টপিকঃ শ্যাম রাজার দেশে দ্বিতীয় পর্ব
প্রথম পর্ব # http://forum.projanmo.com/topic50603.html
পটে আঁকা পাতায়া
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে গেলাম আমরা চারজন । থাইল্যান্ডের পর্যটকদের জন্য অন্যতম সেরা আকর্ষণ হল পাতায়া। এখানে দেখার মত আছে অনেক কিছুই। যদিও পাতায়া বিখ্যাত তার বিচ আর নাইট লাইফ অ্যাকটিভিটির জন্য কিন্তু এখানে এছাড়াও আছে অনেক আকর্ষণীয় স্থান।
হাঁটতে হাঁটতেই পৌঁছে গেলাম গালফ অফ থাই এর তীরে ওয়াকিং স্ট্রিট এ । প্রচুর মানুষজন রাস্তায় ঘোরাফেরা করছে আর কেনাকাটাও করছে । দুপাশে সারি সারি দোকান । আমরাও টুকটাক কেনাকাটা করলাম ।
এরপর হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম সাগর তীরে । পানিতে পা ভেজাতে ভেজাতে ভাবছিলাম এই ঢেউ টাই হয়ত একটু আগেই এসেছে কক্সবাজার থেকে । দূরে দেখা যাচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার ।
সৈকত থেকে ফিরে আমরা ফুটপাথ ধরে হাঁটছিলাম ।প্রচুর পর্যটক রাস্তায় ।
কিছুদুরে দেখি আমাদের রাস্তার ধারের চটপটির দোকানের মত দোকানে কি যেন বিক্রি হচ্ছে।স্থানীয় লোকজনরাই কিনছে বেশি। কাছে গেলাম দেখার জন্য ভাবলাম চটপটা কিছু হলে কিনব । কাছে আসছিলাম আর কেমন যেন একটা গন্ধ পাচ্ছিলাম । গিয়ে দেখি হরেক রকম পোকামাকড় ভাজা ।
হলিউডের সালমা হায়েক এর কথা মনে হল।উনি নাকি সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য পোকামাকড় খান। ইশ!!ভাবলেই গা গুলিয়ে উঠে।
তাড়াতাড়ি ওখান থেকে সরে আসলাম ।সন্ধ্যা সন্ধ্যাই ওখানে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে গেলাম । ফেরার পথে আমার ভাই কি এক ঘড়ি দেখে সেটাই কিনবে বলে বায়না ধরে বসল । প্যান্টের বেল্ট / এর মাঝে ঝুলিয়ে পরতে হয় । দামাদামিতে না বনায় কিনে দিলাম না ব্যাস হপ হয়ে ভুরু কুঁচকে হোটেলে ফিরল ।
পরের দিন সারাবেলা ঘুরার প্যাকেজ হোটেল থেকেই ঠিক করে ফেলাম ।তারপর লবিতে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে গেলাম ঘুমাতে ।
সকাল সকাল নাস্তা খেয়ে বের হয়ে পরলাম ।টুরিস্ট বাস অপেক্ষা করছিল ।প্রায় জনা বিশেক পর্যটক নিয়ে গাইড মিঃ পি রওয়ানা দিলেন মাদাম নং নুচ গার্ডেনে । বিশাল এলাকা জুড়ে এই ট্রপিক্যাল বাগানটি ।মাদাম নং নুচ নামে এক মহিলা ব্যাক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করেছেন এই দর্শনীয় বাগান টি ।
প্রায় পাঁচশত একর জায়গা জুড়ে এই বাগান। গাছের প্রকার ও বিন্যাস অনুযায়ী এই বাগানের আবার নয়টি ভাগ আছে ।ভাগ গুলো হল :
১# ফ্রেঞ্চ গার্ডেন ২# ইউরোপিয়ান গার্ডেন ৩# স্টোনএজ গার্ডেন ৪# ক্যাকটাস এবং রসাল (সাকুলেন্ট) গার্ডেন
৫# ভ্যারিএগেশন প্লান্টস ৬# অ্যান্ট (পিঁপড়া ) টাওয়ার ৭# বাটারফ্লাই হিল ৮# অর্কিড গার্ডেন এবং ব্রমেলিয়াড প্রদর্শন(ডিসপ্লে) গার্ডেন এবং ৯# ফ্লাওয়ার ভ্যালী ।
হরেক রকম ফুল আর গাছপালা ঘেরা এই বাগান । অনেক মেধা আর পরিশ্রমের ফলে গড়ে উঠেছে এই দৃষ্টিনন্দন বাগানটি।
এখানকার অন্যতম আকর্ষণ হল পটারি । মাটির তৈরি পট বা ঘড়া দিয়ে গাড়ি ,হাতি, টুকটুক সব কিছু বানিয়েছে ।
সামনের চত্বরেই শিকলে বাধা জলজ্যান্ত বাঘমামা ।পঞ্চাশ বাথ এর বিনিময়ে তাকে ধরে ছবি তোলা যায় ।তবে আমরা কেউ ছবি তোলায় আগ্রহী ছিলাম না ।
অর্কিড এর বাগান পার হয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম ।গাইড মিঃ পি প্রতিটি জায়গার বর্ণনা দিতে দিতে দলবল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
চলার পথে থরে থরে সাজানো ফুলের মেলা ।
এখানে এলিফ্যান্ট শো হয় দর্শনার্থীদের জন্য । গ্যালারীতে গিয়ে বসে দেখলাম হাতিদের কসরত । দুই দলে ভাগ হয়ে ফুটবল ম্যাচ খেলছিল হাতি মহাশয়রা ।সে এক মজার খেলা ।
থাইল্যান্ড এর প্রতিটা দর্শনীয় স্থানেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় । পর্যটকদের সামনে তারা সেই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজের দেশের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিকে তুলে ধরে । নং নুচ গার্ডেন ও এর বাতিক্রম না ।এখানেও সাংস্ক্রতিক অনুস্থান হয় ।আমরা সবাই গ্যালারীতে বসে দেখলাম ওদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা ।
এরপর আমরা গেলাম হাতির পিঠে চড়ে পুরো এলাকাটা ঘুরে দেখতে ।
আমার কাছে পুরো এলাকাটিকে মনে হল যেন পটে আঁকা ছবি ।এত কালারফুল ,সবকিছুই প্রকৃতির রঙে রঙ্গিন ।
এরপর যথারীতি কিউরিও শপ এ গেলাম ।একসেট পাথর বসান হাতি কিনে ফেললাম । ওখানে শপ এর বাইরে দুই জন করে মেয়ে বসে আছে এবং পঞ্চাশ বাথ এর বিনিময়ে আপনি ইচ্ছে করলে ওদের সাথে ছবি তুলতে পারবেন।
ঘোরাফেরা শেষ হলে ওখান থেকেই হালকা খাবার খেয়ে বের হয়ে গেলাম জেমস গ্যালারী তে । ইচ্ছে ছিল লাঞ্চ করে তারপর যাব কিন্তু জেমস গ্যালারী আবার টায় বন্ধ হয়ে যায় । তখন বাজে তাই হোটেলে না ফিরেই গেলাম সরাসরি জেমস গ্যালারীতে।
জেমস গ্যালারী মূলত গহনার দোকান কিন্তু এখানেও প্রচুর পর্যটক আসে । শুধুমাত্র গহনা কেনার জন্য নয় বরং এখানে যে প্রদর্শনীটি হয় তা দেখার জন্য ।
জেমস গ্যালারীতে পৌঁছানোর পর ওরা আমাদের নিয়ে গেল একটা প্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন রুম এ ।গিয়ে দেখি একটা খোলা টয় ট্রেন অপেক্ষা করছে। আমরা সহ আরও কয়েকজন দর্শনার্থী ওঠার পর ট্রেন চলতে শুরু করল গুহার ভিতর ।
লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো এর মাধ্যমে আর দুইপাশে ম্যানিকুইন এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হল খনি আর পাথর উত্তোলনের ইতিহাস । থাইল্যান্ড তার আমেথিস্ট খনির জন্য বিখ্যাত । কিভাবে এই পাথর উত্তলন করা হয় এবং আগের উত্তলন প্রক্রিয়া আর বর্তমান প্রক্রিয়া সব কিছুই দেখান হল। কিন্তু আফসোস এখানে ছবি তোলা নিষেধ । সব শেষে ট্রেন এসে থামল মুল শোরুমের দ্বারপ্রান্তে ।
ট্রেন থেকে নেমে আমরা ভিতরে প্রবেশ করলাম । ইশ!! কত্তশত গহনা ! কি সুন্দর কারুকাজ আর কত বড়ই না শোরুমটা । আমার তো অনেক কিছু কিনতে ইচ্ছা হচ্ছিল বাট ...ট্যাঁকের জোর থাকলে তো ।
কি আর করা একজোড়া দুল কিনেই ক্ষান্ত দিলাম ।আবার আসিব ফিরে জেমস গ্যালারীর তীরে ...মনে মনে এমন একটা পণ করতে করতে বের হয়ে আসলাম ।ততক্ষণে খিধেয় পেট চোঁ চোঁ করছে,তাই হোটেল এ ফিরে গেলাম খাবার খেতে । ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা । রুমে বসে খাবার অর্ডার করলাম । আর খানাদানা শেষ করে দিলাম ঘুম ।
ঘুম থেকে উঠে দেখি সোয়া সাতটা বাজে । কেয়া আপুকে তাড়া দিলাম বের হবার জন্য । একটু হাটাহাটি করে খেয়ে আসব এমন টাই প্ল্যান ছিল । কিন্তু আপুর জ্বর আসায় আমরা তিন জনেই গেলাম খাবার খেতে । তখন সন্ধ্যাই বলা চলে সাত কি সাড়ে সাত বাজে । ভাইটা ঘ্যানঘ্যান করছিল ওর সেই ঘড়ির জন্য সাথে ভাগ্নির ওকালতি ,তাই বের হলাম । হাটতে হাঁটতে পাচ মিনিটে পৌঁছে গেলাম ওয়াকিং স্ট্রিট এ। ওখানেই ভাল ভাল রেস্তরাঁ আছে ।
কিন্তু ওই রাস্তায় হাটতে আমি খুব একটা স্বস্তি পাচ্ছিলাম না ।মনে হচ্ছিল তাড়াতাড়ি খেয়ে ভাগি । হাই বিটের মিউজিক আর অনেক পর্যটকের ভীর তবে কেউ কাউকে ধাক্কা দিচ্ছে না বা বিরক্ত করছে না । কি দেখলাম কাল বিকেলে আর এখন কি অবস্থা । ঝটপট ঢুকলাম এক জাপানি রেস্তরাঁয় ।
তারপরও দুই কিশোর কিশোরী কে নিয়ে ওখানে বেশিক্ষণ না থেকে ঝটপট ফিরে এলাম হোটেলে আর ফেরার পথে কিনে নিলাম ভাইজানের সেই ঘড়ি । ............... (চলবে)