ভালোবাসার কোড লিখেছেন:ডারউইনের বিবর্তন কি DNA লেভেলের কথা বলে?
মানুষের সাথে কুকুরের DNA 90% এর কাছাকাছি মিল। তাতে কি বলবেন কুকুর থেকে মানুষ বা মানুষ থেকে কুকুর?
অবশ্য কোনো এক কালে পরীক্ষায় পাসের জন্য বানর থেকে মানুষ প্রমানের জন্য পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে ফেলেছিলাম। 
এখন নিওডারউইনিযমের যুগ। রিচার্ড ডকিন্স তাঁর ঐতিহাসিক বই A Selfish Gene প্রকাশ করে রীতিমত তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলেন। ওই একটা বইয়ে ডারউইন ও মেণ্ডেলের মধ্যে শুভবিবাহ করিয়ে দিয়ে জীন সেণ্টৃক ওয়ার্ল্ডভিউর সূচনা করেছিলেন ডকিন্স!
ব্যাপারটা অনেকটা ফিজিক্সের ক্লাসিকাল নিউটনিয়ান মডেল আর কোয়াণ্টাম মডেলের মত। নিউটন, ম্যাক্সওয়েল এমনকি রাদারফোর্ড প্রমুখরা ম্যাক্রো লেভেলে অবজার্ভেশন করেছিলেন। পরে আইনস্টাইন, বোহর, প্ল্যংক ও বন্ধুরা এসে কোয়ান্টাম জগৎের দরজা খুলেছেন। এখন বিজ্ঞানীরা মাথা ঘামাচ্ছেন কিভাবে দু'টোকে সম্মিলিত করে GUT - grand unifying theory বা Theory of Everything খাড়া করা যায়

ডারউইন বা রাসেল ওয়ালেস প্রমুখরা বিবর্তনের গ্রস বৈশিষ্ট্যগুলো পর্যবেক্ষণ করে (প্রায় নির্ভুল) সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন। বিবর্তনের এণ্ড রেজাল্ট তাঁরা দেখেছিলেন, কিন্তু বিবর্তনের ড্রাইভিং মেকানিজমটার খুঁটিনাটি সম্পর্কে তাঁরা একেবারে অজ্ঞ ছিলেন। গ্রেগর মেণ্ডেল তাদের সমসাময়িক হলেও চার্চের "বিশেষ বদান্যতায়" মেণ্ডেলিয়ান মেকানিক্স চাপা পড়েছিলো বহুকাল।
ফিজিসিস্টরা মাথা কুটে মরলেও বায়োলজী কিন্তু তার GUT বের করে ফেলেছে! আশির দশকে ডকিন্সের সেলফিশ জীন প্রকাশ পাবার পর রীতিমত ফ্লাডগেট খুলে গিয়েছিলো! ডারউইনিয়ান ম্যাক্রো সিস্টেমের সাথে মেণ্ডেলিয়ান মাইক্রো সিস্টেমের গাঁটছড়া বেঁধে দিয়েছিলেন রিচার্ড ডকিন্সের সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা।
ম্যাক্রোস্কোপিক বিবর্তন গত দেড় শতাব্দী ধরেই আমরা অবলোকন করে এসেছি, আর এখন মাইক্রোস্কোপিক লেভেলে ওই প্রক্রিয়া কে, কিভাবে পরিচালিত করছে তা বিগত ৩/৪ দশক ধরে উদ্ঘাটন করে চলেছি।
কোন প্রাণী কোন পূর্বসুরী থেকে এসেছে তা ডিএনএ এ্যানালাইসিস, জেনেটিক ক্লক থেকে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন। সব প্রজাতীর ডিএনএ মিউটেশন একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর হয় - এই মিউটেশন রেইট থেকে একটা রাফ টাইমলাইন আমরা পাচ্ছি।
যেমন গরিলার গায়ের বডি লাইস এবং মানুষের মাথায় হেড লাইস (উকুন) ও যৌণাঙ্গে পিউবিক লাইস খুব কাছাকাছি স্পিশিয, প্রায় একই প্রজাতীর মতই - খুবই সামান্য মিউটেশন আছে। ওই ৩/৪ প্রজাতীর পরজীবী উকুনের ডিএনএ এ্যানালাইসিস করে আগের সিদ্ধান্তটাই করোবোরেট করা গেছেঃ মানুষ ও গরীলা কমন এ্যান্সেস্টর থেকে উৎপন্ন।
এমনকি উকুনের জেনেটিক পার্থক্য ও মিউটেশন রেইট (জীন ঘড়ি) থেকে বিজ্ঞানীরা এও বলতে পারেন আনুমানিক কত লক্ষ বছর আগে মানুষের পূর্বসূরী প্রাণীরা গায়ের লোম ঝেড়ে ফেলা আরম্ভ করেছিলো। গরীলার সারা দেহে একই ধরণের ঘন লোম, তাই তার সারা দেহে একই ধরণের উকুন। কিন্তু কয়েক মিলিয়ন বছর আগে মানব পূর্বপুরুষদের দেহের লোম কমে গিয়ে মূলতঃ মাথা ও তলপেটে চুল/লোম কনসেন্ট্রেটেড হয়েছে - উকুনগুলোও ওই রকম পরিবর্তিত পরিবেশে নিজেদের বিবর্তিত করে নিয়েছে। আবার মানুষের চুল ও বালের
গুণগত পার্থক্য সম্পর্কে পুলাপাইন সম্যক অবগত। তাই মানুষের মাথার উকুন এক প্রকারের, আবার পিউবিসের উকুন সামান্য ভিন্ন প্রকারের। মানুষের পিউবিক লাইসের সাথে আবার গরিলার বডি লাইসের বেশি মিল আছে
(কারণটা উহ্য থাক
) এ ধরণের বিভিন্ন প্রজাতীগুলোর মিউটেশন টাইমলাইন কোররিলেট বা ট্রায়াংগুলেট করে জেনেটিসিস্টরা জানছেন কোন স্পিশিয কখন স্প্লিট করে নতুন সাব-স্পিশিযের সৃষ্টি করছে। এগুলো সাপোর্টিং এভিডেন্স অবশ্য। যাই হোক, মাল্টিপল ফাইণ্ডিং কিন্তু একই প্রক্রিয়ার দিকে নির্দেশ করছে।
আপনার প্রশ্নের সাধারণ উত্তরঃ কুকুর, বানর ও মানুষ কেউ কারো থেকে সৃষ্টি হয় নি, তবে এরা বহু দূর অতীতে একই পূর্বসুরী (LUCA- last universal common ancestor) থেকে উদ্ভব হয়েছে বিভিন্ন সময়ে।
তবে এভাবে অনবরত রিগ্রেস বা পেছাতে থাকলে একটা আল্টিমেট পয়েণ্টে আসা যাবে - আমরা (মানে পুরো প্রাণী ও উদ্ভিদ, ব্যাকটেরিয়া ও আরকেয়া জগৎ) কোনো প্রাচীন ভাইরাস (বা ভাইরাস-লাইক) জাতীয় আদিম লাইফ-ফর্মের বংশধর। কিছুদিন পরপরই খবরে দেখি আমাদের (এবং অন্যান্য প্রাণীরও) ডিএনএ/আরএনএ-তে আদিম ভাইরাল নিউক্লিওটাইড আবিষ্কৃত হচ্ছে। এ ধরণের বিভিন্ন ফ্যাণ্টাস্টিক আবিষ্কার থেকে বিজ্ঞানীরা হাইপোথিসাইজ করছেন জড়-জীবের সন্ধিক্ষণে থাকা ভাইরাসের মতই কোনো কোনো পিকিউলিয়ার, আদিম প্রোটিন মলিকিউল থেকে ৩.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে আমাদের পুরো জীব জগৎের উৎপত্তি!
তবে ওই গড-ভাইরাস নিঃসন্দেহে পৃথিবীর বুক থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর আগেই। তবে কিছু ক্ষীণ ট্রেইল রেখে গেছে। ওটাই সম্বল করে জীন বিজ্ঞানীরা অতীতের পথে হাঁটার প্রয়াস পাচ্ছেন।
আর ভাইরাস তো তাও অনেক এ্যাডভান্সড লেভেলের "অর্ধ-জীবিত" সিস্টেম - এখন আমরা prion নামের এক ঘাড়ত্যাড়া প্রোটিনের অস্তিত্ব জেনে কুলকিনারা হারা অবস্থায় পড়েছি! এই পৃয়ন প্রোটিন মলিকিউল ব্যাটাই সারা বিশ্বে ম্যাড কাউ ডিজিজ ও অন্যান্য ব্রেইণ ডিজিজ বাঁধিয়ে হাঙ্গামা লাগাচ্ছে। কিছুদিন আগে এক এ্যান্থ্রোপলজিস্টের ইণ্টারভিউ পড়তে গিয়ে জানলাম গভীর এ্যামাযনের এক নরমাংস-খাদক গোত্রে "কুরু" নামে এক ভয়ানক, রহস্যময় রোগে বহু লোক ধুমধাম মারা যাবার কথা। এখন রহস্য চিচিং ফাঁক হয়েছেঃ এই "কুরু" হলো এক টাইপের পৃয়ন প্রোটিন। মৃত ব্যক্তির ব্রেইনে পৃয়ন ইনফেকক্সন থাকতে পারে। গোত্রের লোকজন যখন ওই ইনফেক্টড ব্রেন ভক্ষণ করে, পৃয়ন ইনফেক্সন অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই তথ্য আবিষ্কার হবার পর ব্রাজিল সরকার ক্যানিবালিজম নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলো। যতই দিন যাচ্ছে, ততই এই ব্যাটা মিসফোল্ডেড প্রটিনের কাণ্ডকীর্তি অর্থাৎ নতুন নতুন ভয়ানক ব্রেইন ডিজিজের ব্যাপারে আমরা জানছি।
পৃয়ন অবশ্য কোনোভাবেই জীবিত বলা যাবে না - এটা যাস্ট একটা প্রোটিন পলিমার, বৈশিষ্ট্য হলো তার কেমিকেল স্ট্রাকচারটি বিদঘুটে রকমের মিসফোল্ডেড। এখানেই তার জীবনি চক্র থেমে গেলে ভালো হতো। কিন্তু সমস্যা হলো, পৃয়নরা আবার তেঁতুল হুজুরের বিশেষ মুরীদ
বেয়াড়া পৃয়ন প্রোটিন অন্যান্য সাধারণ "নরমাল" প্রোটিনের সান্যিধ্যে দুই-চার মিনিট এলেই তার দিল কি বাত বাতানো তো দূরের কথা, বেচারী, নিষ্পাপ প্রোটিনটার স্ট্রাকচারও মিসফোল্ডেড করে বিকৃত করে দেয় - এভাবে নিজেদের সংখ্যাবৃদ্ধি করতে থাকে পৃয়নরা। অথচ এটা যাস্ট একটা প্রোটিন, কোনো লাইফফর্ম না! মানুষ, গরু, শূকর সহ অসংখ্য প্রাণীর বিশেষ ধরণের ব্রেইন ডিজিজের জন্য দায়ী পৃয়নরা। অথচ এদের ব্যাপারে আমরা জানলাম মাত্র সেদিন (৬০-এর দশকে)।
এরকম কত পৃয়ন-মিয়ন যে আমাদের চোখের সামনে লুকিয়ে কাম সেরে যাচ্ছে... তারপরেও লোকে বিশ্বাস করবেঃ না, কাদামাটির মধ্যে ফুঁক দিয়েই মানুষের সৃষ্টি 
বাই দি ওয়ে, জড় উৎস থেকে জীব উৎপত্তির সম্ভাবনা যাঁরা এক বাক্যে নাকচ করে দেন, তাঁরা কি ভাইরাস নামটি কখনো শোনেন নি? বা না শুনলেও প্রতি বছর ফ্লু, সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হন না? 
Calm... like a bomb.