টপিকঃ ভোর বেলায় পার্কে পার্কে ভ্রমণ, অতঃপর......
বিগত কয়েক বছর আমার দিন শুরু হয়, ভোরের আযান শুনতে শুনতে।
অপেক্ষা করতে থাকি কখন ভোর হবে।
এই সময় পাখিদের কিচির-মিচির আর টুইট টুইট শব্দ গুলো মনে হয় যেন বলতে থাকে ; “এসো সূর্য্যি-মামা, সকাল হবার সময় হয়েছে। নিজের আলো দিয়ে আলোকিত কর এই কালো-কলুষিত ধরণী”। ( এই লাইনটা স্কুলের কোন এক বাংলা পরীক্ষায় "কবি গুরুর বলেছেন" বলে লিখে দিয়ে আসছিলাম )
যাই হোক,
ভোরের সতেজ-মিষ্টি মন-ভুলানো মৃদু হাওয়া যখন শরীর ছুঁয়ে যায়, অদ্ভুত সেই ভালো লাগা। চোখ বন্ধ করে হারিয়ে যাওয়া যায় অনেক দূরে।
আজ আর বারান্দায় বসে থাকলাম না।
চাবি হাতে নিলাম, সেলফোন রেখে দিলাম বিছানার পাশে।
ভোরের আমেজ নষ্ট করতে ইচ্ছুক না আমি, এই সেলফোনের জন্যে। বাসার সবাই ঘুম, তাই আর কাউকে আর জাগালাম না। চিরকুটে লিখে গেলাম, 'পার্কে যাচ্ছি, ঘণ্টা-খানের মধ্যে চলে আসব'
বের হয়ে পড়লাম। আলো অনেকটাই ফুটে গেছে।
শীতের ভোরের মত লাগছিল। রাস্তা পার হতে হতে দেখি অনেকেই ভোরে জগিং করতে বের হয়েছে। অনেকের চেহারা চেনা-জানা কিন্তু নাম জানি না। এরা আমাদের আশেপাশেই থাকে। দূর থেকে অনেকেই আমাকে দেখেই চিন্তে পেরে মিষ্টি হাসি উপহার দিল। হাসির বিনিময় হাসি। ভালোই লাগল।
ধীরে ধীরে হাঁটতে-হাঁটতে, ভোরের ঠাণ্ডা আমেজটা গুলশান লেকের ধার দিয়ে উপভোগ করতে-করতে পৌঁছে গেলাম নিকেতন পার্কে। কত মানুষ। বেশির ভাগই বয়স্ক।
অনেক পরিচিত-অপরিচিত মুখ দেখলাম। যারা পরিচিত তারা সব সময় এখানে আসেন হাঁটতে। এই সময় তাদের দেখা না গেলে বুঝতে হবে তাদের কিছু একটা হয়েছে।
পরিচিত কয়েক জনের সাথে কিছুক্ষন কথা বললাম। খোঁজ খবর নিলাম। তাদের সবার এক কথা 'আস না কেন এইখানে এখন?' আমি খালি হাসি
তারপর জায়গা ছেড়ে ঘুরতে লাগলাম। পরে আপন মনেই বলতে লাগলাম, আসলেই তো কেন আসি নি? আগে তো সবসময় ভোরে হাঁটতে বের হতাম। ছাড়লাম কেন? মনে করতে পারলাম না কেন।
মানুষের আনা-গোনা বেড়ে যাচ্ছে। খেয়াল করলাম সূর্যের তেজ বেড়ে গেছে এরি মধ্যে। কেন জানি বসে থাকতে ভালো লাগছিল না। আবার হাঁটা শুরু করলাম। পার্কের গেইট দিয়ে বের হয়ে ভাবতে লাগলাম কোথায় যাওয়া যায়!
একবার বামে, একবার ডানে তাকালাম।
হাতের বামে হেঁটে সোজা গেলেই বড় ভাইয়ের বাসা, সাত-সকালে গেলে ভাবী আমাকে দেখে ঘাবড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। এমনিতে আমাকে ঘর থেকে ধাক্কা মেরেও বের করা যায় না, সেখানে সাত-সকালে তার ননদ হাজির!! ভাবী দুশ্চিন্তা আর ব্লাড-প্রেশার বাড়ায় লাভ নাই।
আবার আগের রাস্তায় হাঁটা দিলাম। নিজেকে নিজেই বলতে লাগলাম যেতে থাকি কত দূর যেতে পারি, সব সময় তো আর বের হওয়া হয় না।
আবার লেকের ধার দিয়ে হাঁটতে হাটঁতে মহাখালির রাস্তায় চলে আসলাম। মেইন রোডে উঠে গুলশান-১ এর দিকে হাটঁতে লাগলাম। হঠাৎ করেই যেন হাঁটার নেশায় ধরল আমাকে। সোজা কথা বাসায় এই মুহূর্তে ফেরার ইচ্ছা নাই।
রাস্তায় মানুষের ভীড় বাড়ছে, অল্প কিছু গাড়ি চলছে।
বড় বড় বাস গুলো আজ খালি। বাস গুলো দেখতে জানি ক্যামন ক্যামন লাগল মানে,
লোক জন ঠাসা-ঠাসি করা দেখেতে দেখেতে এই চোখ গুলো অভ্যস্থ, এই জন্য মনে হয় "ক্যামন ক্যামন" জানি লাগল। আজ বাস কাউন্টার গুলোতে অন্যদিনের মত তেমন ভীড় নেই, খালিই বলা চলে।
আশে-পাশের মানুষজন আর বিল্ডিং গুলো দেখতে দেখতে কতদূর আসলাম আগে টের পাইনি। ট্র্যাফিক সিগন্যাল পর্যন্ত এসে বুঝলাম আমি গুলশান-২ এর চত্বরের সামনে।
আরেক একটু সামনে আর একটা পার্কে। কাছাকাছি চলে এসেছি।
অবাকই হলাম ভার্সিটি যাবার সময় এক রাস্তা হেঁটে গেলেও তো আমার মনে হয় জান শেষ হয়ে যায়। আর এখন......
হাতের দিকে তাকালাম সময় দেখার জন্য, দেখি ঘড়ি নাই।
আমার মনে নাই যে আমি ঘড়ি পরি না মনে হয় অনেক বছর। তার উপর মনে পড়ল সেলফোনও ঘরে।
সময় দেখার উপায় নাই। আমার সময় জানা দরকার।
দেখলাম পাশে দাঁডিয়ে থাকা এক ভদ্রলোককে (অভদ্র ও হতে পারে , যাই হোক) তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কয়টা বাজে। বলল সেও নাকি ঘড়ি পরে না।
বললাম সেলফোন দেখেন! বলে সময় ভুল সেটাতে।
(খুব বলতে মনে চাইল, ফোনটাকের ঠাণ্ডা পানিতে ডুবায় রাখবেন।আর সময় দেখে কী হবে!!!
)
আন্দাজ করে নিলাম, খুব বেশি হলে মাত্র দেড় ঘন্টার মত গেছে। সিগন্যাল পার হলাম। গেলাম পার্ক পর্যন্ত। এই পার্কে এত আসছি অথচ আমি নাম জানি না।
এই পার্কের মজা হল প্রচুর গাছ-পালা।
এই ইট-কাঠের শহরে গাছ-পালা ঘেরা পার্ক দেখা মানে বিশাল ব্যাপার। আমার কাছে তো অন্তত তাই। আগামী ১৫-২০ বছরে এই ঢাকা শহরে গাছ নামক উদ্ভিদ থাকবে নাকি তা আমার সন্দেহ।
পাশেই নার্সারি। নানান রকম চারা গাছ। দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। ফুলের গন্ধে জায়গা টা মো-মো করছে।
এই পার্কের মাঝে ছোট একটা ব্রিজ এর মত আছে। এটার উপরে উঠলেই মনে হয় ইয়া-বড় ব্রিজে দাঁড়ায় আছি। কল্পনা করতে তো আর পয়সা লাগে না । তাই আরকি...
ভেতরের দিকে কিছু বসার জায়গা আছে। আমার এইখানে গাছ দেখতে দেখতে হাঁটতে ভালো লাগে। আর অনেক নিরিবিলি বলে বেশি ভাল লাগে। এখানে বেশির ভাগ সময় মহিলারা সকাল-সন্ধ্যায় হাঁটাহাটি করেতে আসেন। সকাল দিকে, বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে এখানেই আসেন। কাছেই অনেকগুলো স্কুল আছে। অনেক ভাবীদের সাথে এখানেই পরিচয়।
আজ যেহেতু ছুটির দিন। তেমন কেউকে দেখলাম না।
তবে কয়েকজন ভাবীদের পেলাম। উনাদের পিচ্চিগুলো আমার ভাতিজার সাথেই পরে, সেই সুবাদে তাদের আমি চিনি। অনেক দিন পর এইপার্কে আমাকে দেখে তারা খুব অবাক। আজ অবাক দিবস। । ডাক দিলেন তারা, আমিও গেলাম। সেই খোঁজ খবর আদান-প্রদান করলাম। উনাদের জগিং শেষ আগেই। এখন সবাই গল্প করছেন।
আজ দেখলাম ভাবীরা তাদের বিচ্ছু পাটিদের নিয়ে আসছেন। ওরাই সাত-সকালে সারা পার্ক লাফা-লাফি, চিল্লা-চিল্লি করে বেড়াছে । এই জিনিস তো আর রোজ হয়না তাদের। যা মনে হচ্ছে তাই করছে। আগামী দুইদিন ছুটি, পুরাই পার্টি মুড সবার।
তারা ভাবী সাথে অনেক দিন পর কথা বলে ভালো লাগল। উনি আমাদের সামনের এপার্টমেন্টে থাকেন। কিন্তু দেখা সাক্ষাত তেমন হয় না। পিচ্চি গুলো নিচে খেলতে নামলে আমি দেখি। উনার পিচ্চি মেয়ে আমাকে জোড়ায় ধরে বলে, “আন্টি, আম্মুকে বলনা একটা আইসক্রিম কিনে দিতে”
এই রে!!! আমি গেসি এইবার!!!!
এই পিচ্চির যতদূর জানি ঠাণ্ডার সমস্যা আছে। আমি বললাম সকালে আইসক্রিম খাওয়া ঠিক না। কথাটা বলতে আমার নিজের অনেক কষ্ট হচ্ছিল। কারন আমি নিজে এইটার পাগল।
পিচ্চি গাল ফুলায় ফেলল । বুঝতে পারছি মেজাজ বিগড়ে গেছে। পিচ্চি গুলো আবদারের একটা অদ্ভুত ধরন আছে, যার কারনে তাদের না করাটা একটু মুশকিল বটে।
পিচ্চি কথার মার-প্যাচে আমি পটে গেছি। ভাবীও বুঝল আজ আমার মাফ নাই। টাকা হাতে দিয়ে বলল কি্নে আনো। পিচ্চিতো ওইখানেই মনে হয় দুই-তিনটা ডিগ-বাজি দিল খুশির চোটে।
এমনে।
পিচ্চির হাত ধরে কথা বলতে বলতে পার্কের বাইরে আসলাম যদি কোন আইসক্রিম ওয়ালাকে পাওয়া যায়। পেলাম না। সায়মার মন খারাপ হয়ে গেল। বললাম আর একটু সামনে দেখি। একটু সামনে যেতেই পেয়ে গেলাম আইস ক্রিম।
দুটা ইগলুর কাপ কিনলাম, ওর হাতে দিতেই সে ছুটে গেল পার্কের ভেতরে। আমিও টাকা বুঝায় দিয়ে ভেরতে গেলাম।
'তারা' ভাবীকে ভাংতি টাকা ফেরত দিতে দিতে বললাম ফোন থাকলে একটু দিন বাসায় কল দিব। ভাবী দিল ফোন।
কল করলাম আম্মুকে। আম্মা, যেই টের পেল আমি, রামধমক মারা শুরু ।
আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে;আম্মুর ধমকাধমকি থামার পর আমিও বললাম "আমি বাসার ত্রি-সীমায় নাই। ধানমণ্ডিতে এখন । কল করবা না এই নাম্বারে
। এটা বাইরের নাম্বার। ফিরতে দেরী হবে।" ব্যাস দিলাম লাইন কেটে। ফুরফুরা মেজাজের বারটা নিজেই বাজাইলাম পন্ডিতি করে কলটা দিতে গিয়ে
যাই হোক, ভাবীকে ফোন ফেরত দিতে দিতে বললাম পিচ্চিটাকে দেখে আসি তারপর বাসায় যাব।
ভাবী হেসেই খুন। হাসতে পারেন বটে।
বলেন, "ব্যপার না। না বলে আসছ মনে হয় এই জন্য চিন্তা করছেন তোমার মা।"
আমি শুকনা একটা হাসি দিয়ে বললাম, "বাসার কাছেই আসছি ভাবী। খুব বেশি হলে ১৫ মিনিটের রাস্তার দূরুত্বে, রিক্সায় গেলে আরও কম। এই কাজটা ভাইয়া যখন করত তাকে কোনদিন বকে নাই, যত নিয়ম সব আমাদের জন্য। মেয়ে এই জন্য। আর কতদিন!!!! জবাব দিতে হবে?"
ভাবী আর কিছু বলেন না চোখের ইশারায় সান্তনা দিলেন।
কিছু দূর যেতেই সায়মাকে দেখলাম। আমি এতক্ষনে বুঝলাম সে আইসক্রিমের জন্য কেন এত তেলমাখাছিল আমাকে
। আমাকে পেয়ে পুরা সুযোগটা কাজে লাগালো।
তার সাথে আরেক পিচ্চি ছিল, রায়হান প্রায় সায়মার বয়সী। সোমা ভাবীর ছেলে। উনি আমাদের সামনের এপার্টমেন্টে থাকেন। সায়মাদের পাশের বাসা।
আগেও দেখছি রায়হান আর সায়মা; ফেভিকলের মত এক সাথে চিপকায় থাকতে। আর সুযোগ পেলেই রায়হান সায়মার সাথে ঝগড়া করত। সেই ঝগড়া মারামারি পর্যন্ত যেত অনেক সময়। কিন্তু কথা বলা বন্ধ থাকবে না।
আবার কিভাবে কিভাবে জানি ভাব হয়ে যেত।
একটা গাছের আড়ালে দূর থেকে দাঁড়ায় দাঁড়ায় ওদের কান্ড দেখতে লাগলাম। এক-এক জনের চেহারা ভঙ্গি গুলো না দেখলে বুঝানো সম্ভব না ব্যপারটা কতটা উপভোগ করার মত।
যা বুঝলাম রায়হানের কোন কারনে আবার রাগ উঠছে সায়মার উপর। আর সায়মা চেষ্টা করছে রায়হানকে মানানোর।
ঘটনার প্রেক্ষাপটঃ
রায়হান একটা বেঞ্চ এর উপর বসা। একটু দূরে হলেও কথা ভালোই শোনা যাচ্ছি; সায়মা পাশে থেকে আইস-ক্রিম সাধছে। আর বলছে;
সায়মাঃ নেস না তোর আইস ক্রিম। গলে যাচ্ছে তো!!!
রায়হানঃ তোর আইস ক্রিম তুই খা!
সায়মাঃ (তার নাকের সামনে কাপ নাড়াতে নাড়াতে বলছে) না খেলে আমি আন্টিকে (আমাকে) দিয়ে দিব কিন্তু!!!!
রায়হানঃ (আর আড়চোখে আইসক্রিম এর কাপের দিকে তাকায় বলে) যাহ্! দে গিয়া! খাব না। মারামারি করবা আবার আইস ক্রিম দিবা!!!!
সায়মাঃ আচ্ছা আর মারব না, তুইও আর মারবি না। তুই চিমটি না দিলে তোকে আমি মারতাম না।
রায়হানঃ আমি তো...!!!! হুহ!!!! (রাগ দেখায় মুখ ফিরায় নিল)
ওদের আরও কিছুক্ষন মজার মজার কথার তর্কাতর্কী চলল।
তারপর হটাৎ দুইজনই চুপ । এরা চুপ মানে এদের মাথায় কিছু একটা চলতেছে। আর সায়মা চুপ মানে,
ঝড়ের আগে বিপদ সঙ্কেত।
এক পর্যায় সায়মার খুব রাগ উঠে গেল, ওর চোখ ছলছল করছে। আমি তার চেহারা ভঙ্গি দেখে বুঝলাম।
আইস-ক্রিমের কপালের আজ দুঃখ আছে । সে বারবার কাপের দিকে তাকাছিল।
আর এইদিকে রায়হানের মেজাজ প্রায়ই ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। সে আইসক্রিম নেবে। এটাও বুঝে গেছি। কারন সেও বারবার তাকাছে ওই দিকে।
বিধি-বাম-ডান সবমিশে একাকার; রায়হান আইস ক্রিমের কাপে হাত বাড়ালো, কিন্তু নেবার আগেই সায়মা ছোঁ মেরে আইসক্রিমের কাপ নিয়ে নিল, কাপের কভার খুলেই আর দেরী করেনি, সাথে সাথে রায়হানের মাথায় আইসক্রিম সব ঢেলে দিল । কাপ নিয়ে রায়হানের হাতে ধরায় দিল
। আর দৌড় দিয়ে চলে গেল একটা গাছের আড়ালে। (আমার কাছে সব সিনেমার ট্রায়াল ভার্সন এর মত লাগছিল
)
আমি খেয়াল করলাম সায়মার গাল বেয়ে টপটপ পানি পড়তেছে। ব্যাস এইবার শুরু হইসে আসল কান্না
রায়হানকে দেখলাম ভেবাচেকা খেয়ে গেল। মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিল। এত দ্রুত ঘটনা ঘটে গেল যে সেও মনের হয় বুঝতে পারছিল কি করবে (পিচ্চি গুলো কাঁদলে অনেক কিউট লাগে, মায়াও লাগে
)
রায়হান কি জানি কিছুক্ষন ভাবল। পরে বেঞ্চ এর উপর রাখা আর একটা কাপ নিয়ে সায়মার কাছে গেল। সায়মা ওকে কাছে যেতে দেখেই বলে, “এই কাছে আসবি তো মাইর দিব”।
রায়হান ওইখানে দাঁড়ায় ওকে অনেকবার স্যরি বলে। তাতে খুব একটা লাভ হৈয়ছে বলে আমার মনে হয় না শেষ-এ বলল, “তুই কান্তে পারস!!! আমি তো এটা আগে জানতাম না। কান্নাকাটি কবে শিখলি!”
সায়মা কান্না জড়ান চোখেই রাগরাগ ভাবে রায়হানের দিকে তাকালো। (আমার দেখা বাচ্চাদের শ্রেষ্ঠ ভঙ্গি )
পরে রায়হান বলে, "হইসে আর কাঁদিস না... তোর নাক কালো হয়ে গেছে কান্তে কান্তে" ( আমি বুঝলাম না নাক লাল হতে পারে কালো!!!!!:/ )
বলা মাত্রই সায়মা নাকে হাত দিল। তারপর হটাৎ ফিক করে হেসে দিল।
রায়হান পরে ওই একটা কাপ আগায় দিয়ে বলল “নে তোর আইসক্রিম। আমারটা তো আমার মাথা খেল। শেয়ার করবি এখন?!”
ভাব হয়ে গেছে। ঝগড়া শেষ।
আমার দিকের মুখ করে ওরা ছিল বলে পুরো ব্যাপারটা উপভোগ করছি।
ওদের আইসক্রিম শেষ হওয়া পর্যন্ত আমি আড়ালেই ছিলাম। খুব বেশি দূরে ছিলাম না। আমি আসতে আসতে ওদের কাছাকাছি গেলাম। আমি আর বলি নাই এতক্ষন যা হইসে সব দেখেছি।
রায়হানকে জিজ্ঞাসা করলাম, 'কি রে, এইঅবস্থা কেন? আইস ক্রিম কি মনস্টার হয়ে হামলা করসে?'
সাথে সাথে উত্তর, “না আন্টি ওই কিছু ছেলেরা খেলতে খেলতে ধাক্কা দিসে, তো মাথায় লেগে গেসে” , বলেই রায়হান সায়মার দিকে আড়-চোখে ইশারা করছে; চোখ টিপে আর মাথা নেড়ে; যাতে সে কিছু না বলে।
আমার এত হাসি পাচ্ছিল, কষ্ট করে সামাল দিলাম
পরে ওদের কে নিয়ে গেলাম ওদের মা-দের কাছে। সোমা ভাবী তো অবাক ছেলে এই অবস্থা দেখে। রায়হান আমাকে যা বলল তাই তার মাকেও বলল।
আমিও তার কথার সুর মিলালাম।
বন্ধুত্বের একটা দাম আছে না!!!! সায়মা একদম চুপচাপ। কোনায় দাঁড়ায় আসে যেন কিচ্ছু জানে না।
পরে কী আর। আমার আজকের মত পার্কে ভ্রমণ শেষ। তাদের বিদায় জানায় আমি আমার বাসার দিকে রওয়ানা হলাম।
সূর্যের কড়কড়া তেজের ভেতরে সারা রাস্তা এই পিচ্চি গুলোর কথা ভাবছিলাম আর আপন মনে হাসছিলাম।
ছোটবেলার কতনা মজার মজার মুহূর্ত আছে আমাদের সবার। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সব কেমন জানি ফিকে হয়ে যায়......
স্মৃতি গুলো থেকে থেকে অনেক নাড়া দেয়।
(১৭/০৩/২০১৩)