টপিকঃ রিভিউ: ওয়ালটন জি১
ওয়ালটন সাম্প্রতিক সময়ে দেশের স্মার্টফোনের বাজারে সাড়া ফেলেছে তাদের স্বল্পমূল্যের কিছু এনড্রয়েড মোবাইল ফোন দিয়ে। অথচ বছরখানেক আগেও স্মার্টফোন বলতে আমরা বুঝতাম স্যামসাং, সনি, এইচটিসি বা নোকিয়ার সিম্বিয়ান ফোনগুলোকে। দেশীয় ব্রান্ডও যে কম যায় না তা প্রমাণ করে সিম্ফনী, পরবর্তীতে ওয়ালটন। আমি সুযোগ খুঁজছিলাম একটা সেট কিনবো, এনড্রয়েড স্মার্টফোন। অনেক কিছু যাচাই করে শেষ পর্যন্ত ওয়ালটন জি১ কিনলাম গত মাসে। মোবাইলটি কয়েক সপ্তাহ ব্যবহার করার পরে রিভিউ দিচ্ছি। এর পূর্বে মোবাইল ফোনের রিভিউ লেখা হয়নি। তাই কোন তথ্য বাদ পড়ে যাবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
প্রথমেই দেখে নিই ওয়াল্টন জি১ ফোনটির স্পেসিফিকেশন। স্ক্রীণশট দিয়ে দিলাম, দেখে নিন।
এই ফোনের ক্যামেরা কোয়ালিটি খুব ভাল না হলেও চলনসই। ফ্ল্যাশ আছে, ওটা ছাড়া রাতের বেলা ছবি তুললে নয়েজ থাকে, ওটা দিয়ে তুললেও খুব যে ভাল হয় বলা যাবে না। দিনের ছবি ভালোই দেখায়। একটা বিষয়ে খটকা লেগেছে, ওয়াল্টনের দাবী এই মডেলের ক্যামেরা ৫ মেগা পিক্সেল, অথচ দেখা যাচ্ছে ৮ মেগাপিক্সেল। অবশ্য এটায় আমার আপত্তি নাই। আমি ৮ ও ৫ মেগাপিক্সেলে ছবিও তুলেছি।
এই ফোন দিয়ে আমি বাসার ওয়াই-ফাই চালিয়েছি সমস্যা ছাড়াই। টেলিটকের ৩জি সিম দিয়ে নেট চালিয়েছিলাম কিছু সময়ের জন্য। অসুবিধা হয়নি। মনে রাখতে হবে প্রথম সিমের স্লটটি হলো ৩জি সিমের জন্য। ২জি সিম দুটোতেই লাগানো যাবে।
ব্যাটারি দেওয়া আছে ১৮০০ মিলি এম্পিয়ার আওয়ার। আমার মতো সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য তা যথেষ্ঠ। আমি প্রায় দেড় দিনের মতো চার্জ থাকতে দেখেছি যখন হালকা গেমিং, ব্রাউজিং চলতো তখন। ওয়াই-ফাই দরকার না হলে চালু রাখার মানে হয় না। ভিডিও চলে ভালোভাবে, আমি MX Player নামিয়েছি গুগল প্লে স্টোর হতে, যা দিয়ে ৭২০পি রেজুলেশানের HD কোয়ালিটির ভিডিও চালানো যায়। বাই ডিফল্ট দেয়া আছে BS Player, যা দিয়েও ভিডিও চলবে নির্বিঘ্নে। পিডিএফ পড়ার জন্য অ্যাডোব রিডার রয়েছে, জি১ এর বড় পর্দায় কষ্ট ছাড়াই পড়তে পেরেছি পিডিএফ ফাইল। দুই আঙুল দিয়ে জুম করার অপশান তো আছেই, কাজেই সমস্যা হবে না। কিংসফট অফিস দূর করেছে অফিস ফাইল পড়ার অসুবিধা। ওটাকে আবার ড্রপবক্সের সাথে যুক্তও করা যায়। আমার জন্য যা স্বস্তিজনক। ইন্টারনেটের কমিউনিটি সাইট ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবের জন্য রয়েছে দারুণ সব এপ্লিকেশন। যেগুলো ইনস্টল করা আছে সেগুলো দিয়েই আমার চলছে। ব্রাউজিং করার জন্য ডলফিন ইনস্টল করে নিয়েছি, অবশ্য ফায়ারফক্স, ক্রোম বা অপেরাও ইনস্টলের সুযোগ থাকছে।
গেমিং নিয়ে তেমন অসুবিধায় পড়িনি। আমি হার্ডকোর গেমার না, কিংবা ক্র্যাক করে গেম ইনস্টলের পক্ষেও না। তাই ফ্রী যেগুলো পেয়েছি সেগুলো চালিয়েছি। যেমন – ফ্রুট নিনজা, রেজিং থান্ডার, ডেথ মোটো, ডেথ রেসিং, শূট দ্য অ্যাপল ইত্যাদি। একবার ফ্রুট নিনজা চলার সময় গেম হ্যাং করেছিল, হয়তো জিপিইউর সীমাবদ্ধতার জন্য। পরে এপ্লিকেশন নিজেই ক্লোজ হয়ে যায়।
বাংলা সাপোর্ট বেশ ভাল। বাই ডিফল্ট বাংলা দেখা যায়, তবে রিদ্মিক কী-বোর্ড ইনস্টল করে নিলে বাংলা লেখাও সহজ হয়ে পড়ে। আমি মাঝে মাঝেই বাংলায় স্ট্যাটাস দেই বা টুইট করি ওয়াল্টন জি১ ব্যবহার করে।
ফোনের ৫১২ এমবি র্যাম মাঝে মাঝে বিরক্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। আমার পরামর্শ হলো যে এপ্লিকেশন ব্যবহার করবেন না তা ক্লোজ করে দেয়া উচিৎ। তাহলে র্যাম বাবা জীবন শান্তিতে কাজ করতে পারবে।
ফোনের সাউন্ড কোয়ালিটি ভাল, পূর্বে নোকিয়া-স্যামসাং-সনি এরিকসন ব্যবহারের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি ওয়াল্টনের সাউন্ড কোয়ালিটি পিছিয়ে নেই ঐসব জায়ান্টদের চেয়ে।
টাচ রেসপন্স বেশ ভাল। হয়তো আমি প্রথম এন্ড্রয়েড ব্যবহারকারী বলে কিছু ধরতে পারিনি।
প্রথম প্রথম এই ঢাউস সাইজের ফোন হাতে নিলে অস্বস্তি লাগতে পারে, পরে মানিয়ে নিতে কোন অসুবিধা হয়না। এবার আসুন দেখে নেই বেঞ্চমার্ক রেজাল্ট কি বলে।
ওয়াল্টন প্রায় সাড়ে বার হাজার টাকায় বিক্রি করছে এই সেট। এত কম টাকায় এত কিছু কোন ব্র্যান্ডের সেটে পাবেন না। স্যামসাং ডুয়াল সিমের গ্যালাক্সি গ্রান্ড বিক্রি করছে ত্রিশ হাজারেরও বেশি টাকায়। যদিও সেসব সেটের কোয়ালিটি অনেক ভাল, কিন্তু ফিচার অনেক ক্ষেত্রে ওয়াল্টনের চেয়ে কম। তবে কারো যদি চাইনিজ সেটের প্রতি এলার্জি থাকে তাহলে আরো বেশি দাম দিয়ে সনি বা স্যামসাং নিতে পারেন। ওয়াল্টনের সেট চাইনিজ হতে পারে কিন্তু দেশীয় পণ্য বলে ব্যবহার করে অন্যরকম গর্ব অনুভব করছি। সাথে টেলিটকের সিম চলছে, জিপি চালাচ্ছি পুরাতন বহুল ব্যবহৃত বলে।
সবশেষে বলতে পারি জীবনে প্রথমবার এন্ড্রয়েড ফোনের স্বাদের জন্য ওয়াল্টন বা সিম্ফনি মন্দ নয়। একবার যদি ওয়াল্টনের প্রতি আস্থা জন্মে যায়, তাহলে নোকিয়ার বাজার ওয়াল্টন দখল করতে সময় লাগবে না।