টপিকঃ গোদাভরি বোটানিক্যাল উদ্যান
আমাদের পড়শি দেশ নেপাল। বেড়ানোর জন্য হিমালয় কন্যা নেপাল খুব চমৎকার এক দেশ।কাছের দেশ হওয়াতে সহজে এবং মোটামুটি কম খরচে ঘুরে আসা যায়। নেপালে ঘোরার জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর স্থান আছে। আমি মোট ছয় বার গিয়েছি নেপাল তারপরও আবারও যাবার ইচ্ছে আছে সুযোগ পেলেই । পাহাড় আমার কি যে ভাল লাগে । মনের মাঝে একটা সুপ্ত ইচ্ছে আছে আমার । আমি পাহাড়ের কোল ঘেঁষে একটা চমৎকার বাংলো বানাব । তারপর ব্যালকনিতে বসে বসে সূর্যাস্ত দেখব । স্বপ্ন পূরণ হোক বা নাই হোক ,স্বপ্ন দেখতে কোন বারন তো নেই ।
পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই দেশের প্রতিটা শহরেই আছে দেখার মত কিছু না কিছু । প্রকৃতি আর পাহাড় প্রেমীদের মুগ্ধ করার উপাদানে ঠাসা এই দেশ । রাজধানীকাঠমান্ডুর খুব কাছেই ললিতপুর জেলায় আছে এক চমৎকার বোটানিক্যাল গার্ডেন , গোদাভরি উদ্যান এমন ই এক স্থান। ফুলচউকি পাহাড়ের পাদদেশে অনেক সুন্দর একটা বাগান। এছাড়াও পাখি দেখার জন্য আর সহজ ট্রেকিং এর জন্যও এ জায়গাটার আলাদা একটা আকর্ষণ আছে।
কাঠমান্ডু থেকে গাড়িতে করে গেলে পঁয়তাল্লিশ কি পঞ্চাশ মিনিট সময় লাগে পৌঁছাতে । আমি মোট দুবার গিয়েছি এখানে । প্রথমবার যখন আমি আর মাহমুদা আপু যাই তখন বর্ষা কাল। পুরোটা সময় জুড়ে হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। আমরা যখন বাগানের সামনে নামলাম তখন বৃষ্টি শেষ কিন্তু তার রেশটা রয়ে গেছে।এখানে নেপালের বোটানিক্যাল গার্ডেন।টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকতেই কানে আসছিলো ঝম ঝম শব্দ।মনে হচ্ছিল বৃষ্টির শব্দ। কিছুদুর যাওয়ার পর খুজে পেলাম শব্দের উৎস।প্রবল বেগে ছোট্ট এক জলধারা বয়ে চলেছে।
চারপাশে ভেজা গাছপালা বিশাল এলাকা জুড়ে।
দ্বিতীয় বার যখন যাই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে তখনও বরষাই বলা চলে। সেপ্টেম্বর এর মাঝামাঝি সময়ে। শহরের কাছে হওয়াতে এটা কাঠমান্ডুবাসীর পিকনিক আর ডেটিং স্পট।আর সেকারনেই হয়তো কিছু কিছু গাছে আঁকারআঁকির চিহ্ন। অমুক প্লাস সমুক। যা মোটেও ভাল লাগছিল না।ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম অনেক কিছুই হতে পারে নিরীহ বৃক্ষরাজি ছাড়া।
এখানে বহু প্রজাতির গাছ আছে ।রকমারি ফুলের গাছ যেমন আছে তেমন আবার ফুল ছাড়া বড় বড় গাছ ও দেখা যায়।
অর্কিড ,ক্যাকটাস আর অনেক নাম না জানা গাছপালা। হঠাত দেখি দোলনচাঁপা। কি মিষ্টি ঘ্রান!! তবে রঙ টা একটু হলদেটে।
এখানে অনেক রকম লতা গুল্ম দেখা যায়। প্রকৃতির কাছে সারাটা বেলা কাটানো খুব একটা মন্দ অভিজ্ঞতা না। বাগানের যত ভিতরে প্রবেশ করা যায় তত বেশি সবুজের সমারোহ চোখ আর মনকে প্রশান্তি এনে দেয়।
হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেলে বড় বড় পাথরের উপর বসে কিছুখন বিশ্রাম নিলে মন্দ হয় না। আমরা অবশ্য তাই করলাম ।
পাহাড়ের গা বেয়ে একেবেকে উঠে গেছে পাথুরে রাস্তা । মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করার পর দুই পাশের গাছপালা পেরিয়ে ধাপে ধাপে উঠে গেছে পাহাড় কাটা সিঁড়ি। মূল ফটক এর আগেই জলধারার উপর ছোট্ট কাঠের সাঁকো ।
ইচ্ছে হলে জলধারার পানিতে কিছুখন পা ডুবিয়ে বসে থাকা যায়। আমার বেশ লাগে এমন করে বসে থাকতে। প্রথম পা ছোঁয়াতে গা শিরশির করে উঠল ঠাণ্ডা পানিতে । যত যাই হোক হিমালয়ের বরফ গলা পানি তো ।
তারপর আবার পথচলা। সিঁড়িতে উঠার মুখে এক ঝোপ লান্টানা কামারা । আহ দারুন সুন্দর এই ফুল আমার শৈশবের স্মৃতি মনে করিয়ে দিল । ছোটছোট এই ফুল গুলো ছিল আমার পুতুলের ঘর সাজানোর উপাদান ।
সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গ্রিন হাউস আর অর্কিড এর বাগান দেখা যায়।
ঘন সবুজ গাছপালা আর লতা গুল্মের মাঝে রঙ বেরং এর ফুলের মেলা দেখলে মনে হয় যেন পঁটে আকা ছবি।
উপর থেকে নিচে তাকালে ধাপে ধাপে দেখা জায় সাজান বাগান আর সবুজের মেলা । ঘুরেফিরে ক্লান্ত হয়ে ভাবলাম এবার ফেরার পালা । নিচে নেমে বেরোবার কিছু আগে বসলাম এক ছাওনিতে ।
নেপালে প্রচুর পর্যটক আসে।তেমন এক পশ্চিমা পর্যটক কে দেখলাম বুকে বই জড়িয়ে খোলা আকাশের নিচে ঘাসের মাঝে শুয়ে আছে।
বেচারা মনে হয় ভ্রমনের ক্লান্তি আর বাগানের প্রশান্তি এই দুই এর সংমিশ্রণে আর চোখ খুলে রাখতে পারে নি।
গেটের কাছে খাবারের রেস্তোরাঁ আছে।ইচ্ছে হলে লাঞ্চ বা হাল্কা খাবার খেয়ে নেয়া যায়। বের হয়ে গাড়িতে উঠার আগে একটু চারপাশটা হাঁটতে গিয়ে দেখি পাহাড়ের ঢালে এক অদ্ভুত সুন্দর দুই রঙের ফুল ঝুলে আছে । নামটা কেউ তখন বলতে না পারলেও পরে জেনেছিলাম এর নাম ফুসিয়া । যাক সারাটা দিন অনেক মজা করে বিকাল বিকাল আমরা রওনা দিলাম কাঠমান্ডুর পথে আর সাথে করে নিয়ে এলাম একরাশ ভাললাগা আর শান্ত সবুজ স্নিগ্ধ অনুভুতি। আমাদের সাথে যেহেতু দুই জন বয়স্ক মানুষ ছিলেন আমার আব্বু আর আন্টি তাই আমরা আর ট্রেকিং এ যাই নাই। তবে যে কেউ ইচ্ছা করলেই পাখি আর পাহাড়ি প্রকৃতিকে দেখার জন্য ট্রেকিং এ যেতেই পারে ।ফুলচউকি পাহাড়ে ট্রেকিং ক্যাটাগরি হচ্ছে সহজ থেকে মধ্যম পর্যায়ের । বাগান টা যেখানে শেষ সেখান থেকেই শুরু পাহাড়ে উঠার পথ ।শীতকাল ছাড়া অন্যান্য সময়ে প্রচুর পাখি দেখা যায় আর বসন্তে রডোডেনড্রন অর্থাৎ গুরাস এর বাহার তো আছেই।
নেপালে বাই রোড আর বাই এয়ার দুভাবেই যাওয়া যায়। বাই রোড যেতে হলে ভারতের ট্রানজিট ভিসা লাগবে।আজকাল অনেক ট্রাভেল এজেন্সি নানারকম প্যাকেজ ট্যুর এর অফার দেয়। ইচ্ছে হলে সময় সুযোগ মতো ঘুরেই আসা যায়।আর এখন চার দেশের মাঝে গাড়ি চলাচলের যে চুক্তি হচ্ছে তাতে তো বাক্তিগত গাড়ি নিয়েই ঘুরে আসা যাবে ।