Re: উইন্ডোজ তো ফ্রি করে দিল! লিনাক্স ইউজাররা পঁচাবে কেমনে?
সম্পুর্ন অফটপিক:
আমি ইন্টারনেট মিডিয়ার যে কমিউনিকেশনের শক্তি সেটা থেকে কেন নিজেকে বঞ্চিত করবো। আমার মতামত, বিশ্বাস পরিচিত সার্কেলে শেয়ার করার জন্য কেন প্রস্তর যুগে যাব? মিডিয়ার এবং সফটওয়্যারের সার্ভিস আমি যদি পয়সা দিয়ে ক্রয় করি, তাহলে কেন সেটা আমার প্রাইভেসী রক্ষা করবে না? বিনামূল্যে গছিয়ে দিয়েই বা কেন অনৈতীক সুযোগ নেবে (সেই রূপসী রাক্ষসীর মত -- যে কিনা মিথ্যা রূপে ভুলিয়ে রাজার বউ হলেও আসল উদ্দেশ্য ছিল হাতিশাল, ঘোড়াশাল সাবাড় করা)।
আমার পরিচিত সার্কেলে আমি একটা বিষয় শেয়ার করতে চাই। সেটাতে আরেকজনের সফটওয়্যার কেন বিনা অনুমতিতে নাক গলাবে? স্বীকার করছি, প্রাইভেসী সেটিং দিলে সেটা সেই গ্রুপ অব পিপলই দেখে --- অন্তত আপাতদৃষ্টিতে তা-ই মনে হয়। কিন্তু তলে তলে সেই তথ্য পাচার হয়ে যাচ্ছে।
বলা হতে পারে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় এটার দরকার আছে। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ মনিটরে এটা দরকার। কিন্তু করতেছে তো কিছু সফটওয়্যার কোম্পানি। নিরাপত্তা সংস্থা যেমন তথ্য সংগ্রহ করতে পারে সেখান থেকে, অন্য কেউও করতে পারে -- আর সেটাই বড় হুমকী।
দ্বিতীয়ত, ব্যাপারটা আরেকটু বড় সার্কেলে চিন্তা করি যদি: গুপ্তচরবৃত্তি আদিতম দুইটি পেশার একটি। এটার সুযোগ সন্ত্রাসীরা গ্রহণ করে (সেটা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী হতে পারে), কিংবা প্রতিপক্ষ থেকে নিজেকে রক্ষার প্রস্তুতিতেও ব্যবহার হতে পারে। গুপ্তচরগণ নিজ দেশে হিরো, আর অন্য/বিপক্ষ দেশে জঘন্যতম অপরাধী। আপনি কোন পক্ষে - সেটার উপর নির্ভর করছে এটা ভাল না খারাপ ;-) ।
আমার কাছে যেটা নিতান্তই নিরপরাধ ও নিষ্কলুস, নিরাপদ তথ্য -- অন্যে জানলে ক্ষতি নাই -- সেটাই কিন্তু ম্যানিপুলেট করে আমাকে চাপে ফেলা হতে পারে। ব্যবসায়ীরা সেটার সুযোগ নিয়ে পুশ মার্কেটিং করবে -- আমি যেটা বুঝি: পুশ মার্কেটিং হল ফুসলিয়ে অপ্রয়োজনীয় জিনিষ ক্রয় করানো। আমার ইমোশনাল/পছন্দের দূর্বলতাকে কাজে লাগানো। অনেক ক্ষেত্রেই সেটা সফল ব্যবসায়ীর মূলমন্ত্র হলেও কিছু ক্ষেত্রে সেটা অনৈতীক এবং ক্ষতিকারক। AI রোবট বা প্রোগ্রাম আমার পছন্দ বুঝে সার্ভিস দিলে সেটা অবশ্যই ভাল, কিন্তু সেই তথ্য অন্যে ব্যবহার করে আমার উপর অনৈতীক সুযোগ নেবে কেন?
আমি কোন কোন তথ্য অন্যকে জানতে দিতে চাচ্ছি সেটার চয়েস আমার হাতেই থাকা আমার জন্য স্বস্তিকর।
আবার, আমি নিজের নিরাপত্তার স্বার্থেই কখন কোথায় যাচ্ছি জানিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু নিজের মত করে না জানিয়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করতেই পারে আমার। মোবাইল বন্ধ করে যেতে পারি। কিন্তু সেই মোবাইল বন্ধ দেখালেও কি আসলেই বন্ধ? সব মোবাইলে কি ব্যাটারী খোলার অপশন আছে?
আমি তো অপরাধী নই। তবুও আমার প্রতিদিনের মুভমেন্ট কেন আমি না চাইলেও মনিটর করা হবে? এক লোক মোবাইল কোম্পানির কাছে নিজের জিওট্যাগ রেকর্ড চেয়েছিলো (সম্ভবত জার্মানির ঘটনা)। মোবাইল কোম্পানি বলেছে - আপনার নিরাপত্তার স্বার্থে এটা দেয়া যাবে না। কেস করে কেস জিতে সেই রেকর্ড পেতে হয়েছে সেই লোককে --- ৬ মাসের তথ্য দেখে জানা গেল প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় পর পর পড়ে প্রায় ২০০বার করে লোকেশন রেকর্ড করা হয়েছিল।
বিষয়টাকে অনেকভাবে দেখা যেতে পারে:
লোকটা যদি কখনো হারিয়ে যেত, তাহলে অবশ্যই সেই তথ্য উপকারী তথ্য হত -- তার মুভমেন্ট প্যাটার্ন যাচাই করে, সর্বশেষ অবস্থান জেনে ... ... ... (যদি গোয়েন্দা সংস্থাকে তথ্য দেয়)। কিন্তু সেই তথ্য উনি নিজে চাইলে দেবে না কেন?
বিষয়টা হয়তো ভাল, যে ঐ তথ্য তারা কাউকে দেয় না (মামলা জিতে তারপর নিতে হয়)। তাহলে ঐ তথ্য রেকর্ড করারই বা দরকার কী? আর ঐ তথ্য যে অন্য কেউ অন্য কোনো উপায়ে নিয়ে লোকটার ক্ষতি করবে না তার গ্যারান্টি নাই। গ্যারান্টি অনেক কিছুরই নাই -- কিন্তু এটা তো জেনে বুঝে করা। আর জেনে বুঝে তথ্য রেকর্ড করা এবং সংরক্ষণ করাটা নিশ্চয়ই বিনা খরচে হয় না --- তাহলে এই খরচ করার পেছনে মোটিভ কী? ঘটনা কি প্যাঁচ খাচ্ছে না?
মোদ্দা কথা আমার তথ্য খরচা করে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হচ্ছে মানেই, এই তথ্যের জন্য কেউ মূল্য দিচ্ছে। কেন দিচ্ছে? নিশ্চয়ই এটার সুযোগ গ্রহণ করবে।
সন্দেহ নাই -- এই তথ্য ভাল কাজে, উপকারে লাগাতে পারে। আমরা এপিডেমিক ডেটা, রোগের উৎস, ছড়ানোর কারণ ইত্যাদি বের করতে সাবজেক্টদেরকে ক্লোজ মনিটর করি। কিন্তু এই ডেটা যে ভুল জায়গায় চলে যাবে না সেটার গ্যারান্টি নাই -- অতীত ইতিহাস বলে এই ডেটা ভুল জায়গায় গিয়েছে।
কিছুদিন আগে জার্মানির সাথে ইউএসএ'র সম্পর্ক খুব শীতল হল -- কারণ তেমন সিরিয়াস (!) কিছুই না। সিআইএ বা অন্য কোনো গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক এঞ্জেলা মার্কেলের ফোন ট্যাপ করা হয়েছিলো - সেটা আবার ধরা খাইছে জার্মান গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। ...................................... নাহ্ আমি অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, ওবামা, ক্যামেরন বা সেরকম কেউ না, তাইলে আর মাথা ব্যাথা কেন। ওনারা + বড় বড় ব্যবসায়ীরা সিকিউরড ফোন ব্যবহার করবে ... ... ... চমৎকার সলিউশন: ব্ল্যাকবেরি। কিন্তু ব্ল্যাকবেরি সার্ভিসও তো বন্ধ। ওনারা নিশ্চয়ই ফোনে পেট্রোল বোম মারার আলাপ করে না ... ... (অবশ্য ওয়েপন অব মাস ডিস্ট্রাকশনের আলাপ থাকতে পারে ;-) )
যাক, আমি বাথরুমে বসে কেমনে ত্যাগ করি, সেটা হয়তো অন্যদের মতই। নতুনত্বের কিছু নাই। তারপরেও কেউ যদি সেখানে ক্যামেরা লাগায় রাখে আমার অস্বস্তি লাগবে --- কিচ্ছু করার নাই।
আমার কাপড় পাল্টানোর ঘরে ক্যামেরা লাগায় নতুন কিছুই দেখবেন না। আর সকল আম-জনতার মত আমারও একই মেশিনপত্র আছে। কিন্তু আমি অস্বস্তি ফিল করবো।
আর যেই কাজটা প্রায় সকলেই করে, যেটা ছাড়া আমাদের অস্তিত্বই থাকতো না -- সেটাই ক্যামেরায় ধারণ করে ছাড়লে সেটাকে নীলছবি বলা হয়। করাটা দোষের নয় -- কিন্তু এখানে সুক্ষ্ণ বর্ডার আছে, সামাজিক নর্ম আছে। সেই নর্ম যদি ভাঙ্গা হয় তাহলে সেটা ক্ষতিকর না হলেও সমর্থনযোগ্য না। (ডাক্তারদের শিখতেই হবে, অন্যদেরও বংশ রক্ষার্থে শিখতে হবে)
আমি প্রেমপত্র টাইপ করতে গিয়ে কী কী বিশেষন ব্যবহার করছি; কী কী ভাবে তেল মারছি সেটা কেউ উঁকি দিয়ে দেখলে কোনো ক্ষতি নাই --- কিন্তু আমার অস্বস্তি লাগবে। কিংবা এনএসএ কী দিয়ে মাইক্রোসফট দেখলেও কোনো ক্ষতি নাই --- কিন্তু আমার অস্বস্তি লাগবে। আপনি যদি দেখেন -- আমি আপনাকে "যাঃ দুষ্টু" বলবো