টপিকঃ একদা গেমার ছিলাম............ শেষ পর্ব
প্রথম টুর্নামেন্ট এবং আমার সাপোর্টাররাঃ
কাল করছি, পরশু করছি এমন করতে করতে কখনোই ডাব্লিউসিজি তে রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি। মাঝে মাঝে মিরপুর-১০ এ একটা ল্যানে গিয়ে পোলাপানের সাথে খেলতাম। আর মায়েস্ত্রো দিপুর সাথে প্র্যাকটিসতো ছিলোই। এভাবে চলতে চলতে কখন গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে গিয়েছি টেরই পাইনি। ডিপার্টমেন্টে ততদিনে আমার ফিফাপ্রীতি সবাই জেনে গিয়েছে বেশ ভালোমতই। এমনই সময় শুনি ডিপার্টমেন্টাল ইন্ডোর গেমসে এবার সাইবার গেমসও থাকবে এবং সাইবার গেমসের ক্যাটাগরীতে ফিফাও আছে। লজ্জার মাথা খেয়ে বুড়ো বয়সেই পোলাপানের সাথে কম্পিট করার জন্যে ফিফার রেজিস্ট্রেশন করে ফেললাম। জুনিয়ররা সবাই ধরেই নিয়েছে আমি খুব ভালো প্লেয়ার। গায়ে ফেবারেট তকমা এবং সেই সাথে বিশাল প্রেসার।
জুনিয়র পোলাপানরা খুব স্বাভাবিকভাবে তাদের ব্যাচ এবং জুনিয়রদের সাপোর্ট দিচ্ছে। আমার সাপোর্টার মেইনলী দুজন। অর্নব আর শুভ্র। ভালো খেলি আর না খেলি, এরা দুজন পিছন থেকে গলা ফাটিয়ে উতসাহ যুগিয়ে যায়। কানে হেডফোন লাগিয়েও ওদের গলার আওয়াজ শুনতে পেতাম।
প্রথম ম্যাচটা পড়লো ফার্স্ট ইয়ারের এক ছেলের সাথে। আমি নিয়েছি বার্সেলোনা। খেলা শুরুর মিনিট দশেকের মধ্যেই আমার গোলকিপার ভালদেস লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়া। বাকিটা সময় এরিক আবিদালকে দিয়ে গোলকিপিং করালাম। এর মধ্যে এক গোল খেয়েও বসলাম। পরে গুরু দিপুর শিক্ষা মাথায় রেখে টেন্সড না হয়ে বল নিজের পজেশনে রেখে খেলতে শুরু করলাম আর তারপর দুটো গোল দিয়ে কোনমতে ম্যাচটা বের করে ফেললাম। আমার সাপোর্টাররা মহা খুশি। প্রশংসার বন্যায় ভেসে গেলাম।
দ্বিতীয় ম্যাচ খেলছি ব্রাজিল নিয়ে , আর আমার প্রতিপক্ষ নিয়েছে বার্সেলোনা। ছেলেটা বেশ ভালোই খেলে। একটা কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোল দিয়ে ফেললাম। পিছনে দেখলাম আমার সাপোর্টাররা বলছে, “ব্যাপার না। লাকি গোল দিছে।” বুঝলাম না। এর একটু পরে ছেলেটা গোল পরিশোধ করে দিলো। পিছনে দেখি আমার সাপোর্টারদের তুমুল করতালি। এবারও কাহিনী বুঝলাম না। খেলা শেষ হওয়ার কিছু আগে আরেকটা গোল দিলাম। এবার দেখি পুরো দর্শককুল নিশ্চুপ। আমার সাপোর্টাররাও। খেলা শেষ হলো। আমি হাসি হাসি মুখ করে সাপোর্টারদের দিকে এগিয়ে গেলাম। ওরা মুখ ভার করে এসে সান্তনা দেয়ার ভঙ্গিতে বললো,
- ব্যাপার না ম্যান। তুই যে এই বয়সে ট্রাই করসিস জুনিয়র পোলাপানের এগেইন্সটে সেটাই অনেক। ভালো খেলছিস।
- মানে কি?
- না মানে, ভালোই খেলেছিস। জাস্ট একটুর জন্যে জিততে পারিস নাই।
- আবে হালারা, আমি জিতসিতো!!
- মানে? তুই বার্সা নিয়া খেলিস নাই?
- জ্বী না। আমি ব্রাজিল নিছিলাম।
- আগের খেলার যে বার্সা নিলি?
- আগের খেলার বার্সা নিসি দেইখা কি এই খেলায় ব্রাজিল নেয়া যাইবো না?
- ও আচ্ছা ও আচ্ছা। সাবাস। সাবাস। আমরাতো পুরা খেলায় বার্সারে সাপোর্ট দিয়া গেলাম!!
আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কপাল চাপড়ালাম। এই হচ্ছে আমার সাপোর্টারগোষ্ঠি, যারা জানেই না যে আমি কি নিয়ে খেলেছি।
বর্তমানে গেমিং এর হালঃ
বিবাহিত হওয়ার কারণে ভেবেছিলাম গেমিং এ ইস্তফা দিতে হবে। বাস্তবে সেটা দিতে হয়নি। তবে চাকুরীর কারণে গেম কম খেলা হয়। বৌ এর কারণে নয়। গেম খেলতে ইচ্ছে করলে ফিফা নিয়ে বসে যাই। তবে ঐ সময় বৌকে সিএনসি দিয়ে বসিয়ে দিতে ভুলে যাই না। নো ডিস্টার্বেন্স। হে হে হে। অতীতে এক-আধটু স্ট্র্যাটেজি গেম খেলেছিলাম কিনা। বুঝতে হবে।