সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন তার-ছেড়া-কাউয়া (০৩-০৫-২০১৬ ২৩:০৩)

টপিকঃ আমরা এতো ওস্তাদ কেন?

কবি(কোন কবি নিশ্চিত নই) বলেছিলেন, "যেদিকে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো, মানিক-রতন "। ভবিষ্যত বাংলাদেশের কথা ভেবে যথার্থই বলেছিলেন। তবে মানিক-রতনের বদলে পাওয়া যায় ওস্তাদদের। ছাই উড়াইয়াও দেখিতে হয়না। না উড়াতেই মাটিতে লুটোপুটি খায় আর পায়ের নিচে পরে এমন অবস্থা। ওস্তাদদের ওস্তাদিতে পৃথিবী গদ্যময়!  এই যেমন আজকে স্বপ্নে (সুপারশপ) গেলাম। আমাদের মতন কুঁড়ে অলস মানুষদের বাজারসদাইয়ের জন্যে স্বপ্নই ভরসা। যদিও তারা সেরের উপর সোয়া সের। অর্থাৎ খুচরা মূল্যের উপরেও ৪% ভ্যাট কেটে রাখে,তারপর আবার আমাদের বুঝ দেয়ার জন্যে ২% টাকা পয়েন্ট হিসেবে ফেরত দেয়! এ নিয়ে একদিন এক ক্যাশিয়ারের সাথে অনেক তর্ক করলাম। কিন্তু তাদের মাথায় কিছু আজাইরা ফাউল যুক্তি রম করে পার্মানেন্টলি রাইট করে দিয়েছে স্বপ্ন কতৃপক্ষ। মোছার উপায় নাই। খালি গড়্গড় করে ওগুলোই বলে যায়। তর্ক করার ব্যাপারটা তাই বাড়াবাড়ি রকমের বিরক্তিকর ছিলো। যাই হোক আসল কাহিনীতে আসি।

আজকে গেলাম স্বপ্নে। মুরগী কিনলাম। কারি সাইজ করে কাটিয়ে নিলাম। তারপর তাদের কর্মীকে বললাম যে," ভাই আরেকটা পলিথিন দিয়ে দেন আগেরটার উপরে। লিক করে মাঝে মাঝে।" আশ্চর্যজনকভাবে কর্মীর উত্তর একদম ফটিকের মতন! "পলিথিন দিবে, ঐ হোথা।" মানে সামনের কাউন্টারে আরকি। তো সামনের কাউন্টারে পলিথিনের বদলে দিলো নেটের ব্যাগ। আবারও বললাম, "ভাই লিক করে।" উত্তর এলো, "না না, লিক করবেনা।" অতঃপর তাদের আশ্বাসে বাসায় আগমন এবং লাল রঙয়ের মুরগীর ফোঁটা ফোঁটা রক্তে বাসার লিফট ভরিয়ে দিয়ে ষোলকলা পূরণ। আরে ভাই, আমিতো বুইঝাই বলেছিলাম কথাটা। হুদা কামে কি তোমার ২ টাকার এক্সট্রা পলিথিন চাইছিলাম? তোমাগো যদি এমআরপি এর উপর ৪% আজাইরা এবং অবৈধ ভ্যাট দিবার পারি, তাইলে তোমাগো এক্সট্রা পলিথিনের লাইগা এক্সট্রা ২ ট্যাকাও দিবার পারতাম। হুদাই ওস্তাদি স্বাস্থের জন্যে হানিকারক। বুঝোনা কিল্লাইগা?   

আরেকটু অতীতে যাই। এই মাসখানেক আগে স্বপ্ন থেকে একটা দশাসই তরমুজ কিনে বাড়ি ফিরলাম। তরমুজ কেটে দেখি জঘন্য গন্ধ। মানে পচন শুরু হয়েছে। তো আমি সেটা আবার শপিং ব্যাগে ভরে ব্যাক টু দি প্যাভিলিয়ন। স্বপ্নের যারা মোটামুটি বেশ কিছুদিন ধরে আছে, তারা আমাকে ভালোমতন চেনে এবং তা খুব সম্ভবত খ্যাচ-পাবলিক হিসেবেই। তো আমাকে ব্যাগসহ ফেরত আসতে দেখেই ক্যাশের কর্মী বুঝে গেলো কাহিনী এবং আমি কিছু বলার আগেই সাথের আরেক সহকর্মীকে বললো যেন আমাকে তরমুজের কাউন্টারে নিয়ে যায়। তো আমি তার সাথে আবার তরমুজের জায়গায় গেলাম। যে কর্মী তরমুজ বিক্রি করছে সে অপেক্ষাকৃত নতুন। তার চেহারা দেখে মনে হলো যে সে কিছুটা হতাশ এবং বিরক্ত। সে বেশ হতাশভাবেই আমার হাতের পচা তরমুজখানা দেখে কোন কথা না বলে আরেকটা তরমুজ বের করে দিলো। সব ঠিকঠাকই ছিলো। কিন্তু যখন আমি নতুন তরমুজ নিয়ে ফেরত আসতে যাবো, তখনই দেখি কিনকিন করে বলছে, "পাল্টায় দিলাম। কিন্তু আপনি কিন্তু বলতে পারেন না যে তরমুজটা নষ্ট ছিলো।" দিলি তোরে ব্যাটা কইয়া যে, পাগলা পুল ঝাকাইস না। গেলো মাথা গরম হয়ে। কিন্তু আমি একদমই শান্ত গলায় বললাম, "হ্যাঁ, ঠিকই বলসেন। এই তরমুজটা পচা ছিলো না। ভালো। শুধু ভালো না, অত্যন্ত ভালো। আমাকে টাকা বা তরমুজ কোনটাই ফেরত দিতে হবে না। আপনাদের এই তাজা তরমুজটা পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। এই তরমুজটা আমার তরফ থেকে আপনাদের জন্যে গিফট। এখন এটা আপনারা খাবেন এবং আমার সামনে খাবেন। " নতুন কর্মী কাস্টমারের এরকম আচরণে বাকরুদ্ধ। আরও কয়েকজন কাস্টমার আমার পাশে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। অবস্থা বেগতিক দেখে ম্যানেজার সাহেবা চলে আসলেন। উনিও মনেহয় আমাকে চেনেন। কারণ এর আগেও একবার ওনাদের জমাটবাধা রক্তের মুরগী ফেরত দিয়েছিলাম। তখন ওনার সাথে কথা হয়েছিলো। উনি এসে কর্মীকে ঝাড়ি মারলেন আর আমাকে রাগ না হবার জন্যে অনুরোধ করলেন। আমি আর কথা বাড়ালাম না। নতুন তরমুজ নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম। কিভাবে পারে পাবলিক এতো ওস্তাদি করতে? জঘন্য গন্ধে প্রাণ ওষ্ঠাগত, তারপরও বলে যে, আপনি এইটারে পচা বলতে পারেন না! এখন মনে হচ্ছে, আমার ১০০ টাকা গচ্চা গেলেও ঐ ব্যাটাকে ওস্তাদির শাস্তি হিসেবে পচা তরমুজটা গিলিয়ে আসা লাগতো।

আজকেই আরেকটা ঘটনা ঘটেছে। সন্ধ্যার দিকে বাইরে থেকে ফিরছিলাম। বাসার লিফটে উঠলাম। আমার বাসা ৭ তলায়। লিফটের ৬ লেখা বোতামে চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চার তলাতে গিয়ে লিফটের দরজা খুলে গেলো। একজন মাঝবয়সী মহিলা উঠলেন। লিফটে উঠেই ২ লেখা বোতামে চাপ দিলেন। আমি বেশ বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
- আপনি যদি নিচেই যাবেন তাহলে লিফট কল করার জন্যে উপর-নিচ দুইটা বোতামই চাপছেন কেন?
- কিতা?
মেজাজ গেলো আরও খারাপ হয়ে। বললাম,
- আপনি নিচে যেতে চাইলে নিচের বোতাম চেপে লিফট ডাকবেন। আর উপরে যেতে চাইলে উপরের বোতাম চাপবেন।
এই কথার জবাব এলো।
- আমারে শিখান লাগতো না।
আমি অনেক কষ্টে মেজাজ সামলে মুখ বন্ধ রাখলাম। আমার ফ্লোর চলে এলো। আমি লিফট থেকে নেমে যখন আমার ফ্ল্যাটের দরজার দিকে যাচ্ছি, তখন দেখি মহিলাও আমার পিছনে লিফট থেকে নেমেছেন। কেন সেটাও বুঝে গেলাম। চোখেমুখে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে মহিলার দিকে তাকালাম। মহিলা আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
- দুইতালা না নি?
আমি ফ্ল্যাটে ঢুকতে ঢুকতে বললাম,
- ওস্তাদদের কিছু শিখাইতে যাওয়া হইলো কবিরা গুনাহ।

রাবনে বানাদি ভুড়ি :-(

সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন সদস্য_১ (০৩-০৫-২০১৬ ২৩:১৬)

Re: আমরা এতো ওস্তাদ কেন?

"ছোট প্রাণ ছোট ব্যথা, ছোট ছোট দুঃখ কথা..."  love
আহা আপনার মত যদি লিখতে পারতাম, আমার অভিজ্ঞতা গুলো বুকে জমে কষ্টি পাথর হত না!

ভাল কথা... লিফ্ট কাহিনী,  মাস খানেক আগে আমার সাথেও একই ঘটনা। আপনাকেতো শুধু জিজ্ঞাসা করছে... আমাকে... উনি গজর গজর করতেছে যে আমি তাকে উল্টো চারতলায় নিয়ে এসেছি! বোঝেন ঠেলা!

Re: আমরা এতো ওস্তাদ কেন?

এরা থাকবেই চিরকাল

Re: আমরা এতো ওস্তাদ কেন?

রাবনে বানাদি ভুড়ি :-(

Re: আমরা এতো ওস্তাদ কেন?

lol2 হা হাহ হা। স্বপ্নে ব্যাটারে তরমুজটা খাওয়ায় দিয়ে আসা উচিত ছিল। তোফা লিখেছেন। হাহ হা হা

উদাসীন'এর ওয়েবসাইট

লেখাটি CC by-nc 3.0 এর অধীনে প্রকাশিত

সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন তিতাস (০৪-০৫-২০১৬ ১১:৩০)

Re: আমরা এতো ওস্তাদ কেন?

...Finding...

সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন দ্যা ডেডলক (০৪-০৫-২০১৬ ১২:৩০)

Re: আমরা এতো ওস্তাদ কেন?

Re: আমরা এতো ওস্তাদ কেন?

ভালো লিখেছেন। লেখাটায় রম্য ভাব আছে তাই কোন সিরিয়াস উত্তর দিলাম না।

hard to hate but tough to love

Re: আমরা এতো ওস্তাদ কেন?

রাবনে বানাদি ভুড়ি :-(

১০

Re: আমরা এতো ওস্তাদ কেন?

কাউয়া ইয ব্যাক!  big_smile

Calm... like a bomb.

১১ সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন বোরহান (০৫-০৫-২০১৬ ০৮:০১)

Re: আমরা এতো ওস্তাদ কেন?

অনেকদিন পর আপনার একটা লেখা পড়লাম। মজা লেগেছে  big_smile যদিও দুঃখ লাগার কথা!

১২

Re: আমরা এতো ওস্তাদ কেন?

রাবনে বানাদি ভুড়ি :-(

১৩ সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন দ্যা ডেডলক (০৫-০৫-২০১৬ ২১:০২)

Re: আমরা এতো ওস্তাদ কেন?

১৪

Re: আমরা এতো ওস্তাদ কেন?

ওস্তাদদের কিছু শিখাইতে যাওয়া হইলো কবিরা গুনাহ।

হি হি হি।সেই কথা। lol

ডিজিটাল বাংলাদেশে ত আর সাক্ষরের নিয়ম চালু নাই।সবটায় দেখি বায়োমেট্রিক।তাই আর সাক্ষর দিতে পারলাম না।দুঃখিত।