টপিকঃ হুমায়ূন আহমেদের সাথে আমার কথোপকথন
ঘাবড়াবেন না। কম্মিনকালেও তাঁর সাথে আমার দেখা হয় নি। কথোপকথন দূরে থাক। তবুও পোস্টের টাইটেলের সাথে পোস্টের বিসয়বস্তুর মিল আছে । পড়তে থাকুন।
আমি উনার অন্ধ ভক্ত ছিলাম। বলতে গেলে তাঁর প্রতিটা বই এক বসায় শেষ করেছি। দুই একটি বই বাদ গেছে বড়জোর। তেমনি কাল রাতে একটা পিডিএফ পাই যেখানে হুমায়ূন আহমদের অনেক গুলো ছোটগল্প এক সাথে করে ছোটগল্প সমগ্র ধরনের কিছু বানানো হয়েছে। অবাক হয়ে দেখলাম প্রায় গল্প আমার পড়া হয় নি। গায়ে জ্বর কয়েকদিন ধরে। রাতের ঘুমা শিকয় উঠলো । কখন থেকে পড়ছি বলতে পারবো না । ৩৯২ পাতা শেষ হবার পর আজান শুনলাম বইও শেষ হল। সবই ছোট গল্প। এই ধরনের গল্প আমার পছন্দ না। তবুও বেশ ভাল লাগছিল। কারন প্রায় সব গুলোই অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা নিয়ে লেখা। লেখক বিভিন্ন ক্যারেকটার হয়ে একেকবার একেক অদ্ভুত ঘটনা বর্ণনা করছিলেন। জ্বরের কারনেই হোক বা অন্য কোণ কারনে , আমি এক ধরনের ঘোরের ভেতর চলে গেলাম। ভূত প্রেত নিয়ে আমার তেমন ভীতি কাজ করে না। তবুও হুমায়ূন আহমেদের অভাবনীয় লেখনী শক্তির কারনে আমি প্রায় প্রতিটি গল্পের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছিলাম। এক সময় ভয় পেতে শুরু করলাম। পুরোটা শেষ হবার পর ক্লান্তিতে ল্যাপটপ কোলে রেখেই ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম বললে ভুল হবে। আধো ঘুম আধো জাগরন টাইপ অবস্থা।
আমি হটাত দেখলাম আমি নুহাশ পল্লীতে হাটছি। কেমন করে সেখানে গেলাম ঘুমের ভেতর আমি বুঝতে পারছিলাম না। তবে আমার কাছে হটাত করে নুহাশ পল্লীতে চলে যাওয়াটা ঘুমের ভেতরে বেশ স্বাভাবিক ব্যাপার মনে হল। আমি কখনো নুহাশ পল্লী যাইনি। লম্বা লম্বা গাছে ঘেরা নিরিবিলি যায়গাটা আমার কাছে নুহাস পল্লী বলে মনে হল এবং আমি অবাক হলাম কারন আমি এইমাত্র নিজের বিছানায় শুয়েছিলাম সেটা আমার মনে পড়ছিল। আমি বুঝতে পারলাম আমি স্বপ্ন দেখছি। মাত্রই হুমায়ূন আহমেদের গল্প পড়ছিলাম তাই ঘুমের ভেতর হটাত করে নুহাশ পল্লীতে হাজির হওয়াটা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আমি এদিক ওইদিক তাকালাম। একটা ছোট পুকুর ছিল। লম্বা লম্বা গাছ। সূর্যের আলো তির্যক ভাবে পড়ছিল গাছের পাতায়। পুকুরের ওইধারে একটা টিনের চালের ঘর। যার সুন্দর একটা বারান্দা আছে। আমি বারান্দার মেঝে দেখতে পাচ্ছিলাম না কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল মেঝেটা মাটির। হটাত হুমায়ূন আহমেদ চায়ের কাপ নিয়ে বারান্দায় বেরিয়ে এলেন। আমি অবাক হলাম। তবে বুঝতেই পারছিলাম স্বপ্ন দেখছি এবং এখানে সব সম্ভব। মাঝে মাঝে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখি। বুঝতে পারি স্বপ্ন দেখছি। তাই বের হয়ে আসার অনেক চেষ্টা করি। শরিল ভারি হয়ে থাকে। কোন ক্রমে একটু নড়তে পারলেই স্বপ্ন কেটে যায়। আমি এই ক্ষেত্রে এমন কোন চেষ্টা করলাম না। আমি সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম।
হুমায়ূন আহমেদ আমাকে দেখে মৃদু হাসলেন। যেন আমি পরিচিত কেউ। হালকা গলায় অন্য দিকে তাকিয়ে বললেন " হ্যালো ফারহান" ! আমি বললাম হ্যালো স্যার, আমি জানি আমার নাম আপনার জানার কথা নয়। তবে আমি স্বপ্ন দেখছি । এখানে সবই সম্ভব। তিনি মৃদু কন্ঠে জবাব দিলেন "হতে পারে", তবে মুখে হাসি চলে গিয়ে খানিক যেন গম্ভির হয়ে গেলন। আমি কিছুটা অবাক হলাম। আমি টিভিতে হুমায়ূন আহমেদের কথা শুনেছি । ওনার কন্ঠ আমি চিনি। বেশ দ্রুত কথা বলেন এবং মোটেও গম্ভীর নন কিন্তু এখানে সম্পূর্ণ বিপরীত । ধিরে এবং গম্ভীর হয়ে জবাব দিচ্ছেন। তিনি চায়ের কাপে চুমুক দিলেন। আমি তৎক্ষণাৎ বললাম - আমার মনে হচ্ছে আপনার চায়ের কাপ খালি। অর্থাৎ আপনি খালি কাপে চুমুক দিলেন। আমি মুখ হাসি হাসি করে বললাম আমি কি আপনার চায়ের কাপ দেখতে পারি? তিনি অন্যদিকে তাকানো অবস্থায় চায়ের কাপ ওল্টালেন। সত্যি সেটা শূন্য। আমি যা দেখতে চাচ্ছি তাই দেখতে পাচ্ছি এবং হটাত খেয়াল হল উনি ঠিক এক দিকে তাকিয়ে আছেন । সরাসরি আমার দিকে তাকাচ্ছেন না। কারন উনার সব বই শেষ হলে পেছনে উনার একটা ছবি থাকত। সেখানে সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে তোলা ছবি খুব কম থাকত। যার কারনে আমি যখন ওনাকে দেখছি আমার ব্রেইন ওনার ওই ধরনেরই একটা প্রতিবিম্ব ফুটিয়ে তুলছে। আমি প্রবল চেষ্টা করতে থাকলাম ঘুম থেকে যেগে উঠার জন্য। কারন আমার ভয় হতে লাগলো অতি-প্রাকৃতিক কিছু আবার স্বপ্নে দেখে যা বসি।
কারেন্ট আসলে বা গেলে আমার রুমের ফ্যান শব্দ করে উঠে। কারেন্ট যাবারই শব্দে আমার ঘুম তক্ষুনি ভাঙল। আমি টয়লেটে গেলাম। হাত মুখে পানি দিয়ে এসে ল্যাপি নিয়ে বসলাম। এই স্বপ্নটি বিশেষ কোন ঘটনা নয়। আমি প্রতিদিন ঘুমালেই হাবিজাবি স্বপ্ন দেখি। ছোটবেলায় একবার কারটুন দেখেছিলাম স্বপ্নে। একদিন যতটুকু দেখেছি পরদিন তাঁর পর থেকে বাকি অংশ দেখতাম। এই ভাবে টানা তিন দিনে তিন পর্ব কাটুন দেখি । মাঝে মাঝে দারুন দারুন ডিটেকটিভ কাহিনীই দেখে ফেলি। এইত কালই দেখলাম ক্যাটরিনা কাইফকে নিয়ে আমি আফ্রিকার জঙ্গলের মত কোথাও হারিয়ে গেছি। হেটে হেটে মরুভূমি পাড়ি দিচ্ছি তবুও আমি দ্রুত লিখতে লাগলাম কিছুক্ষন আগে কি দেখেছি। সবগুলো সপ্নের মত এই ছোট অবাস্তব স্বপ্নটি হারিয়ে যাক আমি তা চাই না। রক্ষিত থাকুক অন্তরজালে ।