টপিকঃ এক বাটি মুড়ি উইথ টক-ঝাল-মিষ্টি সালাদ
মাঝে কয়েকরাতের জন্য বাসায় একা থাকতে হয়েছিল।
আম্মা সারাদিন রাত হাসপাতালে। মাঝে মাঝে দিনে বাসায় এসে আমাকে দেখে যেত। আর একা থাকলে যা হয় রান্নাবারা হয়না। এক জনের জন্য রান্না করে তেমন লাব নাই। তো ঘরের আনাচে কানাচে যা থাকে তাই কাচায় নিয়ে খাওয়া হয়!
এর মধ্যে এক রাতে খুব ক্ষিদে লেগে যায়!
কিছু নাই বিস্কুট ছাড়া! আর যেই উন্নত মানের বিস্কুট, বাতাস লেখে নরম হয়ে গেছে!
এমনকি কফিও নাই যে একটু কফি বানায় খাব। আর শুকনা খাবারের পাল্লায় আম্মু লক করে গেছে বিধায় আমি খুলে চা পাতাও নিতে পারছিলাম না যে চা বানায় খাব! এখন রাতের ২ দুইটায় আমি খাবার পাব কই!
ফ্রিজে হামলা করলাম। একটা আছে তো অন্য টা নাই! কি দিয়ে কি খাব। সস আর পনির আছে তো পাউরুটি নাই। রুটি আছে তো ভাজি বা সবজি বা ডিম নাই! কি করতাম!
ফ্রিজের নিচের ড্রয়ারে কয়েকটা আমড়া, কামরাঙ্গা, শসা, গাজর, আমলকী, আর ক্যাপ্সিকাম পেলাম!
গাজর আর ক্যপাসিকাম দেখে ম্যাগি নড়ুলস বানানোর ইচ্ছা হইলেও বাসায় নুডুলস নাই! তো কি খাব!
সারা রুমে তাকায় আর ভাবতে থাকি আর কি আছে! পরে কি মনে করে একটা গাজর, একটা শশা, একটা কামরাঙ্গা, একতা আমড়া নিয়ে হাটা দিলাম রান্না ঘরে!
টিভিতে হ্যারি পটার এ্যন্ড গব্লেট অফ ফায়ারের কোন একটা অংশ হচ্ছিল আর আমি হা করে দাড়ায় দাড়ায় সেটা দেখে দেখে গিললাম!
যাক পেটের মধ্যে মোচড় দেবার পর সোজা রান্না ঘরে হাটা!
সব কিচেনের টেবিলের এক সাইডে রেখে; র্যাক থেকে স্লাইজার, ছুরি, ঘটি বাটি জোগার করে এক সাথে রাখলাম। কিযে করব এই ৪ টা জিনিশ নিয়ে মাথায় আসতেছে না। কি সালাদ বানাবো না এমনি এমনি খাব লবণ-মরিচ দিয়ে!!!
একটা একটা করে নিয়ে খোসা ছাড়াতে লাগলাম। আর কান পড়ে আছে আমার টিভি রুমে! আমি শুনছি আর শশা, গাজর, আমড়ার খোসা ছাড়াচ্ছি!
মনের ভুলে না খেয়ালে জানি না; আমি শশা গুলাকে সালাদের জন্য যেভাবে স্লাইজ করি ওই ভাবে স্লাইজ করা শুরু করলাম, স্কাইজারে ফেলে। গাজরও যে কোন সময় এমন করে কেটে ফেলাম টের পেলাম না।
যখন খেয়াল হল তখন আমি আমড়া হাতে নিয়ে সেটা মাত্র স্লাইজারে রেখেছি!
ব্যাস হয়ে গেল। আমি হা করে চেয়ে রইলাম এটা কি করলাম আসলে ক্ষুদা পেটে মাথা কাজ করে না ঠিক মত।
তারপর কি আমড়া আর কামরাঙ্গাও একি ভাবে স্লাইজারে স্লাইজ করে ফেললাম। তারপর পেঁয়াজ এর খোজে গেলাম।
বাসায় বড় একটা বেগুনি রঙের পেয়াজ পেলাম। এটার চেহারা দেখেই আমার খুব ভাল লাগছে
ইয়া বিশাল সাইজের পিয়াজ! আধা কেটে গন্ধ শুকে আমি মেলা খুশি, ঝাঁঝ নাই।
আসলে সালাদের জন্য মূলত এই পেয়াজ গুলো ব্যবহার করা হয়। এই পেয়াজে ঝাঁঝ থাকে না বরং মিষ্টি হয়। হাইব্রিড জিনিশ বুঝতে হবে যাক!
পেয়াজ আধা নিয়ে কুচি করলাম। যেহেতু পেয়াজ বড় তাই একটু বড় বড় আর লাম্বাটে করে কেটে নিলাম।
ব্যাস! মূল কাজ শেষ। লবণের ডিব্বা সামনে পেলাম দিলাম এক আর আধা চিমটা লবণ নিয়ে ছিটায়! সরিষা দেখলাম, দিলাম ঢেলে একটু সরিষার তেল আন্দাজ মত। এবার হাত দিয়ে সব দিলাম একটা ঘুটা! মানে সালাদের মত করে মাখায় নিলাম সব!
এটার চেহারা দেখেই খুব ভালা লাগতেছিল একটু বেগুনি (পেয়াজ), একটু কমলা ( গাজর), একটু পাইনাসবুজ (শশা, কামরাঙ্গা), একটু হলুদেটে (আমড়া)। , খেতে না জানি কেমন হয় আবার! ( নিজের হাতে বানানো পোড়া খাবারও সুস্বাদু লাগে, যাক গিয়ে!!
)
খেয়ে দেখলাম ভালাই লাগছে! একটু টক, একটু মিষ্টি!
কি একটা জানি মিসিং!
এইদিক ওইদিক তাকাতেই দেখি কাচা মরিচ! পরে দেখি কাচা মরিচই দেই নাই!
এটাই মিসিং ঝটপট কাচা মরিচ কেটে চালান করে দিলাম সেই টকমিষ্টি সালাদে!
হয়ে গেল রেডি আমার টক -মিষ্টি-ঝাল সালাদ!
এখন খালি খেতেতো আর ইচ্ছা করছে না কিছু সাথে আরও কিছু চাই!
সারা ঘর খুঁজে মুড়ির টিন পেলাম। ভাগ্য ভাল এটা ছিল! মুড়ি মুখে দিয়ে দেখি ন্যত্যায় আছে! তো নিয়ে গেলাম রান্না ঘরে মুড়িটাকে দিলাম একটু ভেজে নিলাম। ভেজে নিলে আবার মুড়মুড়া হয়ে যায়!
ব্যাস, রেডি আমার রাতের খাবার "এক বাটি মুড়ি উইথ টকমিষ্টিঝাল সালাদ!"
(এই ছবিতে আর কিছু খালি শশা, পেয়াজ, আর আমড়া আর কামরাঙ্গা আছে! বেগুনি মিষ্টিপেয়াজ আর গাজর ছিল না বাসায়! এটা পরে তোলা হয়েছে! অন্যবার বানানোর সময়! সেইরাতে আমার কাছে কোন ক্যামেরা ছিল না যে ছবি তুলব!)
তারপর কি! টিভি রুমে গেলাম! হ্যারি পটার দেখতে লাগলাম সাথে আমার থালা বাটি উইথ খাবার-দাবার!
যাহ!! লিখে লিখতেই দেখি এখন ক্ষিধা লেখে গেছে! দেখি আজ আছে কি ফ্রিজে
বিঃদ্রুঃ কারো যদি এই টাইপ খাবারে এলারজি থাকে দয়া করে কমেন্ট করা থেকে বিরত থাকুন! ধন্যবাদ!
সবার সবকিছু হজম হবে এমন কোন কথা নাই! বদ হহম হলে পোষ্টের মালিক কোন রূপ দায়ী থাকবে না।