টপিকঃ নান্টু স্যার & আরেকটু ফিবোনাক্কি

স্যার ভালোই পান চিবাইতে পারেন। অনেক দিন পর স্যারের সাথে দেখা। সেমিস্টার ফাইনালের জন্য মেলা দিন স্যারের ক্লাসে আসতে পারেনি। বলা যায় উপস্থিত ছাত্রদের মাঝে আমি সব চাইতে পুরানো। শীতকালীন সময় স্যারকে বেশ ভালো দেখাচ্ছেন অনেকটি পুরানো খান্দানিওয়ালাদের মতন।  তার পরনে কাপড় ছিল পুরাতন  সুতির একটি  খান্দানি জেকেট আর সুতির কালচে পেন্ট । জেকেট টি থেকে কর্পূরের গন্ধ আসতেছে সম্ভবত  বেগ বা ড্রয়ার থেকে আজি বের করেছেন, হু তেলাপোকা।  বেঞ্চির পেছনে বসে  আমি নান্টু স্যারের পান খাওয়া দেখছিলাম।  ইদানীং   পান নিয়ে মনে হই  তিনি কিছু  একটা  ভাবছেন। একটি পান মুখে দিয়ে চিবাচ্ছেন আরেকটি পান খুলে ধরে কি যেন টের করতে চেষ্টা করছেন, মাঝে মাঝে মিট মিট হাসছেন।পৃথিবীর যত ধরণের ভালো কাজ প্লাস ইনফিনিট হতে   খারাপ কাজ মাইনাস ইনফিনিট আছে সব কিছুর  একটি সুন্দর ভার্চুয়াল স্ট্যাইল আছে। স্যারের পানের দিকে তাকানি টা কেমন কাজ আমি জানিনা তবে স্ট্যাইল টা দারুণ জোস। স্যার আমাকে হইতো এতক্ষণ খিয়াল করেনি,
কিছুক্ষণ পর..
- শুভ,  তুমি ফিবোনাক্কি রাশিমালা জানো?
- ' হ্যাঁ! জানি স্যার।  তবে এই রাশিমালা নিয়ে আমি তেমন উৎসাহী নই। আমার উৎসাহ অন্য জায়গায়!'
- কোথায়?
- 'আপনি নিজে যে রাশিমালা তৈরি করছেন, সেই রাশিমালায়...
- 'আমিতো কোন রাশিমালা তৈরি করি নি। আমি শুধু ফিবোনাক্কি কি দিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করছি। ফিবোনাক্কি হল একটি রহস্যময়  রাশি, নিশ্চিত এই রাশির পেছনে সৃষ্টিকর্তার হাত আছে, তুমি ফিবোনাক্কি কে গিলেছি শুধু কিন্তু  স্বাদ পাওনি আজ আমি ফিবোনাক্কির  স্বাদ  দিব তোমাকে ।   

- হুম, স্যার।

স্যার ব্ল্যাক বোডের সামনে গিয়ে কি জেন ভাবছেন, তারপর  ফিবোনাক্কি শিরোনাম দিয়ে আরম্ভ করল।
‘ফিবোনাক্কি রাশিমালা’র জন্মদাতা ইতালির নাগরিক Leonardo Pisano (১১৭৫-১২৫০)। মৃত্যুর আগে
একবার Leonardo Pisano কে তাঁর তৈরি রাশিমালা নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি অনেকটি রহস্য করে বলেছিলেন, ‘প্রকৃতির মূল রহস্য এই রাশিমালাতে আছে।’অর্থাৎ এই রাশিমালা দিয়ে প্রকৃতির অনেক খানি বাখ্যা করা যায়।
এই বলে স্যার আরেকটি পান মুখে দিল, অল্প একটু  বিরতি রেখে আবার শুরু করল
কিন্তু কি সেই রহস্য?
সেটা জানার আগে এক ঝলক রাশিমালাটা দেখে নিই,
আমাদের প্রচলিত ডেসিমেল পদ্ধতির রাশিমালা হচ্ছে
০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯। এভাবে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। মৌলিক রাশিমালা হচ্ছে ১, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩, ১৭, ১৯ ইত্যাদি। আর ফিবোনাক্কি রাশিমালা হচ্ছে ০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫, ৮৯, ১৪৪, ২৩৩, ৩৭৭, ৬১০, ৯৮৭ ... ইত্যাদি।
লক্ষ কর, এখানে মুল ভিত্তি কিন্তু ০,১। এরপর প্রতি
দুইটি পুর্বপদ ও পরপদের যোগফল হিসাবে তৃতীয় পদ
লেখা হচ্ছে।
০+১ =১
১+১= ২
২+১= ৩
৩+২=৫
৫+৩=৮
৮+৫=১৩
১৩+৮=২১..
...... ...... ..... ....
এভাবে অদ্ভূত নিয়মে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে এই রাশিমালার মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষ করা যায়, যেমন : এ রাশিমালার যে কোন চারটি সংখ্যা নেওয়া হলে প্রথম ও চতুর্থ সংখ্যার যোগফলের সাথে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংখ্যার যোগফল বিয়োগ করা হলে ফলাফল অবশ্যই সবসময় ঐ চারটি সংখ্যার প্রথমটি হবে। ব্যপার টুকু একটু বুঝাই বলি  ধরা যাক চারটি ফিবোনাক্কি রাশি ২, ৩ , ৫, ৮। প্রথম ও চতুর্থ সংখ্যার যোগফল (২ + ৮) ১০, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংখ্যার যোগফল (৩ + ৫) ৮ বিয়োগ করলে বিয়োগফল হচ্ছে ২, যা কিনা আমাদের ধরে নেওয়া চারটি সংখ্যার প্রথম সংখ্যা। আমরা সাধারণত ডেসিমেল পদ্ধতিতে হিসেব করে এতো অভ্যস্ত যে, কোন কিছুর গণনায় ডেসিমেল সংখ্যা (০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯) দ্বারাই কোন কিছুর হিসেব করে থাকি; যেমন ঘড়ি দ্বারা সময় নির্ণয়, টাকা-পয়সার লেনদেন, বাজার-সদাই ইত্যাদি। কিন্তু বিস্ময়করভাবে প্রকৃতির নানা স্তরে ফিবোনাক্কি রাশিমালার ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে,
যদিও তোমাদের মনে হচ্ছে এই রাশিটি রসহীন কিন্ত
এই রসহীন গানিতিক ধারাকে আমি কেন এত মজার বলছি জানতে চাও?

সবার এক কথা হ্যাঁ।

তোমরা  আকাশে সন্ধ্যা বেলা মাঝে মাঝে ঝাক বেধে
বক উড়ে যেতে নিশ্চয়  দেখছ। খুব সুন্দর দেখায় একসাথে অনেকগুলো বককে একত্রে উড়তে। আমিও সেই সৌন্দর্যের একজন ভালো দর্শক কিন্তু আমি শুধু নেহায়েত  বক দেখার দর্শক না আমি বকের ঝাকে গণিতকে খোঁজার জন্যই  দর্শক । কখনো কি  সেই  বক গুনে দেখেছ?? হয়তোবা দেখা হয়নি। শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখেছ কিন্তু অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য দেখনি। মজার বিষয় হল বকের ঝাক ফিবোনাক্কি রাশিমাল মেনে চলে। হয়তো ভাবছ কিভাবে?? আজ থেকে আকাশের দিকে খুব বেশী মনোযোগ দেবে পাখি তথা বক গোনা শুরু করে দিবে। দেখবে বক যখন ঝাক বেধে যাবে কখনো সেই সারিতে ৮ টি,১৩ টি, ২১ টি অর্থাৎ ফিবোনাক্কি সংখ্যা পাওয়া যাবে। তুমি কখনোই দেখবে না যে সারিতে ১০ টি কিংবা ২২ টি বক আছে!!! মজার না???

শুধু বকের ঝাকে না সূর্যমুখী ফুলের পাপড়ি বিন্যাসে, ক্যকটাস গাছের পুরুত্বে, পাইন গাছের মোচায় ফিবোনাক্কি রাশিমালার সংখ্যা পাওয়া যায়। শামুকের যে স্পাইরাল দেখা যায় সেখানেও ফিবোনাক্কির রাশিমালার উপস্থিতি রয়েছে। শীতের সময় আমাদের দেশে সুদূর সাইবেরিয়া হতে ‘অতিথি পাখি’ ঝাকে ঝাকে আসে। পাখিদের নিজেদের অঞ্চলে উষ্ণ আবহাওয়া দেখা দিলে স্থান পরিবর্তন করে তারা অন্য শৈত্য এলাকায় গমন করে। এই অতিথি পাখির ঝাক গণনা করে দেখা গেছে তাদের একেকটি ঝাকে ২১টি পাখি থাকে, ২২ বা ২৩টি পাখি থাকে না। মজার ব্যাপার ফিবোনাক্কি সিরিজে ২১
সংখ্যাটি রয়েছে, ২২ বা ২৩ সংখ্যা নেই। মৌমাছিদের
জীবনযাত্রায়ও রয়েছে ফিবোনাক্কি রাশিমালার
উপস্থিতি। মৌমাছিরা সাধারণত কলোনি করে থাকে।
প্রতিটি কলোনিতে একটি পুরুষ মৌমাছির পিতা-মাতা
১ জন, দাদা-দাদী ২ জন, প্রপিতা-মাতা ৩ জন, প্রপিতা- মাতার পিতা-মাতা ৫ জন এবং এদের পিতা-মাতা ৮ জন। এভাবে ক্রমেই মৌমাছির বংশতালিকায় ফিবোনাক্কি রাশিমালার সংখ্যার খোঁজ পাওয়া যায়।

এটাতো ফিবোনাক্কি রাশিমালার মজা, মানুষকে অবাক করে দেবে নতুন বিস্ময়ে!! আমারা সংখ্যাকে আজ রসহীন তৈরী করে ফেলেছি। কিন্ত যারা প্রকৃত গনিত প্রেমী, তাদের কাছে সংখ্যা অনেক মজার ও আদরেরে জিনিস। মহান পিথাগোরাস সবকিছু চিন্তা করতেন সংখ্যা নিয়ে। তিনি বলতেন, স্বর্গ, মত্য, আত্মা সবকিছুই সংখ্যা মেনে চলে। কি অদ্ভুত!!
তিনি বলতেন, ১ হল সুচনাকারী ও পবিত্র সংখ্যা। যেহেতু
ঈশ্বর সবচেয়ে পবিত্র তাই তিনি বলতেন ১ হল ঈশ্বরের
সংখ্যা। ২ হল প্রথম নারী সংখ্যা, ৩ হল প্রথম পুরুষ
সংখ্যা।৪ হল নিরপেক্ষ সংখ্যা। ২+৩=৫, অর্থাৎ ৫ হল
বিবাহ সংখ্যা। তিনি সবকিছুকে সংখ্যার মধ্যদিয়ে
তুলনা করতেন।অন্য কোন  একদিন আলোচনা করবো পিথাগোরাসের সংখ্যা জগত নিয়ে।
মুল কথায় আসি,  আরেকবার  ববলেছি‘ফিবোনাক্কি রাশিমালা’র জন্মদাতা ইতালির নাগরিক লিউনার্দ ফিবোনাক্কি (১১৭৫-১২৫০)। মৃত্যুর আগে একবার
তাকে তার তৈরি রাশিমালা নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে
তিনি রহস্য করে বলেছিলেন, “প্রকৃতির মূল রহস্য এই রাশিমালাতে আছে।” তিনি এই সিরিজের জনক। তার নামানুসারে এটাকে ফিবোনাক্কির সংখ্যা বলা হয়। তিনি ফিবোনাক্কি প্রথম লক্ষ করলেন খরগোসের
বংশবিস্তার প্রক্রিয়া। তারপর তিনি খুজে পেলেন একটা প্যাটার্ন, যেখানে তিনি লক্ষ করলেন প্রায় সর্বত্রই এই সংখ্যা বিরাজ করছে। জনপ্রিয়তা লাভ করলো এই সিরিজ। ফিবোনাক্কি রাশিমালা এতটাই মজার যে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। মৃত্যুর আগে ফিবোনাক্কি বললেন পৃথিবীর মুল রহস্যে আছে এই রাশিমালা। হয়তো একদিন প্রমান হবে যে ফিবোনাক্কির কথাটা সত্যি হবে। প্রতিনিয়ত গনিত প্রেমীরা, বিজ্ঞানের ভক্তরা, গবেষকরা পৃথিবীর বুকে খুজে চলেছে ফিবোনাক্কি রাশিমালার প্যাটার্ন।।

সবাই স্যারের দিকে খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। স্যার নিশ্চয় সেটি খেয়াল করলেন। তারপর সবার উদ্দেশ্য বলা শুরু করল
-হুঁ, তোমারা যে আমার চেহেরার দিকে তাকিয়ে আছ সেটিও  ফিবোনাক্কি শুধু আমার না তোমাদের সবার চেহেরায়, শরীলে  ফিবোনাক্কি আছে  যেটাকে বলা হই গোল্ডেন রেশিও


- শুভ তুমি কি জানো কিরকম চেহারা সুন্দর হয়?
- হ্যাঁ স্যার  পছন্দ যার যার তার তার,
- কিন্তু কি এমন কারণ যে "অমুক" মডেলের অনেকগুলা কমন ফ্যান থাকে!!! :?
আমি চুপচাপ
-বিজ্ঞানীদের মতে, সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে চোখ, মুখ ও
কানের মাঝামাঝি অংশের ডায়মেনশন এর মধ্যে।
অতঃপর তারা মাপজোক করে বললেন কারণ সোনালী অনুপাত!
সোনালী অনুপাত(Golden Ratio) কি জিনিস?
..........

"নান্টু  স্যারে ও গোল্ডেন রেশিও "

সবাইকে পড়ার আমন্ত্রণ রইল

যারা   প্রোগ্রামিং দিয়ে ফিবোনাক্কি বের করতে চান তারা ভিসিট করিন
solveproblem-ahmedshuvo969.blogspot.com/2016/01/blog-post_45.html?m=1

____আহমেদ শুভ

সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন সদস্য_১ (১৬-০১-২০১৬ ০৩:০৩)

Re: নান্টু স্যার & আরেকটু ফিবোনাক্কি

Re: নান্টু স্যার & আরেকটু ফিবোনাক্কি

বিভাগটা নির্বাচনে ভুল করেছেন দাদা, এটা গণিত বিভাগে যাবে।  brokenheart
যাইহোক, আপনার উপস্থাপনা চমৎকার হয়েছে। অনেক আগে থেকেই এই রাশির কথা জানি এবং অবাক হয়ে এর সুন্দর্য দেখেছি।
হুমায়ূন আহমেদের "শূন্য" উপন্যাসটিতে ফিবোনাক্কি নিয়ে লেখা হয়েছিলো মনে পড়ে।

Re: নান্টু স্যার & আরেকটু ফিবোনাক্কি

কিছু তথ্য যোগ করি। এই ইটালিয়ান ব্যাটা এই বিদ্যা শিখেছিলো মূলত আরব বনিকদের কাছে। রোমানরা আগে এমন এক নাম্বারিং সিস্টেম ব্যবহার করতো যেটা দিয়ে আসলে বড় বড় যোগ-বিয়োগ, গুন-ভাগ গুলো করা খুব কঠিন ছিলো। আরব বনিকরা ব্যাপক চাল্লু মাল ছিলো। তারা ভারতীয়দের কাছ থেকে দশভিত্তিক গণণা পদ্ধতি আয়ত্ব করে। ফিবোনাক্কি মিয়া সেই জিনিস আবার তাদের কাছ থেকে শিখে নেয়। এর ফলে গণনার কাজ অনেক সহজ হয়ে যায় রোমানদের জন্যে। এই জিনিস শিখে একটা বইও লিখেন উনি। কিন্তু এই বই কে কিনবে? রোমানরা খুব সম্ভবত বাঙ্গালীদের মতই পিছলা জাতি ছিলো। বাঙ্গালীরা যেমন শত চেষ্টা করলে মনিরাতুল আদব জাতীয় বই কিনে না, সেই একই কারণে রোমানরাও এ ধরনের বই কিনতে অনাগ্রহী ছিলো। তাই ফিবোনাক্কি সাহেব তার বইয়ের ভিতরে সুডুকু জাতীয় সংখ্যার ধাঁধা ঢুকিয়ে দিয়ে তার বইটিকে ইন্টারেস্টিং বানিয়ে তোলেন। ফলাফল মারাত্বক। তার সেই বই সেই আমলের বেস্ট সেলার! রোমানরাও এই বই পইড়া পরের বিশ বছরে বড় বড় যোগ-বিয়োগ,গুণ-ভাগ করা শিখে গেলো। বই ইন্টারেস্টিং করার জন্যে এই ধরনের সিরিজগুলো বের করা নিঃসন্দেহে ফিবোনাক্কির চমৎকার অবদান তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

রাবনে বানাদি ভুড়ি :-(

Re: নান্টু স্যার & আরেকটু ফিবোনাক্কি

Re: নান্টু স্যার & আরেকটু ফিবোনাক্কি

Re: নান্টু স্যার & আরেকটু ফিবোনাক্কি

thumbs_up