টপিকঃ ফুলবাড়ি কয়লা খনি ও প্রাসঙ্গিক কথা: সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর শকুন দৃষ্টি

বিদ্রোহের আগুন জ্বালাতে সিধু-কানুরা বারবারই ফিরে আসে। এ সত্য বৃটিশ বেনিয়ারা আঁচ করতে পারলেও ঔপনিবেশিক ভক্তিরসে নিমজ্জিত, ক্ষমতার সাপলুডুর গুটি, চোরাই বিত্তবানদের ছায়ায় উৎপন্ন আমাদের মধ্যবিত্ত  শাসক শ্রেণীর সাথে অনবরত গাল মিলিয়েই যাচ্ছেন। পুলসেরাতের আকাশে চড়-থাপ্পড় মান-অপমান সব তুচ্ছ ভেবে বিজ্ঞাপনী দুনিয়ার মনোজগতে ‘ভরসার সেজদা’ দিচ্ছেন আর অন্যদিকে হাটুরে ভদ্রলোকের মতো পার্টিজান বুদ্ধিজীবিকুল বৈতনিক বা অবৈতনিক দু’পদ্ধতিতেই তাদের কেবলা ঠিক রাখেন নানা জাতের পেজগী মারা প্রবন্ধ পয়দা করে। হালে টিভি-রেডিওতে বাতচিৎ প্রদর্শনী তাদের একটা বিশেষ মাধ্যম। ‘মহাভারতের কথা অমৃত সমান’ এসব মিডিয়ার কল্যাণে সকল পেজগী অমৃতসমানে পরিণত হয়েছে। অর্থ, পদবি, পুরস্কার এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে বিদেশি শক্তির পদলেহনকারী দালালদের অভাব বাঙালির মধ্যে কখনই হয়নি। একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশেইবা তার ব্যতিক্রম ঘটবে কেন? মার্কিন-বৃটিশ কর্পোরেট শক্তির জন্য তৈলভাণ্ড হাতে অপেক্ষমাণ বিশেষ শ্রেণীর ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, সুশীল প্রজাতি এবং করিৎকর্মা সম্পাদককুলের সারি তাই আজ জনগণের মনোরঞ্জনে যথেষ্ট সহায়তা করে। অথচ, ইতিমধ্যে বাংলাদেশের জনগণ আঁছ করতে সক্ষম বর্তমানে তাদের সংগ্রামের ধরণটা কি ও কেমন। জনগণ জানে, বাংলাদেশের মতো দরিদ্র ও সামরিক শক্তির বিচারে দুর্বল রাষ্ট্রের রাজনীতি যে বহুলাংশে বিশ্ব ও আঞ্চলিক মোড়লদের ইশারা-ইঙ্গিতে পরিচালিত হয়, এই সত্য অস্বীকার করা আর নিজেকেই নিজে ঠকানোর মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। জনগণ জানে, বিদেশীদের এজেন্ডা গুছিয়ে দেয়ার তরিকায় বুলি আউড়ে যাওয়া আঘা মার্কা গণতান্ত্রিক দলগুলো খোশমেজাজে গদী অর্জন করে। জনগণের কাছ থেকে আদায় করা ক্ষমতা সঁপে দিয়ে বিনিময়ে তাদের তকদিরে মিলছে নিরাপত্তা এবং বিত্তের বহর। আর বোকা ভেবে জনগণকে শেখাতে থাকে- গরীবের জন্য, সব কিছু গরীবের জন্য। তারা টের পেয়েছে- গরীবের জন্য কথাটাও একটা নারকোল ভালো, নারকোল ভালো, নারকোল ভালো; আসলে নারকোল ছিচিয়ে তেল করা যায়!’
কয়লা পাওয়া গেছে বলেই তাদের(ফুলবাড়ী বাসী) সবাইকে তুলে উমুক করবে তুমুক করবে। না- তা হতে পারে না। তাই তারা এশিয়া এনার্জির বাড়া ভাতে ছাই ছুঁড়ে দেয়। ভেস্তে দেয় জোচ্চুরী, সম্পদের উপর দেশী-বিদেশী শোষক, বহুজাতিক   কোম্পানি/সা¤্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর শকুন দৃষ্টি-। না তারা যাবে না- ভিটে-মাটি, তিন ফসলি জমি, প্রকৃতিকর মমতা, মানুষের একে অপরের প্রতি মায়া, গান, ঢাক-ঢোল, হাজার হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্যের স্বারক- এসব কিছু মিলে মিশে তারা একাকার হয়ে থাকতে চায় মাটি/জননীর সাথে। কে ঠেকাবে- দেখে নিতে প্রস্তুত এই ফুলবাড়ীতেই বসবাসকারী এ মাটির মূল অধিবাসী সাঁওতাল, পাহান’রা আর আছে বাঙালি যুবার রক্ত দেবার জেদ। এইটা সিধু-কানু মাঝিদের গাঁ। এরা সহজমানুষ। কিন্তু দামাল সময়ে এরা ফুঁসে উঠতে জানে। খবরদার ! আর কে না জানে আধিবাসী জাতিসত্ত্বার নীতিই হলো- ‘ভূমি আমার নয় আমিই ভূমির’।
যারা ভেবেছিল/ভাবছে ‘দিনবদলের গান’-এ সুর-তাল-লয় আছে, বোঝা যায় তারা বর্তমান সরকারের আমলকে বঙ্গালমুলুকে কোন ইউটপিয়ান সা¤্রাজ্য ভাবেছিল। হায়, ‘মার্কিন মুল্লুকের ওবামা’ ও এমনি মার্কেটিঙের প্রতিভা/পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। বিএনপি-জামাত জোটও ক্ষমতায় এসে নাচন-কুঁদন করে ব্যর্থ হয়েছে, যে ছড়ি ঘুরিয়েছে- সেই ছড়ি তাঁর নাসারন্দ্রে, পায়ুপথে দিতে দ্বিধা করেনি জনগণ। (খবর সূত্র: ২৬ আগস্ট, ২০০৬ বিক্ষুব্ধ জনতারওপর বিডিআর-এর গুলি এবং ২৬ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ফুলবাড়ীতে যে গণবিস্ফোরণ ঘটেছিলো, তার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন বিএনপি সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয় এবং ঘোষণা করেই, সম্পাদিত চুক্তি বাতিলসহ আন্দোলনকারীদের
ছয় দফা- (১) সমগ্র বাংলাদেশে উন্মুক্ত পদ্ধতি নিষিদ্ধ ও এশিয়া এনার্জি (জিসিএম) বহিষ্কারসহ রক্তে লেখা ফুলবাড়ী চুক্তির ৬ দফা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। (২) বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পায়নসহ জাতীয় প্রয়োজনে কয়লা সম্পদের শতভাগ ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করবার জন্য অবিলম্বে জাতীয় সংস্থা গঠন এবং জাতীয় সক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে হবে। (৩) বড়পুকুরিয়ায়  পুনর্বাসনের নামে জনগণকে অন্যত্র সরিয়ে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি করার চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে, ক্ষতিগ্রস্থ সকল মানুষকে যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, চীনা কোম্পানির সঙ্গে বর্তমান বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির চুক্তি শেষ হবার পর নিরাপত্তা বালু ভরাট ইত্যাদি নিশ্চিত করে জাতীয় সংস্থার মাধ্যমে নিরাপদে কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ নিতে হবে। (৪) বড়পুকুরিয়া এলাকার কৃষকদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আটক সিরাজুল মন্টুকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে (৫) জনগণের ট্যাক্সের ১৯০ কোটি টাকা লুট ও অপচয়  করে ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ অর্থাৎ উন্মুক্ত খনির অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। (৬) জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করবার জন্য জ্বালানি মন্ত্রনালয়কে বিদেশি কোম্পানির রাহুমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে শতভাগ মালিকানায় শতভাগ গ্যাস ও কয়লা দেশের স্বার্থে ব্যবহার করার  দাবী  মেনে নেয়।) সব্বাস! ‘সাবাস দেব তার, ভাঙ্গছে যারা/ ভাঙ্গবে যারা ক্ষ্যাপা মোষের ঘাঁড়।’
এখন আবার আওয়ামী চরিত্র এসে খেইল দেখবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জনগণের অজানা নয়- কেন ড. আনু মুহাম্মদের ঠ্যাং ভাঙে, সাথে সাথী-কর্মীদের পিটিয়ে হাড়গোড় খুলে ফেলে তক্তা বানানোর পর দু:খ প্রকাশ হয়। হা- এ পোশাকি দু:খপ্রকাশেরও উদ্দেশ্য-বিধেয় তাদের অজানা নয়। আর ভোট ব্যাংকের লোভে ফুলবাড়ীর জনগণকে প্রতিজ্ঞা করা, স্যালুট- ‘এক লম্বা স্যালুট’ মেরে আসার ফন্দি ফিকিরি বুঝতে জনগণকে বিন্দু-বিসর্গও বেগ পেতে হয় না। (খবর সূত্র: সরকার কর্তৃক চুক্তি বাতিলের ঘোষণার পর তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ফুলবাড়ীতে জনসভা করে এশিয়া এনার্জির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাতিলসহ আন্দোলনকারীদের ছয়দফা দাবির প্রতি অতীব জোর সমর্থন জ্ঞাপন করে। হাসিনা বেশ উচ্চ আবেগেই(?) ফুলবাড়ীবাসীকে স্যালুট মারিয়াছিলেন)। আজ যখন এই হাসিনা সরকার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা অনায়াসে ‘সম্পদ’ নামের এই কয়লা ‘উন্মুক্ত পদ্ধতিতে’ উত্তোলনের জন্য ঘাঁইঘুঁই করে, কয়লার মতো কালো নীতি বানায়, জর্মনীর উন্মুক্ত কয়লা উত্তোলনের তুলনা হাজির করে/অছিলা দেয় (“ওপেন পিট মাইনিং” এশিয়া এনার্জির পছন্দের পদ্ধতি। আর আন্দোলনকারীরা এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে, সম্পূর্ণ কয়লা তোলার বিরুদ্ধে নয়।)। অখচ, জনসংখ্যার ঘনত্ব ছাড়াও জিওলজিক্যাল এবং হাইড্রোলজিক্যাল বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যের দিক থেকে আমলে নিলে দেখা যায় উন্মুক্ত খনন বিষয়ে জার্মানির সাথে বাংলাদেশের কোন তুলনাই হতে পারে না। তবুও তারা ছিনালি হিড়িক তোলে। প্রপাগান্ডায় আমাদের মধ্যবিত্ত মনে-মননে ‘উন্নয়ন’র তিলকে তাল শুধাবে (আর এই সব প্রপাগান্ডা গ্রহনের মধ্যদিয়ে আমরা মধ্যবিত্ত প্রমান দেব আমাদের মতো শহুরে শিক্ষিত মানুষেরা উপনিবেশিক শিক্ষার, পঙ্গুত্ত্বের মধ্যদিয়ে সেই ব্রিটিশ দাসত্বের চিন্তা চেতনায় ফিরে যাচ্ছি।) আর দরিদ্র্য আধ-পেট খাওয়া মানুষকে ক্ষতি পূরণের/পূর্নবাসনের কিচ্ছা তুলে উদ্বাস্তু কোরে শুধুমাত্র শারীরিক ভাবে নয়, পর্যুদস্ত করবে রাজনৈতিক ও মতাদর্শগতভাবেও-। তাই আমাদের জনগণকে প্রস্তুত রাখতে হবে- মুনাফার লালসায় যে সাম্রাজ্যবাদীরা দেশ দখল করতে পারে, যাদের সাথে আছে মীরজাফরী মিথের দোস্তি, আর যারা ক্রসফারের তকমায় খতমের তালিকা বানায়, যারা মানুষ খুনের রাজনীতিতে সিদ্ধহস্ত অথচ নক্সালরাই খুনি এই প্রচার চালায় তার অতো সহজে পিছু হটে যাবে- এমন আত্মতুষ্টিতে থাকার কোনো কারণ নাই। আর যারা সম্পদ রক্ষা, জনজীবনের নিশ্চয়তার কর্তব্যকে হাস্যকর ‘যুদ্ধাপরাধির বিচার ভন্ডুল’ করার তত্ত্বের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র খুঁজে নুন হালালের চেষ্টা করে সেই এই নিকম হারামিদের জনগণ চিহ্নিয়ানয়ে ফেলে দেগে রেখেছে। অপর দিকে নাচন কোঁদন, নাটক চলছে সেই সব নুনখোর বুদ্ধিজীবির যারা চায়ের কাপে ঝড় তোলে আর বড় বড় লেখা লিখবে, ইন্টারভিয় ছাপাবে। দরকার- সময়মতো এদের চিহ্নিত করা ও সেই অপকর্মের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে রাখা।
সত্য হচ্ছে, বিদেশী বেনিয়াদের পছন্দনীয় সরকার, চামচারা নিশ্চয় বাঙলাদেশের মৌলিক কোন নীতিমালাই নির্ধারণ করে না। এটা ঠিকঠাক করে দেয় আমলাতান্ত্রিক চরিত্রধারী বিশ্ব সংস্থা গুলো। যেমন: বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ। যাদের অপার ক্ষমতাজারি দেশে দেশে গণতন্ত্রের রক্ষীবাহিনী হিসেবে, যাদের কোন দায়ের-দায়িত্বের বোঝা নেই, যাদের চক্ষু-মস্তিষ্ক-কর্ণ-হস্ত আমাদের কৃষি-শিল্প-শিক্ষা-পরিবেশ-সম্পদসহ তথাগত সুশীল/মধ্যবিত্তদের মগজ থেকে শুরু করে অর্থনীতি ও সমাজের উপর ‘একচেটিয়া পুজিঁ’র প্রকল্প নিয়ে খাঁড়া থাকে। তত্ত্বায়নে যাকে ‘সাম্রাজ্যবাদ’ বলা হয়। আর ফুলবাড়ি সংগ্রাম বাংলাদেশে নতুন করে সেই সাজ্যবাদী দাসত্ব নেমে আসার বিরুদ্ধে প্রথম সবল, রক্তাক্ত প্রতিবাদ। কৃষক-মজুরের তিবাদ।
যাপনের আড়ালে আবডালে মরারই যেখানে নিয়ম-নিয়তি, সেখানে ফুলবাড়ির মানুষের মৃত্যু টকটকে সাহসের লাল পতাকা উড়ায়। নাঙাভুখা মানুষগুলো সেই দিন মরবে যেনেও এসেছিল। সে দিন ফুলবাড়ী একা গোটা বাংলাদেশের হয়ে লড়েছে। ২৬ থেকে ৩০ আগস্ট, ২০০৬ ফুলবাড়ীর জনগণ যে ইতিহাস সৃষ্টি কলেছিলো, তা সত্যিই বিস্ময়কর। ২৭ আগস্ট ২০০৬ থেকে ফুলবাড়ীতে প্রশাসনযেন ভেঙে পড়েছিলো। জনতার রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ রাস্তায়। সারাক্ষণ চলছে মিছিল ও সভা। নারী-পুরুষ-তরুণ-মাঝ বয়সী এবং বাঙালী ও সাঁওতাল। প্রাণ খরচের (মৃত্যু) মধ্যদিয়ে বিজয়ের এ সঞ্জীবনী গুণ উপলদ্ধির ব্যাপার। কেবল মাঠ ফেরত কর্মীই জানে এর অদ্ভুত ক্ষমতা, মর্ম, শিহরণ!
খোয়াল করার বিষয়, শুধু কি বাঙলাদেশ’ই এশিয়া এনার্জি’র মত রক্তপিপাসু মুনাফালোভী বহুজাতিক কোম্পানির ক্রীড়নক হয়ে আছে? না, সারা পৃথিবীতেই চলছে খনি/ভূ-সম্পদ/ শিল্পায়নের নামে ভূমি-অধিগ্রহণের লুটেরাদের পূঁজির খেলা। বেশী দূর না- ‘হাতের কাছের হয়না খবর/ কি দেখতে যাও দিল্লি-লাহোর’ হলেও আমাদের সামনে উদাহরণ হিসেবে আছে ভারতের নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর, লালগড়। উন্নয়নমূলক কাজকর্ম বা শিল্পায়নরে জন্য কৃষিজমি অধিগ্রহন করতে উদত্য হওয়া সংসদীয় ধরার সুপার-ডুপার বামদের সিঙ্গুরের মতো বছরে পাঁচ ফসলি জমি তুলে, মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে সেখানে কারখানা/সেজ(ঝঊত)/ কেমিক্যাল হাব/ মোটরস কারখানাসহ নানা জাতের শিল্পায়নের দোহাই দিয়ে পাঁয়তারা করেছেন। অথচ, সিপিএম নাকি সাম্যবাদের গান গায়, আসলে কার্যত পুঁজির দাস। ধান্ধায় ডুব দিলে ঘিলু কি আর ঠিক থাকে? সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের নিরস্ত্র শোষিত জনতা তাই ঐ উন্নয়নের তত্ত্ব মেনে নেয়নি। অত্যাধুনিক রাইফেলের বাটের ঠেলা/ গুলি খেয়ে/ ধর্ষিত হয়েও দাব্বাড়েছে ‘ফিকে লাল বাহিনী’র গুন্ডাদের/পুলিশদের-। তারা কৃষিজমি অধিগ্রহন করতে চেয়েছে মূলত তথাকথিত ‘শিল্পায়ন’ এবং স্পেশ্যাল ইকোনোমিক জোন গড়ে তোলার জন্য যার প্রধান উদ্দেশ্য হল পুঁজিপতির শ্রমিকশ্রেণিকে ইচ্ছামতন শোষন করার উপযুক্ত বিশেষ সুবিধা এবং অধিকার সুনিশ্চিত করা- যে খায়েশ গুড়িয়ে দিয়েছে সিঙুর এবং নন্দীগ্রামের মানুষ। তবুও নীলনকশা থামে না। তবুও মৃত্যু না। মৃত্যু এখন অনেক সহজ। ‘অপারেশন নন্দীগ্রাম’, বা আজকের ‘অপারেশন গ্রিনহান্ট’- শুধু ক্রোধ, পাশবিকতা; শুধু ঘৃণা, তাল তাল ও জমাট বাঁধা- কালো, যতটা কালো হতে পারে জমাটবাঁধা রক্ত, মানুষের রক্ত, নক্সাশালী-মাওবাদী রক্ত খুবলে খাচ্ছে-।
সিংগুর থেকে নন্দিগ্রাম থেকে ফুলবাড়ি সবাই যেন একই লড়াইয়ের ধারায় মেতেছে।
অনেক বিপদ সংকূল পথ পাড়ি দিচ্ছেন পৃথিবী। পৃথিবীকে খাবলে খাচ্ছেন পূঁজি। সম্পদের/ শিল্পায়নের/ উন্নয়নের সংজ্ঞা ঠিক করে দিচ্ছেন অর্থনীতির দালালেরা। এই হচ্ছে ক্ষমতাবান সরকার গুলোর উন্নয়ন নীতি যা কার্যত করপোরেট পুজিবাদের উন্নয়ন নীতি- খুবলে খাও, ছিঁড়েখুঁড়ে নিঃশ্বেষ কর। যেখানে প্রকৃতিকে কেন্দ্রে রেখে মানুষ বাঁচানোর কোন নীতি নাই, ইচ্ছাও নাই। এইসব চালবাজী যাচ্ছে দেখে ঈষৎ বাঁকা, মুখটেপা, তেতো হাসি ও কাষ্ঠ হাসি এসে আঠালো হয় গাল ভর্তি থুতুতে। কিন্তু কোন মতেই হা হা নয়- এমন হাসি হাসতে পারি না৷ এই হাসি মেখে আমরা ট্রেনে-বাসে চড়ি, সিট নিয়ে মানুষের সঙ্গে ঝগড়া করি, বিকেলে বিষণ্ন হই, সকালে কোষ্ঠকাঠিন্ন্য সাফ ও রাতে সঙ্গম করি, শিশুকে আদর করি, বসকে হ্যা-হ্যা বলি৷ আর মাঝে মধ্যেই মধ্যবিত্ত ভাবালুতার খোশমেজাজে চিন্তার কারফিউতে আটকা পড়ি। আবার তাহা বুঝিয়া উঠিলে লজ্জায় গর্তে ঢুকি৷ আহা চমেৎকার— কিন্তু লড়াইয়ে থাকি না। উহা এড়াইয়া চলাই নাকি ভদ্দর লোকের কাম।  কান পাতুন, গর্জে উঠবার জন্য মানুষ ফুলবাড়ীতে কোরাসে গাইছে- ‘সিধু মাঝির কিরা কোম্পানিরে ঘিরা/ কানু মাঝির

#
কালাম আজাদ,
প্রকাশনা সম্পাদক,
বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন-
কক্সবাজার জেলা সংসদ

সদস্য তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি
কক্সবাজার জেলা শাখা।
হাতফোন -০১৮১৪৪৯৫৪৬৬
#