টপিকঃ অনুভূতি (অনুগল্প)
আমার আসলে কোন অনুভূতি নেই। চোখ , কান, নাক, হৃদয়ের মত কোন ইন্দ্রিয়ও নেই যেটা দিয়ে অনুভব করবো। হয়তো আমার স্বল্পায়ুতে অনুভূতির কোন প্রয়োজন নেই বলেই আমার স্রষ্টা আমাকে অনুভূতি দেয়নি। অনুভূতি থাকলে নিশ্চই টের পেতাম গাঢ় অন্ধকার আকাশ থেকে আমাকে হাজার ফুট ওপর থেকে নিচে ফেলে দিলো ওরা। হৃদয়হীন নির্ভীক আমি ওপর থেকে মৃত্যুর দিকে আগাতে আগাতে চারপাশে শীষ কাটা ঠান্ডা বাতাস অনুভব করতে পারলাম না। সভ্যতার মতই আমারো পতনের গতি দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে। নিচে ঐযে আলো। ওখানে কি মানুষ থাকে? ওগুলো কি মানুষের বাড়ি? ওসব বাড়ির ভেতর কি মানুষ ঘুমিয়ে আছে? বাচ্চারা কি মাকে জড়িয়ে ধরে স্বপ্ন দেখছে কোন রূপকথার দেশের?
একেবারে নিচে চলে এসেছি আমি। এইতো শিশিরভেজা গাছের পাতাগুলি যেন ছুঁয়ে দিলো আমাকে। ঘ্রাণ নেবার ক্ষমতা থাকলে রাতের ফুলের তীব্র গন্ধও হয়তো পেতাম। এইতো পৌছে গেছি মাটিতে। অনন্তকাল পর যেন ধুলার সাথে মিলন ঘটলো আমার। মাটি যেন আমাকে আলিঙ্গন করে নিতে চায়।
বুমম! প্রচন্ড শব্দে থর থর করে করে উঠলো পৃথিবী। আলোর আঘাতে ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল অন্ধকারের দেয়াল। ভাঙা ইট-কাঠ, ছিন্নভিন্ন শরীর, গাছ আর সেইসাথে সব প্রাণীর সমবেত চিৎকারে যেন রাতেরো ঘুম ভেঙ্গে গেলো এক মুহূর্তে। তবে সব চিৎকার ম্লান করে গোঁ গোঁ করে শকুনের মত আকাশ চিরে উড়ে গেল যুদ্ধবিমান তার পরবর্তী লক্ষ্যে।
আমি সৌভাগ্যবান বটে । আমার অনুভূতি নেই। এসব চিৎকার , মৃত্যু কিছুই দেখতে হয়না। কিন্তু অনুভূতিওয়ালা মানুষরা কি এসব দেখেনা? ভয়, কান্না, প্রেম কিছুই কি তাদের খোলস ভেদ করে অনুভূতিকে ছুঁতে পারেনা?