টপিকঃ our helth
সিঙ্গাড়া, পুরি, জিলাপি, ফুচকা, চটপটি, আলুরচপ, বেগুনি, পিঁয়াজু, রসুনেরচপ, ধনিয়াচপ প্রভৃতি মুখরোচক খাবারে ভরে আছে বাংলার রাস্তার দুপাশ। তাছাড়াও নিতান্তই সাধারনশ্রেণির মানুষদের সকালের নাস্তা, রাত বা দুপুরের খাবারের ঠোঙ্গা রেস্তরার প্রাচুর্যও এড়িয়ে যাবার মত চিত্র নয়। আর এসব দোকানের একটি সাধারন চিত্র হল, খোলা খাবার। রাস্তার একদম পাশে হওয়ার দরুন সহজেই ধুলা-ময়লা এই খাবারগুলর অনিবার্য উপাদানে পরিনত হয়। ধুলাবালির গল্প বাদ দিলেও কড়াইয়ের পাশে রাধুনির সিগারেট খাবার দৃশ্য বিশেষ দুর্লভ না। পেটের পীড়া বিভিন্ন কারনে হলেও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলেন যে, মোট পেটের সমস্যার প্রায় ৪৬% এর মুল কারন উন্মুক্ত-বাসি-নোংরা খাবার গ্রহন। তবে সাময়িক পেটের সমস্যা ছাড়াও দীর্ঘ মেয়াদী শারীরিক সমস্যা গুলো খাটো করে দেখার মত না। এখন প্রশ্ন হল, খাবার ঢেকে রাখতে, রান্না করার পাশে রাধুনির সিগারেট না খেতে, খাবার পরিবেশনের জায়গা ও পাত্রটা একটু পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য একজন ঠোঙ্গা দোকানের মালিক কে কি ঝুকি নিয়ে বিসাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে? নাকি একটু স্বদিচ্ছা ও সচেতনতাই যথেষ্ট?
“এতই যদি থাকে সমস্যা তবে আর খেলাম না রাস্তার পাশের খোলা খাবার”- এমন শপথই কি এই সমস্যার সমাধান? নাকি সরকারের উচিৎ এসব ঠোঙ্গা রেস্তোরা অপসারন করা? কর্তৃপক্ষের এমন প্রচেষ্টার নজির হয়ত সহজেই পাওয়া যাবে, যার বেশির ভাগ ব্যার্থ। এসব দোকান তুলে দিলে পাবলিকে সুলভে খাবে কোথায়? ওই দোকান ওয়ালা গুলইবা চলবে কি করে?- এমনি নানা রকম সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা এসে দাড়ায়।
তারচেও সহজ বাস্তবতা হল, রাস্তার পাশে বিক্রি হওয়া খাবার গুলো এর গ্রাহকদের জীবনের অংশ, ১৫ টাকার এক বাটি চটপটি, তেতুলের টকে ডোবানো ফুচকা, বন্ধুদের নিয়ে আড্ডার মাঝে গরম গরম সিঙ্গারা-পুরি, এগুলোর যে কি স্বাদ, তা এর নিয়মিত গ্রাহকরাই বোঝেন, হয়ত অমৃতের বিনিময়য়েও তারা এই জিভে জল আনা মুচমুচে কামড় হারাতে রাজি হবেন না। শুধু দেশে কেন, বিদেশেও, “Roadside foods are considered as delicacy” তাই এই সব দোকান গুলোর মূলোৎপাটন করার প্রচেষ্টা বা সন্তানের প্রতি মায়ের শাসন, “খবরদার,রাস্তার পাশে খোলা খাবার খাবেনা”, সম্ভবত আমাদের বর্তমান সমস্যার খুব একটা ভাল সমাধান হবেনা।
স্বাভাবিক ভাবেই কিছু দ্বিমত থাকলেও আশাকরি অনেকেই একমত হবেন যে, এই ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজন সচেতনতা। এবং এই সচেতনতা দরকার উভয় দিক থেকেই, দোকানদারের যেমন তার দ্বায়িত্বের বিষিয়ে সচেতন হওয়া উচিৎ তেমনি গ্রাহকদেরও তাদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হউয়া উচিৎ। বাস্তব প্রেক্ষাপটে এ ধরনের দোকানদারদের খাবার ঢেকে রাখতে বললে তারা বলবে, “ ঢেকে রাখলে কাস্টমারে খাবার দেখতে পায়না, খেতেও আসেনা”। তারা তো স্বচ্ছ পলিকভার ব্যাবহার করতে পারে বা কাচ দিয়ে ঘেরা ছোট্ট সোকেস( সাম্প্রতিক সময়ে অনেক দোকানেই অবশ্য এটা দেখা যায়) ব্যাবহার করতে পারে।
তবে সবচাইতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপটি নেওয়ার দায়ভার গ্রাহকদের। গ্রাহকরা যদি চুপচাপ থেকে ক্ষতিকর ভাবে ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে দোকানদার যা ধরিয়ে দেয় তাই “চর্বণ পূর্বক গলধকরন” করার অভ্যাস বজায় রাখেন সেক্ষেত্রে দোকানদারো তার খাবার ঢেকে না রাখার অস্বাস্থ্যকর ও অসচেতন অভ্যাস অব্যাহত রাখবে। একজন রাস্তার পাশের ঠোঙ্গা দোকানদার এর নিয়মিত ৫০ জন গ্রাহকের ২০-২২ জনও যদি সেই দোকানদারকে শুধরাতে চায় আমার বিশ্বাস আশাতীত পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব। কথায় আছে “পাগলেও অন্তত নিজের ভাল বোঝে”, এখন প্রশ্ন আমরা পাবলিকরা, নিজেদের ভাল কতটা বুঝি? মানুষ হিসবে জন্মে এতটুকু সচেতন হউয়া কি আমাদের জন্মগত দায়িত্ব না?