টপিকঃ আমাদের নৈতিকতা এবং ধর্ষণ
সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। আর তাই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষার জন্য মানুষকে যেমন নানা কাজে নানাভাবে নিজেকে প্রমাণ করতে হয় তেমনি দিতে হয় নানা সংযমের পরিচয়। আর এই সংযমের বৃত্ত ভেঙে একজন মানুষ যখন অযাচিত কোনো আচরণ করে, তখনই তার আচরণকে পশুর আচরণের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কেননা সেই আচরণটি মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় মোটেই। মানুষের পেটের ক্ষুধার পরই জৈবিক ক্ষুধার তীব্রতা বেশি। নর আর নারীকে এই তাড়না দিয়েই পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু অন্য সব চাহিদা মেটানোর প্রক্রিয়ার মতো বিশেষ এই চাহিদা মেটানোর জন্যও একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু মানুষের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে অনেক প্রক্রিয়াই যখন-তখন ভেঙে পড়ছে। পশুর মতো আচরণ করছে মানুষ।
আমেরিকার একটি পত্রিকা দুঃখ করেছে: ইন্ডিয়াতে মাত্র এক চতুর্থাংশের কিছু বেশি ধর্ষণ-অভিযুক্তের শাস্তি হয়।
কিন্তু ফেডারাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা এফ বি আই-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১১-র আমেরিকাতে ধর্ষণের সংখ্যা প্রায় ৮৪,০০০।
সে দেশে ধর্ষণ-অভিযুক্তের চব্বিশ শতাংশকে পুলিশ গ্রেফতারই করতে পারে না, সাজা দেওয়া তো তার পরের কথা।
আর ব্রিটেন? সে দেশের স্বরাষ্ট্র দফতরের ২০১০-২০১১-র তথ্য আর ব্রিটিশ ক্রাইম রিভিউ, দু’টি দলিলই বলছে, দেশে প্রতি বছর ৮০,০০০ মহিলা ধর্ষিত হন এবং যৌন হেনস্থার শিকার হন প্রায় চার লক্ষ মহিলা।
একটি হিসাব অনুযায়ী, ব্রিটেনে অভিযুক্ত ধর্ষকের মাত্র ৬.৫ শতাংশের শাস্তি হয়।
এ দেশে ২০১০-২০১১ সালে সর্বমোট ধর্ষণের অভিযোগ: ২২,১২৭।
৬ কোটির দেশ ইংল্যান্ড আর ৩১ কোটির দেশ আমেরিকায় তা যথাক্রমে ৮০ ও ৮৪ হাজার।
"ধর্ষণের রাজধানী দিল্লি" ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিকে এমন টাইটেল দিয়েছে খোদ ভারতেরই অন্যতম শীর্ষ দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া।আর ছড়ানোর পেছনেও কারণ আছে। ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন বছরে দেশটিতে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।১২০ কোটির ভারতে ধর্ষণের অভিযোগ বছরে ২২ হাজার।
আর বড় শহরের মধ্যে ধর্ষণের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে রাজধানী নয়াদিল্লি।
পরিসংখ্যান বলছে, পুলিশি নথি ও মিডিয়ার তথ্য অনুসারে ২০১০ সালে এখানে ৪০০-এর বেশি ধর্ষণ হয়েছে।২০১১ সালে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৫৬৮-তে।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০১২ সালে এই সংখ্যাও ছাড়িয়ে যাবে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা সারা ভারতে তোলপাড় ফেলে দেয়।
গত ১৬ ডিসেম্বরের একটি ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন ঠেকাতে ১৪৪ ধারা পর্যন্ত জারি করা হয়।
১৯৯৯ সালের কথা। ইউরোপীয় সভ্যতার পীঠস্থান ফ্রান্সে নিনা আর স্টেফানি নামের দুই নাবালিকা ছ’মাস ধরে প্রায় প্রতিদিন ধর্ষিত হয়। একদল তরুণ নিয়ম করে রোজ আসছে, এক জনের কাজ শেষ হওয়া অবধি অন্য জন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছে, তার পর অন্য জন। তিন সপ্তাহের বিচারে ****্দো জন অভিযুক্তের দশ জন বেকসুর খালাস, বাকি চার জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাজা হয় এক বছরের কারাবাস!
অ্যামেনস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক বছর আগের এক সমীক্ষা বলছে, তিরিশ শতাংশের বেশি ইংল্যান্ডবাসী মনে করে, ধর্ষণের আংশিক অথবা পূর্ণ দায় মেয়েদের দায়ী তার চটুল হাবভাব, তার পোশাক পরিচ্ছদ।
২০১১ সালের কিছু মানবাধিকার রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করলে পাওয়া যায়, নারীর জন্য সবথেকে বিপদজনক দেশগুলোর মধ্যে প্রথম পাঁচটি হচ্ছে (ক্রমানুসারে) -
১. আফগানিস্থান
২. কঙ্গো
৩. পাকিস্থান
৪. ভারত
৫. সোমালিয়া
কিন্তু আমি অবাক হলাম এখানে আমেরিকা ও ব্রিটেন এর নাম না দেখে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গত বছর ধর্ষণের একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে তারা জানাচ্ছে, গত বছরে ধর্ষণ ঘটেছে ৫০৮টি, গণধর্ষণ ১৫৭টি এবং ধর্ষণের পর হত্যা হয়েছে ১০৬টি। কাণ্ডজ্ঞান থেকেই বলা যায়, এগুলো বরফপাহাড়ের ভাসমান চূড়া, অপ্রকাশিত ঘটনা আরও অনেক বেশি।
এখন কথা হল যে হারে সারা বিশ্বে ধর্ষণ বেড়েই চলছে তাতে করে আমাদের নৈতিক মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন করাই যায়। আর এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে বাংলাদেশের অবস্থা কিছুদিন পর কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা আল্লাহ্তা’লা মালুম।
এ ক্ষেত্রে প্রথমেই যেটা দরকার সেটা হল পারিবারিক ভাবে নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা। বাবা-মা যদি তাদের সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই এই শিক্ষাগুলো দিতো তাহলে মনে হয়না আমাদের অবস্থা এতটা করুন হত।
ধর্মীয় শিক্ষা হচ্ছে আমি মনে করি সবচেয়ে বড় একটা শিক্ষা। আমাদের চারপাশে নারী-পুরুষ যেভাবে অবাধ মেলামেশা করছে এবং অশালীন ভাবে চলাফেরা করছে তাতে ধর্মীয় শিক্ষার অনেক অভাব লক্ষ করা যায়। এখানে একটা বিষয় না বললেই নয় তা হচ্ছে “হিজাব”। হিজাব মানে যে শুধুমাত্র নারীদের জন্য তা কিন্তু নয়। পুরুষ মানুষেরও হিজাব আছে।
পবিত্র কোরআন এর ২৪ নম্বর সূরা আন্-নূর এর ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক আগেই বলেছেন পুরুষের হিজাবের কথা। এর পর ৩১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে নারীর কথা।
ইসলামে ধর্ষণের শাস্তির ক্ষেত্রেও তা নির্ধারণ করা হয়েছে মৃত্যু দণ্ড। এই জন্যই সৌদি আরবে ধর্ষণের হার অন্যান্য সব দেশের তুলনায় কম।
তার পরেই যে বিষয় আসে তা হল সন্তানদের বন্ধু নির্বাচন এবং আশেপাশের পরিবেশ। এ ক্ষেত্রেও খুব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
সূত্র:
প্রথম আলো
আনন্দবাজার পত্রিক