সেভারাস লিখেছেন:লে হালুয়া। লেগে গেলো তো 
আরে না সেইরকম কিছু না।
আমার একটা কাহিনী বলি; ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে চাচার বিল্ডিংএর ডিজাইনের দায়িত্ব সদ্য পাশ (বুয়েট, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ৯২ ব্যাচ) করা আমার উপর দিল। আমি খেটেখুটে ডিজাইন করে দেয়ার পর রাজমিস্ত্রি বলে এটা অনেক দূর্বল ডিজাইন - জীবনে নাকি এমন কিছু উনি দেখেননি (আমি ডিজাইন করার পর আরো দুইজনকে দিয়ে চেক করিয়েছিলাম)। চাচা কনফিউজড হয়ে স্থানীয় একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীকে দিয়ে সেটা কারেকশন করালেন (!!) ... ... উনি সিম্পলি আমার ডিজাইনে দেয়া রডের দিগুন রড দিলেন। চাচাও খুশ্। আমার কি? এতে স্ট্রাকচার অনেক বেশি স্ট্রং হবে নিঃসন্দেহে - এ্যাট দ্যা কস্ট অব আননেসেসারি এক্সপেনসেস।
(স্ট্রাকচারাল ডিজাইন মানে হল, ছাদে, বিমে কলামে কতগুলো কোন আকারের রড পড়বে কত স্পেসিংএ, বিম/কলামের সাইজ কত বাই হতে হবে, ছাদের ঢালাই কয় ইঞ্চি লাগবে -- কত স্ট্রেন্থের ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করতে হবে ইত্যাদি বিষয়। পাবলিক সাধারণত ডিজাইন বলতে আর্কিটেক্টের করা স্পেস প্লানিং কে বুঝে থাকে)
তবে ভয় একটাই থেকে গেল -- রডে ওভার ডিজাইন মানে হল ডিজাইনের ব্যালেন্সটা স্টিলের দিকে চলে গেল -- ফলে কখনো খুব সিরিয়াস ভূমিকম্পে যদি বিল্ডিং ভাঙ্গে তাহলে সেটা কোনরকম ওয়ার্নিং দিবে না। ফেইলিওর প্যাটার্নটা হবে হঠাৎ করে ভেঙ্গে পড়া। সাধারন ব্যালেন্স ডিজাইনে ফেইলিওর হয় মোমেন্ট ফেইলিওর -- অর্থাৎ রডগুলো ভাঙ্গবে না বরং ছিড়বে -- এতে ভবন ভেঙ্গে পড়ার আগে কিছুটা সময় পাওয়া যাবে, কারন রড প্রথমে ছিড়ার সময়ে লম্বা হবে তারপর ছিড়বে (টেকনিক্যাল টার্ম হল স্ট্রেইন হার্ডেনিং)। ওভার ডিজাইনের ফলে রড আর মোমেন্টে ফেইল করবে না, করবে শিয়ারে -- অর্থাৎ সময় নিয়ে ছেড়াছেড়ির ব্যাপার নাই (কারণ ওদিকে অনেক বেশি দেয়া আছে), একবারে খচ করে ভাঙ্গবে।
এখন পর্যন্ত আমার সেই ডিজাইনটা ঠিক ছিল বলেই জানি -- এছাড়া ওটা যেই মেথডে ডিজাইন করেছিলাম (WSD: ওয়র্কিং স্ট্রেস ডিজাইন পদ্ধতি বলে ওটাকে) ওটাতে এম্নিতেই একটু বেশিই ওভার ডিজাইন হয়, বর্তমান ডিজাইন পদ্ধতিতে (USD: আল্টিমেট স্ট্রেন্থ ডিজাইন মেথড) রড আরো কম দেয়া হয়। এ্যাত কনফিডেন্সের কারণ, আমার মেজরই ছিল স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং (সিভিল-এ পাঁচটা ধারা আছে: ১। স্ট্রাকচারাল, ২। জিওটেকনিক্যাল, ৩। এনভায়রনমেন্টাল, ৪। ট্রান্সপোর্টেশন, ৫। ওয়াটার রিসোর্স)। পরবর্তীতে মাস্টার্স এবং তদপরবর্তী সবকিছু এনভায়রনমেন্টে করেছি।
===
মনির ভাই যে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার নন - সেটা খোয়া আর পাথরের ব্যাপারে লেখা দেখেই বুঝেছি। খোয়া আর পাথরের কম্প্রেসিভ স্ট্রেন্থ অনেক আলাদা। ফলে একই স্ট্রেন্থের কংক্রিট বানাতে হলে ওগুলোর ব্যবহার তরিকা ভিন্ন হয়। এটা করার জন্য অনেকগুলো মিক্স ডিজাইন মেথড আছে (আমরা সাধারণত ACI মেথডে ডিজাইন করি)। আর পাইলিং-এর ব্যাপারটাও তাই। ম্যাট (বা, ড়্যাফ্ট) ফাউন্ডেশন দিলে সাধারণত পাইলিং লাগে না। তবে ৬ তলা আবাসিক ভবনে ম্যাট ফাউন্ডেশন সাধারণত দেয়া হয় না।
তবে স্ট্রাকচার বানানোর জন্য ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার প্রয়োজন নাই। ইঞ্জিনিয়ারগণ প্রকৃতি এবং অন্যদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানগুলোকেই তাদের চার বছরের কোর্সে শিখে --- তাই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানকে কখনই অবজ্ঞা করতে নাই। তাই মনির ভাইয়ের খরচ কমানোর তরিকা পূংখানুপুংখরূপে জানতে আমার আগ্রহের কমতি নাই। ঠিকমত বুঝে শিখে নিতে পারলে আমি আমার স্টুডেন্টদেরকেও সেটা শিখাতে পারতাম - এতে ওরা পাশ করে বেটার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবে।
আপনারা হয়তো জানেন যে ভাল প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের ফলে অপচয় কমিয়ে প্রজেক্টের খরচ অনেক কমানো সম্ভব। তাই সম্ভাবনা কোথায় কিভাবে লুকিয়ে আছে সেটা আগে থেকে জানা থাকার কথা না। আমি বুঝতে চেস্টা করছিলাম, ওনার সুবিধা কোন জায়গাটায় যেটাতে খরচ বাঁচলো - নিজে করলে যে ম্যাটেরিয়াল কোয়ালিটির ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি সেটা তো নিশ্চিত। আর আসলেই আমি কমপ্লিট ভবন বলতে যা বুঝাচ্ছি এখানে সেই একই কথা বুঝানো হচ্ছে কি না (তুলনীয় কি না)। স্ট্যান্ডার্ড এপার্টমেন্টে সুপারস্ট্রাকচার (বিম কলাম ছাদ ঢালাই সাথে ওয়াল) করতে যা খরচ, ফিনিশিংএ তার চেয়ে বেশি খরচ হয় সাধারণত।
===
কনস্ট্রাকশন সাইটের সেইফটির জন্য অনেকগুলো নিয়মকানুন মানতে হয় নির্মানকারীকে। সবচেয়ে কমন হল কর্মীদের মাথায় হেলমেট, পায়ে শক্ত বুট, হাতে গ্লভস ইত্যাদি, এছাড়া ইমার্জেন্সীর জন্য ফার্স্ট এইড, ফায়ার প্রটেশন; আশে পাশের জান-মাল ও পরিবেশের নিরাপত্তার জন্য আরও অনেকগুলো শক্ত নিয়ম মানতে হয় (আমাদের দেশে অনেক বড় কোম্পানি, বিশেষত রাস্তা বানানোর সময়, এখনও সবগুলো মানে না)। আর এইগুলো বেশ খরুচে ব্যাপার - কিন্তু ইন্সুরেন্সের মত কাজ করে। একজন নিজ উদ্যোগে কাজ করালে এইসব নিয়মকানুনের সাধারনত তোয়াক্কা করেন না -- এটা মূলত এই সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে। কিন্তু একটা প্রফেশনাল কোম্পানির এইসব ব্যাপারে অজ্ঞ থাকার উপায় নাই (- নাইলে আর প্রফেশনাল কিসের?!)। তাই এসব ক্ষেত্রে তাঁদের খরচ বেড়ে যায়। পার্সোনালি করলে এসবের অভাবের কারণে দূর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় --- বিল্ডিং বিলের মধ্যে কাইত হয়ে পড়ে যাওয়া, ম্যাচবাক্সের মত ভেঙ্গে পড়া, উপর থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যূ ইত্যাদি খবরগুলো মাঝে মাঝেই চোখে পড়বে।
তাই এরকম কারণেও খরচ কমে কি না সেটাও তদন্ত করে দেখা জরুরী।
এই প্রসঙ্গে গল্পটা এরকম: ডাক্তারী শেখার আগ পর্যন্ত ফোঁড়া কাটা খুবই সহজ ছিল।
খালি একটা ক্ষুর নাও আর ফ্যাচ করে কেটে ফেল। ডাক্তারের মত অত এন্টিসেপ্টিক, অতিরিক্ত সতর্কতা, এক্সরে ইত্যাদি করে আরো বেশি নিশ্চিত হওয়ার মত অনেক কিছুর আয়োজন করার দরকার তো নাই। -- নাপিতের পোচে খরচ বাঁচবে, কিন্তু সেটা পরামর্শযোগ্য কি না সেটাই বিবেচ্যে/বিশ্লেষ্য।