টপিকঃ জৈবিক ভিন্নতার বাইরেও নর-নারী ভিন্নতা কতটুকু এবং কেন?
১।
ফ্রিকোনমিক্স নামক একটা বইয়ের কিছু অংশ পড়ার পর এদের ওয়েবসাইটে বেশ কয়েকটা পডকাস্ট শুনেছিলাম। তার মধ্যে উইমেন আর নট মেন শিরোনামের পডকাস্টে মহিলা এবং পুরুষদের সম্পর্কে কিছু তথ্য এবং এক্সপেরিমেন্ট তুলে ধরা হয়েছিলো যা বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছিল। এই লেখায় সেই পডকাস্ট থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরছি। এখানে প্রচুর তথ্য ও উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে যার নির্ভরযোগ্য উৎস উল্লেখ করা নাই কিংবা ওগুলো শুধুমাত্র আমেরিকানদের ডেটা থেকে অনুসিদ্ধান্ত আকারে এসেছে। তারপরেও এটাতে বেশ কিছু ব্যাপার আছে যা অনেক ব্যাপারেই নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবতে বাধ্য করে।
কিঞ্চিত দীর্ঘ লেখাটি পাঠকের সুবিধার্থে নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করা হল।
২।
আমেরিকার ৫৭% কলেজ পড়ুয়া হল ছাত্রী, অর্থাৎ ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের কলেজে পড়ার হার বেশি। গত জানুয়ারী থেকে সেনাবাহিনীতেও সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধে নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে। আমেরিকায় নারী ও পুরুষের গড় আয়ের ব্যবধানও কমে আসছে। নিম্ন ও উচ্চ সংসদের (সিনেট ও হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ) উভয় জায়গাতেই ২০%এর বেশি সিট মহিলা সদস্যদের। গত ৫বারের মধ্যে ৩বারই আমেরিকার সেক্টেটারী অব স্টেটের দায়িত্ব পালন করেছেন কোন নারী (বর্তমানে, কন্ডোলিৎসা রাইস)। কাজেই লিঙ্গের উপরে কারো কাজের গুনগত মান নির্ভর করে না এটা এখন প্রতিষ্ঠিতই বলা চলে। নারী-পুরুষের সম অধিকারের ব্যাপারটা খুব দরকারী হলেও বর্তমান সমাজে অনেক অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে নারী এবং পুরুষের মধ্য আকাশ পাতাল তফাৎ বিদ্যমান।
৩।
প্যাটেন্ট ক্লেইম বা রেজিস্টার করার দিকে দেখা যায় নারীরা অনেক পিছিয়ে - মাত্র ৭.৫%। এটার কারন হতে পারে কাজের ধরণ -- ডিজাইন টাইপের কাজে নারীর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। আবার দেখুন বজ্রপাতে আহত হওয়ার সম্ভাবনাও নারীদের কম। আমেরিকায় ৮০% থেকে ৮৫% বজ্রপাতের ঘটনা পুরুষদের উপর ঘটে -- অন্ততপক্ষে রেকর্ড তাই বলে। তবে এটারও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দাঁড় করানো হয়েছে - নারীদের চেয়ে পুরুষদের আউটডোর বা বাইরের কাজ বেশি, এছাড়া পুরুষগুলো দুষ্টু প্রকৃতিরও বটে: বজ্রপাতে সম্ভাবনা থাকলেও পুরুষেরা ভেতরে যেতে চায় না। আমেরিকায় নারীদের চেয়ে পুরুষদের পানিতে ডুবে মরার হারও প্রায় চারগুন বেশি! মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা যে পানিতে বেশি সময় কাটায় তা-ই নয়, পুরুষরা তাদের সাঁতারের ক্ষমতা সম্পর্কে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে ভোগে --- যা এই ধরণের ঘটনার কারণ হতে পারে। এছাড়া পুরুষদের অ্যালকোহলিক হওয়ার সম্ভাবনা/চান্স মেয়েদের দ্বিগুন, কিন্তু নেশাগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা মেয়েদের তুলনায় অর্ধেক। এছাড়া বিবাহ বিচ্ছেদের দুই তৃতীয়াংশই মহিলাদের আবেদনের - অর্থাৎ সম্পর্ক খারাপ হলে সেটা মহিলারাই শেষ করে দিতে বেশি আগ্রহী হয়।
৪।
ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সোশাল মিডিয়াতে নারীর সংখ্যা ও অংশগ্রহণ পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি। এমনকি অনলাইন গেইমেও নারীদের অংশগ্রহণ পুরুষদের তুলনায় বেশি -- এটা নিশ্চয়ই অনেককে অবাক করার মত তথ্য। কিন্তু অনলাইনে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নারীদের অংশগ্রহণ অনেক কম। বিশ্বের বৃহত্তম অনলাইন বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়াতে প্রতি ৬ জনে মাত্র একজন নারী সম্পাদক (২০১১ সালের তথ্য)। এমনকি অবদানকারীদের দিক থেকেও নারীরা আরও পিছিয়ে (১৬% বনাম ৯%)। এমনকি দেখা গিয়েছে যে মহিলাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়েও (প্রেগনেন্সি, মিসক্যারেজ) নারীর চেয়ে পুরুষ অবদানকারীদের অংশগ্রহণ বেশি। উইকিপিডিয়াতে নারীর উপস্থিতি এ্যাত কম থাকাটা বেশ আশ্চর্যজনকই বটে যেখানে অনলাইনের আর সবক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহন সমান কিংবা বেশি।
এটার একটা কারণ হিসেবে কেউ কেউ বলেন যে মহিলাদের ঘরের কাজ বেশি করতে হয় বলে লেখার মত অবসর কম -- এটা হয়তো পরিসংখ্যানগতভাবেও সঠিক, আমেরিকায় পুরুষরা দৈনিক গড়ে ৪০ মিনিট অবসর পায়, যা মহিলাদের তুলনায় বেশি। কিন্তু সাইকোলজিস্টদের মতামত হল, এটার কারণ নর ও নারীর মানসিক গড়ন। নারীরা সাধারণত কনফ্লিক্ট হতে পারে এমন বিষয় পুরুষদের তুলনায় এড়িয়ে চলতে বেশি পছন্দ করেন। এখানেই উইকিপিডিয়ার মূল সমস্যা -- এখানে কারো লেখা সম্পাদনা করতে হলে সেটা মুছে একটা সঠিক তথ্য দেয়া হয় এবং ভুল তথ্যদানকারীকে অবমাননাকর কথা বলা হয়ে থাকতে পারে। এরকম বিষয়ের মুখোমুখি হতে চায়না নারী। ফেসবুকে কিন্তু কারো তথ্য ঠিক ভুল ধরার ব্যাপারটা উইকিপিডিয়ার মত সিরিয়াস কিছু না। উইকিপিডিয়াতে সঠিকতম তথ্য তুলে ধরার জন্য একজন আরেকজনের কাজ মুছে ফেলে যা সবসময় একজনকে অন্যের পেছনে লেগে থাকার মত অবস্থা সৃষ্টি করে, যা ফেসবুক বা অন্য অনলাইন মিডিয়াগুলোর থেকে সম্পুর্ন আলাদা।
৫।
মানসিক ভিন্নতা কিংবা গ্যাঞ্জাম এড়িয়ে চলার প্রবণতা -- নারীদের উইকিপিডিয়া বিমূখী হওয়ার একটা ভাল ব্যাখ্যা তবে, এটাকে অন্যরকম দৃষ্টিকোন থেকেও কি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা যায় না? এমন কি হতে পারে না যে নারী আর পুরুষদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবে ভিন্নতা রয়েছে?
ছেলে আর মেয়েরা আচরণগত ভাবেই কিন্তু বেশ আলাদা। এক বাবা-মায়ের ২ ছেলে এবং ১ মেয়ে ছিল। একই রকম লিঙ্গ বৈষম্যহীন পরিবেশে মানুষ করার জন্য তাঁরা তিন সন্তানকেই ছোট বেলায় পুতুল আর গাড়ি (ট্রাক) খেলনা দিয়েছিলেন। মেয়েরা খুব খুশি, ট্রাকের উপরে পুতুল রেখে খেলতো তারা, ট্রাকগুলো হল পুতুল রাখার স্ট্যান্ড। ওদিকে ছেলেরাও কিন্তু এই খেলনাগুলোতে দারুন খুশি; এরা পুতুলগুলোকে দেয়ালে আছড়াতো, তারপর পুতুলগুলোকে ট্রাক চাপা দিত। এই যে তাদের ভিন্নতা এটার কতটুকু স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়ার ফলে এসেছে আর কতটুকু চারপাশের পরিবেশের প্রভাবে হয় সেটা জানার চেষ্টা করা হয়েছে বেশ কয়েকভাবেই। প্রথমেই পুরুষ আর নারীর বেতন বৈষম্যের বিষয়টা বিবেচনা করা যাক - পুরুষদের ১ ডলার বেতনের বিপরীতে মহিলারা একই কাজে গড়ে ৮২ সেন্ট পায়। কিন্তু কেন?
এই নিয়ে অনেক রকম গবেষণা হয়েছে। এর কিছু কিছু ফলাফল বলে যে, এর একটা কারণ বৈষম্যমূলক আচরণ তবে এটাও ঠিক যে নারী আর পুরুষের চিন্তাধারা এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে পছন্দ তালিকাটা ভিন্ন - সেটা সংসারের ব্যাপারেই হোক আর কর্মক্ষেত্রেই হোক। তবে অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও এটাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে -- সেটা হল, নারী আর পুরুষ বিভিন্ন রকম প্রণোদনা পাওয়ার আশায় একটা প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। প্রণোদনার প্রতি ভিন্ন আকর্ষণ বা দৃষ্টিভঙ্গির কারণেরই নারী পুরুষের সিদ্ধান্ত আলাদা হয়।
৬।
পুরুষ আর নারীগণ যে প্রতিযোগীতায় ভিন্ন রকম দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে এটা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণ করার জন্য দুজন অর্থশাস্ত্রবিদ মাঠ পর্যায়ে কিছু পরীক্ষার আয়োজন করেন। তারা এজন্য পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব মুক্ত অন্য দেশের একটা গ্রাম বেছে নেন -- এতে করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্থানীয় সংস্কৃতির প্রভাবটাও বের হয়ে আসবে। গবেষনার জন্য তাই ওনারা সম্পুর্ণ ভিন্ন দুটি জায়গা বেছে নেন। প্রথমটা হল আফ্রিকার তানজানিয়ার একটা গ্রাম। কিলিমানজারো পাহাড়ের কাছে একটা শহরে চলে যান এই গবেষক দল। সেখান থেকে দুটো মাসাই গ্রামে গবেষণা চালান। মাসাই'রা হল পশুপালনকারী গোষ্ঠি -- অর্থাৎ তাদের অর্থনৈতিক কাজ কারবার চলে পশু চরানো আর সেটার কারবার করে। এই সমাজে নারীরা ভীষনভাবে অবহেলিত - এবং প্রচন্ডরকম পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। এদের পুরুষতান্ত্রিকতাটা এমন পর্যায়ের যে, এখানে যদি কোন লোককে জিজ্ঞাসা করা হয় তার সন্তান কয়জন, সে শুধু তার ছেলে বাচ্চাদের সংখ্যাটাই বলবে। এখানে একজন নারীর মূল্য প্রায় ১০টা গরুর সমান, ফলে নারীরা হল ঘরের সম্পত্তির মত -- বউয়ের কাজ কর্ম পছন্দ না হলে স্বামী তাকে মারধোর করে, অত্যাচার করে, যা সামাজিক ভাবে গ্রহণযোগ্য আচরণ। ওখানকার একজন মহিলার মতে, পুরুষরা তাদেরকে গাধা'র সমতূল্য মনে করে।
প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব পরীক্ষা করার জন্য গবেষকগণ এখানে একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। এ বিষয়ে আমেরিকাতেও গবেষণা করা পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান তারা। তাই তাঁরা কম্পিউটারের বদলে কাগজে গোলকধাঁধা এঁকে এটা সমাধান করতে বলেন স্থানীয়দেরকে -- কিন্তু এখানে বিরাট সমস্যা তৈরী হল। প্রথম অংশগ্রহণকারী নারীই বলে বসলো -- আমার পক্ষে এটা করা বেশ অসম্ভব, কারণ এর আগে আমি কখনো কলমই ধরিনি। সুতরাং আগের অভিজ্ঞতায় ঠিক জুইত হইলো না, তাই নতুন করে প্রতিযোগিতা নকশা করতে হল তাদের। নিজেদের পরিচিত পরিবেশ থেকে ১০ হাজার মাইল দুরে কী করি কী করি ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখেন যে ওখানকার দোকানে টেনিস বল, ব্যাট এসবও পাওয়া যায়। ব্যাপারটা তাদের জন্য বেশ বিস্ময়কর হলেও তারা সেই টেনিস বল আর বালতি কিনলেন।
৭।
এবারের প্রতিযোগিতা হল, হাত নিচু অবস্থায় ১০ ফুট দুরের বালতির ভেতরে টেনিস বল ছুড়ে ফেলতে হবে (under arm throw)। এরকম ১০ বারে সে কয়টা পারে সেটা হল স্কোরলাইন। কিন্তু টুইস্ট হল, ঐ ভবনের আরেক দিকে আরেক জন অপরিচিত লোকও একই সময়ে একই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। বল ছোড়া শেষে প্রতিযোগীকে দুইটা অপশন দেয়া হয় -- ক) সরাসরি প্রতিটা স্কোরের জন্য ১ ডলার সমমানের পুরষ্কার, অথবা খ) অপরদিকের অজানা প্রতিযোগীর চেয়ে বেশি স্কোর করলে প্রতিটা স্কোরের জন্য ৩ ডলার সমমানের পুরষ্কার, নাহলে কিচ্ছু পাবে না। কাজেই অনিশ্চয়তার চ্যালেঞ্জওয়ালা পরের অপশন নিলে তাদের ইনকাম তিনগুন হতে পারে। এরকম একটা গরীব জায়গায় এ্যাত সহজেই টাকা কামানোর সুযোগ নিতে সারা গ্রামের লোকজনই ওখানে জড়ো হয়েছিলো। আর ফলাফল?
নারীদের তুলনায় দ্বিগুন পরিমান পুরুষ ২য় অপশনটি বেছে নিয়েছিল। এই ফলাফলটা আমেরিকার ফলাফলের মতই - যেখানে পুরুষগণ চ্যালেঞ্জিং অপশনটা বেশি পছন্দ করে। ৫০% মাসাই পুরুষ ২য় অপশনটা বেছে নিয়েছিলো। অর্থাৎ জিততে পারলে সে তিনগুন পাবে। ঐদিকে বেশিরভাগ নারী চ্যালেঞ্জ নিতে অনাগ্রহী হয়ে নিরাপদ অপশন বেছে নিয়েছিলো, ২য় অপশন নিয়েছিলো ২৬% নারী।
৮।
পরের পরীক্ষাটা করা হয়েছিলো সম্পুর্ন অন্যরকম সামাজিক ব্যবস্থার খাসিয়াদের নিয়ে। ময়মনসিংহ, সিলেটের ঠিক উত্তরে ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়াদের সামাজিক কাঠামো হল নারীতান্ত্রিক; যেখানে সর্বকনিষ্ঠ কন্যা পরিবারের সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। বিয়ের পর পুরুষগণ মহিলাদের বাসায় গিয়ে উঠে, বাচ্চাদের নামের শেষে মায়ের বংশের নাম যুক্ত হয়। কোথায় টাকা খরচ হবে, কিভাবে হবে সবই মহিলারা সিদ্ধান্ত নেয় -- কাজেই নারীদের অধিকার এখানে পুরুষদের সমান কিংবা বেশি। আরেকটা অবাক করা জিনিষ লক্ষ্য করেছিলো গবেষকগণ, যে এখানকার সমাজের সবাই খুবই মিশুক আর দয়ালু; খুবই নিরাপদ একটা বোধ আসে ওখানে থাকলে। এ্যাতটাই চমৎকার নিরাপদ পরিবেশ যে গবেষকগণ তাদের ৬০ হাজার ডলার একটা স্যূটকেসে ভাড়া ঘরের রাধুনীর জিম্মায় রেখে নিশ্চিন্তে বের হয়ে যেতেন।
এখানেও মাসাইদের মত একই পরীক্ষা করা হয়েছিলো। তানজানিয়া থেকে আনা বালতি আর বলগুলোই এখানে ব্যবহার করা হয়েছিলো! এখানকার সামাজিক কাঠামোর অবদানেই এখানকার নারীদের মানসিকতা ভিন্ন হওয়া উচিত। হয়েছেও তাই: খেলার ২য় চ্যালেঞ্জিং অপশন বেছে নিয়েছিলো ৫৪% নারী। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ৩৯%। চরম পুরুষতান্ত্রিক মাসাই পুরুষদের চেয়েও বেশি খাসিয়া নারী চ্যালেঞ্জ বেছে নিয়েছিলো!!
কাজেই এই পরীক্ষার ফলাফল থেকে বোঝা যায় যে জন্মের সময় যতটুকু জৈবিক পার্থক্যই থাকুক না কেন, পরিবেশের প্রভাবে নারী ও পুরুষের মানসিকতা গড়ে উঠে। এই ফলাফলটা এমনই যে, অতীতের অনেক বিবর্তনের তত্বের (কিংবা অন্যদিকে ধর্মীয়) ব্যাখ্যাকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারে।
৯।
উপরের আলোচনা প্রচলিত জনপ্রিয় মতবাদের বাইরেও নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে নিঃসন্দেহে। তবে পরিবেশ, পরিস্থিতির প্রভাবে যে মানুষের মানসিক গড়ন ভিন্ন হয় এটা হয়ত নতুন কোন তত্ব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকার সময় ভিন্ন ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা বন্ধু বান্ধবীদের বিভিন্ন ঘটনায় ভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যেত। বিয়ে শাদীর সময়ে ফ্যামিলি এবং এলাকা দেখে বিয়ে দেয়ার ব্যাপারটাও দেশে খুব ভালভাবেই প্রচলিত। মেজটা কেন অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা হয়, কিংবা পাকিরা কেন বেশি উগ্র স্বভাবের কিংবা কিছু লোক কেন তৃণভোজীদের মত আচরণ করে সেসবও পরিবেশ, সংস্কৃতি দিয়ে সহজেই ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু যেই জিনিষটা চোখের সামনে থাকা সত্বেও ঠিকভাবে দেখা যায়নি, সেটা হল এই সমাজের মধ্যেই একই ছাদের তলেও নারী ও পুরুষের মধ্য বিভাজনটা কত বেশি, আর এর জন্যও যে প্রায় একই রকম কারণ দায়ী। নারী পুরুষের ভিন্নতা সৃষ্টির জন্য এই সমাজ তথা আমরাই দায়ী, আর এই বৈষম্য দুর করার ক্ষমতাও তাহলে আমাদের মধ্যেই আছে।
১০।
সূত্র: http://www.freakonomics.com/radio/