টপিকঃ গহীন বান্দরবান: পর্ব-৯
পর্ব-৯ঃ মেঘ আর পাহাড়ের মাঝে
পরদিন খুব ভোরেই উঠেছিলাম, সাড়ে পাঁচটার দিকে। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাবার কারনে সকালে উঠতে কষ্ট হয়নি। নওশাদ আর সাইফুল ভাইও ইতিমধ্যে উঠে গেছে। গাইড সকাল বেলা আমাদের আগে উঠেই খাবার রেডি করে রেখেছিল। আমরা দাঁত ব্রাশ করে দ্রুতই খাওয়া শেষ করে নিলাম।
পাড়ার একজন লোককে ঠিক করা হলো আমাদের অমিয়খুম নিয়ে যাবার জন্য। আগের গাইড এখানেই রয়ে গেল। কথা বলে জানা গেল অমিয়খুম থেকে আসতে আসতে দুপুর হয়ে যাবে। গাইডকে বললাম দুপুরের খাবার রেডি করে রাখার জন্য। আমরা যখন রওনা হলাম তখন প্রায় ছয়টা।
ভোরবেলা অমিয়খুম এর উদ্দেশ্যে যাত্রা
ভোরবেলার পরিবেশ সত্যিই অসাধারন। ঝোপঝাড়ের মাঝে মাঝে কুয়াশা জমে আছে। নীল আকাশ, একদম পরিষ্কার। সূর্য্য সবেমাত্র উঠতে শুরু করেছে। মেঘগুলো মনে হচ্ছে থরে থরে সাজানো। এরকম অসাধারন একটা পরিবেশে পাহাড়ি রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছি। অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছিল।
দূরে পাহাড়ের চূড়ায় মেঘ জমে থাকতে দেখা যাচ্ছে, এইতো একটু পরই আমরা মেঘের মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাব। বেশ রোমাঞ্চিত হয়ে গেলাম। বান্দরবান ট্যুরে আসাটা সার্থক। চোখের সামনে এত ভয়ংকর ভয়ংকর সৌন্দর্য্য আমরা বিমোহিত হয়ে যাচ্ছিলাম।
মেঘ নাকি কুয়াশা?
পাহাড় আর মেঘ
মেঘের পেছনে সুর্য্যের আলোকরশ্মি
আজকে হাঁটার রাস্তাটা অনেক পিচ্ছিল। গতকাল রাতে নাকি বৃষ্টি হয়েছিল যদিও আমরা কেউই টের পাইনি। পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটা এমনিতেই কষ্টের, তার উপর ভেজা রাস্তায় হাঁটা বেশ কঠিন। আমরা ইতিমধ্যে একটা পাহাড় পার হয়ে গেছি। পাহাড়টা বেশি উঁচু ছিলনা, আর সকালবেলা হবার কারনে শরীরে শক্তি সঞ্চিত ছিল তাই এই পাহাড় পার হতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি যদিও ইতিমধ্যে কয়েকবার বিশ্রাম নিয়ে ফেলেছি।
ভোরবেলায় বান্দরবান
সূর্য্য উঠতে শুরু করেছে
এক পাহাড়ে চূড়া থেকে আরেক পাহাড় দেখা যায়, মাঝখানে খালি জায়গা, জন মানুষের চিহ্ন মাত্র নেই। নীরব কোলাহলবিহীন এক শান্তিময় পরিবেশ। বর্ননা করে এ সৌন্দর্য্য বোঝানো যাবেনা।
নীল আকাশ সাথে মেঘ
সাথে বিস্কিটের প্যাকেট ছিল যাতে রাস্তায় ক্ষুধা লাগলে খেতে পারি, আর পানির বোতল ভরে নেয়াই আছে। যদিও সকাল বেলা খেয়ে বের হয়েছি তাও মনে হলো খুব শীঘ্রই আবার খেতে হবে।
ভোরের আলো আর সাথে মেঘ
পাহাড় একটা পার হতেই আরেকটা পাহাড়। এক পাহাড়ের নীচে দেখলাম এক পাহাড়ী পরিবার থালা বাসন পরিস্কার করছে, আর আরেকজন পিঠে বড় একটা ঝুড়ির মধ্যে অনেকগুল খাবার পানির কলসি, জগ ভরে নিয়ে যাচ্ছে। এবং এরা সবাই মেয়ে। আমরা কোন কিছু হাতে না নিয়ে পাহাড় পার হতে জান বের হয়ে যাচ্ছে, আর এরা এত ভারী পানির ঝুড়ি পিঠে নিয়ে অনায়াসে পাহাড় পার হয়ে যাচ্ছে। একেই বলে স্ট্যামিনা। আমরা যতই ডানো, হরলিক্স আর কর্ন ফ্লাওয়ার খাইনা কেন, শক্তির বিচারে এদের ধারেকাছে ঘেঁষতে পারবোনা।
এ পাহাড়টা মানুষজনের চলাচল আছে, তাই পাহাড়ি রাস্তা পুরো স্পষ্ট, কিন্তু আগেরটার চাইতে একটূ খাড়া। সূর্য্য ইতিমধ্যে ধীরে ধীরে উপরে উঠছে। মিষ্টি একটা আলো। পাহাড়ের মাঝখান থেকে মেঘগুল এখনো সরে যায়নি। মেঘ আর আলোর মিশ্রনে এক অসাধারন দৃশ্য, সৃষ্টিকর্তা কত সুন্দর করে প্রকৃতিকে সাজিয়ে রেখেছে, না দেখলে বিশ্বাস করা যায়না।
পাহাড় আর পাহাড়
চলবে...