টপিকঃ নোবেল পুরষ্কার -২০১২ পর্বঃ চিকিৎসা বিজ্ঞান
নোবেল পুরষ্কার পৃথিবী নামক এই গ্রহের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরষ্কারের মধ্যে একটি । প্রত্যেক বছর যখন অক্টোবর মাস আসে তখন বিজ্ঞানের ছাত্র থেকে শুরু করে সাধারণ একজন মানুষও নোবেল কমিটির দিকে তাকিয়ে থাকেন কে এই ভাগ্যবান ব্যক্তি।গত অক্টোবর মাসের ৮ তারিখে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নোবেল কমিটি এই বছর ‘চিকিৎসা বিজ্ঞান’ শাখায় নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী হিসাবে ঘোষণা করেন দুই জন মহান বিজ্ঞানীর নাম –ইয়ামানাকা এবং স্যার জন গার্ডন “স্টেম সেল” আবিষ্কারের জন্য ।তাঁরা দুই জনই পৃথক ভাবে এই স্টেম সেল আবিষ্কারের জন্য গুরত্তপুর্ন ভূমিকার রাখেন । ইয়ামানাকা সুর্য উদয়ের দেশ জাপানের কিয়টা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং অধ্যাপক । আর স্যার জন গার্ডন একজন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী । তো আজ আমরা কি এই স্টেম সেল, যার জন্য নোবেল পুরস্কার পাওয়া ,তাঁর বিস্তারিত জানবো ।
স্টেম সেল কি ?
আমরা জানি জীব দেহের গঠনের ও কাজের এককের নাম হচ্ছে কোষ বা Cell । এই কোষ থেকেই জীব দেহ গঠিত হয় ।আর এই কোষ তৈরি হয় শুক্রাণু ( যেটা আসে পুরুষ প্রাণী থেকে )এবং ডিম্বাণু ( যেটা আসে স্ত্রী প্রাণী থকে ) -এই দুইটার মিলনের ফলে ।আর এই একটি কোষ বিভিন্ন কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনেকগুলো কোষে পরিণত হয় ।আর এই অনেকগুলো কোষ মিলিত হয়ে বিভিন্ন অংগ-প্রতাংগে পরিণত হয় । কোনটা ত্বকে , কোনটা নাক , কান ইত্যাদি ।এই যে অনেকগুলো কোষ থেকে আমাদের শরীরের ত্বকের সৃষ্টি হল একে বলে প্রথমিক কোষ ।প্রাথমিক এই কোষগুলোর অপর নাম ভ্রুন কোষ বা এম্বয়ওনিক কোষ । এই ভ্রুন কোষকেই স্টেম সেল বলা হয় । এই স্টেম সেল বা এম্বয়ওনিক কোষ থেকে অন্যান্য অঙ্গের সৃষ্টি হলেও ব্যাপারটি কিন্তু এতো সোজা না । বিভিন্ন বিজ্ঞানীগণ এই নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করছিলেন । যেহেতু এম্বয়ওনিক কোষ বা স্টেম সেল থেকে আমরা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ পাই , তাই কোন ভাবে যদি আমরা একে সংশ্লেষ করতে পারি তা হলে আমরা নিজেরাই বিভিন্ন অঙ্গ বানাতে পারবো । বিজ্ঞানীদের এর পেছনে গবেষণার মূল কারন ছিল এটাই । অবশেষে সুদির্ঘ ৪০ বছর গবেষণার ফলস্বরূপ ঐ দুই জন বিজ্ঞানী এই মহান পুরুস্কারে ভূষিত হলেন । বিজ্ঞানী জন গার্ডন কিভাবে দেহ কোষ থেকে স্টেম সেল বানানো যায় । সেই দুর্লভ ব্যাপারটি আবিষ্কার করতে সক্ষম হন । এই স্টেম সেল নিয়ে অন্যান্য বিজ্ঞানীগণ প্রচণ্ড রকমের আশাবাদী হন এবং গবেষণায় মনোনিবেশ করেন । যেহেতু এই স্টেম সেল ব্যাপারটি একটু কঠিন তাই , কিভাবে খুব সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা যায় তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেন । অবশেষে জাপানের কিয়টা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং অধ্যাপক ইয়ামানাকা অভুতপুর্ব সাফল্য লাভ করেন – যার কারনে এই বিশাল সম্মান । অধ্যাপক ইয়ামানাকা দেখান এই স্টেম সেল আমাদের শরীরের সাধারণ কোষের মাত্র ৪টি স্টেম সেল জিন পরিবর্তন করে দিলেই তৈরি করা সম্ভব ।
স্টেম সেল এর ব্যবহারঃ
সাধারণত নোবেল পুরুস্কার দেয়া হয় বিজ্ঞানের ঐ সমস্ত আবিষ্কার যার দ্বারা মানুষের কল্যাণ সাধিত হয় । তা হলে আমাদের কি উপকার করবে এই স্টেম সেল ? অবাক হবেন না তো ? না, অবাক হওয়ার কিছু নেই । বিজ্ঞানের কাজই তো মানবকল্যাণ ( কিছু ক্ষেত্রে হয়ত ব্যতিক্রম দেখা যায় ,আর ব্যতিক্রম তো ব্যতিক্রমই ) । হ্যাঁ , এই স্টেম সেল এর মারাত্মক প্রয়োগ হচ্ছে –রোগ প্রতিরোধে এর মারাত্মক ব্যবহার । বিশেষ করে যে সমস্ত রোগ , যা মানুষের পক্ষে জয় করা সম্ভব হয়নি যেমনঃ এইডস ।হ্যাঁ, এক্ষেএে বিজ্ঞানীরা শতভাগ সফল হয়েছেন । মার্কিন নাগরিক টিমোথি রে ব্রাউন,বয়স ৪৬, এইডস রোগে আক্রান্ত ছিলেন । স্টেম সেল তাঁর শরীরে বসানোর প্রায় পাঁচ বছর পর শতভাগ সুস্থ হয়ে উঠেছেন ।২০০৬ সালে স্টেম সেল তাঁর শরীরে বসানো হয় । চিকিৎসক ছিলেন ড. গেরো হাটার যিনি একজন জার্মানি ।হ্যাঁ , আমরা এখন এইডসকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে পেরেছি ।মানুষ পারে না এমন কি আছে এই পৃথিবীতে ?
চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার নিয়ে আজ এ পর্যন্তই ।এ বছরের নোবেল পুরষ্কার সম্পর্কে জানতে ঢুঁ মারুন http://recent-inventions.lv2lvu.com/ ।
আগামী পর্বে আমরা বিজ্ঞানের আরেক শাখা পদার্থ বিজ্ঞানে এ বছর নোবেল পুরষ্কার নিয়ে জানবো ইনশাআল্লাহ্ । সবাই ভালো থাকুন ।