টপিকঃ হায় ব্রাজিল! হায় জাগো বনিতো!!

ছোট থাকতে আব্বুর মুখে শুনেছি ব্রাজিল হলো সেই টিম যারা বি টিম নামালেও ওয়ার্ল্ডকাপ জিতবে।

তখন এতো কিছু বুঝতাম না। ফুটবল বলতেই বুঝতাম মাথাতে ডি কাটের সর্বকালের সেরা ফিনিশার রোনালদোকে। রিভালদো, রবাতো কালোর্স নামের কিংবদন্তি। রোনালদিনহো নামের এক জাদুকরকে। আর কাকা নামক এক আর্কিটেকচারকে।

আমি এদের খেলা দেখেছি বললে ভুল হবে। বলা উচিত আমি ফুটবল মাঠে অর্কেষ্ট্রা দেখেছি এদের পায়ে। ব্রাজিলের বিখ্যাত হলুদ জার্সির প্রতিনিধিত্ব করতে দেখেছি।

অথচ সেই ব্রাজিলের গত আট নয় বছরের খেলা দেখে স্রেফ মরমে মরে যাই। কোথায় সেই ফ্লুইড মার্কিং ফুটবল? কোথায় সেই ছোট ছোট পাসে বল নিয়ে দ্রুত মুভমেন্ট? কোথায় সেই ভয়ংকর সব ফর্রোয়াড, এটাকিং মিডফিল্ডার, সেন্টারব্যাক? কোথায়??

আমি প্রশ্নের উত্তর মেলাতে পারি না। আমি সত্যিই প্রশ্নের উত্তর মেলাতে পারি না জাগো বনিতোর দেশ, সুন্দর ফুটবলের পূজারীর দেশ, সাম্বার দেশের ফুটবল কই হারালো??

উদাহরণ খুঁজতে বেশি দূরে যেতে হবে না। গতকালের ম্যাচকেই কাঁটাছেড়া করি। কোপা আমেরিকা ২০১৫। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ প্যারাগুয়ে। ফলাফল নির্ধারিত সময় শেষে ১-১ গোলের সমতা থাকায় পেনাল্টি শুট আউটে প্যারাগুয়ে জয়ী।

এবার পোস্ট মর্টেমে যাই। প্রথম পঁচিশ মিনিটে সেই ট্রেডমার্ক ব্রাজিলকে দেখলাম। প্রতিপক্ষের পায়ে বল না দিয়ে ছোট ছোট পাসে দ্রুতগতিতে মুভ করে অল আউট অ্যাটাক উইং দিয়ে। যার ফল পেল দ্রুতই।

ফ্লুইড মার্কিং পাসে বুড়ো ঘোড়া রবিনহো থেকে এলিয়াস, এলিয়াস থেকে আলভেস, আলভেস থেকে রবিনহো, রবিনহো থেকে বল জালে। স্রেফ ট্রেডমার্ক জাগো বনিতো।

কিন্তু এরপরেই ব্রাজিল কি হলো কে জানে! মিডফিল্ডের সাথে আক্রমণভাগের কেমিষ্ট্রি খুঁজেই পেলাম না!!! স্ট্যাট বলছে প্রথমার্ধে ব্রাজিল প্যারাগুয়ের গোলমুখে মাত্র দুটি শট নিয়েছে যার একটি গোল। অথচ ব্রাজিলের বল পজিশন ছিলো ৬৪% !!

সেকেন্ড হাফে দুঙ্গার ষ্ট্র্যাটেজি ছিলো আরো ভয়ানক! ব্রাজিল গোল করতে উৎসাহী না হয়ে বরং লিড ধরে রাখতেই আরো মনোযোগী হলো। ফলাফল প্যারাগুয়ে ব্রাজিল চেপে ধরে একের পর এক আক্রমণ করেই গেল। এই সময় জেফারসন নিশ্চিত দুটি গোল বাঁচিয়েছে।

পেনাল্টি থেকে গোল হজম করার পর ব্রাজিল যাও আক্রমণে গেছে তাও মিডফিল্ড আর আক্রমণভাগের কেমিষ্ট্রির অভাবে বলার মত কিছু করতে পারেনি। অবশ্য প্যারাগুয়ের ডিফেন্স আর ব্রাজিলের ডিফেন্স শতভাগ মার্কস পাবে। দে ডিড দেয়ার জব ওয়ান্ডারফুলি!

কৌটিনহো ফিরমিনো রবিনহো এদের মাঝে বোঝাপড়ার অভাবটা স্পষ্ট। ততোধিক স্পষ্ট দুঙ্গার অতি রক্ষণাত্নক কৌশল। এই ম্যাচ ছাড়াও দুঙ্গার বিগত কয়েক ম্যাচের কৌশল একটুও ভালো লাগেনি।

কোন রকমে একটা গোল করার পর অতি ডিফেন্সিভ খেলা ব্রাজিলের মত টিমের সাথে সত্যিই যায়না। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। একের পর এক বিগ ম্যাচে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছে ব্রাজিল। সেই ট্রেডমার্ক ব্রাজিলকে খুঁজতে হচ্ছে জাদুঘরে নয়তো ইউটিউবে।

শেষ করি একটা কথা দিয়ে। এটা সেই দেশ যাদের কাছে ফুটবল খেলা নয়, ফুটবল হলো ধর্ম। ধর্মের অধর্ম কেউ করে না। ব্রাজিল ও করবে না। আমি নিশ্চিত ব্রাজিল ফিরে আসবে জাগো বনিতো নিয়ে। ফুটবলের ১২০ গজে শিল্পীর নিপুণ আঁচড়ে তৈরি করবে শিল্পিত ফুটবল।
গ্রান্দে ব্রাজিল <3

শুভ্র

Re: হায় ব্রাজিল! হায় জাগো বনিতো!!

২০১০ এর দুঙ্গার ব্রাজিলকেও আমার একদম পছন্দ হয় নি। বরং এ বছর লুই ফিলিপ স্কলারির ব্রাজিল ভালই খেলছিল। আমার মতে ব্রাজিল জার্মানির সাথে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার কারণ ছিল থিয়াগো সিলভার না খেলা। ব্রাজিলের পুরো খেলাটা লিড করছিল থিয়াগো সিলভা। লাস্ট ম্যাচে না খেলার ফলে কে কোন জায়গায় কিভাবে খেলবে পুরোপুরি মেসড আপ হয়ে যায়। আর সামনে নেইমার না থাকার ফলে স্ট্রাইকিং এও কোন জোর ছিল না।

তবে আপনি যেরকম ফুটবল খুঁজছেন সেটা পাওয়া খুব সহজ না। ব্রাজিলের স্বর্ণযুগ ছিল ঐ সময়টা। রবার্তো কার্লোস আর কাফুর মত ডিফেন্ডার, রোনাল্ডো-রিভাল্ডো র মত স্ট্রাইকার এবং মাঝমাঠে রোনালদিনহো আর কাকা। এরা প্রত্যেকেই "ওয়ার্ল্ডক্লাস এবং মতান্তরে সে সময়ের শ্রেষ্ঠ প্লেয়ার"। আপনি কখনোই আশা করতে পারেন না দলের ১১ জনের ৭/৮জনই স্টারপ্লেয়ার থাকবে।

Re: হায় ব্রাজিল! হায় জাগো বনিতো!!

২০১০ দুঙ্গার ব্রাজিল তাও মাঝে মাঝে শিল্পিত ফুটবল খেলতো। কিন্তু স্কলারির ব্রাজিলে তাও পেতাম না। এবারের কোপা আমেরিকাতে তো আরো না।

স্বর্ণযুগ ফিরে আসবে ঠিকই। যদি এরা ইউরোপে না খেলে ৭/৮ জন প্লেয়ার ব্রাজিলের লিগে খেলে। অবশ্য এটা আমার মতামত। কারণটা বলি, স্পেন জার্মানিকে কে দেখে এমন মনে হলো। ২০১০ এ স্পেনের যে টিমটা বিশ্বকাপ জেতে তার ৭ জন বার্সার, ৩ জন মাদ্রিদের, আর একজন আর্সেনালে খেলতো। টিটিটাকার ছন্দ চোখে লেগে আছে।

২০১৪ এর জার্মানির টিমটার ৭ জন ই বুন্দেসলিগার প্লেয়ার। নিজেদের ঘরোয়া লিগে খেললে প্লেয়াররা নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্য অনুযায়ী খেলা চেতনায় ধারণ করে খেলতে পারে। সে মোতাবেক নিজেদের অভ্যস্ত ও করে তুলতে পারে।

অথচ ব্রাজিলের ২ জন ছাড়া সবাই খেলে ইউরোপে। কেউ ইতালির লিগে অভ্যস্ত কেউ স্প্যানিশ লিগে আবার কেউ ইংলিশ লিগে অভ্যস্ত। এর প্রভাবটা খেলাতে পড়তে বাধ্য!

ফলাফল হলো খাপছাড়া খেলা। প্যারাগুয়ের ম্যাচেই তা দেখেছি।

শুভ্র

Re: হায় ব্রাজিল! হায় জাগো বনিতো!!

এটা তো নতুন নয়।