টপিকঃ সেন্টমার্টিন যাত্রা - পর্ব ১
যাবি নাকি সেন্ট মারটিন ? ৮ তারিখে গিয়ে ১২ তারিখ চলে আসবো। ফাহিম চাপা গলায় ফিসফিস করে এমন ভাবে কথা গুলো বলল যেন খুবই সিক্রেট কিছু বলছে। আমি তড়িৎ ফাহিমের চেহারা স্ক্যান করে কোন ঘাপলা আছে কিনা বোঝার চেস্টা চালালাম। ঘটনা সন্দেহজনক বেড়াতে যাওয়া আমার কাছে মহৎ কর্ম টাইপ কিছু সুতরাং এতে ফিসফিসানির কি আছে।
ফাহিম জানালো সে একটা অর্গানাইজেশনের ভলান্টিয়ার এবং উক্ত সংস্থা সেন্ট মারটিন যাচ্ছে সাথে পাত্তি দিলে গেস্ট এলাউড। সো ক্লাসের পোলাপানদের জানানো হল। ঠিক হলো আমি, মানিক , রাবি, ফাহিম আর আবির যাচ্ছে । এদের ৩ জনই শিক্ষানবিস ফটোগ্রাফার। আমার খুশি হবার কারনটা এখানেই। এই ট্যুর একটা ফটোগ্রাফক ট্যুর হতে যাচ্ছে
যাওয়ার আগের দিন আমার হাতে টিকিট দেয়া হল। টিকিটের উপর বড় বড় করে লেখা International coastal cleanup. আমি আঁতকে উঠলাম ! একি ব্যাপার , সি বিচ ঝাড়ু দেয়াবে নাকি ? এতক্ষনে ফাহিমের ফিসফিসানির কারন আমার বোধগম্য হল
ফাহিম কে জিজ্ঞেস করার আগেই তার চটপট জবাব- আরে তোরা তো গেস্ট । তোদের কিছু করতে হবে না। তোরা ঘুরবি। দরকার হলে একটু সাহায্য করলিই নাহয়। ৩ হাজার টাকায় যাওয়া আসা থাকা খাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি মন্দ নয়। তাছাড়া বড় গ্রুপে গেলে মজা আছে মেলা, সিকিউরিটির ব্যাপার স্যাপার আছে না? দল বেধে সমুদ্র সৈকত ঝাড়ু দিতে যাওয়ার উপকারিতা নিয়ে ফাহিম দাত বের করে মুটামুটি একটা ছোটখাটো ভাষণ দিয়ে ফেলল ।
আমি মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আমাদের বাস ঢাকায় পৌঁছাবে ১২ তারিখ সকালে। আর ১২ তারিখ বেলা ১২ টা বাজে আমাদের মিড টার্ম পরিক্ষা! এত রিক্স নিয়ে সমুদ্র ঝাড়ু দেয়ার পরিকল্পনা আমার তেমন মনপুত হল না। বাকিদের দেখলাম কোন আপত্তি নাই। সবাই ঢাকা থেকে বের হবার চান্স পেয়ে মেলা খুশি । সব রেডি এখন আর না করা যায় না। সো মেন্টাল প্রিপারেসন নেবার জন্য সবাই মিলে মার্কেটে গেলাম চপ্পল, গেঞ্জি ট্রাইজার হাবিজাবি কেনার জন্য।
৮ তারিখ সন্ধ্যা ৬ টায় আমরা সবাই মিলে রওনা হলাম কমলাপুরের দিকে। সেখানেই রিজার্ভ বাস রাখা আছে। সি এন জি তে উঠতেই আমার পেট মোচড় দিয়ে উঠল । গ্যাসের ব্যাথা নাকি পেট খারাপ আল্লাই জানে। আমার যাত্রা শুরু হল "পেট ব্যাদনা" টাইপের জঘন্য কিছু দিয়ে। মনটাই খ্রাপ হয়ে গেলো । সামনে কি আছে কে জানে
"পেট ব্যাদনা" নিয়ে কমলাপুর পৌছাতেই আমাদের কে অর্গানাইজেশন থেকে আইডি বিলি করা হল। তাতে আমাকে NSU এর স্টুডেন্ট বানিয়ে দেয়া হয়েছে এবং রক্তের গ্রুপ লেখা ও নেগেটিভ । আমার রক্তের গ্রুপ মোটেও নেগেটিভ কিছু না। এরা আন্দাজে ফর্ম পুরন করেছে। সুতরাং বাইচান্স রাস্তায় এক্সিডেন্ট করে আমি আহত হলে আইডি কার্ড দেখে ভুল গ্রুপের রক্ত শরীরে ঢুকিয়ে দেবার একটা চান্স থেকেই যাচ্ছে। এটা চিন্তা করেই হোক বা অন্য কারনেই হোক আমার "পেটের ব্যাদনা" আরো বেড়ে গেলো। ব্যাথা নিয়ে আমি মোটামুটি বাকা হয়ে বাসে চেপে বসলাম। নাক মুখ কুচকে দেখলাম আমাদের যাত্রার সঙ্গি সাথিরা বেসিরভাগই NSU এর ছাত্র ছাত্রী। অর্থাৎ পুলাপান। দুউই একজন গার্ডিয়ান টাইপ আঙ্কেল আন্টিকেও দেখা গেলো ব্যাকপ্যাক নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছেন।
আমাকে বাকা হয়ে থাকতে দেখে এক আপু জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে। প্রেস্টিজ পাংচার করে জবাব দিতে হল পেটে গ্যাসের ব্যাথা । আমাকে অবাক করে দিয়ে আপু ব্যাগ থেকে তৎক্ষণাৎ গ্যাসের ওষুধ বের করে দিলেন যাক এরা দেখা যাচ্ছে বেশ হেল্পফুল।
বাস চলা শুরু হল। আমাদের ৫ জনের জন্য ৫ টি সিট থাকা সত্বেও গাদাগাদি করে পাশাপাশি ৪ সিটে বসে আড্ডা দেয়া শুরু হল। হেন টপিক বাদ গেল না । এই ভাবে চলতেই থাকলো । মাঝে একবার যাত্রা বিরতি হল রাতের খাবারের জন্য কুমিল্লার হাইওয়ের একটা হোটেল তাজমহলে। ওখানে খেয়ে আমার ভ্রমন সঙ্গি "পেটের ব্যাদনা" আরো ভয়ঙ্কর রকম বেড়ে গেলো। আমার অবস্থা দেখে ওই আপুটি আরো দুইটি ওষুধ এগিয়ে দিল। ওষুধে যদিও কোন কাজ করে নি । কিন্তু আপুটি যতবার আমার আমাকে জিজ্ঞেস করেছে কেমন আছি , আমি মধুর হাসি হেসে বুঝিয়েছি ওষুধ ফাস্ট ক্লাস কাজ করছে । কোন ব্যাথা নাই
আমার ধারনা ব্যাথা আছে বললেই আমাকে এবার ৪ টা ওষুধ গিলিয়ে দেবে
এরপরের যাত্রা বিরতি হল কক্সেজবাজারের আরেকটি হোটেলে রাত ৩ টার সময়। ওখানে নেমে বুঝলাম প্রচন্ড রকমের শীত পড়েছে। মুখ থেকে রীতিমত ধোয়া বের হচ্ছে। অবিশ্বাস্য ব্যাপার আমার ব্যাথা গায়েব কিন্তু কথায় আছে যার কপাল পুড়ে তার কপাল বার বার পুড়তেই থাকে। মাইনাস দেবার সাথে সাথেই ব্যাথা কয়েকগুন হয়ে চেপে বসল। আপুটি আবার ওষুধ দিতে ছুটে আসলো আর আমি মনে মনে প্রমদ গুনলাম এইবার। তবে এই যাত্রা আমাকে রক্ষা করল ফাহিম। সে ডিকটেটর স্টাইলে ঘোষনা দিল আমাকে লবন থেরাপি দেয়া হবে। এক গ্লাস পানিতে অনেক খানি লবন ঢেলে আমাকে খাওয়াতে এল। আমি ওর কিছুতেই ভরসা পাই না। সো এতখানি লবন এক সাথে খাইয়ে আমার পেটের অবস্থা আরো ভয়ানক করে ফেলবে সে এই বিসয়ে আমি মুটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেলাম।
ফাহিম আমার কাধে হাত রেখে অভয় দেয়ার জন্য বলল- অয়ন , তুই আমাকে বিশ্বাস করিস না?
আমি জবাব দিলাম - না , বিশ্বাস করি না। ফাহিম আহত গলায় বলল কেন ? আমি জবাব দিলাম তোর চেহারাটাই এমন বিশ্বাস করা যায় না।
যাইহোক বেচারা মনে হয় মন খারাপ করে ফেলেছে আমার কথায়। তার মন ভালো করার জন্য লবন ভর্তি পানিতে চুমুক দিলাম। আশ্চর্যের বিসয় জিনিষটা ম্যাজিকের মত কাজে দিল ব্যাথা গায়েব পুরোপুরি ২০ সেকেন্ডের মাথায় আর সারা জার্নিতে এই ব্যাথা আমাকে আর একবারও জ্বালাতন করে নি
আমার ব্যাথা ভালো হয়েছে এই খুশিতে আমি বাকি রাস্তা বকবক করে বাকিদের ঘুমাতে দিলাম না। হঠাৎ করে খেয়াল করলাম বাইরে আলো ফূটছে। আকাশ দেখা যাচ্ছে। কি সুন্দর আকাবাকা রাস্তা। দুইপাশে পাহাড় কেটে এগিয়েছে। কুয়াশায় ৫ হাত দুরের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কি অদ্ভুত সুন্দর। ধিরে ধিরে চারপাশটা আলো হয়ে উঠতে লাগলো।
তিন ফোটোগ্রাফারের হুশ হল। লাফিয়ে ক্যামেরা নিয়ে বাসের সামনে চলে গেল। সবাই সুন্দর একটা ক্যাপচার নিতে ব্যাস্ত।
আর আমি মন খারাপ করে জানালার বাইরে প্রকৃতি দেখতে লাগলাম।
যাই হোক এই সময়ে আমার নিজের তোলা একটি মাত্র ছবি খুজে পেলাম। নিচে দুইটা ছবি সেয়ার দিলাম । একটা মানিকের তোলা আর অন্যটি আমার। পরের পর্বে বেশি বেশি ছবি আর কম বকরবকর দিয়ে পোস্ট করব।
Winter Effect@flicker
তখনো আলো বের হয় নি