টপিকঃ শ্যাম রাজার দেশে ( অষ্টম /শেষ পর্ব )
আগের পর্ব গুলোঃ
প্রথম পর্ব http://forum.projanmo.com/topic50603.html
দ্বিতীয় পর্ব http://forum.projanmo.com/topic50744.html
তৃতীয় পর্ব http://forum.projanmo.com/topic50922.html
চতুর্থ পর্ব http://forum.projanmo.com/topic51206.html
পঞ্চম পর্ব http://forum.projanmo.com/topic51268.html
ষষ্ঠ পর্ব http://forum.projanmo.com/topic51339.html
সপ্তম পর্ব http://forum.projanmo.com/topic51504.html
আবারব্যাংকক ও আশেপাশে
ব্যাংকক এ ফিরে সোজা চলে গেলাম হোটেল অ্যাম্বাসেডর এ । আমাদের রিজার্ভেশন আগামি কালের তাই আমরা হোটেলে লাগেজ রুমে লাগেজ রেখে একদিনের মত কাপড় প্যাক করে গাড়ি নিয়ে চলে গেলাম আয়ুত্থা তে । আমাদের আয়ুত্থা যাবার ঝটিকা সিদ্ধান্তে দলের ছোট দুই সদস্য অত্যন্ত নাখোশ হল । তারা চেয়েছিল ব্যাংককের অন্য কোন হোটেলে একরাত থাকতে আর একটু খানাদানা এবং বিশ্রাম।
যাক সময় স্বল্পতার কারনে খাবার কিনে নিয়ে গাড়িতে বসেই দুপুরের খাবার সেরে নিলাম । বেলা তখন প্রায় তিনটা। ব্যাংকক থেকে আয়ুত্থা যেতে সময় লাগে দেড় ঘন্টার কিছু বেশি । পাঁচটা কি সোয়া পাঁচটা নাগাদ গাড়ি এসে থামল এক পুরাতন প্যাগোডার সামনে । কি নাখান যেন নামটা এখন মনে আসছে না । এটা ওদের ব্যাপক জনপ্রিয় তীর্থ প্লাস টুরিস্ট স্পট ।
এহেন জায়গা দেখে সফেন আর প্রিয়াম যে কপাল কুচকাল আর সোজা হল না ,কিন্তু আমার বেশ লাগছিল । কেমন একটা পুরান আর স্যাঁতসেঁতে ভাব । স্টুপা গুলো দাঁত বের করে দাড়িয়েছিল মানে ক্ষয়ে যাওয়া ইট দেখে তাই মনে হচ্ছিল ।
এখানকার সন্ন্যাসী গুলো দেখলাম সত্যি কাপড় পরানো । সব গুলা হলুদ কাপড় গায়ে জড়িয়ে আছে।
একটা বট কি পিপল গাছে দেখলাম বৌদ্ধ এর মুখ । সবাই সেখানে কাপড় জরিয়ে উইশ/মানত করছে ।
আর একটু থাকার ইচ্ছে থাকলেও থাকতে পারলাম না ক্লান্তি আর ওই দুইজনের গোমরা মুখের কারনে । এর পর সোজা গেস্ট হাউসে । এটাও হুয়াহিনের মত ছোট আর পরিচ্ছন্ন তবে আলো ঝলমলে নয় । প্রচুর গাছপালায় ঘেরা আর কেমন বুনো বুনো ভাব ।
রুম সার্ভিস অর্ডার করে ফ্রেশ হতে গেলাম , খেয়ে দেয়ে ঘুম । আমাদের থাইল্যান্ড ভ্রমনের সবচেয়ে হেক্টিক দিন পার করলাম । সকালে পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙল । আজ ফেরে যাব অ্যাম্বাসেডর এ । ছোট দুইটা তখন ও গজগজ করছিল ,এক রাতের জন্য কেন এখানে আসলাম ।
মোটামুটি রেডি হয়ে নাস্তা খেতে বের হলাম , ওদের নাস্তা খাওয়ার জায়গায় গিয়ে আমি সব কষ্ট আর ক্লান্তি ভুলে গেলাম ।কি সুন্দর পরিবেশ । পিচ্চি দুইটা ,যাদের দেখে মনে হচ্ছিল কপালে শিং মাছে কাটা দিয়েছে তারাও দেখলাম বেশ প্রফুল্ল হল ।
দু পাশে পদ্ম পুকুর আর মাঝে ছাওনি ঘেরা খাবার জায়গা । ইচ্ছে থাকলেও দেরি করলাম না ,ঝটপট খেয়ে রওয়ানা দিলাম ব্যাংকক এ । ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম হোটেলে ।
আহ দেখতে দেখতে সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে । আগেই ওদের কথা দিয়েছি যে থিম পার্কে নিয়ে যাব। আর বিকেলটা শুধু শপিং এর ।
ব্যাংককের থিম পার্ক ড্রিম ওয়ার্ল্ড আমাদের গন্তব্য । গেটের কাছে নামতেই দেখি ওদের( প্রিয়াম আর সফেন) দাঁত বের করা হাসি । আমারও বেশ লাগছিল ঘুরতে ।
আমাদের প্রথম রাইড ছিল ক্যাবল কার ,আপু আর ওর মেয়ে এক কার এ আর আমি ও ভাই এক কার এ । এসময় আমি আবিস্কার করলাম আমার হাইট ফোবিয়া আছে । পাহাড়ে চড়তে এমন লাগে না কিন্তু চারপাশে শুন্যতা ঘেরা উচ্চতা আমার ভাল লাগছিল না । আমার ভাই চেহারা দেখে আমার ভয় বা অস্বস্তি আন্দাজ করতে পারছিল আর শাখা মৃগ এর মত মাঝে মাঝে নড়ে চড়ে বসছিল । আমি প্রায় চিৎকার করে বললাম ,দেখ আমার হাইট ফোবিয়া আছে এমন করবি না । সে তার দন্ত বিকশিত করে বলল তোমার হাইট ফোবিয়া ওয়াটার ফোবিয়া টিকটিকি ফোবিয়া সব আছে ,নাই কি ?
নিচে সব কিছু খুব ছোট আর কিউট লাগছিল । পুরা পার্ক এর একটা ভিউ পাওয়া যাচ্ছিল উপর থেকে । যাক মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে রাইড শেষ হল । এরপর টয় ট্রেন এ করে ঘোরা আর আরও একটা রাইড এ চড়তে বাধ্য হলাম ।
মাঝে একটু বসে আইস ক্রিম খেতে খেতে সিদ্ধান্ত নিলাম লাঞ্চ এখানেই করব । ওরা হ্যারিকেন নামের একটা রাইড এ চড়তে চাইল ,আপু বলল এটাই শেষ আর শুধু তোমরা উঠবে আমারা দুজন না । বাপরে এইটার অবস্থা দেখে মনে হল সবাইকে জাম ভর্তা বানাচ্ছে । আমি উঠলে নির্ঘাত বমি করতাম । ওরা ঘেমে অস্থির হয়ে চোখ মুখ লাল করে নেমে এল ।
উপরে ডান থেকে ২য় আর ৩য় তে আমার ভাই আর ভাগ্নিঃ
এবার লাঞ্চ এর পালা ,আজ ওদের দিন তাই লাঞ্চ করলাম কে এফ সি তে । এর পর একটু বসে একটা স্টান্ট শো দেখে কিছু ছবি তুলে বের হয়ে এলাম ।
এবার কেনাকাটার পালা । শপিং এর জন্য থাইল্যান্ড খুব চমৎকার জায়গা । সারাটা বিকেল এ মার্কেট সে মার্কেট ঘুরে রাতের খাবার খেয়ে ফিরে গেলাম হোটেলে ।
পরের দিন ঘুম থেকে উঠলাম এক মিশ্র অনুভূতি নিয়ে ,আজকেই শেষ দিন ভাবতেই একটু মন কেমন কেমন করছিল আবার বাসায় যাব একথা ভাবতেই বেশ ভাল লাগছিল ।
আজ বেশ আয়েশ করেই নাস্তা খেলাম । এরপর একটু বের হলাম কাছেই রবিন্সন এ । চকলেট আর ফল কেনার জন্য । সাথে টুকটাক ফুটপাথ শপিং ।
এরপর ফেরার পালা ,ব্যাগ বোচকা বেধে এয়ার পোর্ট আর সেখান থেকে ঢাকা । থাইল্যান্ড এ সারা বছর এ ভ্রমন করা যায়। বেড়ানো আর শপিং দুই কাজ এর জন্যই দারুন স্থান এই দেশ।
নটে গাছটি মুড়ালো ,আমার গল্পও ফুরালো (সমাপ্ত)
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আবারও জলকণার খোঁচাখুঁচি তেই নাইলে হয়ত দু একদিন পর দিতাম