টপিকঃ উদাস ইলিস এবং একখান আসমানের চাদ!
ইলিয়াস ভাই লুঙ্গি কাছা দিতে দিতে বললেন- “বুঝলেন উদাসীন ভাই, মাছ ধরাও একটা বিশাল কর্ম। বিরাট প্রতিভা দরকার মাছ ধরবার জন্য। বহুত ধৈর্যের ব্যাপার স্যাপার। যারে তারে দিয়ে মাছ ধরা হয় না। আজকালকার পোলাপান তো জানেই না মাছ কিভাবে ধরতে হয়। তারা মনে করে বরশীর আগায় খাবার লাগিয়ে পানিতে টুক করে ফেলবে আর মাছরা মহা আনন্দে টুকুস টাকুস করে বরশীতে ঠোকর মারবে। এদের ভাব নমুনা দেখলে মনে হয় মাছ প্রজাতির মাঝে দুর্ভিক্ষ চলছে। খাবার দেবার সাথে সাথে মাছরা হাপুস গুপুস করে খাওয়া শুরু করবে”।
উদাসীন ভাই ইলিয়াস ভাইয়ের কথায় সম্মতি জানানোর জন্য মাথা নাড়েন। ইলিয়াস ভাই আবারো বলা শুরু করে-“আর বলবেন না উদাসীন ভাই, আজকালকার ছেলে মেয়েরা বেশি মডার্ন হয়ে গিয়েছে। সবকিছুতেই তারা থিউরি খুঁজে। এইতো সেদিন সারিম আসলো আমার এখানে। নিয়ে আসলাম বরশী দিয়ে মাছ ধরতে। বললাম, সারিম একটা কেঁচো বরশীর আগায় লাগিয়ে পানিতে ফেল, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করো, দেখবে মাছ বরশীতে ঠোকর দিবেই দিবে। সারিম আমাকে অবাক করে দিয়ে কি বললো জানেন উদাসীন ভাই”?
উদাসীন ভাই কিছুই জানতে চাইলেন না, তবুও ইলিয়াস ভাই মহা উৎসাহে বলা শুরু করলেন- “সারিম আমাকে বলে ইলিয়াস ভাই বরশীর আগায় কেঁচো না লাগিয়ে যদি পোলাও কুরমা লাগাই তাহলে মাছ বেশি উঠবে তাই না। মাছরা কয়দিন আর কেঁচো খাবে, পোলাও কুমরা পেলে তারা খুশি মনে তো বেশিই খাওয়ার কথা”।
“বলেন উদাসীন ভাই এটা কোন কথা হলো। মাছকে বলে পোলাও কুমড়া খাওয়াবো। আজকালকার টেলেন্টেড পোলাপানের বুদ্ধি দেখেন। বলেন উদাসীন ভাই এগুলো কোন কথা হলো”।
উদাসীন ভাই নৌকা দুই হাতে শক্ত করে জাপটায়ে ধরে বললেন-“আসলেই ইলিয়াস ভাই এগুলো কোন কথাই নয়। তবে আপনি অল্প করে নৌকা নাড়ান, আমি পড়ে যেতে পারি। আমি আবার সাতার জানি না”।
ইলিয়াস ভাই নৌকা আরো বেশি করে নাড়াতে নাড়াতে বললেন- “আরে আপনি আদিম যুগের লোক, প্রায় আমার বয়সী না হলেও মাত্র ছয় সাত বছর কম হবেন। আপনি সাতার না জানলেও নৌকায় কিভাবে বসতে হয় তাতো জানেন। আর দেখেন আজকালকার পোলাপান, বেশি বেশি লাফ ঝাপ করে। এইতো সেদিন আসলো সাইফ আমর এখানে। আমি তো তাকেও মাছ ধরবার জন্য নিয়ে আসলাম। সে নৌকায় এসেই তো লাফ ঝাপ দেওয়া শুরু করলো। জীবনে বলে এই প্রথমই নৌকায় উঠেছে”।
উদাসীন ভাই আরো শক্ত করে নৌকো ধরে বললেন- “ইলিয়াস ভাই আপ-নিতো নৌকোতে এই প্রথম না, তাহলে কেন আপনি এতো লাফ ঝাপ করছেন”?
ইলিয়াস ভাই আরো জোরে নৌকা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললেন- “উদাসীন ভাই আনন্দে লাফ ঝাপ দিচ্ছি। এতদিনে আমার যুগের একজনকে আমার কাছে পেলাম। আজকালকার পোলাপান তো ভাবের চেয়ে ভংগি বেশি করে। মাঝে মাঝে তাদের কথা বার্তা শুনলে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে- রিস্তেমে হাম তোমহারি বাপ লাগতে হে। মাগার দেখেন উদাসীন ভাই বেকুবগুলো আমাকে বলে ভাই। আজকালকার পোলাপানের বয়সের সামান্য জ্ঞানটুকুও নাই। আপনার মতো জ্ঞানীকে কাছে পেয়ে তো আমার আরো জোরে লাফ ঝাপ দিতে ইচ্ছে করছে”।
এইটুকু বলেই ইলিয়াস ভাই নৌকাটা আরো জোরে নাড়ানো শুরু করলেন। আর আমাদের উদাসীন ভাই নৌকার দুলুনি সহ্য না করতে পেরে টুপ করে নৌকা থেকে পানিতে পরে গেলেন। পানিতে পরেই তো উদাসীন ভাই চিৎকার করে বললেন- “ইলিয়াস ভাই হেল্প মি! হেল্প মি! আমি সাতার জানি না। ইলিয়াস ভাই আমি সাতার জানি না। বাঁচান বাঁচান”।
ইলিয়াস ভাই নৌকার গলুইটা এগিয়ে দিতে দিতে বললেন- “উদাসীন ভাই গলুইটা ধরেন আর একটু চুপ করেন তো। সাতার তো আমিও জানি না, তাই বলে কি এটা চিৎকার করে এলাকাবাসীকে জানাতে হবে নাকি”?
আমাদের অতি পরিচিত মুখ ইলিয়াস ভাই এবং উদাসীন ভাই। উদাসীন ভাই গিয়েছিলেন ইলিয়াস ভাইয়ের বাসায়। সবাই ফ্রি হলেই দৌড় মারে ইলিয়াস ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে। তাই উদাসীন ভাই ভাবলেন আমি যেহেতু সব সময়ই ফ্রি থাকি আর বর্তমানে যেহেতু আরো বেশি ফ্রি আছি তাহলে ইলিয়াস ভাইয়ের বাসা থেকে না হয় একটু ঘুরেই আসা যাক। কেন ফোরামিকরা রমনা উদ্যানে না গিয়ে ইলিয়াস ভাইয়ের বাসায় ঢু মারে সেই রহস্যটাও জানা হয়ে যাবে।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। ভোর বেলায়ই উদাসীন ভাই ইলিয়াস ভাইয়ের বাসায় এসে হাজির হলেন। বয়স বেড়ে গিয়েছে, আগের মতো আর হইচই ভালো লাগে না। তাই উদাসীন ভাই ফোরামিক কাউকে তো দূরে থাক স্বয়ং ইলিয়াস ভাইকেও না জানিয়ে এসেছেন। যেভাবে ফোরামিকরা বেহুদাই উদাসীন ভাইয়ের ভক্ত হয়ে গিয়েছে তাতে করে যদি কেউ জানে তিনি যাচ্ছেন ইলিয়াস ভাইয়ের বাসায় তাহলে দেখা যাবে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে দলে বলে কাতারে কাতারে সবাই চলে আসবে। শুরু হবে হইচই হট্টগোল। তার চেয়ে ভালো একাই যাওয়া। অন্যান্য ফোরামিকরা যেভাবে ছবি দিয়ে ইলিয়াস ভাইয়ের বাসার ঠিকানা ফোরামে দিয়ে রেখেছে তাতে করে ইলিয়াস ভাইয়ের বাসায় যেতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না। সেলিব্রেটি লোকজনের সাথে দেখা সাক্ষাত করতে যাওয়ার এই হচ্ছে একটা আলাদা আনন্দ। পথ ঘাট হারানোর কোনই ভয় থাকে না। ইলিয়াস ভাই মাশাল্লা ভালোই সেলিব্রেটি আদমী ।
ইলিয়াস ভাই তো আর মুন এর মতো না, যে কেউ তাকে চিনবে না। এইতো কিছুদিন আগে উদাসীন ভাই গিয়েছিলেন মুনের সাথে দেখা সাক্ষাত করতে। মুনের বাড়ির রাস্তা ঘাট উদাসীন ভাইয়ের ভালোই চেনা জানা আছে। কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়াতে মুনের বাড়িটা কোনটা তা ঠিক বুঝতে পারছিলেন না। তিনি একজন গম্ভীর চেহারার লোককে হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করলেন করলেন- “আচ্ছা ভাইয়া, এখানে কি মুন থাকে”?
লোকটি এমনিতেই গম্ভীর ছিলেন প্রশ্ন শুনে আরো গম্ভীর হয়ে বললেন- “না এখানে মুন থাকে না। মুন আসমানে থাকে। শুনেছি বৈদেশিকরা আজকাল ঘনঘন চাঁদে যাতায়াত করছে। আপনি বিদেশিদের সাথে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন। তারা হয়তো মুনের খোজ খবর ভালো দিতে পারবে”।
লোকটির কথা শুনে উদাসীন ভাই কি বলবেন খুঁজে পান না। মুনের সাথে দেখা না করেই বাড়ির পথে হাটা ধরলেন। বাড়ির পথে হাটতে হাটতে ভাবতে থাকলেন- মুন তাহলে ইদানীং বিদেশিদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ করছে। দেশের মানুষদের ভুলেই গিয়েছে। আসমানে বসবাস করছে। তাইতো বলি ফোরামে কেন দেখা যায় না। মুন তাহলে বর্তমানে আসমানের বাসিন্দা হয়েছে। আসমান দিয়ে হাঁটাচলা করছে। তাই বলে মাটিতে পা ফেলবে না, এটা কোন কথা হলো। মাটির মানুষ আমাকে প্লাস ফোরামিকদের এভাবে ভুলে যাবে।
উদাসীন ভাই বুক চাপরে আকাশের পানে চেয়ে বললেন- “মুন আসমান দিয়ে বহুত হন্ঠন করেছে। প্লিজ এবার মাটিতে নেমে এসো। আসমান দিয়ে হাঁটাচলা বন্ধ করো। তোমাকে আমরা বহু মিস করছি”।
অটঃ আমার এই লেখা পড়ে কেউ যদি মনের কোনা কাঞ্চিতে সামাস্য পরিমানের ব্যাথা, দুঃখ, অপমান বোধ করেন তাহলে নিজ দায়িত্বে করবেন। এ জন্য লেখক কোন মতেই দায়ি নয়। এটা ফান করে লেখা, সিরিয়াস ভাবে নিতে চাইলে নিতে পারেন নিজ দিয়িত্বে।