টপিকঃ রেসিপি: বক বক বেগুন
বেগুন- বড় ২টি
লাল পেয়াজ- মাঝারী সাইজের ১টি
কাঁচা মরিচ- ২/৩ টি
ধনিয়া পাতা- আধা কাপ।
সরিষার তেল- কয়েক ফোটা।
এই রেসিপিটা তেমন কঠিন না। চলুন একটু গল্প করা যাক। তার আগে একটা বেগুনে তেল মাখিয়ে তাওয়ায়(লোহার তাওয়া হলে ভাল হয়) বসিয়ে আসুন। বেগুন ঝলসাতে থাকুক আর আমরা গল্প করতে থাকি।
ছোটবেলা শাকসবজি খেতে একদম ভালো লাগত না। কিন্তু আম্মার ভয়ে খাওয়া লাগত। আমার আম্মার আবার বকা দেওয়াতে বিশেষ পারদর্শিতা! একবার শুরু করলে আর থামত না। অতীত- বর্তমান-ভবিষ্যতের কৃত অকৃত কর্ম নিয়ে লেকচার শুরু হত। মাঝে মাঝে মনে হত বেত দিয়ে আমাদের দু’টো পিট্টি দিয়ে দিলেই তো পারে। দুঃখে ছোট খালাকে বললে সে ও কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে বলত, আর বলিস না! তোর মা স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী দের বকতে বকতে এই অভ্যাস করেছে। সবাইকে তাঁর ছাত্র-ছাত্রী মনে করে।
একটা উদাহরণ দেয়া যাক: খেতে বসে খালি জিঞ্জেস করলাম ‘‘ আম্মা আর কিছু নাই?‘‘ ওমনি শুরু হল- কেন যা রান্না হয়েছে সেগুলো তে সমস্যা কোথায়? খালি মজার মজার খাবার খেলে তো হবে না। শাকসবজি খেতে হবে। এটা খেলে ওটা হয়, এই হয়, সেই হয়…..তখন চুল ছিড়তে ইচ্ছে করত। মনে মনে ভাবতাম কোন অলুক্ষণে এই প্রশ্ন করতে গেছিলাম!
এখানেই শেষ নয়, বকা চলতেই থাকে….পড়াশোনায় মন নেই, খালি খেলা আর খেলা…..সেদিন আমুক নালিশ করেছিল(উল্লেখ্য সেদিনের বিচার কিন্তু হয়ে গিয়েছে ), তোমার সাহসও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে! গত পরশু শুনলাম তোমার বাবা কার সাথে কথা বলছে আর তুমি মাঝখান থেকে কথা বলা শুরু করেছো…...ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি....
আম্মার এই কর্মসূচীগুলো হতো সারা দিনব্যাপী…কোন কারণে একটু বিরতি পড়লেও, দেখা মাত্রই আবার শুরু হয়ে যেত…
একবার দাদাভাইকে (বড় ভাইকে ডাকি) আম্মা বলল, লাউ খাও বেহেশতী সবজি। দাদাভাই বলল, আম্মা তাহলে এটা এখন খেয়ে কি করব? বেহেশতে গিয়ে তো খাবই…এর পরের অবস্থা বুঝেন!
আমার বিয়ের পর আমি সবচে খুশী হয়েছিলাম এই ভেবে যে, এখন আমি যা ইচ্ছে রান্না করব, যেখানে খুশী যাব, যত বেলা করে উঠব…মহা স্বাধীন!!
হায়! কে জানত বাস্তবতা এমন হয়-এখন আমি কোন সবজি কেমনে রান্না করব সেটা জানতে আম্মাকে ফোন করি! কোন দরকার ছাড়া ঘর থেকে বের হইনা; ছেলে খাবে, ন্যাপি বদলাবে এই ভেবে সারারাত ঘুমাই না…..
একা থাকলে ভাবি যদি একটা বার আম্মার পাশে বসতে পারতাম, একটি বার আম্মাকে ছুঁতে পারতাম…যত বকা দিক বাড়ী ফিরে তাঁকেই তো দেখতাম উৎকন্ঠা ভরা মুখে বারান্দায় পাঁয়চারী করছে। পরাধীন জীবনটাই তো অনেক সুখের ছিল!
অনেক কথা বলে ফেললাম। আসলে বয়স হয়ে গেছে তো, খালি পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে যায়।
আসুন দেখি বেগুনের কি অবস্থা… পুরোপুরি ঝলসানো হয়ে গেলে উপরের পোঁড়া ছাল ফেলে দিয়ে ভেতরের অংশ হাত বা চামচ দিয়ে চটকে নিন।
পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ধনিয়া পাতা, সরিষার তেল একসাথে নিয়ে সামান্য লবন দিয়ে আগে ভালো করে মাখিয়ে নিন। চটকানো বেগুন মিশিয়ে আবারো একটু মাখিয়ে ফেলুন। ব্যস্।
একই উপায়ে টমেটো দিয়ে চাটনী তৈরী করা যায়। শুধু কাঁচা মরিচ এর বদলে শুকনো মরিচ ভেজে দিতে হবে আর সাথে একটা রসুন পুড়িয়ে দিলে হেব্বি মজা।
খাওয়ার পরে ছবি তোলার কথা মনে পড়েছে। তাই ছবিগুলোর এই অবস্থা!!