঠতা ও দৃঢ়তা আমাদের বড় প্রাপ্তি। বাংলাদেশের উন্নয়নে যুগান্তকারী এক দর্শন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য। বাঙালি জাতির স্বপ্ন-পুরুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা। সমৃদ্ধ ও উন্নত সেই সোনার বাংলা গড়তে নতুন অভিধান হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিপাদ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে।