টপিকঃ স্প্রিং ব্রেকার্স গেট-টুগেদার
নিউইয়র্কে থাকতে বেশ এক্সাইটেড লাগতো স্প্রিং ব্রেকের সময় এই ভেবে যে আর এক মাস পরেই শীতের সিজনের ইতি। এখন সারা-বছর-গরম এলাকায় থেকে সেই এক্সাইটমেন্ট বলতে কিছুই নেই। অন্য যে কোনো ব্রেকের মতই স্প্রিং ব্রেকে এখন শুধু স্কুল বন্ধ থাকার খুশি টুকুই মুখ্য মনে হয়। যদিও এবার আমার এই আনন্দের সাথে যুক্ত হলো দুই পুরোনো বন্ধু - অস্টিন (উইথ গার্লফ্রেন্ড) & টাইলার। ওদের জন্য যদিও ফ্লোরিডা হচ্ছে স্বর্গ! হাজার হাজার স্টুডেন্ট স্প্রিং ব্রেকে ফ্লোরিডায় আসে বীচ-সাইড-পার্টি করতে। তাই ওরা তিন জন মিলে দেরী না করে ২৪+ ঘন্টা ড্রাইভ করে সূদুর নিউইয়র্ক থেকে চলে আসলো ফ্লোরিডা!
মোটেল সিক্সের রিসার্ভেশন কনফার্ম করতে গিয়ে দেখি চেকইন করার সময় এখনও শুরুই হয়নি। তাই দেরী না করে আমি আমার গাড়িতে ওদের নিয়ে রওনা দিলাম কি-লার্গোর উদ্দেশ্যে। যদিও প্রথমে কি-ওয়েস্ট যাবার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু ওদের টায়ার্ডনেস দেখে মনে হলোনা এখন এতো দূর যাওয়া ঠিক হবে। এদিকে আমার নিজেরও জ্বর-ঠান্ডা-কাশি! তাই বেশী ভেজাল না করে কি-লার্গোর একটা স্টেইট পার্কে থামলাম আমরা..
বাকার্ডি, স্পাইসড রাম আর কয়েক ধরনের জুসের ককটেল রেডি করেই পানিতে লাফ
এদিকে আমি আমার ৫ডি নিয়ে ক্যপচারিং শুরু করে দিয়েছি। অনেক দিন পর এত ছবি একসাথে তুলতে গিয়ে একটু সমস্যাই হচ্ছিলো প্রথম প্রথম পরে ম্যনুয়াল বাদ দিয়ে অটো মোডে সুইচ করে ফেললাম.. সময় কম মোমেন্ট বেশী কি আর করা!
এতদিন পর কাছের ফ্রেন্ডদের পেয়ে যতো জমানো কথা ছিলো সেগুলো শেষ করতে করতেই দেখলাম সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে.. সবাই টিপসি মোডেই বিচের উপর ছোট্টো একটা ঘুম দিলাম.. আমার জন্য এই ঘুমই বিপদ ডেকে আনলো.. ঘুম থেকে উঠে আমার লাইফের সবচেয়ে জঘন্য মাথা ব্যাথায় ভুগলাম সেদিন সারারাত। এই কষ্টের সাথে যোগ হলো ক্ষুধা। গভীর রাতে খাবারের ব্যবস্থা করা যে এত কষ্টের তা আগে কখনও টের পাইনি। অসাধারণ বিরক্তি আর ক্লান্তি নিয়ে ফোর্ট-লডার্ডেল (যেই এলাকায় আমি থাকি) ফিরেই ঘুমে তলিয়ে গেলাম চারজন।
পরদিন টার্গেট ছিলো মায়ামি আর সাউথ বিচ! সাউথ বিচে অস্টিন আর টাইলার গেলো লংবর্ডিং করতে। আমাকে রেখে গেলো কেইলীকে শহর ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য। কি মুসিবতে পড়লাম! আমি নিজেই তো এইসব এলাকায় এতো ঘুরাঘুরি করি নাই কখনও। শুনে আমার ফ্রেন্ডরা বেশ অবাক যে বীচের পাশে থেকে কি করে আমি বীচ এরিয়ায় এতো কম ঘুরলাম। এটার কারণ আমি নিজেও বের করতে পারলাম না। তবে যতটুক মনে হয় বালির সাথে আমার এক ধরনের শত্রুতা আছে আর সাঁতার না জানায় আমি পানি একটু ভয় পাই সাঁতার না জানলেও এবার ভাবলাম একটু লংবর্ডিং শিখে নেই। শিখতে গিয়ে ২/৩ টা আছাড় খেয়েই মন ভরে গেলো আমার। ধুর আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না!
নেক্সট ডেসটিনেশন ছিলো আমাদের মায়ামি। কোনো কারণে প্রত্যেক বারই রাতের বেলা আমার মায়ামি যাওয়া পড়ে। এত সুন্দর একটা সিটি আমার দিনের বেলা দেখার সৌভাগ্য আর হলো না। তবে মায়ামি সিটির রাতের বেলার সিটিস্কেইপও খুব একটা খারাপ লাগে না
মায়ামি শহরের স্কাইলাইনের পাশাপাশি ফুড সিনও বেশ চমৎকার। এখানে ইনস্ট্যন্ট আইস্ক্রিম বানিয়ে খাওয়ার পার্লার আছে কয়েকটা.. এর একটাতেই ঢুকে আমরা গলা ভিজিয়ে নিলাম দীর্ঘ ৫ মাইল হাঁটবার জন্য
এই হাঁটার মধ্যেই দেখি আমার ফ্রেন্ডরা পানচ বাগি খেলা শুরু করেছে। খেলার নিয়ম খুবই সিম্পল ভক্সওয়াগন বিটল গাড়ী যে আগে দেখবে সে তার পাশের জনকে পানচ করবে আর বলবে "পানচ বাগি রেড (গাড়ীর কালার), নো পানচ ব্যক"। আমি অলরেডি ৩ টা পানচ খেয়ে বসে আছি.. তবে আমি চেষ্টা করলাম গাড়ীর লোকেশন গুলা মনে রাখতে যেন আসার পথে প্রতিশোধ গুলা সুদে আসলে উশুল করতে পারি..
ডিনার করার জন্য ৫ মাইল হেঁটে এসে আমরা রাস্তার পাশে বসে পড়লাম বিশাল সাইজের অক্টোপাস বুরিটো নিয়ে!
খেতে খেতে পরিচয় হলো নানান দেশের লোকজনের সাথে। সবাই দেখি বিশাল লিস্ট নিয়ে ঘুরছে। কেউ কেউ একবারে ২০ টা দেশ ভ্রমণ করার জন্য বের হয়েছে। আবার কেউ কেউ ভ্রমণ করতেই থাকবে যতদিন না টাকা না শেষ হয়। ওয়াও! আমার নিজেরও এরকম কিছু করার প্ল্যন। এবং এই টাইপ প্ল্যন বাস্তবায়নের জন্য হোস্টেলে থাকাই হচ্ছে সবচেয়ে সস্তা এবং বেস্ট! এবং আমাদের সৌভাগ্যও হলো এক জার্মাণ ছেলের সাথে তার হোস্টেলে ঢুকে স্মোক করার। লোকজন দেখে বেশ ফ্রেন্ডলিই মনে হলো আমার কাছে। যদিও হোস্টেলের প্রতি আমার একটা অজানা ভীতি জন্মিয়েছে হোস্টেল মুভি দেখার পর থেকে।
এরপর সিটির ডাউনটাউনে রাত ৩ টা পর্যন্ত চুটিয়ে আড্ডা দিয়ে আমরা ফিরে এলাম মোটেলে। এর পরদিন আমাদের যাবার কথা গান্জ্যম্পিং করতে এভারগ্লেইডস ন্যশনাল পার্ক! এমন গহীন জংগলে তাঁবু খাটিয়ে থাকার মজা কি রকম সেটা টের পাবার জন্য আমি রেডি।
এভারগ্লেইডস যাবার পথে আমরা থামলাম স্মউদি খাবার জন্য। মাই গুডনেস! এই ফার্মার্স মার্কেটে এমন কোনো ফল নেই যেটা ছিলো না.. এবং এগুলা দিয়ে যে কোনো স্টাইলে আপনি জুস বানিয়ে খেতে পারবেন। এর থেকে মজার ব্যপার হলো এদের জুসের সাথে মিশানোর জন্য সাজানো ছিলো কমপক্ষে ১৫-২০ প্রকারের বিভিন্ন স্বাদের মধু। সবগুলা টেস্ট করে দেখতেই আমাদের বেশ কিছুক্ষণ লাগলো। আমি নিলাম প্যশন গুয়াভা আর ম্যংগো জুস উইথ আভোকাডো হানি
সেখান থেকে খেয়ে দেয়ে ৮০ মাইল ড্রাইভ করে ঢুকে গেলাম জংগলের ভিতর। নেকড়ে, হায়েনা, বাঘ সহ অনেক ধরনের বন্য প্রাণীর দেখা মিলবে জংগলের এত ভিতরে। আমি কিছুটা উত্তেজিত। তবে আমার এই উত্তেজনা নিমিষেই নষ্ট করে দিলো বিলিয়নস মশা! আমি আমার জীবনে এতগুলা মশার কামড় একসাথে কোনোদিন খাইনি। আফসোস করতে লাগলাম কোন দুঃখে যে মশার স্প্রে নিয়ে আসলাম না। তাঁবু খাটিয়ে এর ভেতরে ঢুকবার আগেই আমার শরীর ফুলে একাকার। আমি বললাম আমার ফ্রেন্ডদের যে আমি বাগ স্প্রে নিয়ে আবার আসি। মানে ১৬০ মাইল ড্রাইভ করে যাওয়া শুধু বাগ স্প্রে আনতে। ওরা শুনে হাসতে হাসতে বলে "Ahmed you say the darndest thing ever"
পরে আর কি আমার ডার্নডেস্ট জোক আর মশার গান শুনতে শুনতে রাত পার করে দিলাম অর্ধেক। এদিকে আমার পরদিন ল্যব ক্লাস... তাই শেষ রাতের দিকে আমি ড্রাইভ করে চলে আসলাম প্রিয় ফ্রেন্ডদের ছেড়ে.. miss y'all..