টপিকঃ বিজ্ঞানের ইতিহাস ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি : বৈশিষ্ট্য
লেখাটার শুরুতে কিছু কথা বলে নেই। খুব বেশি বড় লেখার অভ্যাস আমার নেই তাই বানান, বাক্য গঠন ও বিরাম চিহ্নের ভুলগুলো নিজ গুনে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
১৭ শতকের আগে ইতিহাসে, বিজ্ঞান একটি পৃথক শাখা হিসেবে স্বীকৃত ছিল না. এটা মূলত জাদুকর, বর্ষপঞ্জি প্রস্তুতকারক, যাজক, দার্শনিক, চিকিত্সক, বা কারিগরদের কাজ হিসাবে পরিগণিত হত।
প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞান 'প্রাকৃতিক দর্শন' এর চেয়ে বেশি কিছু ছিল না। যা ছিল একরকমের যুক্তি নির্ভর বিশ্বাস ও নীতিশাস্ত্র।
পরবর্তীতে পরীক্ষা, সলিড ইমপিরিকল বেস, জীবন মানের উন্নতি - বিজ্ঞানের এই সব ক্ষেত্রগুলো ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়েছে।
বিজ্ঞান আসলে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং স্ব-সামঞ্জস্যপূর্ণ শৃঙ্খলার স্ব-আরোপিত নিয়মের ব্যবস্থায় শুধুমাত্র মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও নির্ধারিত একটি মানবিক প্রচেষ্টা। সেই অর্থে "বিজ্ঞান আসলে তাই যা বিজ্ঞানীরা করেন"। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃতিকে যাচাই করার একটি প্রক্রিয়া মাত্র।
বিজ্ঞানীরা এক অর্থে নিজেরাই নিজেদের কর্তৃপক্ষ। তাদের করা কাজের সফলতা আর ব্যর্থতা থেকেই তাদের নিজস্ব রায় অর্জিত হয়। তারপরও তাদের কাজ সবসময়ই সন্দেহ ও স্থগিত হবার সম্ভাবনায় থাকে। পরবর্তী সময়ের বিজ্ঞানীদের কাছে এর অন্যান্য পরিদর্শন এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনের পথ খোলা রয়ে যায়।
প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিজ্ঞান
সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞান প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পেয়েছে। বিজ্ঞান সংস্থা গঠিত হয়েছে এবং এর অনুশীলনকারীদের জন্য পূর্ণমাত্রায় কাজ করার সুযোগ তৈরী হয়েছে। পদার্থবিদ জন জিম্যানের ভাষায় "বিজ্ঞান সর্বজনীন"।
পদ্ধতি হিসেবে বিজ্ঞান
পদ্ধতির মত বিষয়ে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা, শ্রেণীবিভাগ এবং পরিমাপের মত বিষয় জড়িত থাকে। তবে প্রায়শই এতে অনেক বুদ্ধিবৃত্তি অনুমান জড়িত থাকে যা সবসময়ই যাচাইযোগ্য হতে হয়। বেশিরভাগ পরীক্ষাই বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণের সমন্বয়ে সংঘটিত হয়। হাইপোথিসিসকে নানা রকম পরীক্ষার মাধ্যমে থিওরিস ও ল'সে রুপ দেয়া হয়। এটা আসলে একটা অগ্রসরমান প্রক্রিয়া যার ফলে আরও নতুন নতুন পর্যবেক্ষন, পরীক্ষা ও থিওরির দ্বার খুলে যায়। যে কোন থিওরি আসলে সবসময় ট্রায়ালে থাকে কেননা প্রমাণের উপস্থিতিতে তার খণ্ডিত হবার বা সংশোধিত হবার সম্ভাবনা বিদ্যমান।
ক্রমবর্ধমান জ্ঞান হিসাবে বিজ্ঞান
ক্রমবর্ধমান জ্ঞানের বৈশিষ্ট্যই বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় শক্তি ও স্বতন্ত্রতা। এখানে গৃহিত সকল জ্ঞান সবসময়ই রিপিটেবল পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে যাচাইযোগ্য। বিজ্ঞানের সময়ক্রম সবসময়ই তার পৃষ্ঠপোষক বা সমাজের প্রভাশালী মহলের প্রয়োজন বা দৃষ্টিকোনকেই অনুসরণ করে এসেছে। পুরোহিতদের হাতে বর্ষপঞ্জি নির্মাণ জ্যোতির্বিদ্যার দুয়ার খুলে দিয়েছে। ১৮ শতকের টেক্সটাইলের শিল্পের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে রসায়ন আজকের রুপ পেয়েছে।
ধারনা এবং মনোভাবের উৎস হিসাবে বিজ্ঞান
বিজ্ঞান মহাবিশ্ব এবং মানুষের প্রতি ধারনা এবং মনোভাবের একটি শক্তিশালী উৎস। কখনও কখনও বিজ্ঞানের এই ধরনের প্রভাব তার কার্যত যাচাইযোগ্য তত্ত্ব বহির্ভূত। সংক্ষেপে এটি মানুষের ওয়ার্ল্ডভিউ গঠনের একটি খুব শক্তিশালী উপাদান। বিবর্তন তত্ত্ব যেমন প্রকৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নিজেদের বিবেচনা করার সুযোগ তৈরী করেছে তেমনি একইভাবে কোপার্নিকাসের তত্ত্ব মহাবিশ্বের কেন্দ্রে নিজেদের স্থাপনের ধারণা বাতিল করতে মানুষকে সাহায্য করেছে। নিউটনীয় বলবিজ্ঞান যে ধারণা দিয়েছে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের অনিশ্চয়তা নীতি তাকে আরও সুদূরপ্রসারী করেছে।
সামাজিক কার্যকলাপ হিসাবে বিজ্ঞান
প্রায়ই বিজ্ঞান সামাজিক চাহিদা প্রেক্ষিতে অগ্রসর হয়। সুতরাং শিল্প বিপ্লবের চাহিদা প্রেক্ষিতে তাপগতিবিদ্যা বিজ্ঞান অগ্রসর হয়েছে। প্রচলিত বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়ত একটা বৈজ্ঞানিক আগ্রহের ফোকাল পয়েন্ট গঠন করতে পারে, তবে তার অগ্রগতি সাধারণ অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত চাহিদা ও শর্তাবলীকেই অনুসরণ করে। চূড়ান্ত বিশ্লেষণে, বিজ্ঞানের অগ্রগতি সাধারণ মানুষের পছন্দেই প্রভাবিত হয়। তবে কোন ডেসপোটিক রাষ্ট্র চাইলে বিজ্ঞানকে গুটি কয় মানুষের প্রভাবাধীন রহস্যময় কিছু বলে গোপন রাখা সম্ভব। বিজ্ঞান ও সমাজ পারস্পরিক দ্বিপথ প্রক্রিয়ায় একে অন্যকে প্রভাবিত করে। এর ফলে বিজ্ঞান নিজেকে ইতিহাসে ধরে রাখা ও বারবার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সফল হয়েছে।
...ক্রমশ প্রকাশ্য...