টপিকঃ মোটরসাইকেল ডায়রী
শিরোনামটা সেইরকম মুখরোচক হয়েছে। তবে ভিতরের লেখা মনেহয় না মুখরোচক হবে। শিরোনাম দেখে অনেকই ভাবতে পারেন যে, আমার চে-গুয়েভারা টাইপ দুর্ধষ্য ভ্রমণ কাহিনীর গল্প ফেদে বসবো। আরে ধুর, আমি কি আর চে-গুয়েভারার মত সাহসী নাকি? আমি নিরীহ ভীতু টাইপ শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমার পক্ষে কি আর চে-গুয়েভারা হওয়া সম্ভব? সম্ভব না। কাজেই যেসব পাঠকদের মাথায় এসব আকাশকুসুম কল্পনা বাসা বেধেছে, তাদের জন্যে এ লেখা না পড়াই শ্রেয়।
ভেসপা কাহিনীঃ
বাইক চালাতে না পারলে কি হবে, বাইকের পিছনে বসতে আমি ওস্তাদ আদমী। নানীবাড়ি আসামের ধুবরী জেলাতে গিয়ে দেখি সেটা পুরা বাইকের স্বর্গরাজ্য। যেদিকে তাকাই সেদিকেই খালি বাইক আর বাইক। পিচ্চি পোলাপান থেকে শুরু করে বুড়োধারিরাও বাইক চালায়। এটা রীতিমত ট্রেন্ড হয়ে দাড়িয়েছে। আমার কিশোর বয়সী কাজিন আকিবের মাথায়ও সেই একই ভূত জেকে বসেছে। মাঝে মাঝেই সে তার বাপের পুরানো ভেসপাখানা বের করে মাঠে গিয়ে টেস্টড্রাইভ দেয়। তবে সেসময় ওর বাবা (আমার মামা) বা বড় ভাই উপস্থিত থাকে। সে যে ভালো ভেসপা চালানো শিখেছে সেটা আমাকে দেখানোর জন্যে অস্থির হয়ে উঠলো। মামাকেও কিভাবে জানি ম্যানেজ করে ফেললো। আমি সে সময় সবে গোসল করার জন্যে বাথরুমে ঢুকবো ঢুকবো করছি। ভেসপার চাবি হাতে পেয়ে সে ঝড়ের বেগে এসে, গোসলখানাতে ঢোকার আগেই রীতিমতো টেনেহিচড়ে থেকে বের করে নিয়ে গেলো।
আমি পিছনে বসে আছি। আকিব ভেসপা চালাচ্ছে। হাত একটু কাপছে। তবে অত বেশি না। আমি মোটামুটি নিশ্চিন্ত মনেই বসে আছি। কারণ রাস্তায় তেমন ভীড় নেই। হঠাত দেখি সে বাজারের রাস্তায় গিয়ে উঠলো। তারপরে শুরু করলো সার্কাস। সারাজীবন দেখেছি মানুষ সামনের গাড়িকে ওভারটেক করে ডানপাশ দিয়ে। এ ব্যাটা দেখি সাইকেল,রিক্সা যেটাকেই সামনে পাচ্ছে সেটাকেই বামদিকের দোকানগুলোর সামনে যে অল্প চিপা জায়গা আছে, সেখান দিয়ে ওভারটেক করছে। প্রতিটা ওভারটেকই নিয়ার-মিস টাইপ। আমি পিছনে শক্ত হয়ে বসে আছি, আর ক্লাস সেভেনে মাদ্রাসায় পড়ার সময় যেসব দোয়াও-দরুদ শিখেছিলাম, সেগুলো ইয়াদ করার চেষ্টা করছি। টেনশনে সারা গা দিয়ে দরদর করে ঘাম বের হচ্ছে। এভাবে চলতে চলতেই দেখি সে ধুবরী শহরের নদীর পাড়ে চলে এসেছে। এই এলাকাটায় ডিসি, জজ সবার বাংলোগুলো অবস্থিত। ডিসি বাংলোর কিছু আগেই দেখি ব্যাটা ভেসপা থামিয়ে দিলো। আমি বললাম,
- কি হইল?
- অল্প নামা লাইগবে।
- ক্যানে?
- ওটিকোনা পুলিস আছে।
- তো?
- মাথা অল্প খাটান। মোর মতো বাচ্চা-ছাওয়া ভেসপা ড্রাইভ করি আছে দেইখলে থানাত নিবে।
- আবে হালা, তুই যদি বাচ্চা-ছাওয়া হস, তাইলে ভেসপা বাইর করলি কেন? করলিতো করলি, আমারে পিছনে বওয়াইলি কেন? (মেজাজ খারাপ হলে মুখ দিয়ে ঢাকাইয়া বের হয়ে যায়)
- ঢাকাইয়াত গালি না দেন মোক। মোক ধরলে মুই কইম যে এইটা আপনার ভেসপা। মোর নওয়ায়।
কথা শুনে মেজাজ চরম খারাপ হলেও আসলেই তখন কিছু করার নাই। আমি বললাম,
- মুইতো বাইক চালাবার পারং না।
- কিছু না হয়। আপনি ভেসপা ধরি, হাটি হাটি জাগাটা পার করি দেন। তারপর মুই চালাইম আবার।
কি আর করবো, ভেসপার স্টার্ট বন্ধ করে, শিস বাজাতে বাজাতে, ভেসপাকে হাটিয়ে নিয়ে পুলিসওয়ালা জায়গাটা পার হলাম। এরপর আবার সেই সার্কাস করতে করতে বাসায় ফেরত আসলাম। আকিবের মুখে বিশ্বজয়ীর হাসি। আমার ঘামে ভিজা টিশার্ট দেখে মামা জিজ্ঞেস করলেন,
- কিরে হাডুডু খেলে আসলি নাকি?
- না মামা, আপনার পোলার পিছনে বসে নদীর পাড় থেকে ঘুরে আসলাম।
- তাহলে এই হালত কেন?
- আকিব খুব ভালো ভেসপা চালায়তো, তাই।
এ কথা শুনে মামা খুব এক চোট হেসে নিলেন। বললেন,
- যা এখন গিয়ে গোসল কর।
- হ্যা, সেটাই করবো। আর এখন থেকে ভাবছি, গোসল করার আগে আকিবের পিছনে বসে ডেথরাইড নিবো। তাহলে গোসলের আগে আলাদাভাবে ওয়ার্মআপ করা লাগবে না।
[চলবে]