দ্যা ডেডলক লিখেছেন:ছোট কাছে শুনতাম সাত আসমানের একটা সোনা একটা হিরা দিয়া বানানো। চতুর্থ আসমানে একতা মসজিদ আছে।
খেয়াল করলে দেখবেন, আলোচিত ধর্মগুলোর প্রচারিত কসমোলজীগুলো রেভুলুশনারী নয়, বরং এভুলুশনারী।
প্রাচীন সুমেরীয়, মিশরীয় কসমোলজীর বেসিক স্ট্রাকচার ছিলো এটা:

মাঝখানে ফ্ল্যাট আর্থ বা সমতল ভূমি। ভূমিকে ঘিরে রেখেছে জলরাশি (ওদের ধারণা ছিলো পৃথিবী হলো মহাসাগরের মধ্যে একটি দ্বীপ)। আর মাথার ওপরে বলয়ের মত মহাকাশ - স্ফেরিকাল আকাশে সূর্য্য এবং অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র সাজিয়ে রাখা। আর আকাশের অপর প্রান্তে সৃষ্টিকর্তা/কর্তাগণের বাসস্থান। মোদ্দা কথা: ছোট্ট এ্যাকুরিয়ামে সারা জীবন কাটিয়ে দেয়া একটা গোল্ডফিশ যেভাবে তার "মহাবিশ্ব"কে দেখে, আমাদের পূর্বপুরুষরা অনেকটা তেমনই ভাবতেন।
পরবর্তীকালের সভ্যতা, ধর্ম বা মতবাদগুলোও এই বেসিক মডেলটাকে ঘাঁটায়নি - ওটাতে নিজেদের মত করে যোগ বিয়োগ করেছে। এভুল্যুশনারী পরিবর্তন এসেছে - তবে মহাবিশ্বের মূল স্ট্রাকচার মোটামুটি অপরিবর্তিতই ছিলো। যেমন: ইহূদীরা তাদের নরক এবং মানুষের অন্তিম শয়নের স্থান কল্পনা করেছিলো ভূমির নীচে। রোমান খৃস্টানরা ওটা গ্রহণ করে নেয়, সাথে আকাশের বিভিন্ন লেয়ার উদ্ভাবন করে - ৭ স্তর বিশিষ্ট মহাকাশ তারা কল্পনা করে, সূর্য্য ও অন্যান্য গ্রহ/নক্ষত্রগুলো পৃথিবীকে ঘিরে আবর্তন করছে এমন ধারণা করে। পরবর্তীতে ইসলামও ঐ মডেল গ্রহণ করে নেয় (কিছু নিজস্ব এনহ্যান্সমেন্ট তো অবশ্যই ছিল)। প্রচলিত মতবাদের র্যাডিকাল পরিবর্তন কোনো সমাজ/সভ্যতাই করতে পারে নি। সভ্যতার উন্মেষে পৃমিটিভ মানুষ যে কসমোলজিকাল মডেলটি খাড়া করেছিলো, এর পরে সহস্রাব্দ জুড়ে বিভিন্ন সভ্যতা এসেছে আর গিয়েছে, তবে ওই প্রাইমাল মডেলটি বাই-এ্যান্ড-লার্জ টিকে ছিলো...
... ৩০০ বছর আগ পর্যন্ত
৩/৪ শতাব্দী আগে কিছু মজার ব্যাপার ঘটতে আরম্ভ করে: বিজ্ঞানের আবির্ভাব হয়। এক্সপেরিমেন্টাল, অবজার্ভেশনাল এবং এম্পিরিকাল বিজ্ঞান এসে সব লন্ডভন্ড করে দেয় - মানুষের চিন্তাধারায় রেভুল্যুশনারী চেন্জ বা বিপ্লবী পরিবর্তন ঘটিয়ে দেয়। হাজার হাজার বছর ধরে লালিত পালিত কাল্পনিক মহাবিশ্বের ম্যাপ মাত্র কয়েক শতকের ব্যবধানে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেন কোপার্নিকাস, গ্যালিলেও, নিউটন প্রমুখ রেভুল্যুশনিস্টরা।
ভবিষ্যৎে এমন আরো কত বিপ্লব আমাদের জন্য ঘাপটি মেরে আছে কে জানে?
শুভ১৭১ লিখেছেন:২০০০ বছর পর হয়ত মানুষ আমাদের মহাকাশ মডেলের ছবি নিয়ে হাসবে
। যদিও আমরা ওগুলোকে যথেষ্ট সত্য ও বাস্তব মানছি।
একটা সম্ভাবনা থাকতে পারে, যেটা আইনষ্টাইন বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে দেখিয়েছিলেন, যে মহাকর্ষের প্রভাবে স্থান / আলোর গতিপথ বেঁকে যায়। হয়ত আমরা একটা নির্দিষ্ট গতিবেগ (আলোর বেগের কাছাকাছি বা বেশি.....
) অর্জন করে অন্য কোন ফ্রেম থেকে মহাবিশ্ব দেখলে নক্ষত্র গুলোর দূরত্ব ও বিন্যাস অন্যরকম মনে হতে পারে।
সহমত।
তবে কিছু পার্থক্যও আছে। প্রাচীন কসমোলজীকাল মডেলগুলো "আর্ম-চেয়ার কসমোলজিস্টদের" প্রসব। ঐ আমলের মানুষের জ্ঞান, প্রযুক্তি লেভেল নিয়ে কিছু বলা বাহূল্য। তবুও, ওগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছিলো না, কোনো অবজার্ভেশন বা পরিমাপের মাধ্যমে ওগুলোতে উপনীত হয়নি। তৎকালীন সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার, মীথ ইত্যাদি ফুটে উঠেছে তাদের মডেলগুলোতে। উদাহরণস্বরূপ: গৃকরা এ্যাটমের ধারণা দিয়ে যায়, ভারতীয়রাও এ্যাটমিজম সম্পর্কে ধারণা ছিলো। কিন্তু কেউই তা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন নি, পুরোটাই ছিলো অনুমান আর ফিলোসফী। হাজার হাজার বছর পরে ১৮ - ১৯ শতাব্দীতে ল্যাভয়সিঁয়, ডালটন, এ্যাভোগ্যাড্রো, রাদারফোর্ড এবং বোহর প্রমুখ এসে এ্যাটমিস্টিক ইউনিভার্স ল্যাবরেটরীতে প্রমাণ করে দেখান।
তবে আমরা ওখানেই থেমে নেই। ম্যাটার ভেংগে এ্যাটম পেয়েছি। এ্যাটম ভেংগে সাব-এ্যাটমিক পার্টিকল পেয়েছি। এলিমেন্টারী পার্টিকলগুলোও ভেংগে যাচ্ছি। এককালে রন্জন রশ্মি দিয়ে যে কাজ করতাম, এখন লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারের টৃলিয়ন ডলার দামী পার্টিকল স্ম্যাশার ব্যবহার করি।
বর্তমানের সিস্টেম ভিন্ন নি:সন্দেহে। আজ আমাদের প্রফেট কিংবা পৃস্ট নেই। তার বদলে আছেন হিরো-রা। এখন আর প্রভাবশালীদের নিছক মৌখিক দাবীতে কাজ হয় না। যতবড় সফল গবেষক হোক না কেন, তত্ব উপস্থাপন করলে তার প্রমাণও দিতে হবে। প্রমাণ নাই তো হাইপোথিসিসের গন্তব্য ডাস্টবীন। নিউটন, আইনস্টাইনও অনেক ভুল করে গিয়েছেন, অনেক হাইপোথিসিস ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আর বিনাবাক্যব্যয়ে এদের কথা মেনে নেই না। এরা প্রফেট নন, তাঁরা আমাদের হিরো।
হাজার বছর অপেক্ষা করতে হবে না অবশ্য। ২৩১২ সালের আমাদের ৫/৬ প্রজন্ম পরবর্তী বংশধরেরাই আমাদেরকে ব্যাকওয়ার্ডস, আনডেভেলপড বলে গণ্য করবে। 
তবে সামনে অনেক এক্সাইটিং জিনিস অপেক্ষা করছে। আমাদের কসমোলজীও আরে রেভুলু্শনের অপেক্ষায় দিন গুণছে। আমরা ১৩.৭ বিলিয়ন বছর পুরণো বিগব্যাং-এর সন্ধান লাভ করেছি, পৃ-বিগব্যাং ইভেন্ট নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছি। এই ইউনিভার্স বাদে আরো ইনফিনিট মাল্টিভার্সেরও সন্ধান পেয়েছি।
তবে.... এতদিন পর্যন্ত যা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম তা হলো "দ্যা ফোর পার্সেন্ট ইউনিভার্স"। এই ৪% দৃশ্যমান, এক্সপেরিমেন্টে সাড়া দেয়া মহাবিশ্ব নিয়ে গবেষণা করে আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। তবে, বাকী ৯৬% ইনভিজিবল, নন-রিয়েকটিভ ইউনিভার্স নিয়ে আমরা আক্ষরিক অর্থেই অন্ধকারে। ডার্ক এনার্জী, ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক ফ্লো - আমরা এমনকি কল্পনা পর্যন্ত করতে পারছি না এই ডার্ক হোয়াটেভারগুলো কেমন হতে পারে 
সহমত। বর্তমানে আমরা যেটাকে স্ট্যান্ডার্ড মডেল বলে ধরে নিচ্ছি, ভবিষ্যৎে হয়তো তা আপ-সাইড ডাউন হয়ে যেতে পারে। তা হোক, মানব সভ্যতা রেভুলুশন দিয়েই লীপফ্রগ করে, এভুলুশন তেমন কাজের না। 
শুভ১৭১ লিখেছেন:মহাবিশ্বের ছবি তোলার টেকনোলজীও পাল্টে যেতে পারে। বর্তমানে সম্ভবত আলোর বিভিন্ন বর্নালী (স্পেকট্রাম) বিশ্লেষন করে, এই ছবি গুলো পড়ে কম্পিউটারে তৈরী করা হয় (ভুল হতে পারে, আমার)। ভবিষ্যতে নতুন কোন প্রযুক্তিতে আমরা হয়ত অন্য কিছু দেখব।
বর্তমান স্পেস টেলিস্কোপগুলো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেক্ট্রামের মেজর অংশ ক্যাপচার করতে সক্ষম। গামা রে, এক্স-রে, আল্ট্রাভায়োলেট, ইনফ্রারেড, মাইক্রোওয়েভ, রেডিও এবং মানুষের দৃশ্যমান ভিজিবল অপটিকাল স্পেকট্রাম এখন ক্যাপচার করতে সক্ষম। এখানে ক্যাটাগরিকাল লিস্ট দেয়া আছে।
আমাদের বর্তমান ইমেজগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশের ক্রেডিট হাবল স্পেস টেলিস্কোপকে দিতে হবে। হাবলের পরে যে উত্তরসূরী আসছে (সম্ভবত: ২০১৮ সালের দিকে ছাড়বে... assuming we survive past this year 2012
) সে কয়েকগুণ বেশি ক্ষমতাশালী। hst বনাম jwst-র পার্থক্য এখানে (টেক্সট) পাবেন।
হাবল আর ওয়েব টেলিস্কপের ইমেজের মধ্যে পার্থক্য:

jwst-র ফুল স্কেল মডেল:

Calm... like a bomb.