টপিকঃ গহীন বান্দরবান: পর্ব-১০
পর্ব-১০ঃ অতিরাম পাড়া
পাহাড় পার হওয়া আসলেই বেশ পরিশ্রমের ব্যাপার। প্রচুর ক্লান্তিকর একটা কাজ, কিছুক্ষণ পরপর বিশ্রাম নেয়া লাগতেছে। এখন যে পাহাড়ের উপরে আছি সেখান থেকে দূরে একটা পাড়া দেখা গেলো। মনে হচ্ছে এখানে পাড়া গুলো খাবার পানির প্রাপ্যতা অনুযায়ী গড়ে উঠে। একটু আগে এক পাহাড়ের গোড়ায় সবাইকে খাবার পানি নিয়ে যেতে দেখছিলাম, এরা সবাই মনে হচ্ছে ওই পাড়ার বাসিন্দা। দূর থেকে পাহাড়ের মাঝে ছোট্ট এ পাড়াকে দেখতে ছবির মত লাগছিল। জায়গার নাম অতিরাম পাড়া।
অতিরাম পাড়া
পাড়ার ঢোকার রাস্তায় দেখলাম উঁচু করে বেড়া দেয়া। আর এ বেড়া পার হবার জন্য মোটা গাছের ডালকে সিঁড়ির মত কেটে দেয়া। পাড়ায় ঢোকার জন্য সবাইকে এ সিঁড়ি বেয়ে পার হতে হয়। এর আগেও এরকম মোটা গাছের ডাল দিয়ে বানানো সিঁড়ি দেখেছিলাম। গাইডকে কারন জিজ্ঞাসা করতেই আসল কাহিনী বের হয়ে আসলো। রাতের বেলা এখানে বন্য প্রানীর উৎপাত বেড়ে যায়, এরা যাতে সহজে পাড়ায় ঢুকতে না পারে সেজন্যই এ ব্যবস্থা।
পাড়ায় ঢুকছি
পাহাড়ের উপরে অতিরাম পাড়া, পেছনে মেঘ আর দূরে আরো পাহাড়
পাড়ায় ভেতরে আরেকগ্রুপের সাথে দেখা হলো, তারা অন্য রুট দিয়ে এসে এখানে গতরাত থেকেছে। এখন প্রচুর পরিমানে লোকজন বান্দরবান ভ্রমনে যায় বলে পাড়ার লোকেরা এরকম টুরিস্ট গ্রুপ দেখে অভ্যস্ত। আমাদের দেখে পাড়ার এক বয়স্ক লোক আমাদের বন্ধুরা বন্ধুরা বলে কি যেন বলছিল, আমরা ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, অনেকক্ষন চেষ্টার পর বুঝতে পারলাম, বলছিল আমাদের কে ফিরে আসার সময় যেন তার সাথে কথা বলে যাই, আমরা তার কথায় সায় দিলাম। পাহাড়ি লোকজন অনেক আন্তরিক।
অতিরাম পাড়ার ভেতরে
এ পাড়া পার হতেই আরেকটা পাহাড়। এপাড়া পার হবার সময় সেই একই রকম খুঁটি পার হতে হলো। আর পাহাড় থেকে নামার রাস্তাটা বেশ কঠিন। কঠিন বলতে আসলেই কঠিন। এরাস্তায় মানুষজন খুব একটা আসা যাওয়া করেনা বিধায় পাহাড়ের মাঝে রাস্তা ঠিক বোঝা যায়না। আর নিচে নামার রাস্তা এতই খাড়া যে গাছ ধরে ধরে নামতে হয়। সাইফুল ভাই তো একবার নামতে গিয়ে বেশ খানিক্ষন গড়িয়ে পড়েছিল, পাশে ঝোপঝাড় আঁকড়ে থাকার কারনে রক্ষা। আমরা খুব আস্তে আস্তে নামছিলাম। এখানে গাছপালার ঘনত্ব বেশি আর গাছগুলো বেশ বড় বড়, তাই এখনো সুর্য্যের আলো ভেতরে পৌঁছায়নি। তাই রাস্তা জায়গায় জায়গায় এখনো পিচ্ছিল।
ভেজা পাহাড়ি রাস্তা
পরের পাহাড়টাও একইরকম খাড়া। বোতলের পানি আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে, সামনে কোথায় আবার খাবার পানি পাওয়া যাবে কেউই জানিনা। গাইড বললো এ পাহাড়টার পার হলেই অমিয়খুম ঝর্না, আর বেশি দেরী নেই। পাহাড় থেকেই পানি পড়ার গমগম আওয়াজ শুনতে পেলাম, সে এক নেশা লাগানো শব্দ। মনে যেন আশার সঞ্চার হলো, পা দুটো আর চলছিলনা, যেন শরীরে আর বিন্দুমাত্র শক্তি অবশিষ্ট নেই, বিশ্রাম নিচ্ছি আর অল্প করে এগুচ্ছি। হাঁটার গতি অনেক স্লথ হয়ে যাবার কারনে একটু রাস্তা পার হতে বেশ সময় লেগে যাচ্ছে।
সারি সারি পাহাড়
নীল আকাশ, মেঘ আর সবুজে ঘেরা পাহাড়
আমরা অমিয়খুমের অনেক কাছাকাছি চলে এসেছি। পানি পড়ার শব্দ ক্রমেই তীব্রতর থেকে তীব্রতর হচ্ছে, আমাদের এক্সাইটমেন্টও বাড়ছে। অমিয়খুম আসতে এত পাহাড় পার হতে হয়েছে যে পুরো শরীর ক্লান্তিতে আর অবসাদে ভরে গেছে। অমিয়খুম এর ঠিক আগেই এক জায়গায় দেখলাম মাচান দেয়া আছে, কিন্তু ভেতরে কেউ নেই। ভাবলাম এখানে একটু বিশ্রাম নেই, কিন্তু আর থামলাম না, একবারে অমিয়খুম গিয়েই থামবো।
অমিয়খুমের পৌঁছানোর ঠিক আগের জায়গা
চলবে...