টপিকঃ ভাল্লু চাই ভাল্লু!
সেই কখন থেকে একটা টেডিবিয়ার টেডিবিয়ার করে চিল্লাছি কেউ তো দিবে না উল্টা বসে বসে মজা নিতেছে সবাই! :S যাক ব্যপার না! কিপ্পটুসের দল সব বাচ্চাএক্টা মেয়ে একটা টেডিই তো চাইছে!
যখন পিচ্চি ছিলাম! এই গুলশান-১ এর ডিসিসি মার্কেটেই কোন এক খেলনার দোকানে বেশ বড়-শর আমার সাইজের একটা টেডি দেখিছিলাম। সারা মার্কেট ঘুরেও আম্মুকে টেনে টেনে নিয়ে যেতাম ঠিক সেই দোকানে যেখানে অই টেডিবিয়ার টা রাখা ছিল! খুব নরম তুলতুলে আর খুব সুইট একটা ফেস ছিল! কিনতে চাই নাই কিন্তু সেটাকে দেখে একটু আদর করতে খুব ভাল লাগত! চোখে পড়ছে পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে একবার করে সেটা সামনে যেতাম! প্যাকেট করে রাখা ছিল! কিন্তু ধরা যেত প্যাকেট টা সরিয়ে!
আদর টাদর করে সেই বাসায় চলে যাওয়া!
আমরা তখন কই থাকতাম ফার্মগেইটের, বিজ্ঞান কলেজের উল্টাদিকে! সেখান থেকে গুলশান যাওয়া হত প্রায়। এই গুলশান ডিসিসি মার্কেটে আর নিউমার্কেটের কিছু কিছু দোকানে ক্রুকারিজের বেশ ভাল ভাল কিছু সেট পাওয়া যেত। আম্মু একটু দাম দিয়ে হলে সেটাই খুঁজে কিনত! টাকা আস্তে আস্তে পে করত! সেই বাহানায় আমার একটু খেলনা দোকানে ঘুরা হত!
আমার পিচ্চি কালে পুতুলের অভাব ছিল না! তাও আবার হ্যান্ড মেইন্ড ছোট বড় মাঝারি। আর সব চেয়ে বেশি মজার ব্যাপার ছিল! আমার পুতুলের জামা আর আমার জামা সেম সেম! আম্মা যেহেতু নিজেই আমার ড্রেস গুলো বানায় দিত; টুকরা কাপড় দিয়ে আমার পুতুলের জন্যও বানায় দিত! মা-খালার মত এত গুণবতী তো আর আমি হই নাই। পুতুল টুটুল বানাইতে পারি না! হাতে কাজে আমি এত ওস্তাদও না। আমার পুতুল দরকার হইলে হয় আম্মু নাইলে খালা বানায় দিত আর সুন্দর করে ড্রেস পরায় দিত
পুতি দিয়ে গহনা বানায় দিত
যাক মূল যে কথা, এত বড় ভাল্লু! স্বাভাবিক ছোট ছিলাম, ভাল লাগতেই পারে! আর্থিক অবস্থা যা ছিল তখন তাতে ২৫০০/= কি তার বেশি টাকা দিয়ে এইভাল্লু কিনা বিশাল ব্যপার স্যাপার! যখনি সেই মার্কেটে যাওয়া হত আমি একবার করে ওই দোকানে গিয়ে দেখে আসতাম ভাল্লুটা আছে নাকি! দেখলে শান্তি লাগত!
দাম বেশি ছিল সহজে কেউ কিনবে না এটা একটা ভাল খবর। দুই-তিন সপ্তাহে একবার যাওয়া! হয় ওই দিকে। তখন কি একটা জিনিশ খুঁজতে আম্মা যেত! সেই সুবাদে বড় ভাল্লুটার নাকে একটু আদর করে আসতাম! এটা একটা মজা ছিল! আম্মা যখন জিনিশ দেখায় ব্যস্ত; আমি তখন ওই ভাল্লুটাকে আদর করতে ব্যস্ত!
এই চলছিল মাস খানেক! এরপর ওইটা নাই! খুব মন খারাপ হয়ে গেলে! ওইটার জায়গায় আরেকটা নীল ভাল্লু আসল! ওইটা আগের টার মত এত্ত কিউট ছিল না। মুখটা খানিক থ্যাবড়া থ্যাবড়া ছিল। অনেকটা আমার মত
ওটাতে আর মনে টানে নাই।
আগের বড়োওওও ভাল্লুর মত কিউট ভাল্লু আর না দেখে; আম্মুকে একদিন বলে ফেললাম আমাদের যখন অনেক টাকা হবে এমন একটা ভাল্লু কিনে দিবা! আম্মা বলছিল ঠিক আছে! ( আমার শখ তো দেখি সাত আসমান সমান ছিল তখন
)
সেই রকম ভাল্লু আর অনেক বছর চোখেও দেখি নাই! মনে কোনা একটা ছোট কুঠুরিতে শখ পুশে রেখে তালা মেরে দিলাম। ওটা ওখানেই আটকা পড়ে গেল।
এরপর ছোট ছোট ভাল্লু অনেক এল আর গেল। আমার ভাল্লু সবাই নিয়া যায়, আম্মা খুব আগ্রহ করে পিচ্চিদের হাতে তুলে দিত! সে এটা বুঝে না দরজার কোনায় আরেক পিচ্চির বুক ফেটে যাইতেছে অন্য বাচ্চারা সেটা ধরতেছে বলে।
কারো বাসায় গেলে জিনিশ তো ধরতে দিবে না, উল্টা আমার বাসায় আসলে সবাই জিনিস উঠায় নিয়া চলে যেত! এইবার রাগের চোটে আমি একদিন সব টেডি নিয়া বাসার বাইরে ফালায় দিলাম! আম্মা খুব পিটনা দিছিল! পরে কে জানি আম্মাকে বলছে আমি কেন ফেলছি! আম্মা অই দিন কি একটা খাওয়া ঠান্ডা করছে! ওহ! আইক্রিম কিনে এনে দিসে
এর কিছু দিন পরে মনে হয় আমার জন্মদিন ছিল। আমি ক্লাস থেকে ফিরে এসে দেখি , আমারখাটের মাথার কাছে ৪ টা ভাল্লু । ৩ টা ছোট লাল ভাল্লু আর একটা হালকা বাদামি রঙের একটু বড় ভাল্লু। ওই ভাল্লু দেখে আমার এত্ত ভাল লাগছে, এত্ত ভাল লাগছে যে ওইটাকে কাঁথা, বালিশ আম্মুকে দিয়া বানায় দিতে বাধ্য করছি!
এইটা নিয়া মনে হয় আমার ক্লাস ৮ পর্যন্ত গেছে; এরপর সেটা আলমারির তাকে উঠে গেছে!
এরপর থেকে এক বদ অভ্যাস তৈরি হইল, আমার কাছে দুইটা জিনিশ থাকতে হবে; হয় একটা ভাল্লু না হলে আমার সিডি প্লেয়ার/ নাইলে রেডিও প্লেয়ার। গান শুনার অভ্যাস ছিল তখন! এখন নাই!
কিন্তু ভাল্লুর অভ্যাসটা ফিরাতে পারি নাই! রাতে ঘুমের মধ্যে এই ভাল্লু সরায় দিলেই আমি মাথার নিচ থেকে বালিশ টেনে নিয়ে পাশে রেখে শুইতাম। ঘুমের মধ্যে! সকালে উঠে দেখতাম আমার মাথার পাশে, ভাল্লুর মাথা না থাকলেও বালিশ থাকবেই! :S আম্মা পরের দিকে আর ভাল্লু সরায় দিত না। আজিব এক অভ্যাস কই থেকে যে শুরু হল কে জানে।
সেই মাপের বিশাল ভাল্লু এখন চাইলে ৫-৬ টা কিনতে পারি কিন্তু কিনে করব টা কি! এখনোও দোকানে দেখলে সেই ভাল্লুর নাক ধরে একটু আদর করে আসি ভাল, লাগে আর নাইলে এক ফ্রেন্ড এর বাসা আছে, ওর বাসায় যাওয়া হলে তার পিচ্চিটাকে কোলে নিয়ে; আমি তাদের ভাল্লুর সাথে হেলান দিয়ে থাকি! এটাও একটা মজা
আমরা দুই পিচ্চি এক সাথে আর ভাল্লু!
কথা গুলা হটাৎ-ই মনে পড়ল কাল রাতে,
ফোরামের ঘুরতে ঘুরতে দেখি আমার নামের পাশের একটা ট্রুউঙ্কেল ট্রুউঙ্কেল লিটল তারা ঝুলতেছে!
দেখে মনে হইল এই তারা কি জন্য, আমি কারে জিগামু!
মেহেদি৮৩ (আসলে ৮৮ ) এর ফেবু আইডিতে গুঁতা দিলাম দেখি সাড়াশব্দ নাই! তারপর ভাবলাম সারিমকে জিগাই! এরে তো পাওয়াই যায় না! ছবি আপু তো ওপ্পা হইয়া আছে রাগে! ডেডুদারে তো তিন দিন গুঁতাইলে ২০ দিন পর উত্তর দিবে
।
তারপর ভাবলাম উদাদাকে জিগাই, কিন্তু তার কিছুক্ষন আগে যেমনে ছবি আপুকে ক্ষেপাইসি, ধরে না আমারে মাইর টাইর দেয় এইজন্য আর জিগাই নাই উনাকে! তারপর রহস্য মানব জিগাবো ভাবলাম, দেখা যাবে এমন রহস্য শুরু করছে মেজাজ না আবার খারাপ হয়ে যায়। অনেক ভেবেটেবে অরুন দাকে জিজ্ঞাসা করলাম। উনি বলে দিল স্টারের উপর গুঁতা দিতে! দিলাম গুতা। পরে বুঝলাম কাহিনী কি! :S বেকুব দি গ্রেট হইলে যা হয় আরকি!
এরপর কোথেকে মাথায় আসল ভাল্লু; তো ভাল্লু চাই। প্রজন্ম ফোরামরের "নতুন মুখ ২০১৩" ক্যাটাগরি উপলক্ষে এই স্টার-মেস্টার দিয়া হইসে আমাকে। কি করতাম এই স্টার দিয়া, ধরতেও পারুম না, নিতেও পারুম না!
এর থেকে একটা ভাল্লু প্রাইজ হিসাবে দিলেও তো সবাইরে দেখাইতে পারতাম! বলতেও পারতাম একটা ভাল্লু পাইসি প্রজন্ম ফোরাম থেকে হুদাই ঘ্যান ঘ্যান করে
(আমার শখ তো দেখি সেরকম মাপের
)
গতকাল এর আগের দিন ছবি আপুর সাথে অনেক ফাজলামি করছি, বেচারি, রাগে টুস টুস হয়ে ছিল! আমি বলে তার পেজে যেয়ে কি কি বলে আসছি! যাক! ( বিচার আমি মানি না, তালগাছ আমার! ) । তারপরও আমি সরি বলেছি, তাও উনার মনে গলেছে কিনা তার বুঝতে পারছি না!
প্রজন্ম ফোরাম থেকে তো আর ভাল্লু পামু না! তো ছবি আপুর কাছে ঘ্যান ঘ্যান করলাম একটা ভাল্লু দিতে। যদি রাগ কমে থাকে আরকি!
বলত তো রবিবার নাকি দিবে! এখন দেখা যাবে দেয় কিনা না দিলে আফুর লগে কথা নাই! দেখা হইলে সোজা আফুর কোলে গিয়া বইয়া থাকুম!
হাড্ডি গুড্ডি ভাইঙ্গা গেলে আমার দোষ নাই!
শেষ করার আগে, আবারো আমার সেই বন্ধু-টাকে একটা বিশাল ধন্যবাদ দিতে চাই, আমাকে ফোরামে নিয়ে আসার জন্য আর এত্ত সুইট সুইট আর কিছু বদ-লুকদের এর সাথে মিশার সুযোগ করে দিবার জন্য! কেমনে কেমনে একটা স্টার জুটে গেল।
সেই সুইট সুইট আর বদ-লুকদের জন্য একটা স্টারও জুটে গেল আর এইটা দেবার জন্য সব্বাইকে এত্ত গুলা চকলেট
এই স্টার তো আর শেয়ার করতে পারছি না বন্ধু-টার সাথে; ভাল্লুটা থাকলে না হয় দিয়ে দিতে পারতাম তাকে!
আর ফোরামের সব্বাইকে এত্ত এত্ত গুলা ভালবাসা। খুব অল্প সময়ে এত কাছে টেনে নেবার জন্য
সাথে থাকবেন সবাই; নাইলে আমি কিন্তু ফেবিকল গ্লু দিয়ে সব্বাইকে আটকে রাখব কাছে!