টপিকঃ মোবাইল রিভিউঃ Samsung C3322i
সুপ্রিয় ফোরামিকগণ, বিগত কয়েক বছর চাইনিজ ব্রান্ড ব্যবহার করেছিলাম। তো কয়েক বছর ব্যবহার করার পর মনস্থির করলাম যে আবার ব্রান্ডের দিকে খানিক ঝোঁক দেয়া যাক। অবশেষে ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে শেষ পর্যন্ত স্যামসাং এর এই নরমাল মাল্টিমিডিয়া মোবাইলটি সিলেক্ট করলাম। এখন তারই একটি শর্ট রিভিউ আপনাদের সাথে উপস্থাপন করছি।
ব্রান্ডঃ Samsung
মডেলঃ C3322i বা Samsung Metro Duos
প্রাইসঃ ৪৫০০ টাকা
স্টাইলিশ আউটলুক, ২.২ ইঞ্চির QVGA 262K TFT ডিসপ্লে, ডুয়াল সিম, ইন্টার-নেট, এমপি থ্রী, ভিডিও, ব্লুটুথ, জাভা (MIDP 2.0) ইত্যাদি!!! এছাড়া এর মেটালিক ব্লেজ বডি, ডিসপ্লে ক্লিয়ারিটি, লাইট ওয়েট, কীপ্যাড ইত্যাদি আপনাকে আকৃষ্ট করবে।
স্পেসিফিকেশন সমূহঃ Samsung C3322i
ডিসপ্লেঃ ২.২ ইঞ্চি QVGA 262K TFT [240 x 320 pixels, ~182 ppi pixel density]
ক্যামেরাঃ ২ মেগাপিক্সেল (১৬০০ x ১২০০ পিক্সেল)
মেমরি স্টোরেজঃ বিল্ট ইন ৮ এমবি এবং এক্সটারনাল ৩২ জিবি [সর্বোচ্চ]
ব্যাটারীঃ ১০০০ mAh লি-আয়ন
অন্যান্য ফিচারসঃ অডিও-ভিডিও রেকর্ডার এবং প্লেয়ার, FM রেডিও+রেকডিং, ব্লুটুথ(২.১), ইন্টারনেট, অটো রিজেক্ট/ব্ল্যাকলিস্ট [কল & এসএমএস] , ৩.৫ মি.মি অডিও জ্যাক, জাভা (MIDP 2.0), সিম সুইচিং বাটন ইত্যাদি।
ছবিসমূহঃ ফ্রন্টসাইড
ব্যাকসাইড
অন্যান্য
এই ছিল মোবাইলটির সংক্ষপ্তি বিবরণ। এখন বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি।
বডি স্ট্রাকচার ও আউটলুকিং: মোবাইলটির বডির বিল্ড কোয়ালিটি অনেকটা ভালো বলা যায়। এর আউটলুকিং অনেকটা দেখতে Nokia 6300 এর মত লাগে। কিন্তু এর ব্যাকসাইড টি খানিক আমার খারাপ লেগেছে। কারণ সর্ম্পূণ মসৃণ ও প্লাস্টিকের হওয়ায় এতে দাগ পরার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেটটা খানিক মোটা। প্রায় ১৩.৯ মিঃমিঃ ।
ডিসপ্লেঃ ডিসপ্লের কোয়ালিটি যথেষ্ট সন্তোষজনক। এই মূল্যে এর অধিক হয়ত বা অন্য মোবাইলে পাওয়া যাবে কিনা জানি না। তবে আমার কাছে ভালোই মনে হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল এর ফন্ট নিয়ে। মানে এর আইকন মেনুর ফন্ট গুলো ছোট। কিন্তু সেটিং বা অন্যান্য ক্ষেত্রে ফন্টের আকার ঠিক আছে। আর ডায়ালিং ডিসপ্লের ফন্ট এবং রঙ্গ নিজের মত কাস্টমাইজ করার অপশন রয়েছে।
কী-প্যাডঃ মোবাইলটির কী-প্যাড গুলো যথেষ্ট বড় হওয়ায় এবং ফাঁকা ফাঁকা হওয়ায় নম্বর ডায়ালিং, এসএমএস টাইপিং ইত্যাদির ক্ষেত্রে তেমন অসুবিধা পরিলক্ষিত হবে না। এছাড়া এতে বাংলা কী-প্যাড ও রয়েছে। আপনি ইচ্ছে করলে বাংলা সাপোর্টেড মোবাইলে বাংলা লিখে এসএমএস পাঠাতে পারবেন।
তবে অতিরিক্ত ব্যবহারে কিছুদিন পর কী-প্যাডের কালার গুলো উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই যে কী-প্যাডের ছবি
ক্যামেরাঃ মোবাইলটিতে ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা রয়েছে। না ভালো না খারাপ মধ্যবর্তী টাইপের আর কি। যার ইমেজ কোয়ালিটি মোটামুটি ছিল। এতে ১৫fps ভিডিও রেকডিং করা যায়। এই মোবাইল দিয়ে তোলা আমার প্রিমো H3 এর ছবি।
অডিও & ভিডিও, FM রেডিওঃ এতে ৬৪/১২৮/১৯২/৩২০কেবিপিএস বিট রেটের গান গুলো প্লে করার পর ১২৮, ১৯২ কেবিপিএস & ৩২০ কেবিপিএসে ভালো আউটপুট দিয়েছে। সাউন্ড কোয়ালিটি অনেকটা ক্লিয়ার এবং ভালো মানের। ততটা মাত্রারিক্ত মনে হয় নি, যথেষ্ট পরিমাণ লাউড। তবে ডিসেন্ট টাইপ সাউন্ড হওয়ায় যানজটে পরলে আপনি হয়ত বা রিংটোন না ও শুনতে পারেন, এজন্য ভাইব্রেশন ব্যবহার করার লাগতে পারে। তাছাড়া ৩.৫ মিমি ইউনিভার্সেল অডিও জ্যাক থাকায় অনেক সুবিধা হয়েছে। আর হেডফোন দিয়ে গান শুনেছিলাম, সাউন্ড মোটামুটি ভালোই লাগল। সেটের সাথে হেডফোনটি অনেকটা ভালো মানের দিয়েছে।
ভিডিও প্লেব্যাক ও অনেকটা ভালো। আমি এতে QVGA (240 x 320) পিক্সেল ও ৩০ ফ্রেম/সেঃ এর ভিডিও অনায়াসে প্লে করতে পেরেছি। কোন প্রকার ল্যাগ করেনি। তাছাড়া ভিডিও ডেলভারী অনেকটা স্মুথ এবং সাউন্ড ক্লিয়ারিটি অনেকটা ভালো। তবে আপনারা যদি QVGA (240 x 320) এর উপরে অর্থাৎ CIF (352x288) পিক্সেলে ভিডিও প্লে করতে চান তাহলে প্লে হবে না। শুধু অডিও প্লে-ব্যাক হবে।
ভিডিও ফরমেট সমূহ গুলো হচ্ছে 3GP, Mp4
মোবাইলটিতে হেডফোন ছাড়া FM রেডিও ব্যবহার করতে পারবেন না, তাই হেডফোন লাগিয়েই FM রেডিও শুনতে হবে। তাছাড়া লাইভ FM রেডিও রেকডিং তো আছেই।
অটো রিজেক্ট বা ব্ল্যাকলিস্টঃ অটো রিজেক্ট নাম টি খানিক নতুন লাগলে ও স্যামসাং এর নরমাল বেসিক এবং মাল্টিমিডিয়া মোবাইলে অটো রিজেক্ট নামে এটি রয়েছে। তাছাড়া এটি যেহেতু ব্ল্যাকলিস্টের মতই কাজ করে তাই নতুন করে কিছু বলার নেই।নামেই পরিচয় কাজের পরিচয়।
বিল্ড ইন মেমরিঃ এতে মাত্র ৮ এমবি বিল্ড ইন মেমরি রয়েছে। মূলত এই মোবাইলটির আগের ভার্সনে ছিল ৪৫ এমবি। এই মাত্র ৮ এমবি খুবই অপ্রতুল। তাছাড়া জাভা সফটওয়্যার ইন্সটলের সময় ফোন মেমরি ব্যবহার হয় বিধায় খুব বেশী সফটওয়্যার, গেমস ইন্সটল করলে মেমরি ফুল হয়ে যাবে। এছাড়া ফোনটিতে ৩২ জিবি পর্যন্ত মেমরি কার্ড সাপোর্ট করবে। এখানে ৮ জিবি এক্সটারনাল মেমরি কার্ডের ছবি দেয়া হল।
ইউজার & সেটিং ইন্টারফেস অনেকটা বেসিক ইউজার ইন্টারফেস এবং স্মুথ। তবে অনেক আজাইরা কিছু গেমস দিয়ে রেখেছে যেগুলো আন-ইন্সটল করার কোন অপশন পাই না। সেটিং ইউআই ও সহজবোধ্য। তাছাড়া এর সেটিং এ প্রোফাইল, সাইন্ড, ডিসপ্লে, নেটওয়ার্ক ইত্যাদি সেটিং সমূহ রয়েছে।[ছবি গুলো বড় করে দেখতে হলে ছবিতে ক্লিক করুন]
*** স্মার্ট ডুয়াল সিম ফিচারঃ স্যামসাং এর বেসিক সেট গুলো ডুয়াল সিম বললেও আসলে ঐগুলো ডুয়াল স্ট্যান্ডবাই এবং ডুয়াল এক্টিভ। কিন্তু ডুয়াল ডায়ালিং সুবিধা নেই [ঘাঁটাঘাঁটি করে এই নাম টা স্থির করলাম]। আরেকটু সহজ ভাবে ব্যক্ত করছি। যেমন আপনি চাইনিজ ব্রান্ড (সিম্ফোনি, ম্যাক্সিমাস) বা নকিয়া ইত্যাদি মোবাইল দিয়ে কাউকে ফোন দেয়ার সময় দেখবেন যে আপনাকে সিম পছন্দ করার অপশন দিচ্ছে। অর্থাৎ সিম-১ বা সিম-২ যেটা দিয়ে ইচ্ছা সেটা দিয়ে কল দিতে পারবেন। কিন্তু স্যামসাং এর এই সেট গুলোতে এটা সম্ভব না। এতে এক সময়ে দুটি সিম এক্টিভ থাকলেও কলিং এর সময় একটি সিমের ডায়ালার অপশন কাজ করবে। মানে শুধু সিম-১ টি কাজ করবে। এর জন্য এই সেটটিতে সিম সুইচ করার একটি বাটন রয়েছে। অর্থাৎ সিম-১ থেকে সিম-২ তে সুইচ করার বোতাম। শুধু এটিতে না স্যামসাং বেসিক ডুয়াল সিমের হ্যান্ডসেট গুলোর একই অবস্থা। এই সেই সিম সুইচিং সুইচ[ সিম-১ থেকে সিম-২ এবং সিম-২ থেকে সিম-১ ]।
এখন আপনাদের মনে হতে পারে এই স্মার্ট ডুয়াল সিম ফিচারের কাজ টা তাহলে কি??? আসলে এর কাজটা হল আপনি যখন সিম-১ কথা বলবেন তখন সিম-২ তে যদি আপনাকে কেউ কল করে তাহলে যিনি আপনার সিম-২ তে কল করছেন তাকে জানাবে যে উনার কলটি ওয়েটিং এ রয়েছে এবং কথনরত অবস্থায় আপনাকে দেখাবে সিম-২ থেকে আপনাকে কেউ ফোন দিচ্ছে। চাইনিজ ব্রান্ড (সিম্ফোনি, ম্যাক্সিমাস) বা নকিয়া ইত্যাদি মোবাইলের ক্ষেত্রে আপনার সিম-২ কে বন্ধ বলবে। যেটা স্যামসাং এ করছে না। এই হল স্যামসাং এর স্মার্ট ডুয়াল সিম ফিচার এবং তার কাজ। তবে এর জন্য আপনার উভয় সিমে কল ওয়েটিং এক্টিভেট থাকা লাগবে।
বিল্ড-ইন-এপসঃ প্রথমেই বলে নিয়েছি যে এটি জাভা বেজড সেট। তাই এতে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় জাভা সফটওয়্যার ইন্সটল করতে পারবেন। তাছাড়া এতে কিছু প্রি-ইন্সটলড এপস রয়েছে এগুলো হলঃ Facebook, Google, ChatON Messenger, Facebook Messenger, Gtalk, Yahoo Messenger, Twitter ইত্যাদি। তাছাড়া এতে Mobile Prayer নামে একটি এপস রয়েছে যাতে আপনি আপনার প্রার্থনার সময়ানুযায়ী টাইম সেট করে নিতে পারবেন এবং মোবাইল ঐ সময় আপনার পছন্দকৃত প্রার্থনার টোন বাজিয়ে আপনাকে এলার্ট করবে। আবার ব্লুটুথের মাধ্যমে আপনি আরেকজনের সাথে যাতে চ্যাটিং করতে পারেন এরজন্য রয়েছে BT Messenger।
ব্যাটারী ব্যাকআপঃ মোবাইলটি আমাকে ব্যাটারী ব্যাকআপ সন্তোষজনক। এতে রয়েছে ১০০০ mAh ব্যাটারী। যা আপনাকে সর্বোচ্চ ব্যবহারে ২ দিনের মত ব্যাকআপ দিবে। কিন্তু তবে এটা অনেকের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে। কারণ একেজনের ইউজিং একেক রকম। তবে একটানা রাফইউজ করলে আশা করি ব্যাটারী নিয়ে আপনাকে ততটা টেনশনে পরতে হবে না। কিন্তু আমার কেন যেন মনে হয় ব্যাটারী খানিক বেশীই ড্রেন করে। কারণ বেসিক মাল্টিমিডিয়া হিসেবে ফোনটির চার্জ আরেকটু বেশী থাকা দরকার ছিল। আর ব্যাটারী ১২০০ mAh দিলে ভালো হত।
এই যে আমার ব্যাটারী স্ট্যাটাস। এই সেটে *#998*228# টাইপ করে ব্যাটারী কন্ডিশন, কত পার্সেন্ট চার্জ আছে ইত্যাদি দেখতে পারবেন।
*** এতে কল ক্লিয়ারিটি যথেষ্ট ভালো [নেটওয়ার্কে সমস্যা না থাকলে]। তাছাড়া লাউড স্পিকারে মোটামুটি ভালই শোনা যায়। এছাড়া কলিং সময় আপনি যে কারো ভয়েস রেকর্ড করতে পারবেন। কল রেকর্ডিং এর সময় কোন বিপ দেয় না।
এত সকল সুবিধার পরেও এতে কিছু অসুবিধা বিদ্যমান রয়েছে।
অসুবিধাসমূহঃ
১. যারা ডুয়াল সিম ডায়ালিং অপশন দরকার তাদের জন্য এই সেট খানিক ঝামেলার। কারণ বারবার ঐ বাটন প্রেস করে সিম সুইচ করা অনেকটা পেইনফুল বটে।
২. বিল্ট-ইন-মেমরি অনেক কম। এই বাজেটের সেটে মিনিমাম ৩০ এমবি বিল্ড-ইন-মেমরি দেয়া দরকার ছিল।
৩. ক্যামেরাকে ওয়েবক্যাম হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না।
৪. ক্যামেরার মান যা রয়েছে তা থেকেও না থাকার মতই আর কি। আর ভিডিও আউটপুট মোটামুটি মানের। যা আপনাকে অনেকটা আশাহত করবে।
৫. সেটটির ব্যাককভারটি প্লাস্টিকের তৈরি। যেটা অসাবধানতাবশত হাত থেকে পরে গেলে ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
এত সকল সুবিধা & অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও এক কথায় সেটটি অনবদ্য বলা চলে। কথা বলা, টুকটাক নেট ইউজ করা, গান শোনা ইত্যাদির জন্য পারফেক্ট সেট এটি।
যা যা দিয়েছেঃ বক্সের সাথে Samsung C3322i মোবাইল, ব্যাটারী, চার্জার, হেডফোন, ১ বছরের ওয়ারেন্টি কার্ড, ইউজার মেনুয়াল ইত্যাদি। তবে কোন ডাটা ক্যাবল দেয় নি।
মতামতঃ আমি এই মোবাইলটি গত ২/৬/২০১৪ তারিখে বনানীর সফুরা টাওয়ারের নীচে স্যামসাং এর কেয়ার থেকে ৪৫০০/= কিনেছিলাম। এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা ছাড়াই দিব্যি চলছে। তবে আমার মতে, দাম অনুযায়ী এই মোবাইল টি খানিক কম ফিচার সমৃদ্ধ। কারণ একই কনফিগারেশনে নকিয়ার ফোন খুবই কম মূল্যে পাওয়া যায়। তবে দামটা ৩৫০০/= টাকার আশে পাশে হলে সেটটি একটি বেসিক মাল্টিমিডিয়া ফোন হিসেবে আর্দশ সেট হত।
পরিশেষে ধন্যবাদ এই ম্যাংগু পাবলিকের নগণ্য মোবাইলের রিভিউ টি দেখার জন্য!!!